শীতকাল, ঠান্ডার আমেজ আকাশে বাতাসে। পরিষ্কার আকাশ আর কোলকাতা মাথায় দেখা যায় না, তাও নীল আকাশের মাঝে সাদা মেঘের ভেলা। সামনের পার্কের বেশির ভাগ গাছাপালা ন্যাড়া হয়ে গেছে। পাখী গুলো যেন বড্ড বেশি কিচির মিচির করছে। মিষ্টি রদ্দুরে মাঝে মাঝে মনে হয় গা ভাসিয়ে কোথাও হারিয়ে যেতে। বাড়িতে সাজ সাজ রব, কয়েক দিন পরেই সঙ্ঘমিত্রার বিয়ে। তেইশ বসন্ত পার করে নিজের ঘরের বিছানায় গা ভাসিয়ে মোবাইলে গল্পে মশগুল সেই তন্বী তরুণী। আষাড়ের প্রথম বারিধারায় স্নাত যেন এক অধরা গোলাপ। পাতলা গোলাপি ঠোঁট জোড়া ভীষণ কথা বলে, গাল দুটো পিচ ফলের মতন নরম, দুধে আলতা গায়ের রঙ, চওড়া কাঁধ ছাড়িয়ে ঘন চুলের ঢল নেমে এসেছে পিঠের মাঝ পর্যন্ত। অতীব আধুনিকা মেয়ে, কয়েকদিন পরেই বিয়ে তাই চুলে গাড় বাদামি রঙ করিয়েছে সেই সাথে সামনের কয়েক গোছা চুল একটু গাড় লাল রঙের, আজকালের ভাষায় যাকে বলে হাইলাটিং করান। ওর নধর দেহ পেছন থেকে দেখলে মনে হয় যেন এক বালির ঘড়ি। ভীষণ ভাবেই উচ্ছল ওর কাজল টানা চোখ জোড়া। ওর চোখের চাহনিতে কলেজের অনেক ছেলেই পাগল ছিল। সুন্দরী বলে কলেজে বেশ নাম ছিল, অনেক ছেলেই ওর পেছনে পড়েছিল কিন্তু কারুর সাথে বেশি মেলামেশা করেনি কোনদিন। পরনে ঢিলে একটা গেঞ্জি আর আঁটো জিন্সের হাফ প্যান্ট, প্যান্টটা সঙ্ঘমিত্রার সুগোল পাছার ওপরে দ্বিতীয় ত্বকের মতন লেপে গিয়ে আকার অবয়াব অতি সুন্দর ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছে। গোল গলার ঢিলে টি শারটটা বাঁ কাধের নিচে নেমে গেছে, উন্মুক্ত বাম কাঁধের ওপরে লাল ব্রার স্ট্রাপ বেড়িয়ে পরেছে। উপুড় হয়ে শুয়ে থাকার ফলে দেখলে মনে হবে যেন ধবধবে সাদা বিছানায় যেন এক জল পরী শুয়ে। কোলকাতার এক প্রাইভেট কলেজ থেকে এই বছরেই এম-বি-এ পাশ করেছে। বিয়ে করছে নিজের পছন্দের ছেলে পার্থকে, এক বছরের প্রেম, তাও যেন মনে হয় কত যুগ ধরে ওদের চেনা জানা। ওদের বিয়ে নিয়ে বাড়িতে খুব ঝামেলা হয়েছিল, বিশেষ করে বাবা ওদের বিয়েতে রাজি ছিলেন না, কারণ পার্থ ব্যাবসায়ি পরিবারের ছেলে। ভীষণ জেদি মেয়ে, অনেক ঝগড়া ঝাটির পরে বাবা মা ওদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছে।
“কি করছ?” ফোনের অন্য পাশ থেকে জিজ্ঞেস করে পার্থ।
ফোন ঠোঁটের কাছে চেপে ছুড়ে দেয় এক মিষ্টি মধুর চুম্বন, “মুয়া আ আ আ… এই ত তোমাকে চুমু খাচ্ছি।”
অন্যপাশ থেকে ভেসে আসে এক চুম্বনের শব্দ, “কাল চলে এসো, পরেশের ফ্লাটে একটা পারটি করছি।”
কপট রাগ দেখায় সঙ্ঘমিত্রা, “ধ্যাত কি যে বল না তুমি, মা আমাকে ছাড়বে না একদম। কি বলে আসব? আর ত কয়েকটা দিন ডারলিং ব্যাস তারপর শুধু আমি আর তুমি।”
কাতর মিনতি করে পার্থ, “প্লিজ, তুমি ঠিক ম্যানেজ করে নেবে জানি।” গলা নামিয়ে বলে, “কতদিন তোমাকে চটকে আদর করিনি বলত?”
কথাটা শুনেই শরীরের প্রতিটি রোমকূপ সজাগ হয়ে ওঠে ওর, প্রথম যেদিন ওর টপের মধ্যে হাত গলিয়ে উষ্ণ কোমল স্তন জোড়া হাতের মধ্যে নিয়ে আলতো চটকে দিয়েছিল, সেদিন পাগল হয়ে গিয়েছিল সঙ্ঘমিত্রা। তারপরে যেদিন টপ খুলে ব্রার ওপর দিয়েই চুমু খেয়েছিল ওর সুগোল স্তনের ওপরে সেদিন পার্থর মাথা চেপে ধরেছিল নিজের উষ্ণ কোমল স্তনের সাথে, কামোত্তেজনায় সারা অঙ্গ ছটফটিয়ে উঠেছিল।
বিছানায় ওলট পালট খেয়ে খিলখিল করে হেসে বলে, “আচ্ছা বাবা আচ্ছা, আমি আসব।”
পার্থ অন্য পাশ থেকে ফিসফিস করে বলে, “কালো প্যান্টিটা পরে এস কিন্তু, বড্ড সেক্সি দেখায়।”
কথাটা কানে যেতেই কামোত্তেজনায় কেঁপে ওঠে সঙ্ঘমিত্রা, সম্পূর্ণ সঙ্গমে মেতে ওঠেনি পার্থর সাথে তবে, সেদিন কালো প্যান্টির ওপর দিয়েই ওর কোমল ফোলা যোনির ওপরে আঙ্গুল দিয়ে ডলে পিশে একাকার করে দিয়েছিল। সারা শরীর ভীষণ সুখের উত্তেজনায় বারেবারে শিহরিত হয়ে ওঠে। কামাতুরা তন্বী তরুণী সুগোল মসৃণ দুই ঊরুর মাঝে বালিশ চেপে, মিহি কন্ঠে অনুরাগ প্রকাশ করে বলে, “ধ্যাত শয়তান, যাবো না যাও।”
কাতর মিনতি করে পার্থ, “প্লিজ সোনা এমন করে না, প্লিজ, বলছিত কয়েকজন বন্ধু মিলে পারটি করব, সত্যি বলছি অমন কিছুই করব না তোমার সাথে।”
কথা বলতে বলতে নিজের হাত চলে যায় বুকের ওপরে, টপের ওপর থেকেই নিজের উষ্ণ সুগোল স্তন চেপে ধরে। প্রেমিকের সাথে কথা বলতে বলতে স্তনের বোঁটা জোড়া নুড়ি পাথরের মতন শক্ত হয়ে উঠেছে। নিজের তালুর চাপেই হাঁসফাঁস করে ওঠে আঁটো ব্রার মধ্যে বন্দি স্তন জোড়া। গলা নামিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমার দাঁড়িয়ে গেছে নাকি?”
অন্যপাশের থেকে হাসি ভেসে আসে, “হাতে ধরে বসে আছি গো। গতকাল রাতে তুমি যে সেলফিটা পাঠিয়েছ না মাইরি…”
সেটা শুনতেই কান লাল হয়ে যায়, পার্থ ভীষণ ভাবে নাছরবান্দা জুড়ে দিয়েছিল গতকাল রাতে, একটা সেলফি চাই। শেষ পর্যন্ত বাথরুমে ঢুকে শুধু মাত্র ব্রা আর প্যান্টি পরে মোবাইলে একটা ছবি তুলে পাঠাতে হয়েছে ওকে। “ইসসস, যাও শয়তান, ওটা কিন্তু এখুনি ডিলিট করে দেবে।” সঙ্ঘমিত্রার পায়ের মাঝে কিঞ্চিত শিরশিরানি ধরে আসে। ঊরুর মাঝের বালিশটাকে দুমড়ে মুচড়ে একাকার করে দেয়।
পার্থ বলে, “উম্মম ডারলিং, তোমার পায়ের মাঝে ফোলা দেখলেই মাথা খারাপ হয়ে যায়। আচ্ছা তুমি শেভ করেছ ত নাকি জঙ্গলে এডভেঞ্চার করতে যেতে হবে?”
কান লাল হয়ে যায় সঙ্ঘমিত্রার। সকালেই স্নান করার সময়ে সম্পূর্ণ যোনিকেশ কামিয়ে মসৃণ করে নিয়েছে। কামিয়ে ফেলার পরে কেমন যেন নিজের দেহের প্রতি আকর্ষণ বেরে যায় ওর, হ্যান্ড শাওয়ার দিয়ে ধুতে ধুতে দুই আঙ্গুল দিয়ে ডলে দেয় যোনির চেরা, শিক্ত হয়ে উঠেছিল ওর কোমল যোনি। সেই সব ভাবতেই ভীষণ ভাবে উত্তেজিত হয়ে ওঠে, “শয়তানি রাখো ত। তুমি জঙ্গলে যাবে না ময়দানে যাবে সেটা এখন জেনে কি দরকার। নিজের দিকটা দেখো, সময় মতন যেন ঠিক করে দাঁড়াতে পারে সেটার চিন্তা কর।” বলেই খিলখিল করে হেসে ফেলে।
এমন সময়ে দরজায় মায়ের গলা পেয়েই ধরমর করে উঠে বসে সঙ্ঘমিত্রা, “ঝিনুক একবার এদিকে আয়।”
জামা কাপড় ঠিক করে পার্থকে বিদায় জানিয়ে ঘর ছেড়ে বসার ঘরে ঢুকে মাকে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে এত জোরে চেল্লাচ্ছ কেন?”
পীয়ালি বড়মেয়ের আপাদ মস্তক নিরীক্ষণ করে খানিকটা ধমক দিয়েই বলে, “বিয়ের বাড়ি, যেকোনো সময়ে কোন আত্মীয় সজ্জন এসে পড়বে। তোকে বারবার বলি সালোয়ার কামিজ পর কিন্তু তুই কিছুতেই শুনবি না।” এদিক ওদিক তাকিয়ে ছোট মেয়ে শকুন্তলার খোঁজ করে পীয়ালি, “এই ঝিলিক আবার কোথায় গেল, দেখেছিস?”
পীয়ালির, ছোট মেয়ে ঝিলিক পড়াশুনায় ভালো, ক্লাস ইলেভেনে সায়েন্স নিয়ে পড়ছে। সেও বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকা। ঠিক তখনি ঝিলিক মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আবদার করে, “মম, দিদির বিয়েতে আমার এক বান্ধবীকে ইনভাইট করতে চাই।”
পীয়ালি বলে, “করিস তাতে অসুবিধে কোথায়?”
ঝিলিক বলে, “মম, দিয়া আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মম, প্লিজ ওদের ফ্যামিলিকেও ইনভাইট কর।”
একটু ভেবে পীয়ালি বলে, “আচ্ছা বাবা তাই হবে। আজ বিকেলে তোর দিদির ব্রেসলেট যখন পাল্টাতে যাবো তখন না হয় ওদের বাড়ি যাবো।” ছোট মেয়ের পোশাকের ওপরে নজর বুলিয়ে আক্ষেপের সুরে বলে, “তোদের দুটোকে কে নিয়ে একদম পারি না। বলি কাজের বাড়ি তাও তোরা শুনবি না কিছুতেই।”
ঝিলিকের পরনে ওর দিদির মতন একটা ঢিলে টিশারট আর ছোট হাফ প্যান্ট। নিজের পোশাকের দিকে দেখে মাকে বলে, “যাঃ বাবা এতে খারাপ কোথায়? বাইরে ত যাচ্ছি না।”
কপালে কড়াঘাত করে পীয়ালি, “তোর বাবা আসুক তারপরে দেখিস।” বলে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায়। ইতিমধ্যে দুরের দুয়েক জন আত্মীয় বাড়িতে এসে গেছে।
বিকেলে দুই মেয়েকে নিয়ে বউবাজারে যায় পীয়ালি। ঝিনুকের কোন ব্রেসলেট পছন্দ হয় না, এটার ডিজাইন ভালো নয়, ওটা ভালো নয় ঠিক পছন্দ হচ্ছে না। বেশ কয়েকটা দোকান ঘোরার পরে অবশেষে সুন্দরী কন্যের গয়না পছন্দ হয়। গয়না কেনার পরে ঝিলিকের আবদার মেনে ওর বান্ধবীর বাড়ির দিকে রওনা দেয় ওরা। ওদের গাড়ি ঢাকুরিয়া ঢুকতেই ভ্রু কুঁচকে এপাশ অপাশ দেখে পিয়ালী। বড় মেয়ে কানে হেডফোন গুঁজে কোন ইংরেজি গানে মশগুল, ছোট মেয়ে তার বান্ধবীর সাথে ফোনে তাদের বাড়ির পথ জেনে নিচ্ছে। সেই নির্দেশ মতন ড্রাইভার ঝিলিকের বান্ধবীর বাড়ির সামনে গাড়ি থামায়। বাড়ির দিকে তাকিয়ে, এক লহমায় হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় পীয়ালির। অনেক বছর আগে এই বাড়িতে ওর বেশ আনাগোনা ছিল, ওর প্রিয় বান্ধবী থাকত এই বাড়িতে। সেই প্রানের বান্ধবীর সাথে বহু বছর কোন যোগাযোগ নেই, কেন সেই বান্ধবী এই শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিল সেটা আজ পর্যন্ত ওর অজানা।
কাঁপা কন্ঠে ছোট মেয়েকে জিজ্ঞেস করে, “তোর বান্ধবীর নাম কি রে?”
ঝিলিক উত্তর দেয়, “দ্বিপানিতা, ডাক নাম দিয়া।”
গাড়ি থেকে নেমে পীয়ালি জিজ্ঞেস করে, “তোর বান্ধবীর মায়ের নাম কি জানিস?”
অবাক হয়ে প্রশ্ন করে ঝিলিক, “না সেটা ত কোনদিন জিজ্ঞেস করিনি। কিন্তু ওর মায়ের নাম কেন জিজ্ঞেস করছ বলত?”
ওর চোখ জোড়া ক্ষণিকের জন্য ঝাপসা হয়ে আসে, মেয়ের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, “না কিছু না, অনেক পুরানো দিনের কথা মনে পরে গেল এই বাড়িটা দেখে তাই।”
দিয়া ওদের জন্য বারান্দায় অপেক্ষা করছিল, গাড়ি থেকে ঝিলিক আর তার দিদি আর মাকে দেখতে পেয়েই দৌড়ে নিচে নেমে এসে দরজা খুলে দেয়। দিয়া, পীয়ালির পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করতেই থমকে যায় পীয়ালি। দিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করে। দিয়ার চোখ জোড়া ভীষণ উজ্জ্বল ঠিক নীলাদ্রির মতন দেখতে। হাতে হাত রেখে এক প্রকার টানতে টানতেই দিয়া আর ঝিলিক বাড়ির মধ্যে ঢুকে পায়। ঝিনুক তার মায়ের মনের ভাব বুঝতে পেরে একটু অবাক হয়ে মাকে জিজ্ঞেস করে তার কারণ। ওর অলক্ষ্যে চোখের কোনা মুছে হেসে সেই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যায়। এক পা এক পা করে বাড়ির মধ্যে ঢুকতে ঢুকতে পীয়ালির হৃদ স্পন্দন বেড়ে ওঠে। বসার ঘরে ঢুকতেই থমকে যায় পীয়ালি। দেয়ালে ঝুলানো একটা ছবিটা দেখে আর চোখের জল সামলাতে পারে না, ছবিটায় আম্বালিকা ছোট রিশুকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে। কোন রকমে চোখের জল সামলে রেখে সোফায় অধীর অপেক্ষায় বসে পরে। সঙ্ঘমিত্রা ঘাড় ঘুরিয়ে বসার ঘর দেখে একটু অবাক হয়ে যায়, শুধু মাত্র এই বসার ঘরেই ওদের ফ্লাটের অধিকাংশ এসে যাবে। মাকে বারংবার প্রশ্ন করে হটাত করেই মায়ের চোখে কেন জল এসেছে। দিয়া আর ঝিনুক ততক্ষণে ওদের ছেড়ে হারিয়ে গেছে বাড়ির মধ্যে। বড় মেয়ের প্রশ্নের উত্তরে বাক্যা হারা পীয়ালি, কোন উত্তর দেওয়ার মতন শক্তি নেই ওর শরীরে, চুপ করে সোফায় বসে চোখের কোল মুছতে মুছতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে বসে থাকে ওর বান্ধবীর। কিছু পরে ঝিলিক আর দিয়ার পেছন পেছন আম্বালিকা বসার ঘরে প্রবেশ করে। পীয়ালির দিকে তাকাতেই আম্বালিকার পা জোড়া মাটিতে আটকে যায়, কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে ওর, সত্যি কি ওর সামনে ওর ছোট বেলার সেই বান্ধবী পীয়ালি বসে।
সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে যায় পীয়ালি, “তুই কেমন…” কথাটা শেষ করতে পারল না পীয়ালি।
আম্বালিকা ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে, “তুই সত্যি…”
তিনটে মেয়ে নিজেদের মায়ের দিকে তাকিয়ে স্তম্ভিত হয়ে যায়। দুই মহিলা যে নিজেদের পুরানো বান্ধবীকে খুঁজে পেয়েছে সেটা ওদের বুঝতে বেশি দেরি হয় না। এক অদ্ভুত খুশির আমেজে ঘর ভরে যায়। দিয়া আর ঝিনুকের খুশির সীমানা থাকে না, ওরা দুজনে যেমন প্রানের বান্ধবী ঠিক তেমন ওদের মায়েরাও প্রানের বান্ধবী। দুই বান্ধবী নিজেদের পুরানো গল্প স্মৃতি চারনে মশগুল হয়ে যায়।
পীয়ালি বলে, যে আম্বালিকা চলে যাওয়ার পরে নীলাদ্রি বেশ কয়েকবার ওদের বাড়িতে এসেছিল ওর খোঁজ নেওয়ার জন্য, কিন্তু সেই খবর ওর কাছে ছিল না। বেশ কয়েক বছর পরে পীয়ালির বিয়ে হয়ে যায় সোমনাথের সাথে। সোমনাথ তখন রানীগঞ্জে এক কোলিয়ারি তে চাকরি করত, বিয়ের পর পীয়ালি ও কোলকাতা ছেড়ে চলে যায়। বছর দশেক আগে সোমনাথের ট্রান্সফার হয় কোলকাতা হেডঅফিসে, সল্টলেকে একটা ফ্লাট কিনেছে সেখানেই থাকে। ঝিনুক ওদের বড় মেয়ে, কয়েক দিন পরেই ঝিনুকের বিয়ে। সেই সুবাদে ছোট মেয়ে ওদের নেমন্তন্ন করতে এসেছিল।
আম্বালিকা ঝিনুকের মাথায় গালে হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করে, “ভালো থাকিস মা, আশীর্বাদ করি তুই যেন সুখী হস।”
পীয়ালি জিজ্ঞেস করে, “তোর ভাই এখন কি করছে?”
আম্বালিকা স্মিত হেসে বলে, “রিশুর কথা বলছিস? সে অনেক কথা।” গলা নামিয়ে কানে কানে বলে, “ও আর আমার সেই ছোট ভাই নেই, এখন ও আমার বড় পুত্র।”
আম্বালিকার কথা শুনে কিঞ্চিত আশ্চর্য হয়ে যায় পীয়ালি, কি করে এক দিদি “মাম্মা” তে পরিনত হয়েছে সেই কাহিনী বলতে শুরু করে পীয়ালিকে। দিল্লীর সব থেকে বড় মেডিকেল কলেজের অরথপেডিক সারজেন শুনে আরো বেশি অবাক হয়ে যায়। ওদের গল্প যেন আর শেষ হতে চায় না, অনেক বছর পরে দুইজনের দেখা। ইতিমধ্যে নীলাদ্রিও অফিস থেকে চলে আসার পরে ওদের গল্প গুজব আরো জমে ওঠে। দিয়া আর ঝিলিক নিজেদের নিয়েই বেশি ব্যাস্ত হয়ে পরে। ঝিনুক ফোনে পার্থর সাথে গল্প করতে করতে ঘুরে ঘুরে বাড়িটা দেখে। ঝিলিক আবদার করে, যেহেতু ওর মা আর আম্বালিকা আন্টি দুই বান্ধবী সেহেতু বিয়ের কয়েকটা দিন দিয়া ওর সাথেই থাকবে। পীয়ালিও খানিক আবদার করে, এতদিন পরে খুঁজে পাওয়া বান্ধবী সুতরাং জোর একটু বেশি খাটবে। সম্মতি পেতেই দুই বান্ধবীর খুশির সীমানা থাকে না। পীয়ালি ফিরে যাওয়ার আগে আম্বালিকা জানায় যে পরের দিন বিকেলে সবাইকে নিয়ে ওদের বাড়িতে বেড়াতে যাবে।
দুপুরের পর থেকেই ঝিনুকের মনে উড়ু উড়ু ভাব, মনের মধ্যে সংশয় কয়েকদিনের মধ্যেই বিয়ে, এই সময়ে বাড়ি থেকে বেড়াতে বের হওয়ার জন্য অনুমতি পাবে কি না। পার্থ সকাল থেকে দুই তিন বার ফোন করেছে। ঝিনুক জানিয়ে দিয়েছে যে কোন ভাবে মাকে মানিয়ে নিয়ে বিকেলের দিকে বেড়িয়ে যাবে। সময় যত কাছে আসে, তত বুকের মধ্যে দুরুদুরু ভাব বেড়ে ওঠে ঝিনুকের। শীতকাল দিন ছোট তাই দুপুরের খাওয়ার পরেই সাজতে শুরু করে দেয়। সেজে গুজে তৈরি হয়ে বুক ভরে শ্বাস নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে মাকে জানায় যে একজন বন্ধুর বাড়িতে নেমন্তন্ন করতে যাবে। পীয়ালি জানিয়ে দেয় বড় মেয়েকে যে কয়েকদিনের মধ্যে বিয়ে এই সময়ে বাড়ি থেকে মেয়েদের বের হওয়া মানা। মায়ের কথা মানতে নারাজ ঝিনুক, খানিক আবদার করেই মিনতি করে শুধু মাত্র কয়েক ঘন্টা, টাক্সি করে যাবে দেখা করবে একটু গল্প করবে তারপর ফিরে আসবে। পীয়ালি স্বামী সোমনাথের দিকে তাকায়, ঝিনুকের বাবা রেগে যান মেয়ের এহেন অহেতুক জেদের কথা শুনে। স্ত্রীর দিকে রোষ কষিত দৃষ্টি হেনে বলে, বড় মেয়ের এই অবনতির জন্য পীয়ালি দায়ি, আদর দিয়ে মাথায় করে রাখার ফল, এই সময়ে কোন মেয়ে কি বাড়ি থেকে বের হয়। মুখ গোমড়া হয়ে যায় ঝিনুকের, ওদিকে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে দেখে মোবাইলে বারবার পার্থের ফোন। ঝিনুক রেগেমেগে পা দাপিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে যায়, শেষ পর্যন্ত কোন কান্ড না করে বসে ভেবেই পীয়ালি মেয়েকে সম্মতি দেয়।
টাক্সিতে বসেই পার্থকে ফোনে জানিয়ে দেয় ওর আসার কথা। টাক্সি চলা মাত্র ওর মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে, কাজটা কি ঠিক হল, মায়ের ওপরে বাবার ওপরে এমন ভাবে জেদ করে চলে আসাটা? নিজের পোশাকের দিকে একবার দেখে, পরনে একটা চাপা হাতকাটা গোলাপি রঙের টপ, উদ্ধত দুই স্তনের আকার অবয়াব অতি সহজেই পরিস্ফুটিত, নিচে একটা ফ্রিল হাঁটু পর্যন্ত লম্বা হাল্কা নীল রঙের ঢিলে স্কারট, শীতকাল বলে টপের ওপরে একটা নীল রঙের জিন্সের জ্যাকেট, পায়ে থাই হাই জুতো। পার্থের পছন্দ মতন, কালো রঙের লেস ব্রা আর প্যান্টি পড়েছিল। চাপা আঁটো কালো ব্রার মধ্যে থেকে দুই সুগোল স্তন ঠিকরে সামনের দিকে উঁচিয়ে। আনমনা হয়ে ফোন নিয়ে হাতের মধ্যে নড়াচড়া করতে করতে ভাবে কয়েকদিন পরেই বিয়ে করে বাড়ি থেকে চলেই যাবে। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে ওর পা আর মাটিতে নেই, ছোট বোনের সাথে আর সেই রকম কথাই বলা হয় না, বেশির ভাগ সময়ে পার্থের সাথে ফোনে কাটায় না হলে বান্ধবীদের সাথে বিয়ের কেনাকাটা নিয়েই মেতে থাকে। ওর মাথায় যেন শুধু পার্থ আর বিয়ের পরের সুন্দর এক সাজান বাগানের স্বপ্নে ভরপুর। পার্থর সাথে মাত্র এক বছরের দেখা, কিন্তু ওর বোন ত ছোট বেলা থেকে ওর পাশে ছিল। একবারের জন্য মনে হল ঝিলিক কে একটা ফোন করে, মাকে অন্তত ফোন করে ক্ষমা চায়, প্লিজ রাগ কর না তাড়াতাড়ি চলে আসব। কিন্তু কোথায় যেন বাধে, দুরন্তপনা যেন ওর ধমনীতে, কারুর সামনে সহজে ঝুঁকতে নারাজ।
পার্থ সাথে পরিচয় হয়েছিল ওর এক বান্ধবীর জন্মদিনের পারটিতে। পার্থের বাড়ি গড়িয়ার দিকে, ওর বাবার কাপড়ের ব্যাবসা এবং সেই সাথে এই প্রোমটারি ব্যাবসায় কিছু টাকা খাটিয়েছে। প্রথমের দিকে বিশেষ পাত্তা দেয়নি পার্থকে, তবে পার্থ যখনি সময় পেত ওর কলেজের বাইরে এসে দাঁড়িয়ে থাকত। শুরুর দিকে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করত, শুরুতে পার্থ বিশেষ আগ বাড়িয়ে কথা বলেনি তবে ওকে পেছন পেছন অনেক ঘুরেছে। শেষে একদিন কথা বলে, কথা বলে বোঝে যে ছেলেটা বেশ মিশুকে, তারপরে আর অন্যদিকে তাকায়নি। কয়েক মাস আগে এমবিএ শেষ করার পরে বাড়িতে জানায় পার্থের কথা, ব্যাবসাদার পরিবার শুনে বাবা এক কথায় মানা করে দিয়েছিল। অনেক ঝগড়া ঝাটি, একবার ঝিনুক ছুরি নিয়ে নিজের হাত কাটতে গেছিল। সেই দেখে শেষ পর্যন্ত ওর মা ওর বাবাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করায়। পার্থ অত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চায়নি, একপ্রকার ঝিনুকের জেদের বশে ওদের বিয়ের ঠিক হয়। ঝিনুক বলে ও খোলা আকাশে উড়তে চায়, ওই বাড়িতে থাকলে ওর এই উন্মুক্ত জীবনের স্বপ্ন কোনদিন পূরন হবে না। পার্থের এক বন্ধু, পরেশের ফ্লাটে ওদের এই পার্টির আয়োজন। পরেশের ফ্লাটে কয়েকবার পার্থর সাথে পারটি করতে এসেছে ঝিনুক। পরেশ সল্টলেকে একটা আই টি কোম্পানিতে চাকরি করে, সেই ফ্লাটে ওর গার্লফ্রেন্ড, রিনাকে নিয়ে লিভ-ইন থাকে। পার্থ ওকে একবার বলেছিল বাড়ি ছেড়ে ওর সাথে লিভ-ইন করতে, তাতে ওর মনে বাধে তাই বলেছিল যে একদম বিয়েই করতে হবে। আধা ঘন্টার মধ্যেই সেই ফ্লাটে পৌঁছে যায় ঝিনুক।
কলিং বেল বাজাতেই দরজা খোলে পার্থ। পার্থকে দেখেই গলা জড়িয়ে কোলের ওপরে ঝাঁপিয়ে পরে ঝিনুক, “মুয়াআআ মাই ডারলিং…”
পার্থ ওর কোমর জড়িয়ে মাঠি থেকে তুলে নিয়ে ঠোঁটে ওপর শিক্ত চুম্বন এঁকে দেয়, “মাই সুইট ড্যামজেল।” পার্থ একের পর এক চুম্বনে অস্থির করে তোলে ঝিনুক কে।
রিনা শেষ পর্যন্ত বলে ফেলে, “ওর পারি না রে, পাশের ঘর খালি আছে চলে যা।”
রিনার কথায় সম্বিত ফেরে ঝিনুকের, পার্থের গলা ছেড়ে হেসে বলে, “ব্যাস চারদিন তারপরে রুম থেকে বের হব না।”
হেসে ফেলে পার্থ, ওর কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে, “কালো প্যান্টি টা পড়েছ নাকি সেটাও খুলে রেখে এসেছ?”
কথাটা কানে যেতেই কান লাল হয়ে যায় ঝিনুকের, পার্থকে খান কয়েক চাটি মেরে বলে, “দরজায় তালা মারা, যা করার সব কয়েকদিন পরেই হবে।”
হেসে ফেলে পার্থ, “দরজায় তালা মারা হলেও, দরজার বাইরে নক করতে ত ক্ষতি নেই।”
লাজুক হাসে ঝিনুক, “আমার হাতে কিন্তু অত সময় নেই যে নক করা হবে।”
পার্থ সোফায় বসে ঝিনুকের হাত ধরে টেনে নিজের কোলের ওপর বসিয়ে বলে, “ঠিক আছে, নক করার সময়ে দেখা যাবে।”
সবাই ঝিনুকের অপেক্ষায় ছিল, পার্থের অনুমিত পেয়ে পরেশ ড্রিঙ্কস বানাতে শুরু করে দেয়।
সবাই গ্লাস উঠিয়ে ঝিনুক আর পার্থ কে বলে, “চিয়ারস ফর ইউর লাভ লাইফ।”
পার্থের কোলের ওপরে বসেই মদের গ্লাসে চুমুক দেয় ঝিনুক। গল্প গুজব হাসি ঠাট্টাতে মুখরিত হয়ে ওঠে ছোট ঘরটা। বেশি মদ খাওয়ার অভ্যেস নেই ঝিনুকের, একটা গ্লাস নিয়েই ছোট ছোট চুমক দেয় আর পার্থের কোলে বসে আদর খায়। পার্থ কখন যেন ওর টপ সরিয়ে নরম পেটের ওপরে হাত নিয়ে গেছে সেটা টের পায় যখন পার্থের হাত ঠিক ওর স্তনের নিচে পৌঁছে যায়। চাপা ব্রার মধ্যে উদ্ধত স্তন জোড়া হাঁসফাঁস করে ওঠে আসন্ন কামোত্তেজনায়। চোখ জোড়া আপনা থেকে ঢুলুঢুলু হয়ে যায় ঝিনুকের। পাতলা স্কার্ট ফুঁড়ে কোমল নিতম্বের খাঁজের মাঝে পার্থের তপ্ত কঠিন লিঙ্গের পরশ অনুভব করে। ঝিনুকের পাতলা কোমর জড়িয়ে চেপে ধরে কোলের ওপরে বসিয়ে রেখেছে পার্থ। অনবরত পার্থের কঠিন লিঙ্গ ওর নধর পাছার খাঁজে দুষ্টুমি করে চলেছে। কামনার শিহরন ওর সারা অঙ্গে বিদ্যুতের ঝলকানির মতন খেলে বেড়ায়। দুই চোখের তারায় মাতন লাগে ঝিনুকের, ইসস সত্যি ছেলেটা ওর স্কার্ট ছিঁড়ে দেবে মনে হচ্ছে।
ঝিনুক পার্থের হাত স্তনের নিচে চেপে ধরে বলে, “প্লিজ অন্তত ওদের সামনে নয়…”
হেসে ফেলে পার্থ, “ধ্যাত আমি কিছু করেছি নাকি?” ওর হাত ধরে সোফা থেকে উঠে বলে, “চল একটু ডান্স করি।”
এপর ওদের নতুন জীবন, সেই জীবন নিয়েই ব্যাস্ত হয়ে পড়বে। মিউজিক সিস্টেমে খুব জোরে হিন্দি সিনেমার গান বেজে চলেছে। নাচতে নাচতে সারা অঙ্গে পার্থের তপ্ত স্পর্শ অনুভব করে ঝিনুক। অন্যদিকে রিনাকে নিয়ে মেতে উঠেছে পরেশ, সেদিকে ওদের বিশেষ খেয়াল থাকে না। ঝিনুকের মদের গ্লাস শেষ, চোখে রঙ লেগে গেছে, সেই সাথে নাচতে নাচতে মাথায় এক ঝিমুনি ভাব দেখা দেয়। পরেশ আর রিনা একটা সিগারেটের মতন কিছু একটা জ্বালিয়ে টানছে, সেই ধোঁয়ার বিকট গন্ধে ঝিনুকের মাথায় ঝিমুনি ভাব দেখা দেয়। পার্থের হাত ওর পিঠ ছাড়িয়ে নেমে যায় স্কারট ঢাকা সুগোল নিতম্বের ওপরে। ধিমে নাচের তালে তালে পাতলা স্কারটের ওপর দিয়েই ঝিনুকের দুই সুগোল কোমল নিতম্ব দুই থাবার মধ্যে পিষে ধরে, নিজের জানুসন্ধি ওর দুই কলা গাছের মতন সুগোল উরুর মাঝে চেপে ধরেছে। এক অদ্ভুত নেশায় পেয়ে বসে ঝিনুককে। পার্থের মাথার চুল খামচে ধরে, ওর পুরু ঠোঁটের ওপরে চেপে ধরে নিজের গোলাপি পাতলা নরম ঠোঁট জোড়া। পার্থের বুকের সাথে ওর কোমল স্তন জোড়া পিষে ধরে। কিঞ্চিত উত্তেজনায় স্তনের বোঁটা জোড়া ফুলে উঠেছে। দুই কলা গাছের মতন মোটা থাই মেলে দিয়ে পার্থের জানুসন্ধির সাথে নিজের জানুসন্ধি মিশিয়ে দেয়। পার্থের এক হাত ওর পাছার খাঁজে চলে গেছে, অন্য হাত ওর পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে চাপাচাপি করতে শুরু করে দিয়েছে। পার্থ ধিমে লয়ে নিজের লিঙ্গ ঝিনুকের মেলে দেওয়া দুই উরুর মাঝে চেপে নাড়িয়ে ওকে কামোত্তেজিত করে তলে। পার্থ ঝিনুকের জিব নিয়ে খেলতে খেলতে দেয়ালের সাথে পিষে ধরে তন্বী তরুণীর নধর দেহ। অজানা শিহরনে আন্দোলিত হয় ঝিনুকের সারা দেহ। পার্থের দুষ্টুমি ভরা আঙ্গুল ওর স্কারটের নিচে নগ্ন নিতম্বের ওপরে অনুভব করতেই সারা দেহে আলোড়ন খেলে যায়।
কাম কাতর মিহি কন্ঠে পার্থ কে বলে, “এই প্লিজ এইভাবে আমাকে মাতাল কর না, আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে।”
স্কারটের ভেত্র থেকে হাত বের করে পার্থ ওর হাত দুটো ওর মাথার ওপর চেপে ধরে, শরীরের সব ভার দিয়ে দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরে ঝিনুকের কোমল দেহকান্ড। ওর মুখবয়াবে পার্থের কামঘন উষ্ণ শ্বাস বয়ে যায়। হিসহিস করে বলে, “কি হয়েছে ঝিনুক, কয়েকদিন পরে যা হওয়ার সেটা কয়েকদিন আগে হয়ে গেলে ক্ষতি কি।”
মাথা ঝিম ঝিম করছে ঝিনুকের, “প্লিজ এমন করে না সোনা।”
পার্থ ওর গালের ওপরে নাক ঘষে বলে, “তোমার গায়ের গন্ধ আজকে আমাকে মাতাল করে দিয়েছে ডারলিং।”
ঝিনুক ছটফট করে ওঠে, পার্থের এই রূপ আগে কোনদিন দেখেনি। কাতর কন্ঠে মিনতি করে, “হাতে লাগছে পার্থ, কি করছ?”
পার্থ ঝিনুক কে ছেড়ে দিয়ে হেসে বলে, “ওকে ডারলিং, এখন এই টুকু, তবে যাওয়ার আগে কিন্তু দরজায় নক করব।”
লজ্জায় লাল হয়ে যায় ঝিনুক, পার্থের পেটের ওপর আদর করে চিমটি কেটে বলে, “আর কত নক করবে, এতক্ষন যা করে গেলে তারপরেও চাই নাকি?”
মাথা ঝাঁকিয়ে হেসে ফেলে পার্থ, “ওটা ত ট্রেলার ডারলিং, নকিং এখন বাকি আছে…”
মদের বোতল খুলে বেশ কয়েক ঢোক মদ গলায় ঢেলে নেয় পার্থ। সেই দেখে সবাই হা হা করে ওঠে। ঝিনুক একটু রেগেই ওকে বলে, “করছ কি তুমি?”
মাথা ঝাকিয়ে উত্তর দেয়, “আই এম অল রাইট ডারলিং, আমি একদম ঠিক…”
আগের মতন আবার চারজনে মিলে গল্প গুজব শুরু করে দেয়। পরেশ সিগারেটের মতন কিছু একটা টানছিল সেটা পার্থের দিকে এগিয়ে দেয়, পার্থ সেই সিগারেটে একটা টান মেরে মাথা ঝাঁকিয়ে ঝিনুকের দিকে এগিয়ে দেয়। ঝিনুক বন্ধুদের সাথে মিশে কয়েকবার মজা করে সিগারেট খেয়েছে তবে গাঁজা কোনদিন নেয়নি, তাই মাথা নাড়িয়ে পার্থের কাছ থেকে সেই সিগারেট নেয় না। কিছু পরে পার্থ ঝিনুককে পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে যায়। বাকিরা ওদের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারা করতেই কিঞ্চিত লজ্জায় ওর কান গাল লাল হয়ে যায়। ঝিনুক আর পার্থ দুইজনেই এক এক গ্লাস মদ নিয়ে পাশের রুমে ঢুকে যায়।
ঘরে ঢুকেই পার্থ হাতের গ্লাসের পুরো মদটা গলায় ঢেলে বলে, “একটা ইম্পরট্যান্ট কথা আছে।”
ঝিনুক মদের গ্লাসে ছোট এক চুমুক দিয়ে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “কি কথা?”
পার্থ গলার বলে, “আমার এখুনি পনেরো লাখ টাকার দরকার।”
ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে ঝিনুক, “হটাত এত টাকার দরকার কিসের?”
পার্থের চোখ জোড়া ততক্ষণে জবা ফুলের মতন লাল হয়ে গেছে, অনেক গ্লাস মদের ফল সেটা বুঝতে ঝিনুকের অসুবিধে হয় না। পার্থ ওর দিকে দুই পা এগিয়ে এসে বলে, “ঝিনুক আমি এক জায়গায় ভীষণ ভাবে ফেঁসে গেছি। আগামি কাল পাওনাদার আসবে, কাল দুপুরের মধ্যে যদি পনেরো লাখ টাকা যোগার না করতে পারি তাহলে ওরা খুব মারবে আমাকে। প্লিজ ঝিনুক, আমি জানি তোমার একাউন্টে তোমার বাবা বারো লাখ টাকার মতন দিয়েছে।”
কথাটা শুনে থমকে যায় ঝিনুক, ভালবাসার বশতে বেশ কয়েকদিন আগে ওর একাউন্টের খবর পার্থকে জানিয়েছিল। “তুমি কিসে কি করেছ আর আমি সেই টাকা তোমাকে কেন দেব?”
মত্ত অবস্থায় পার্থ ওকে বলে, “ঝিনুক কয়েকদিন পরেই আমাদের বিয়ে, এর মাঝে আবার তুমি আর আমি কেন?”
ঝিনুকের পার্থের পাশ থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলে, “না ওই টাকা আমি তোমাকে দেব না।”
হিসহিস করে ওঠে পার্থ, চোয়াল শক্ত অথচ কন্ঠের স্বর নরম করে বলে, “প্লিজ দাও না হলে ওরা আমাকে আগামি কাল মেরে ফেলবে।” ঝিনুকের হাত শক্ত মুঠোর মধ্যে ধরে বলে, “দাও ঝিনুক প্লিজ, না হলে আমাকে অন্য পথ নিতে হবে।” শেষের বাক্যের মধ্যে এক কঠিন ভাব।
ঝিনুকের রক্ত গরম হয়ে যায় পার্থের এই কথা শুনে, শক্ত মুঠো থেকে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করতে করতে জিজ্ঞেস করে, “আমি না দিলে কি করবে?”
পার্থ অশ্লীল ভাবে ওর নরম গালের ওপর জিব দিয়ে চেটে বলে, “আছে আমার কাছে অন্য পথ ঝিনুক।”
ছটফট করে ওঠে ঝিনুক, এতদিন ধরে যাকে ভালোবেসে এসেছে, সে শুধু মাত্র ওর টাকার জন্য ওর সাথে প্রেমের নাটক করে গেছে, সেটা ভাবতেই ওর দুই চোখে আগ্নি অশ্রু তে চিকচিক করে ওঠে। রাগে দুঃখে চাপা গর্জে উত্তর দেয়, “না ঐ টাকা তুমি পাবে না।”
ইতরের মতন হেসে ফেলে পার্থ, “টাকা না পাওয়া পর্যন্ত তুমি যেতে পারছ না।”
ওই হাসি দেখে গা জ্বলে ওঠে ঝিনুকের, চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে আসে, “তুমি আমার সাথে এমন করতে পারলে?”
পার্থ হাসে, “টাকা ঝিনুক টাকা, তুমি সুন্দরী তায় আবার বড়লোকের মেয়ে তাই’ত এত প্রেম তোমার সাথে। সত্যি বলছি আমি এখুনি টাকা চাইতাম না, একবার বিয়ে হয়ে যেত, কিন্তু শালা ওই পাওনাদারদের আর ঠেকিয়ে রাখতে পারলাম না, ওদের কালকেই টাকা চাই।”
গানের জোর আওয়াজের ফলে ওদের কথাবার্তা পাশের ঘরের পরেশ আর রিনা শুনতে পায় না। ঝিনুক বুঝতে পারে এতদিন কি ভুল করেছে। আহত সর্পিণীর মতন ফোঁস করে ওঠে, “আমি তোমাকে মেরে ফেলব।” পার্থ ওর দিকে এগিয়ে যেতেই পাশে পরে থাকা একটা মদের বোতল দেয়ালে ভেঙ্গে অর্ধেক টুকরো হাতে নিয়ে পার্থের দিকে উঁচিয়ে বলে, “ইউ সন অফ বিচ, শুয়োরের বাচ্চা, তুই শুধু টাকার জন্য আমার সাথে এতদিন গেম খেলে গেলি?”
হাতে কাঁচের ভাঙ্গা কাঁচের বোতল দেখে ক্ষণিকের জন্যে দমে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয় পার্থ, “শুধু কি আর টাকা, তোমার ওই সেক্সি শরীর, নরম গরম পুসি কত কিছু আছে তোমার কাছে।” নিজের মোবাইল দেখিয়ে বলে, “তোমার প্রচুর সেক্সি সেলফি আর ভিডিও আমার মোবাইলে আছে ঝিনুক।” জিব দিয়ে চুকচুক শব্দ করে বলে, “জানো আমার বন্ধুরা কি বলে তোমার ভিডিও দেখে? ওদের ইচ্ছে আমাদের প্রথম রাতের লাইভ দেখা। আমিও বলেছি যে আমি ভিডিও করব…”
কথাটা শুনে ঝিনুকের সারা শরীর আতঙ্কে আর তীব্র ঘৃণায় কেঁপে ওঠে, পার্থের আবদারে কতবার বাথরুমে ঢুকে ব্রা আর প্যান্টি পরে ছবি তুলে পাঠিয়েছে। কতবার বিভিন্ন লাস্যময়ী অঙ্গভঙ্গি করে ভিডিও পাঠিয়েছে। একবার যদি সেই সব ছবি আর ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয় তাহলে ওর আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন পথ খোলা থাকবে না।
কিন্তু এই ইতর লম্পটের কাছে হেরে যেতে নারাজ ঝিনুক, “কি করবে ওই সেলফি দিয়ে? ইন্টারনেটে দেবে? দাও আমিও পুলিসের কাছে যাবো।” কেঁদে ফেলে ঝিনুক, আর কয়েকদিন পরে সবকিছুই উজাড় করে দিত এই ইতর পার্থের সামনে সেটা বিশ্বাস করতে ভীষণ কষ্ট হয় ওর, “সত্যি তুমি আমার সাথে এমন করতে পারলে?” পার্থ ওর সামনে মোবাইল নাড়িয়ে এগিয়ে আসতেই আহত সাপের মতন ফোঁস করে ওঠে, “একদম আমার দিকে পা বাড়াবি না।” বলে ওর দিকে বোতল উঁচিয়ে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে আসে।
ঝিনুকের ওই রুপ দেখে রিনা আর পরেশের নেশার ঘোর কেটে যায়। পরেশ ঝিনুকের হাত থেকে ভাঙ্গা কাঁচের বোতল ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ঝিনুক ওর দিকেও বোতল উঁচিয়ে শাসিয়ে দেয়, “এক পা এগোলে আমি ছুঁড়ে মারব এই বোতল।” এক ঝটকায় ওর হৃদয় ভেঙ্গে খানখান হয়ে গেছে। এতদিনের সাজান স্বপ্ন এক ধাক্কায় চুরমার হয়ে গেছে।
পার্থ ওকে বলে, “তুমি যেতে পারছ না ঝিনুক। তুমি এখানে এসেছ সেটা তোমার বাড়ির লোক জানে না। যার নাম করে এসেছ তাকেও হয়ত বলনি তুমি কোথায় এসেছ। টাকা না পাওয়া পর্যন্ত তুমি এখান থেকে বের হতে পারবে না ঝিনুক।” পার্থ মোবাইল খুলে ওর একটা অর্ধ নগ্ন ভিডিও চালিয়ে ওকে দেখিয়ে হেসে বলে, “শুধু মাত্র পনেরো লাখ ঝিনুক, তোমার একাউন্টে বারো লাখ আছে। তোমার বাবাকে ফোন করে দাও, বাকি তিন লাখ না পাওয়া পর্যন্ত তুমি এখানে”
দরজা আটকে পরেশ দাঁড়িয়ে, অন্যদিকে এক পা এক পা করে পার্থ ওর দিকে ক্ষুধার্ত হায়নার মতন লোলুপ দৃষ্টি হেনে এগিয়ে আসে। নিজেকে বাঁচাতে হাতের মধ্যে ধরে থাকা ভাঙ্গা বোতল একমাত্র সম্বল, কোনরকমে জ্যাকেট তুলে নেয় মেঝে থেকে, জুতো পরার কথা ভুলে যায়। পরেশের দিকে বোতল উঁচিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, “দরজা থেকে সরে যা না হলে তোকে খুন করে দেব।”
পরেশ হেসে ফেলে, “ডোন্ট বি সিলি ঝিনুক, বোকার মতন কাজ কর না। জাস্ট পনের লাখ।”
আহত ভগ্ন কাঁপা গলায় পরেশের দিকে দেখে বলে, “তুই ও ওর সাথে মিলে আছিস? তোরা এতদিন আমার সাথে শুধু মাত্র ছল চাতুরি করে গেছিস।” রিনার দিকে তাকিয়ে দেখে ঝিনুক, “তুই ও কি ওদের সাথে?”
রিনা চোয়াল চেপে মাথা নাড়িয়ে বলে, “না রে আমি এইসবের মধ্যে নেই।” পরেশের দিকে এগিয়ে যায়, “ওকে যেতে দাও, না হলে তোমাকে আমি টুকরো টুকরো করে দেব।” বলেই রিনা দৌড়ে রান্না ঘর থেকে একটা বড় ছুরি নিয়ে এসে পরেশের দিকে উঁচিয়ে ধরে।
আহত বাঘিনী নিজেকে বাঁচাতে শেষ চেষ্টা করে, হাতের বোতল পরেশের দিকে ছুঁড়ে মারে, নিজেকে বাঁচাতে পরেশ দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে রিনা, পরেশের দিকে এগিয়ে যায় ছুরি উঁচিয়ে, ঝিনুককে জুতো নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে বলে।
মোবাইল হাতে নিয়ে পার্থ ওর দিকে এগিয়ে আসে, “খুব সেক্সি সেলফি গুলো ঝিনুক, ইসসস যে ভাবে তুমি সেদিন লাল প্যান্টির ওপরে আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে ভিডিওটা দিয়েছিলে সেটা দেখে ত”…
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই এক ঝটকায় ওর হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নেয় ঝিনুক। জুতো হাতে নিয়ে পার্থের দিকে ঝাপসা চোখে ভগ্ন হৃদয়ে আহত কন্ঠে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে, “তোকে আমি দেখে নেব।”
অট্টহাসিতে ফেটে পরে পার্থ, “তোর বিয়ে তাহলে হচ্ছে না। আমি দেখব তোর ফ্যামিলি কি করে মাথা তুলে দাঁড়ায়।”
শেষ বাক্য কানে যেতেই কান্নায় ভেঙ্গে পরে ঝিনুক, কোন রকমে জুতো পরে গায়ে জ্যাকেট জড়িয়ে ফ্লাটের বাইরে দৌড়ে বেড়িয়ে যায়। ওর চোখের জল আর থামতে চায় না, সত্যি মানুষ কত বড় প্রতারক, শুধু মাত্র ওর দেহ আর টাকার জন্য এতদিন ওর সাথে ভালোবাসা প্রেমের নাটক করে গেছে পার্থ। মাথার চুল অবিন্যাস্ত, চোখের জলে ওর সাজ ধুয়ে গেছে অনেক আগেই। ওর দেহে যেখানে যেখানে পার্থ হাত দিয়েছিল সেই জায়গা গুলো জ্বালা করতে শুরু করে দিয়েছে। কোন রকমে একটা টাক্সিতে বসে ভেঙ্গে পরে ঝিনুক। এই মুখ নিয়ে করে বাড়িতে দেখাবে। পার্থের মোবাইল খুলে কারডটা ট্যাক্সির জানালার বাইরে ফেলে দেয়, সেই সাথে মোবাইলটাও রাস্তায় ফেলে দেয়। পাতলা কব্জিতে বাঁধা ঘড়ির দিকে দেখে, রাত প্রায় আটটা বাজতে চলেছে। বড় দের কথা মেনে যদি চলত তাহলে হয়ত আজকে ওর এই দুর্দশা হত না। বাবা মা নিশ্চয় ওর জন্য খুব চিন্তা করছেন। ঠোঁটে চুমু খেয়েছিল ইতর জঘন্য ভাবে, বারেবারে হাতের উলটো পিঠ দিয়ে মুখ মুছে সেই ইতর চুমুর পরশ মুছে দিতে চেষ্টা করে। গালের ওপরে জঘন্য ভাবে জিব বুলিয়ে দিয়েছিল, নখের আচরে সেই চামড়া খামচে দেয় ঝিনুক। পাগল হয়ে যায়, যেখানে যেখানে পার্থ ওকে ছুঁয়েছিল সেই সব জায়গায় নখের আঁচর কেটে চামড়া ছাড়িয়ে দিত চেষ্টা করে। কান্না আর থামে না, বুকের মধ্যে অপার শুন্যতা, এরপর কি করবে কি হবে সেটা ভেবে কোন কূল কিনারা করতে অক্ষম হয়ে যায়। প্রবল ঘৃণা আর দুঃখে কাঁপতে কাঁপতে সিটের মধ্যে কুঁকড়ে বসে থাকে।
ড্রাইভার মনে হয় কয়েক বার কিছু জিজ্ঞেস করেছিল, “ম্যাডাম আপনি ঠিক আছেন ত?”
কান্না ভেজা ক্ষুধ কন্ঠে ঝাঁঝিয়ে ওঠে ড্রাইভারের দিকে, “তুমি গাড়ি চালাও…”
একবারের জন্য মনে হয় যে এই অবস্থায় আর বাড়ি ফিরে যাবে না। ওর সব শেষ, খোলা আকাশে ডানা মেলে উড়ে যাওয়ার স্বপ্ন শেষ, নিজের বাড়িতে নিজের মতন করে থাকার স্বপ্ন শেষ। পার্থের সাথে ঘর বেঁধে কতকি করবে ভেবে রেখেছিল। এই রাস্তায় কত এক্সিডেন্ট হয়, একবার ভাবে যে এইখানে নেমে পরে, রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে পরে, কোন এক গাড়ি খুব জোরে ওকে ধাক্কা মেরে চলে যাবে, ওর প্রাণহীন দেহ লুটিয়ে পড়বে এই খালি রাস্তার মাঝে। বাড়ির সামনে ট্যাক্সি দাঁড়াতেই চোখ বুজে কেঁপে ওঠে ঝিনুকের প্রান।
সন্ধ্যের পরেই আম্বালিকা দীপকে নিয়ে পীয়ালির বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিল, কথা ছিল নীলাদ্রি অফিস থেকে সোজা ওদের সল্টলেকের বাড়িত চলে আসবে। দিয়া আর ঝিলিক নিজেদের নিয়েই সকাল থেকে ব্যাস্ত, ওর দুজনে খুব খুশি একে অপরের সাথে গতরাতে গল্প করেই কাটিয়েছে। বসার ঘরে জমিয়ে গল্প চলছে, নীলাদ্রি অনেক আগেই চলে এসেছিল পীয়ালির বাড়িতে। গল্প করলেও পীয়ালির মন পরে ছিল ঝিনুকের জন্য, এত রাত হয়ে গেল এখন মেয়েটা এল না, ফোন উঠাচ্ছে না, ভীষণ চিন্তায় পরে যায়। সোমনাথ মাঝে মাঝেই ঘড়ির দিকে তাকায় আর ইশারায় পীয়ালিকে জিজ্ঞেস করে ঝিনুকের কথা।
পীয়ালির অস্থির ভাব আম্বালিকার চোখ এড়ায় না, “কি রে কিছু হয়েছে নাকি?”
বুকের মধ্যে অজানা আশঙ্কায় দুরু দুরু করতে শুরু করে দিয়েছে ততক্ষনে, তাও মুখে হাসি টেনে বলে, “না রে কিছু না।”
আম্বালিকা এদিক ওদিক দেখে জিজ্ঞেস করে, “ঝিনুক কে দেখছি না যে? কোথাও গেছে নাকি?”
কিছু বলার আগেই, বিধস্ত ঝিনুক খোলা দরজা দিয়ে ঝড়ের বেগে ঘরে ঢুকে মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে কেঁদে ফেলে। ওকে ওই বিধস্ত অবস্থায় দেখে সবাই আশ্চর্যচকিত হয়ে যায়। পীয়ালির বুক ভয়ে দুরুদুরু করে ওঠে, মেয়ের দিকে তাকিয়ে আরো ভয় পেয়ে যায়, সারা গালে হাতে নখের আঁচর, চুল অবিন্যাস্ত। চরম আশঙ্কাজনিত কন্ঠে মেয়েকে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে? তুই এতক্ষন কোথায় ছিলিস?”
মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে গুমড়ে কেঁদে ফেলে ঝিনুক, “আমি বিয়ে করব না, পার্থ একটা মস্ত বড় শয়তান আমকে কি না শেষ পর্যন্ত…” কথাটা আর শেষ করতে পারে না।
পীয়ালি মেয়েকে বুকের কাছে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে। আম্বালিকা ঝিনুকের মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে একবার খুলে বল। পার্থ তোর সাথে কিছু করেছে?”
মায়ের কোলে মাথা গুঁজে মাথা নাড়িয়ে বলে, “আমি বিয়ে করব না, ও আমাকে …”
ভীত সন্ত্রস্থ সোমনাথ নীলাদ্রির দিকে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে। ঝিলিক আর দিয়া কথা বলতে ভুলে যায়। দিপ মোবাইলে গেম খেলছিল, সেটা থামিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে। আরো বেশ কয়েকজন আত্মীয় সজ্জন উপস্থিত ছিল ঘরের মধ্যে, সবাই অজানা আশঙ্কায় ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে কেঁদে মায়ের কাছে পুরো ঘটনার বিবরন দেয় ঝিনুক।
ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠে সোমনাথ, “তোকে হাজার বার বলেছিলাম পার্থ ছেলেটা ভালো নয়, কোনদিন ওর মতিগতি আমার ভালো লাগে নি। কিন্তু তুই কিছুতেই শুনবি না। আমি ওর বাবার সাথে কথা বলছি।”
বাবার ক্রোধিত গলা শুনে রাগে দুঃখে আরো বেশি ফেটে পরে ঝিনুক, “হ্যাঁ যার সাথে কথা বলার বলে নাও, কিন্তু আমি ওই শয়তানটাকে বিয়ে করব না।” মায়ের কোল ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বাবার দিকে দেখে, “আমি কাউকেই বিয়ে করব না।”
ক্রোধে দিগ্বিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে যায় সোমনাথ, মেয়ের দিকে তেড়ে গিয়ে বলে, “আমার মান সন্মান সব জলাঞ্জলি দিয়ে এখন বলছিস বিয়ে করবি না? তিন দিন পরে বিয়ে, সবাইকে নিমত্তন্ন করা হয়ে গেছে, লোকে কি বলবে? কতবার বলেছিলাম রানীগঞ্জের দিলিপের ছেলের সাথে বিয়ে দেব, তখন কিছুতেই আমার কথা শুনিস নি।” জল ভরা চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে থাকে ঝিনুক। মেয়েকে শাসিয়ে বলে সোমনাথ, “আর তোর কোন জেদ আমি মানব না। যখন বলব, যার সাথে বলব তখন তার সাথেই তোর বিয়ে হবে।”
আহত ঝিনুক পা দাপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায়। বেড়িয়ে যাওয়ার আগে বাবার দিকে দেখে বলে, “আমাকে জোর করে বিয়ে দিলে আমি বিষ খাবো।” ওর যে সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে, ভালোবাসার ওপর থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে।
মেয়ের কথা শুনে ডুকরে কেঁদে ওঠে পীয়ালি। বসার ঘরে নেমে আসে শ্মশানের স্তব্ধতা, কারুর মুখে কোন কথা নেই। আম্বালিকা পীয়ালিকে শান্তনা দিলেও কান্না থামান যায় না, বারেবারে আম্বালিকার কোলের ওপরে মূর্ছা যায়। সোমনাথ ফোন করে পার্থের বাবাকে সব ঘটনা জানায়, পার্থের বাবা ক্ষমা চায় কিন্তু সেই সাথে সোমনাথ জানায় যে তার মেয়ে এই বিয়েতে একদম নারাজ।
মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে আক্ষেপ করে বলে সোমনাথ, “এ জীবনে কি যে পাপ করেছি জানি না।” নীলাদ্রি ওকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করাতে, সোমনাথ ওকে বলে, “কি করিনি বলবেন? বাড়ির বড় মেয়ে, ছোট বেলা থেকে আদর দিয়ে মানুষ করেছি, যখন যা চেয়েছে দিয়েছি। পড়াশুনায় মাথা ভালো ছিল কিন্তু কিছুতেই সায়েন্স নিয়ে পড়ল না, ইংরেজি নিয়ে পড়ল তাতেও মানা করিনি। ওই এলাকার সব থেকে ভালো স্কুলে দুই মেয়েকে পড়িয়েছি।” দুশ্চিন্তায় হাত পা কাঁপতে শুরু করে দেয় সোমানাথের।
নীলাদ্রি সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “কিছু একটা উপায় বেড়িয়ে আসবে অত চিন্তা করবেন না।”
কাঁপা হাতে ফোন ধরে বলে, “একবার ভাবছি দিলিপকে ফোন করে জিজ্ঞেস করি, কয়েক মাস আগেও আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করছিল ঝিনুকের কথা। ওর ছেলে কিশলয় ব্যাঙ্গালোরে একটা আইটি কোম্পানিতে চাকরি করে।”
নীলদ্রি একবার আম্বালিকার দিকে দেখে একবার সোমনাথের দিকে দেখে। আম্বালিকাকে জড়িয়ে ধরে পীয়ালি ডুকরে কেঁদে ওঠে, “আমার অদৃষ্ট কি করব বল…”
আম্বালিকা ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “নিজেকে একটু সামলা, দ্যাখ দিলিপ কে ফোন করে কি বলে।”
রাগে গজগজ করতে করতে পীয়ালিকে দোষারোপ করে সোমনাথ, “এবারে আর মেয়ের জন্য কি করতে বলছ? বলত দিলিপের পায়ে ধরব? আমি আর কিছু চিন্তা ভাবনা করতে পারছি না।” পুরুষ মানুষ না হলে এতক্ষনে হয়ত কেঁদে ফেলতেন সোমনাথ।
আম্বালিকা পীয়ালিকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “তোর মেয়ে খারাপ ত নয়, একটু জেদি এই বয়সে অনেকেই একটু জেদি হয়। একদম বিপথে যেতে পারত, অনেক খারাপ কিছুও করতে পারত, আশা করি সেইসব কিছু করে বসেনি এতদিনে। আজকাল কত ছেলে মেয়ে বাড়ি ছেড়ে প্রেমিক প্রেমিকার সাথে লিভ-ইন করছে, তোর মেয়ে সেই পথে যায়নি। হ্যাঁ মানুষ চিনতে ভুল হয়েছে সেটাই আমাদের হামেশাই হয়। ভগবান সময় থাকতেই ঝিনুককে পথ দেখিয়ে দিয়েছে, না হলে একবার ভাব, যদি বিয়ের পর এইসব কান্ড হত তখন কি করতিস?”
কথাটা ভুল বলেনি আম্বালিকা, পীয়ালি বলে, “এই জেদি মেয়ে নিয়ে কত ভুগেছি জানিস। রানীগঞ্জে থাকতে এই আসানসোল, দুরগাপুর করে বেড়িয়েছে। কিছু বললেই মেয়ের মুখ ফুলে যেত, বেশি শাসন করতে আসলে দরজা বন্ধ করে না খেয়ে বসে থাকত।” চোখ মুছে আম্বালিকাকে বলে, “হ্যাঁ পারত হয়ত বিপথে যেতে, হয়ত কোন জন্মের পুন্য ফলেই ভগবান সময় থাকতে চোখ খুলে দিয়েছে।”
নিজের ঘরের মধ্যে ঢুকে বিছানায় লুটিয়ে পরে ঝিনুক। ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে গায়ে হাতে নখের আঁচর কেটে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করে তোলে। আর বেঁচে থেকে লাভ কি, ওর ত সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। শুধু মাত্র টাকার লোভে আর ওর শরীরের লোভেই প্রেমের নাটক করে গিয়েছে এতদিন। একটানে গায়ের টপ খুলে ফেলে, পেটে বুকে নখের আঁচর কেটে নিজেকে কষ্ট দেয়। ফর্সা ত্বক লাল হয়ে যায় নখের আঁচরে। কাঁপতে কাঁপতে বিছানার এক কোনায় কুঁকড়ে বসে থাকে। শ্বাস নিতে কষ্ট হয় ওর, বাড়ির ছাদ যেন যেকোনো মুহূর্তে ওর মাথার ওপরে ভেঙ্গে পড়বে। ফ্যানের দিকে তাকায় ঝিনুক, কতটা উঁচু সেটা মাপতে চেষ্টা করে, ওর ভার নিতে পারবে নিশ্চয়। বিছানার চাদর হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। তৎক্ষণাৎ ঝিলিক দৌড়ে এসে না ধরলে হয়ত ঝিনুক আত্মহত্যা করে নিত, ওর পেছন পেছন দিয়াও ঘরের মধ্যে ঢুকে ঝিনুকের এহেন অবস্থা দেখে আঁতকে ওঠে।
দিদিকে ওইভাবে চাদর হাতে বিছানায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রমাদ গোনে ঝিলিক। দৌড়ে এসে দিদিকে জড়িয়ে ধরে, “একি করছিস তুই?” বলেই কেঁদে ফেলে। “একটা বাজে ছেলের জন্য তুই আমাকে ছেড়ে বাবা মাকে ছেড়ে চলে যাবি?”
ঝিলিককে জড়িয়ে ধরে ভেঙ্গে পরে ঝিনুক, “বোন রে খুব পাপ করেছি…”
দুই বোন কে এই ভাবে কাঁদতে দেখে দিয়াও সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “ঝিনুকদি আমরা সবাই আছি, বাবা মা আছেন সব ঠিক করে দেবেন, তুমি এমন কর না।”
বোনের কোল থেকে মাথা উঠিয়ে জিজ্ঞেস করে, “বাবা কি দিলিপ আঙ্কেলকে ফোন করেছে নাকি?”
মাথা দোলায় ঝিলিক, “মনে হয়, সেই নিয়েই কথা হচ্ছিল।”
জোরে জোরে মাথা নাড়ায় ঝিনুক, “আমি কাউকেই বিয়ে করব না। এই জীবনের ওপর থেকে আমার বিশ্বাস উঠে গেছে রে বোন।”
দিদির মাথা বুকের ওপরে চেপে ধরে সান্ত্বনা দেয়, “আমার সোনা দিদি” দিদির চোখের জল মুছিয়ে বলে, “তোকে কাউকেই বিয়ে করতে হবে না, আমি বাবা মাকে বুঝিয়ে বলে দেব। এবারে প্লিজ একটু শান্ত হ।”
বসার ঘরের পরিবেশ থমথমে, কারুর মুখে কোন কথা নেই। বেশ কিছুক্ষন পরে আম্বালিকার পাশে এসে বসে নীলাদ্রি, ওর চোখে চোখ রেখে ভুরু নাচিয়ে কিছু একটা ইঙ্গিত করে। ভুরু কুঁচকে তাকায় স্বামীর দিকে, সত্যি ও যেটা ভাবছে সেটা কি নীলাদ্রি ও ভাবছে? অল্প হেসে মাথা দুলিয়ে সম্মতি দেয় নীলাদ্রি।
আম্বালিকা মুচকি হেসে নীলাদ্রিকে বলে, “সেইজন্য তোমাকে এত ভালোবাসি।”
এহেন পরিস্থিতিতে ওদের মুখে হাসি দেখে পীয়ালি আর সোমনাথ আশ্চর্য হয়ে যায়। আম্বালিকা পীয়ালির হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে, “আমার একটা প্রস্তাব আছে যদি তোরা কিছু মনে না করিস।” সোমনাথ, নীলাদ্রি আর আম্বলিকার দিকে হাজার প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে থাকে। আম্বালিকা বলে, “আমার বড় ছেলে, রিশু। অনেক দিন থেকেই রিশুর জন্য মেয়ে দেখছি কিন্তু ছেলে আমার কিছুতেই বিয়ে করবে না।”
পীয়ালি আশ্চর্য হয়ে যায়, “রিশু? কিন্তু ওকি এই অবস্থায় ঝিনুককে মেনে নেবে?”
নীলাদ্রি সোমনাথকে বলে, “যতদূর আমি ওকে চিনি, রিশু ওর মায়ের কথা কোনদিন ফেলতে পারবে না।”
কালো মেঘের কোনায় আশার আলো দেখতে পেয়ে পীয়ালির বুকে বল আসে, “জীবনে ভাবিনি যে আমার মেয়ে তোর বাড়ির বোউমা হবে। আমার জামাই যে একজন এতবড় ডাক্তার হবে সেটা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি রে।” বলেই আম্বালিকার দুই হাত জড়িয়ে কেঁদে ফেলে।
এতক্ষন যে ভয়ার্ত চাপা আওয়াজে বসার ঘর গুঞ্জরিত হয়েছিল সেটা আশার আলোয় পরিনত হয়। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে নীলাদ্রিকে জড়িয়ে ধরে সোমনাথ, “আপনাদের কি বলে যে ধন্যবাদ জানাবো ভেবে পাচ্ছি না।”
নীলাদ্রি হেসে সোমনাথকে জড়িয়ে ধরে বলে, “বুকে বল আনুন, বিয়ে এখন শেষ হয়ে যায়নি, শুধু বর পালটে গেছে বাকি সব ঠিক আছে।”
চোখের জল মুছে হেসে ফেলে পীয়ালি, আম্বালিকা আর নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বলে, “তোদের বাড়ির বোউমা হবে সেটা আমার সৌভাগ্যরে আর ঝিনুকের ভাগ্য।”
বুক ভরা শ্বাস নিয়ে পীয়ালি আর সোমানাথের দিকে তাকিয়ে আম্বালিকা বলে, “রিশু আসছে ঠিক আছে তবে তার আগে আমি রিশুর ব্যাপারে কিছু বলতে চাই। সব কিছু শুনে তবেই তোরা চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিস। তুই জানিস রিশু আমার কে।” পীয়ালি মাথা দোলায়, ও সব জানে, তাও আম্বালিকা বলে, “রিশু আমার ভাই, আমার গর্ভে ধরা সন্তান হয়ত নয় কিন্তু ও আমার বড় ছেলে। আমি আমার বুকের রক্ত মাংস দিয়ে ওকে বড় করেছি। দিপ আর দিয়া কিন্তু সে কথা জানে না, এই পৃথিবীতে হয়ত এখন খুব কম লোক আছে যারা জানে যে রিশু আসলে আমার পুত্র নয়। রিশু নিজে সেকথা জানলেও সেসব ভুলে ও কিন্তু আমাকে নিজের মা বলেই …” শেষের কথাটা বলতে বলতে কেঁপে ওঠে মাতৃ হৃদয়।
পীয়ালি ওর হাত ধরে বলে, “তুই মহামায়া, তুই যেভাবে রিশুকে মানুষ করেছিস তারপর কারুর কিছু বলার থাকে না। আমাদের সৌভাগ্য যে ঝিনুক এই জীবনে তোর আঁচলের ছায়ায় থাকতে পারবে।”
বুক ভরে স্বস্তির শ্বাস নেয় আম্বালিকা, সেই সাথে মনের কোনায় এক বিশাল বড় কিন্তু দেখা দেয়। রিশুকে এখুনি সব কিছু বলে দিলে দিল্লী থেকে আসবে না। যদিও আম্বালিকা মনে প্রানে জানে যে ওর কথার অমান্য করবে না তাও একবার রিশুর মতামত জানা প্রয়োজন। যত হোক এটা ওর জীবনের খুব বড় পদক্ষেপ। তবে যতক্ষণ না রিশু ওর সামনে এসে পৌঁছায় ততক্ষন কিছু বলে বোঝানো মুশকিল। ছেলেকে অনেক বার বলেছে বিয়ে করতে, দেখতে দেখতে একত্রিশ বছর বয়স হয়ে গেল, কিন্তু সেই ছেলে কিছুতেই বিয়ে করতে নারাজ। রিশুর একটা অতীত আছে, যেটা আম্বালিকার অজানা নয়, মায়ের কাছে কোনদিন কিছু লুকায়নি রিশু।
আম্বালিকা দিপকে ডেকে জিজ্ঞেস করে, “দিয়া কোথায় রে?”
দিপ জানিয়ে দেয় দিয়া ঝিনুক দিদির ঘরে। দিপ দিয়াকে ডেকে নিয়ে আসার পরে আম্বালিকা দিপ আর দিয়াকে সব কিছু সবিস্তারে জানিয়ে দেয়। সেই শুনে দিপ আর দিয়ার আনন্দ আর ধরে না। এতদিন পরে ওদের দাদার বিয়ে হবে তাও আবার ঝিনুক দিদির সাথে। দুই বাড়ির মধ্যে এতদিন শুধু মাত্র বন্ধুত্তের সম্পর্ক ছিল, যেমন ওদের মায়েদের মধ্যে ছিল তেমনি দিয়ার আর ঝিলিকের মধ্যে ছিল। এরপর ঝিনুক দিদির বিয়ে যদি ওর দাদাভাইয়ের সাথে হয়ে যায় তাহলে ওদের দুই বাড়ির মধ্যে সম্পর্ক চিরকালের জন্য বাঁধা হয়ে যাবে।
দিয়া একটু ভেবে বলে, “কিন্তু মাম্মা, দাদাভাইকে যদি তুমি এখুনি এইসব কথা বল তাহলে দাদাভাই কিন্তু কিছুতেই আসবে না।”
আম্বালিকার আশঙ্কা অমূলক নয়, ছোট ছেলেকে অনুরোধ করে, “তাও একবার ফোন করে দেখ।”
দিপ মুখ বেঁকিয়ে উত্তর দেয়, “দাদাভাইয়ের কাল ট্রমা সেন্টারে মর্নিং ডিউটি এতক্ষনে হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছে।”
আম্বালিকা তাও ছোট ছেলেকে আদর করে বলে, “একবার ট্রাই ত কর তোর দাদাকে ফোন করতে। তোর দাদা যদি না আসে তাহলে কি ভাবে এই বিয়ে হবে?”
দিপ চোখ নাচিয়ে বলে, “আমাকে তাহলে দিদির মতন একটা ট্যাব কিনে দেবে?”
হেসে ফেলে আম্বালিকা আর সেই সাথে ঘরের সবাই। পীয়ালি ওকে কাছে ডেকে আদর করে বলে, “তুই যা চাস সব দেব।”
দিয়া মুচকি হেসে বলে, “আমার কাছে একটা উপায় আছে দাদাভাইকে কোলকাতা নিয়ে আসার।” বলেই দিপের কানে ফিসফিস করে কিছু একটা বলতেই দিপের মাথায় দুষ্টুমি বুদ্ধি খেলে যায়।
রিশুকে ফোন করে আর্ত চিৎকার করে ওঠে দিপ, “দাদাভাই আমার হাত ভেঙ্গে গেছে তুমি তাড়াতাড়ি এস।”
=============== পর্ব দুই সমাপ্ত ===============