সুন্দর শহরের ঝাপসা আলোঃ ২য় খণ্ড [প্রেমের সূচনা এবং সফলতা][১৩]

Written by Jupiter10

১৮
মা চলে যেতেই সে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে । রাস্তার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে । কয়দিন বাদে কলেজ পাশ করে সে চাকরি পেয়ে একটা সচ্ছল জীবনযাপন করবে ।
মায়ের বহুদিনের ইচ্ছা, স্বপ্ন এবং পরিশ্রম কে একটা সার্থক সফলতায় রূপান্তরিত করবে । কিন্তু ওর বাবার? ওর বাবার কি হবে? সেটা ভেবেই বুক টা কেঁপে উঠে সঞ্জয়ের!
এমন তো অভিলাষা রাখেনি সে জীবনে । যেখানে একজন মানুষ তার উন্নত জীবনের উপলব্ধির জন্য খেটে মরুক। আর ওপর জন নেশা ভাঙ করে বস্তির অন্ধকারে পড়ে থাক ।
তার জীবন টা যদি এমন হতো যেখানে আর পাঁচটা ছেলের মতোই তার বাবা মাও একটা সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতো । যেখানে কোনোরকম ঝগড়া বাদ বিবাদ থাকতো না । যেখানে শুধু ভালোবাসার অগ্রগতি থাকতো । তাহলে কেমন হতো?
সে মানছে তার জীবনের সব টুকুই তার মায়ের কৃতিত্ব । কিন্তু এখন এই মুহূর্তে ওই মাতাল বাপটার জন্য কিছুই করা যায়না? তাকে কি সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা যায়না?
ভাবতে থাকে সঞ্জয় । কিভাবে তার বাবা তার মায়ের নাম মুখে উচ্চারণ করে আত্ম বিলাপে বিভোর হয়ে ছিলো । তার মুখের অকৃত্রিম অভিব্যাক্তি কিসের ইঙ্গিত দেয় ? তাহলে সেও কি পুনরায় তাদেরকে ফিরিয়ে নিতে চায় ? সেও তাদের সাথে বসবাস করতে ইচ্ছুক ? কিন্তু!!!
কিন্তু কথাটা মনে আসতেই আবার সে দ্বন্দে পড়ে যায় । মা!!!!!
মায়ের প্রতি তার ভালোবাসার সে কি ভাগ দেবে অন্য কাউকে? অন্তত মন বলে নাহঃ । কখনও নাহঃ ।কোনো অবস্থাতে না ।
তবে এই রকম পরিস্থিতিতে সে কি করবে? একধারে মায়ের প্রতি তার দায়িত্ব এবং পিতার প্রতি তার কর্তব্য ।দুটোই বিপরীত মুখী হয়ে তাকে গ্রাস করছে । আবার দুটোর সমাধান যখন খুঁজছে তখন নিজের স্বার্থ এসে হাজির হচ্ছে । একটা ত্রিঘাত সমীকরণের মধ্যিখানে আটকে পড়ছে সঞ্জয় । একধারে তার মায়ের আত্মবলিদান । ওপর দিকে তার পুত্র কর্তব্য । এবং অন্য প্রান্তে তার ভালোবাসা দাঁড়িয়ে আছে । একদিকে রাশ টানলে, বিপরীত দিকে তার প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট এবং লক্ষণীয় ।
সারা রাস্তার এ মাথা থেকে ও মাথা হেঁটেও কুলকিনারা করতে পারলো না সে । এমন ধর্ম সংকট থেকে বেরিয়ে আসার আসল উপায় কি?
দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেলো । এদিকে সুমিত্রাও কাজের ফাঁকে বেশ উদ্বিগ্ন । ছেলে দুপুরবেলা না খেয়ে খাবার,নষ্ট করেছে । ওপর দিকে বিকেল বেলাতেও কেমন যেন মন মরা হয়ে বসে ছিলো । এমন কিছু হয়নিতো তার সাথে? যেটা সে তাকে বলতে সংকোচ বোধ করছে । অথবা বলবার মতো উপযুক্ত পরিবেশের অপেক্ষা করছে । তখন বাইরে বেড়াতে যেতে চেয়েছিল।কিন্তু সে মানা করে দেয় । এখন তার মনে একটা জিজ্ঞাসা ধরা দেয় । ছেলে এখন বড় হচ্ছে । সমাজের সাথে মিশছে । আজ বাদে কাল নিজের কর্ম জীবনে প্রবেশ করবে সে । সেহেতু মা হয়ে তার ততটুকু দায়িত্ব হয়,তা পূরণ তাকে করতে হবে।ছেলের মনের মধ্যে কি সমস্যা চলছে সেটা জানতে হবে তাকে।
খানিক বাদে ধনঞ্জয় আসে তার কাছে । বরাবরের মতোই রাতের খাবারটা চেয়ে নিতে এসেছে সে সুমিত্রার কাছে থেকে।
সুমিত্রাও হাসি মুখে ধনঞ্জয়কে ভেতরে আসবার অনুমতি জানিয়ে বলে, “আসুন দাদা মশাই আসুন । আজকে এখানেই খেয়ে নেবেন কিন্তু । আর পারলে সঞ্জয়কে একটু ডেকে দেবেন…”।
লাজুক এবং সাদাদিধে মানুষ ধনঞ্জয় এর আগে কোনোদিন ছাত্রী নিবাসে বসে খায়নি । সে সর্বদা নিজের দশ বাই দশ ফুটের কামরার মধ্যেই একলা বসে খেয়ে এসেছে । আর তারই পাশে জলের কল খুলে বাসন পত্র ধুয়ে এখানে পুনরায় দিয়ে গেছে ।
কিন্তু আজ সুমিত্রার আমন্ত্রণ পেয়েও সে এক প্রকার অপ্রস্তুত । অন্তত আহার এবং নিদ্রার জন্য কোনো রকম অনিয়মিত পরিবর্তনের পক্ষপাতী নয় ধনঞ্জয় ।
তাই সে মৃদু গলায় হাসি মুখে সুমিত্রা কে বলে , “আহঃ না দিদিভাই । আমি নিজের ঘরেই এতো দিন খেয়ে এসেছি তো তাই হঠাৎ করে আজ এখানে বসে খেতে কেমন লজ্জা বোধ হচ্ছে । তুমি যদি চাও তাহলে আমি সঞ্জয় কে এখানে পাঠিয়ে দিচ্ছি । তবে আমাকে এখানে বসে খাবার অনুরোধ করো না দিদিভাই!”
সুমিত্রা, ধনঞ্জয়ের কথা বুঝতে পারছে । আর তাছাড়া সে এই ছাত্রী নিবাসের হর্তাকর্তা নয়।সুতরাং ধনঞ্জয় তার কথা মানবেই কেন?
সে , ধনঞ্জয়ের কথা শুনে মৃদু হেসে তাকে সঞ্জয় কে তার কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানায়।
এদিকে সঞ্জয় নিজের পড়ার পাট চুকিয়ে বসে থাকে। কতক্ষনে মায়ের দেওয়া খাবার নিয়ে ধনঞ্জয় মামাবাবু তার কাছে আসবে তারই প্রতীক্ষা করতে থাকে সে।
তখনি বাইরে থেকে পায়ে হাঁটার আওয়াজ পেয়ে। তড়িঘড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে বসে । ভীষণ খিদে পেয়েছে তার। ওপর দিকে দুপুরে খাবার নষ্ট করেছে। ফলে একটা অস্থির অনুতাপও কাজ করছে চিত্ত জুড়ে।মা সামনে থাকলে হয়তো তার জন্য ক্ষমাও চেয়ে নিতো সে।
কিন্তু একি! মামা বাবু শুধু মাত্র একটা থালা নিয়ে হাজির হয়েছেন। একটা আশ্চর্য সূচক দৃষ্টি নিয়ে সঞ্জয়, ধনঞ্জয়ের দিকে তাকায়।
ধনঞ্জয় হাসি মুখ করে বলে, “তোমার মা তোমাকে ডেকে পাঠিয়েছে গো….। বোধহয় আজ দিদিভাই তোমার সাথেই খেতে চাইছেন।
“মা আজ আমার সাথে খাবে!” বিড়বিড় করে বলে সঞ্জয় সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।
বাগানের পেছন দিকে হাঁটা দিয়ে এসে সে খাবার রুমের দরজায় টোকা দেয়।
ছেলেকে দেখে,সুমিত্রা তাকে ভেতরে আসতে বলে।
সামনের সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো চেয়ার টেবিল গুলোকে পাশ কাটিয়ে সঞ্জয় মায়ের রান্না ঘরে এসে পৌঁছয়। মা ছেলে মিলে এখন এখানেই এক সাথে বসে খাবে।
রান্নাঘরের মেঝেতে দুটো আসন পেতে সুমিত্রা আর সঞ্জয় খেতে বসে। মুখোমুখি বসে সুমিত্রা ছেলের খাওয়া দেখে।
যাক ছেলে এখন মনোযোগ সহকারে খাচ্ছে, সেটা দেখেই অন্তরে একটা তৃপ্তির অনুভূতি জাগে সুমিত্রার। তা নাহলে দুপুর বেলার ঘটনা তাকে যথেষ্টই বিচলিত করে তুলে ছিলো। এমন তো সে করেনা কখনও।শত শরীর খারাপ হলেও সে আগে থেকে বলে দিতো। অথবা খাবার তুলে রাখতো কিন্তু আজ যে ভাবে ভাতে হাত রেখেই উঠে যায়, তাতে সুমিত্রা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে ছিলো।তবে এর কারণ জানার বড়োই ইচ্ছা জাগছে তার মনে।
যে, কেন ছেলের মধ্যে এই আকস্মিক পরিবর্তন!
ওইদিকে সঞ্জয় কোনো কথা না বলেই এক মনে খাবার খেয়ে যাচ্ছিলো। মুখ নামিয়ে, ভাতের থালার দিকে চোখ রেখে। সে একপ্রকার তার মায়ের কাছে তার দুপুর বেলার আচরণে জন্য দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।
কিন্তু সুমিত্রা উদ্বিগ্ন ছেলের উদাসীনতার জন্য। যে ছেলে মায়ের সান্নিধ্য পেলে খুশি তে আত্মহারা হয়ে যায়। সেই ছেলে কেমন মনমরা হয়ে বসে তার সামনে খাবার খাচ্ছে। যে ছেলে সারাদিনের কলেজের নানান ঘটনাবলি তার সামনে মেলে ধরে। কোথায় কি? কোন শিক্ষক মহাশয় তাকে কি মহান উপদেশ দিয়েছে সে নিয়ে সে বিস্তর আলোচনা করে তার মায়ের সামনে। তার ইচ্ছা তার স্বপ্ন গুলো তুলে ধরতো। যখনই সময় পেতো, “ মা চাকরি পেলে আমি এই করবো। আমি ওই করবো” ইত্যাদি বলতে থাকতো।
কিন্তু আজ সেই ছেলে নীরব, নির্বাক পুতুলের মতো বসে আছে তার সামনে।
আমেজ বদলানোর জন্য সুমিত্রা বলে,
“আজ আমরা অনেক দিন পর একসাথে খেতে বসলাম তাই না রে…..!”
মায়ের কথা শুনে সঞ্জয় মুখ তুলে তার দিকে তাকায় এবং ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে পুনরায় খাবারে মনোযোগ দেয়।
ওইদিকে ছেলে কিছু একটা বলবে বলে আশা করে ছিলো সুমিত্রা। এই ভাবে মাথা নাড়িয়ে জবাব দেবার তো ছেলে নয় সে। যাইহোক সুষ্ঠু ভাবে খাবার টা খাক তারপর নাহয় একসাথে বসে ভালো ভাবে তার মনের বিড়ম্বনা জানার চেষ্টা করবে। মনে মনে বলে সুমিত্রা।
খাবার শেষে সঞ্জয় বেরিয়ে যেতে চাইছিলো। সুমিত্রা তাকে বাধা দিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে, “এই শোন বাবু। তুই কি কোনো সমস্যার মধ্যে আছিস?”
মায়ের কথা শুনে থমকে দাঁড়িয়ে সঞ্জয় মুখ নামিয়ে ধীর গলায় বলে, “নাহঃ মা। কই না তো….”।
ছেলের কথার মধ্যেই সুমিত্রা সব কিছু বুঝতে পেরে যায়। ছেলের বয়স একুশ বছর হলেও সে এখনও মায়ের কাছে কোনো কিছু লুকিয়ে রাখতে পারে না। অথবা তাদের দুজনের মধ্যে মা ছেলের বেঁড়া জাল অতিক্রম করে গেলেও সঞ্জয় অনেক সময় সুমিত্রার চোখে চোখ রেখে মিথ্যা কথা বলতে পারে না। মা কে মায়ের নজরেই দেখে এসেছে। যে তার বন্ধু। শিক্ষিকা এবং ভালোবাসার নারীর সমান।
সঞ্জয়ের এভাবে মুখ নামিয়ে থাকা দেখেই তার কাছে আর কিছু জানার অবশিষ্ট রইলো না। ছেলে নির্ঘাত তার কাছে কিছু গোপন করতে চায়।
সুমিত্রা বলে, “আচ্ছা তুই তো তখন আমার সাথে বেড়াতে যেতে চাই ছিলি? তো তুই কিছু বলতে চাস বাবু আমাকে?”
মায়ের কথা শুনে সঞ্জয় দ্বন্দে পড়ে যায়। মাকে কি বলা উচিৎ হবে, বাবার বিষয়টা??
ভাবতে থাকে সে।
এদিকে সুমিত্রাও একটা প্রশ্ন সূচক ভঙ্গি নিয়ে তার মুখ পানে চেয়ে আছে।
সুমিত্রা আবার ছেলেকে স্বাভাবিক করার জন্য অন্য বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করে, “হ্যাঁ বাবু! তোদের কলেজে কোম্পানি আসবে বলছিলি। তো কবে থেকে আসবে রে….? ঠাকুর ঠাকুর করে ওরা যদি তোকে একটা চাকরি দিয়ে দেয় তাহলে খুব ভালো হয় তাই না রে….”।
সঞ্জয় বলে, “হ্যাঁ মা। আরও কিছু দিন বাকি আছে ক্যামপাসিং শুরু হতে। আমার থার্ড ইয়ারের ফাইনাল এক্সাম টা শেষ হলে ক্যামপাসিং এ বসতে পারবো”।
সুমিত্রা ছেলের কথা শুনে বলে, “ওহঃ আচ্ছা….”।
মা ছেলে মিলে ক্যান্টিন বাড়ির দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে গল্প করে। চারিদিক অন্ধকার।আর গাছ পালায় ভর্তি। এইদিকে শুধু মাত্র ওরাই যাতায়াত করে। ছাত্রীরা ওপর দরজা দিয়ে খাবার গৃহে প্রবেশ করে বলে এই দিকটায় আলো বাতি তেমন লাগানো নেই।
এই দরজার মাথার উপরে শুধু মাত্র একটা ফিলামেন্ট বাল্ব জ্বলছে। তার আলোও বড়ো ক্ষীণ শুধু মাত্র দরজার কাছটায় আলোকিত হয়ে থাকে। আশপাশ ম্লান অন্ধকার। আর গাছ পালায় ভর্তি।
চোরের উপদ্রব এই বিগত তিন বছরে তারা কোনোদিন পায়নি। কারণ বাড়ির তিন দিক বড় ইমারতে ঘেরা।
এদিকে সঞ্জয় কে আবার চুপ থাকতে দেখে সুমিত্রা তাকে বাইরে রাখা চেয়ারে বসতে বলে এবং পাশের চেয়ারে সে বসে প্রশ্ন করে, “বলনা বাবু। এমন মন উদাস করে কেন আছিস? আর দুপুরেও কেমন খাবার খেতে গিয়ে না খেয়ে উঠে গেলি। বলনা বাবু কিসের অসুবিধা হচ্ছে তোর?”
মায়ের কথার কি উত্তর দেবে সঞ্জয় ভাবতে থাকে।মাকে কি তার মনের উৎকণ্ঠা বলে দেওয়া উচিৎ? ওপর দিকে মা তাকে এমন ভাবে ধরে রেখেছে তাতে তার না বলে যাবার ও উপায় নেই।
কিছুক্ষন মৌন থাকার পর সঞ্জয় বলে, “এখন এই মুহূর্তে বলতে পারবোনা মা। তুমি অন্য কোনদিন জিজ্ঞেস করে নিও”।
ছেলের কথা শুনে সুমিত্রা হেসে পড়ে। সে বলে, “ধ্যাৎ এমন হয় নাকি! আজই বল। আমি শুনতে চাই”।
সুমিত্রার কথা শুনে সঞ্জয় ইতস্তত হয়। সে জানে না বাপের নাম শুনলে তার মায়ের প্রতিক্রিয়া কি হবে?
তবুও মায়ের উৎসুকতা দেখে সে তার মনের কথা বলতে বাধ্য হয়।
নিজের মনের কথা বলতে অপ্রস্তুত সঞ্জয় আড়ষ্ট গলায় বলে, “আমার চিন্তা হচ্ছে বাবার জন্য মা!!”
ছেলের মুখ থেকে কথাটা শোনা মাত্রই সুমিত্রার মুখ থেকে হাসি উধাও।আশ্চর্যন্নীত হয়ে ছেলের মুখের দিকে তাকায়।
ওপর দিকে সঞ্জয় এক এক করে নিজের মনের কথা উগড়ে দিতে থাকে। সে বলে, “বাবার জন্য চিন্তা হচ্ছে মা। কারণ আগামী দিনে আমি যখন চাকরি পেয়ে একটা সুষ্ঠু ভাবে জীবন যাপন করবো, ঠিক তখনও সেই মানুষটা প্রাণের দায়ে রিক্সা টেনে যাবে। আমরা কি পারিনা তার সব ভুল মাফ করে তাকে আপন করে নিতে? তাকেও একটা ভালো জীবন উপহার দিতে?
ছেলের কথা শুনে সুমিত্রা যেন জিহ্বাশূন্য হয়ে পড়ে। সে তার কথার কি উত্তর দেবে ভেবে পায়না। শুধু মন থেকে তার প্রশ্ন জাগে কেন?…. কেন এতো কষ্ট এতো সংঘর্ষের পরও ছেলে তাকে এই রকম প্রতিদান দিচ্ছে!!!
সেকি ভুলে গেছে? ওই দানব পিশাচ টা কিভাবে তার উপর নির্মম অত্যাচার করতো? তার মুখের হাসি দেখতে পারতো না। তার খুশি হয়ে উঠে ছিলো ওই মানুষটার দু চোখের বিষ!
তবে আজ কেন ছেলে এই জায়গায় এসে তার মায়ের সব আত্মবলিদান ভুলে গিয়ে ওর অসৎ চরিত্রের বাপ্ টার প্রতি নিজের মন টানছে! সে কি ভুলে গিয়েছে সব! যার লেখা পড়ার খরচের জন্য তাকে একদা পর পুরুষের সাথে শয্যাসঙ্গিনী হতে হয়েছে। কথা গুলো মনে করেই সুমিত্রা অন্তর থেকে ধিক্কার জানায়।
ওদিকে সঞ্জয় নিজের কথা গুলো বলে তার মায়ের মুখ পানে চেয়ে দেখে। মা যেন এক স্থির ভাবমূর্তি!
সে কিছুটা হলেও বুঝতে পারে তার মায়ের মনের প্রতিক্রিয়া কি?
সে মুখ নামিয়ে নিজের কথার যতার্থতা বোঝানোর চেষ্টা করে। সে বলে, “মা….!! হতে পারে আমার কথা তোমার মনে আঘাত দিতে পারে। অথবা তুমি এটাও ভাবতে পারো যে, যেই ছেলেকে কষ্ট করে মানুষ করলাম। আজ সেই ছেলে এমন এক মানুষের পক্ষ নিচ্ছে যে সারাজীবন তাদের যাতনা দিয়ে এসেছে…। কিন্তু মা একবার ভেবে দেখো। লোকজন কিন্তু আমাদের ভেতরের কথা জানতে চাইবে না। লোক জন তোমাকে আর আমাকে দেখবে। আমাদের বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে বিচার করবে। যে আমরা ভালো জীবনের উদ্দেশ্য ওই মাতাল লোকটাকে ওই খানেই ফেলে দিয়ে এসেছি…..। আমি শুধু একটা সম্ভাবনার কথা বলছি মা। যদি এমনটা হতো যেখানে আমাদের খুশির মধ্যেও আমার বাবাও অংশীদার হতো তাহলে কেমন হতো? এটাই ভাবছিলাম”।
ছেলের কথায় সুমিত্রা রীতিমতো স্তম্বিত এবং বিস্মিত। সে কি বলবে ভেবে পায়না। মন কাঁদতে চায় তার। এতো পরিশ্রম এতো হতাশ যুক্ত রাত্রি পার করে এই উপহার!! মনে মনে ভাবতে থাকে সে।
ওদিকে মায়ের নীরবতা চাক্ষুস করে সঞ্জয়, মাকে তার কথার সম্বন্ধে কিছু বলার আর্জি জানায়। “বলো মা। তোমার মতামত আমার কাছে সর্বোপরি। আমি শুধু একটা সম্ভাবনার কথা বলেছি মাত্র”।
ছেলের কথা শুনে সুমিত্রা বুকের ব্যথা দমন করে জড়ানো গলায় বলে,”আমি শুধু জানতে চাই, যে ছেলে এতদিন ওই মানুষ টাকে ঘৃণা করে এসেছে। তার প্রত্যেকটা অভদ্র আচরণের বিরোধিতা করে এসেছে। সেই ছেলের হটাৎ কি এমন হলো যে সে তার প্রতি এতো গদগদ ভাব আর দরদ উছলে পড়ছে….। আমি শুধু সেই কারণ টা জানতে চাই”।
সঞ্জয় বুঝতে পারছে, মা ভেতরে ভেতরে কাঁদছে। তার কথা মায়ের মনকে কুপিত করেছে। তবুও সে নিজের তরফ থেকে তার মনের শেষ কথা টুকু জানায়। দিনের বেলায় বস্তির ঘটনা মায়ের সামনে তুলে ধরে।
“মা…..জানি না আজ কি হয়েছিলো আমার….। আমি দুপুরে কলেজ থেকে ফেরার সময় পুরোনো বাড়ির দিকে চলে গিয়েছিলাম…”।
ছেলের কথা শুনে, নীচের দিকে মুখ করে থাকা সুমিত্রা চোখ তুলে তাকায়। একটা অবাক সূচক ভঙ্গি নিয়ে।চোখ বড়বড় করে। মুখ খোলা অবস্থায়।
সঞ্জয় বলতে থাকে, “আর ওখানে গিয়ে দেখলাম……”।
সুমিত্রার স্থির দৃষ্টি ছেলের মুখের দিকে। সে অধীর আগ্রহে জানতে চায়। ছেলে সেখানে কি এমন দেখল যাতে ওর মনের এমন আমূল পরিবর্তন।
সে নাক টেনে, শাড়ির আঁচল দিয়ে নিজের চোখের কোনের জল মুছে জিজ্ঞাসা করে, “কি দেখলি বল…..? বল আমায়। আমি জানতে চাই। ছেলে সেখানে কি এমন দেখল যার ফলে সে তার মায়ের অবদান টুকুও ভুলে যাচ্ছে”।
সঞ্জয় মায়ের কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলেই নিজের মুখ নামিয়ে নিলো। সে বলল, “আমি দেখলাম, বাবা তোমার নাম উচ্চারণ করে কাঁদছে…..। সে তোমাকে চাইছে মা!!”
ছেলের কথা শুনে সুমিত্রা একটা তাচ্ছিল্ল হাসি দিয়ে বলে, “ভালো তো। আর ওতেই তোর মন গলে জল হয়ে গেলো। আর ওই জন্যই দুপুরের খাবার নষ্ট করলি। আর আমাকে চিন্তায় ফেলে দিলি। বাহঃ খুব সুন্দর। এটাই হয়তো আমার পাওনা ছিলো”।
মায়ের কথা শুনে সঞ্জয় হাত নাড়িয়ে মায়ের কথায় অসহমতি জানায়। সে বলে, “আহঃ না মা। সে মুহূর্তে আমার কষ্ট হলেও পরে আমি বুঝতে পারি…..। তোমার জায়গা কেউ নিতে পারবে না আমার মনে। আমি শুধু একজনের ভালো চাইছিলাম। সে মানুষটা একসময় আমার বাবা ছিলো। আর তোমার স্বামী”।
ছেলের কথা শুনে সুমিত্রা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায়।বলে, “ভালো তো। এবার বাবাকে নিয়েই থাকবি!!”
মায়ের কথা শুনে সঞ্জয় আশ্চর্যচকিত হয়ে জিজ্ঞেস করে, “আর তোমার? তুমি কোথায় যাবে? আমি তো ভেবেছিলাম, আমরা তিনজন মিলে একসাথে থাকবো আর পাঁচটা ছেলেদের মতো বাবা মা ও সন্তান একসাথে”।
ছেলের কথা শুনে সুমিত্রা হতাশ হয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ভেতরে প্রবেশ করতে যায়। সে বলে, “নাহঃ থাক। আমার কাজ বোধহয় এই টুকুই লিখে রেখে ছিলেন ভগবান। আমার কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। তোকে লেখানো পড়ানোর দায়িত্ব আমার শেষ। এবার চাকরি পেয়ে তু্ই যাকে খুশি নিজের সাথে রাখতে পারিস। আমার কি? আমার দুচোখ যেদিকে যায়, সেদিকে চলে যাবো। পারলে নিজের বাড়ি ফিরে যাবো। দাদা এখনও জীবিত আছেন। আমারও অভিভাবক আছে মাথার উপর”।
মায়ের কথা শুনে সঞ্জয় বিচলিত হয়ে বলে, “আমি তোমার উত্তর পেয়ে গিয়েছি মা। আর বাজে কথা একদম বলবে না তুমি”।
ছেলের কথা শুনে সুমিত্রা তার দিকে তাকিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বলে, “বেশ….। এবার যা! অনেক রাত হয়েছে। ঘুমাতে হবে….”।
দরজা লাগিয়ে দেওয়ার পর। সঞ্জয় সেখান থেকে চলে যেতেই সুমিত্রা, আপন বিছানায় শুয়ে ভাবতে থাকে। এমন কিছু একটা তো ঘটেছে নিশ্চয়ই। যার একটা ব্যাখ্যার প্রয়োজন। আর তানাহলে ছেলে এমন ভাবে কথা গুলো বলতে পারে না।
গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকে সে। তার কি সেখানে যাওয়া উচিৎ? সেখানে গিয়ে দেখা উচিৎ? স্বামীর বর্তমান পরিস্থিতি কি?
এই মুহূর্তে কঠিন সংঘর্ষের পর সে সফলতার দোর গোড়ায়। এক বার কি ফিরে দেখা যায়না? তার ফেলে আসা অতীত। হয়তো অন্তর মন বলছে না। এমনটা কখনও করা উচিৎ নয়। ওপর দিকে ছেলের কথার উপর আস্থা রেখে সুমিত্রা একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। যে সে যাবে। সে আরও একবার গিয়ে দেখবে তার স্বামীর সাম্প্রতিক হাল।
পরেরদিন সকালে, সঞ্জয়ের কলেজ যাবার সময় সুমিত্রা তার সাথে দেখা করে।
মায়ের স্থির চোখে সে চোখ রাখতে পারে না। গত দিন কথা গুলো বলে দিয়েছিলো ঠিকই কিন্তু এই নারীকেও তো হারানোর ভয় রয়েছে মনের মধ্যে।
সে কিছু একটা বলতে যাবে, কিন্তু জিভ তোতলায়।
ওপর দিকে সুমিত্রা ছেলের কথা আটকে নিজের বক্তব্য রাখে, “শোন বাবু। গত রাতে অনেক বড়বড় কথা বলেছিস তুই”।
মায়ের কথা শুনে সঞ্জয় পুনরায় মুখ নামিয়ে নেয়।
সুমিত্রা বলা আরম্ভ করে, “আজ আমি নির্ণয় করবো ওই মানুষ টা আমাদের সাথে থাকবার যোগ্য কিনা!”
মায়ের কথা শুনে সঞ্জয় নিজের মুখ তুলে ঈষৎ গলায় কথা বলে, “না মা। ছাড়ো তুমি। আর তাছাড়া তিনি তো অন্য কারও স্বামী এখন। ওনার সম্বন্ধে আর ভাবা উচিৎ নয় আমাদের”।
“তাসত্ত্বেও আজ বাদে কাল যদি তার কিছু হয়, তাহলে তো তুই ওটার জন্য আমাকেই দায়ী করবি!!”
ছেলের দিকে চোখ বড় করে বলে সুমিত্রা।
মায়ের কথা শুনে, ঘাড় নেড়ে সঞ্জয় বলে, “আহঃ না। মা। আমি এমন কিছুই বলবোনা তোমাকে। আমি খামাকা অতিরিক্ত চিন্তা ভাবনা করে নিচ্ছি”।
সুমিত্রা বলে, “আমি সেখানে গিয়ে দেখবো নিশ্চিত করেছি”।
মায়ের কথা শুনে সঞ্জয় স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। ভাঙা গলায় সে বলে, “মানে….!!! নাহঃ তুমি যেও না। সেখানে ওই রাক্ষসী টাও আছে। সে তোমায় দেখলে তোমার ক্ষতি করে দেবে মা”।
ছেলের কথা শুনে সুমিত্রা ভারী গলায় বলে, “সেটা তোকে দেখতে হবে না। আমি গিয়ে যদি সঠিক কোনো জিনিস দেখি তাহলে সারাজীবন তোর কথায় চলবো। আর যদি বিপরীত কিছু হয় তাহলে তোর প্রত্যেকটা ডিসিশন আমি নিজের মতো করে নেবো!!!! এই বলে দিলাম”।
মায়ের কথার কোনো প্রতি উত্তর করতে পারে না সঞ্জয়। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে কলেজের জন্য বেরিয়ে পড়ে।
দিন পেরোতে থাকে। আর সুমিত্রা অবসর সময়ের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনতে থাকে।শুধু একবার বস্তি গিয়ে দেখে আসবে। ছেলের মনের দ্বন্দ্ব তখনই পরিষ্কার হবে।
তা সে সুযোগ হয়েও গেলো।
একদিন প্রায় বেলা এগারোটা হয়ে যাবে। সুমিত্রা কাজ সম্পূর্ণ করে বসে ছিলো।হটাৎ তার খেয়াল এলো, যদি আজ গিয়ে সে দেখে আসতে পারতো….।
যেমন ভাবনা তেমন কাজ। সে রান্নাঘরের দুই মাসিকে বলে দিয়ে ছাতা মাথায় বেরিয়ে পড়ে।
ছাত্রী নিবাসের ডান হাতে পূর্ব দিকে সোজা দেড় কিলোমিটার হাঁটার পথ। তারপর আরও দশ মিনিট গেলেই ওর পুরোনো পাড়া পড়ে।
বহুদিন আসেনি সে এই দিকটায়। প্রায় তিন বছর। তাই নতুন অট্টালিকা এবং গাছপালা দেখে বিস্মিত হয় সুমিত্রা। একলা একমনে ছাতা মাথায় হাঁটতে থাকে সে। একটু একটু করে কমতে থাকে বস্তি বাড়ির দূরত্ব।
অবশেষে শহরের চাকচিক্য অতিক্রম করে একটা খেলার মাঠ। তারই এক পাশে সিমেন্টের ঢালাই রাস্তা দিয়ে বস্তির মধ্যে প্রবেশ করে সুমিত্রা।
পূর্ব দিকে এসে, দক্ষিণ প্রান্তে এসে কিছু দূরেই ডান হাতে তার পুরোনো বাড়ি পড়ে। সেই টালির ছাওনি দু চালা বাড়ি। তার সামনে উঠোন পেরোলেই বারান্দা আর তার পাশে ওর ছোট্ট রান্নাঘর ছিলো। আর বারান্দা অতিক্রম করেই তাদের শোবার ঘর।
সুমিত্রা তার পুরাতন ঘরের কাঁচা মাটির ভগ্ন প্রাচীর অতিক্রম করে উঠোনে প্রবেশ করে। মনে একটা ভয় মিশ্রিত উত্তেজনা এবং কৌতূহল।
এই সময় কেউ থাকেনা নাকি এই ঘরে? মনে মনে প্রশ্ন সে করে। সত্যিই উঠোন খাঁ খাঁ করছে আর বাইরে থেকে ঘরটাকে দেখলে বড়োই একলা প্রতীত হয়।যেন কেউ নেই।
অথচ ঘরের মুখ্য দরজা খোলা! ওতেই সুমিত্রার জানবার ইচ্ছা হয়। ঘরে কোনো মানুষ নিশ্চয়ই আছে।
সে ছাতা ভাঁজ করে খোলা দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে ডান দিকে তাকায়। রান্নাঘর থেকে কোনো মানুষের আওয়াজ আসছে।
সামনে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তাকে দেখে ভয় পেয়ে যায় সুমিত্রা। পরেশনাথ!!!
গায়ে ফুল হাতা জামা আর নিচে লুঙ্গি পরে দাঁড়িয়ে আছে। ভাত রান্না করছে সে। গ্যাস ওভেনের উপর হাঁড়ি দিয়ে টগবগ করে চাল সেদ্ধ হবার আওয়াজ আসছে।
সুমিত্রা এবং পরেশনাথ একে ওপরকে দেখেই থমকে দাঁড়ায়। সুমিত্রা স্থির হয়ে বড়বড় চোখ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। ফর্সা টিংটিঙে রোগা পরেশনাথ। চোয়াল বসা আর নাকের এবং ঠোঁটের নীচে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। চোখ দুটো লাল তার। ঢুলুঢুলু দৃষ্টি নিয়ে নিজের প্রাক্তন স্ত্রীর দিকে তাকায়।
সুমিত্রা দেখে তার একদা স্বামী বোধহয় অনেক দিন চুল দাঁড়ি কাটেনি। আর খাওয়া দাওয়া করে কিনা সন্দেহ। বিগত কয়েক বছরে বেশ জীর্ণসার শরীর হয়ে গিয়েছে তার। আচমকা দেখলে মনে হয় যেন বহুদিনের অসুস্থ সঞ্জয়ই তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রাক্তন স্ত্রীকে নিজের চোখের সামনে দেখে বিশ্বাস হয়না পরেশনাথের । মাথা ঝাকিয়ে চোখ কুচলে নিশ্চিত হয়ে নেয় সে । আদৌ স্বপ্ন দেখছে কিনা!!! অথবা মদের নেশার প্রতিক্রিয়া কিনা।
বেশ কিছুক্ষন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর পরেশনাথ এগিয়ে এসে সুমিত্রা কে বলে, “বউ তু্ই এসেছিস!!! এসেছিস আমার সামনে??”
বহুদিন পর স্বামীকে চোখের সামনে দেখে সুমিত্রা ঈষৎ উচ্ছাসিত হয়ে হাসি মুখে বলে, “হ্যাঁ আমি এসেছি। আমি এসেছি ছেলের জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজতে”।
পরেশনাথ, সুমিত্রার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বলে, “ভাল তো। বস। বস। দাঁড়া আমি রান্নাটা সেরে নিই”।
পরেশনাথের কথায় সুমিত্রা বসে না। সে, পরেশনাথের রান্না দেখে বলে, “কই দেখি। আমি করে দিচ্ছি”।
পরেশনাথ তাতে বাধা দিয়ে বলে, “না না থাক আমিই করে নি। আজ শ্যামলী বাড়িতে নেই তাই আমিই রান্নাটা করে নিচ্ছি”।
সুমিত্রা পরেশনাথের কথা না শুনেই রান্না ঘরে এগিয়ে যায়। ভাতের মধ্যে দুটো আলু সেদ্ধ করতে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো কে নামিয়ে দিয়ে, মাড় গড়িয়ে একপাশে রাখে।
ঐদিকে পরেশনাথ, নিজের প্রাক্তন স্ত্রীর অস্থিরতা দেখে তাকে বলে, “হ্যাঁ এবার অনেক হয়েছে বউ। এবার তুই বস। আর তোকে কাজ করতে হবে না”।
পরেশনাথের কথা শুনে সুমিত্রা শোবার ঘরের ঠাকুরের ছবি গুলো দেখতে যেতে চায়। কিন্তু সেখানে সেরকম কিছু না পেয়ে মন উদাস হয়ে আসে তার।
এদিকে পরেশনাথও তাকে দেখে তার পেছনে চলে আসে। সে চোখ কুঁচকে সুমিত্রা কে আগাগোড়া দেখতে থাকে। সুমিত্রার হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি এবং গাঢ় গোলাপি রঙের ব্লাউজ দেখে সে একটু বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করে, “এই বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে ভালই তো গতর বানিয়েছিস রে বউ….”।
পরেশনাথের মুখ থেকে এমন আকস্মিক উক্তি অপ্রত্যাশিত ছিলো সুমিত্রার কাছে। সেটা কানে আসতেই সেও অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়।
ভয় হয় সুমিত্রার। পরেশনাথ তার ঘাড়ের সামনে নাক রেখে নিঃশ্বাস ফেলছে।কোনো রকম অনুচিত অভিপ্রায় নেই তো বরের? মনে মনে ভাবে সে।
পরেশনাথের মুখোমুখি সে এখন।বিপদাশঙ্কায় বুক দুরুদুরু করে কাঁপছে সুমিতার। সে চোখ তুলে তাকাতে পারছেনা।
পরেশনাথ নিজের দুহাত দিয়ে সুমিত্রার নরম দুই বাহু চেপে ধরে বলে, “বেশ মোটাসোটা হয়ে গিয়েছিস তুই!!! আর কত সুন্দর সুন্দর দামী শাড়ি পরেছিস…। বাবুরা তোকে ভালোই দাম দেয় তাইনা??”
কথা গুলো শুনে সুমিত্রা চমকে ওঠে। সে পরেশনাথের হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না।
পরেশনাথ শক্ত করে ধরে আছে সুমিত্রার কোমল বাহু দুটোকে।
আতঙ্কিত সুমিত্রা, বরকে বলে, “ছাড়ো আমায় আমি যাই। আমি আর আসবোনা এখানে।তুমি একটা শয়তান। শয়তানই রয়ে গেছো। ছাড়ো আমায়”।
প্রাক্তন বউয়ের কথা শুনে পরেশনাথ নিজের মাদকাসক্ত চোখ নিয়ে সুমিত্রার গালে কষিয়ে একখানা চুমু খায়। বলে, “আহঃ কি মিষ্টি! আর কি সুন্দর গন্ধ! বাবু দের দেওয়া দামী ক্রিম মেখেছিস তাইনা রে বউ!!!”
সুমিত্রা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। এবং সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ছটফট করে।
ওপর দিকে পরেশনাথ সুমিত্রার গালে চুমু খাবার পর তার লালায়িত জিভ তার প্রাক্তন স্ত্রীর গাল থেকে নেমে পড়ে তার ঘাড় এবং গলা অবধি পৌঁছে যায়।
সে বলে, “আহঃ বহু দিন পর তোকে সামনে পেয়েছি। প্রথমে মনে হয়েছিলো মদের নেশায় আমি কোনো স্বপ্ন দেখছি। তারপর দেখি নাহঃ। সত্যিই আমার পরীর মতো সেই সুন্দরী বউটা ফিরে এসেছে। তার মধুর মধ্যে মিষ্টি গুদ!!! কতদিন মারিনি বলতো? যতই হোক বরের বাঁড়ায় অনেক দিন চোদন খাসনি বলে দৌড়ে চলে এসেছিস তাইনা?”
সুমিত্রা এবার নিজের দুহাত দিয়ে তাকে নিজের শরীর থেকে পৃথক করার চেষ্টা করে। বলে, “ছাড়ো আমায়। আমি সেরকম কিছু করতে আসিনি। ছাড়ো বলছি”।
পরেশনাথ সুমিত্রার কোনো কথা শুনবার মতো পরিস্থিতিতে নেই। সে এখন এক ঈর্ষা, প্রতিহিংসা এবং পারদারিকতায় নিমজ্জিত আছে। সে এখন সুমিত্রা কে কুলষিত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সে এবার নিজের হাত দুটো সুমিত্রার দুই বাহু থেকে সরিয়ে এক হাত দিয়ে তার পিঠ চেপে রেখে ওপর ডান হাত দিয়ে তার বক্ষস্থলে দেয়।
আলতো করে মলতে থাকে সুমিত্রার পিনোন্নত স্তন দুটোকে। তার কঠোর পুরুষালি হাত দিয়ে নরম পূণ্যলোকর আস্বাদন করে।
ওইদিকে সুমিত্রা ভয়ে প্রায় কাঁদো কাঁদো ভাব। আর এইদিকে পরেশনাথ নিজের শক্ত হাত দিয়ে প্রথম বউয়ের ভারী স্তন দুটো তার ব্লাউজের উপর থেকেই আলাপালা করে একটা একটা করে মর্দন করতে থাকে। আর ব্লাউজের উপরে ফাঁক থেকে সুমিত্রার ভারী স্তনের ফর্সা বিভাজিকা দেখে শিহরিত হয়।
সুমিত্রার অস্থিরতা দেখে পরেশনাথ তাকে ধমক দিয়ে বলে, “শান্ত হো বউ। তোর বড়বড় মাই দুটো অনেক দিন পর টেপার মজা এমনিই যেন বিনা মদে নেশার মতো….”।
বরের কথা শুনে সুমিত্রার মন ভয়ে কেঁপে ওঠে। এমন কিছু হবে সে ভাবতেও পারেনি । এ যেন রাক্ষস। এই ভর দুপুরে কেউ এসে দেখে ফেললে কি হবে। তার উপর লোকটা কেমন পাগলের মতো তার নরম বুক খামচে ধরছে। ব্লাউজ ছিঁড়ে যাবার উপক্রম।
সুমিত্রা দুহাত দিয়ে পরেশনাথের হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করে নিজের স্তন দুটো থেকে।
সে বলে, “তুমি জোর জুলুম করছো কিন্তু আমার উপর। ছাড়ো তুমি”।
পরেশনাথ তো কোনো কথা শোনার জন্য প্রস্তুত নয়।
সে এখন সুমিত্রার দুই স্তন ছেড়ে দিয়ে, নিচে হাঁটু মুড়ে বসে দুহাত দিয়ে সুমিত্রার কোমর চেপে ধরে শাড়ির উপর থেকেই তার যোনি পৃষ্ঠ অনুমান করে সেখানে নাক মুখ ঘষতে যায়।
একটা বিশ্রী অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে সুমিত্রা। সারা গা ঘিনঘিন করছে যেন তার। সে দুহাত দিয়ে পরেশনাথের দু কাঁধ চেপে ধরে তাকে বাধা দেবার চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না।
পরেশনাথ বিশ্রী সব কটূক্তি করে তাকে বশীভূত করার চেষ্টা করছে।
“আহহহহহ্হঃ এই খানেই তো আছে আসল মজা!! যে মজার স্বাদ পেলে মদের নেশা ভুলে যাবে মানুষ”। শাড়ির উপর থেকেই সুমিত্রার সুকোমল যোনির মধ্যে নাক মুখ ঘষে বলে পরেশনাথ।
সুমিত্রা যত বাধা দেয় সে ততই আরও নিজের হিংস্র রূপ দেখাতে শুরু করে। সে নিজের কঠোর দুহাত সুমিত্রার কোমর থেকে সরিয়ে ওর নরম নিতম্বে খামচে ধরে। সাথে সাথে সুমিত্রাও ঈষৎ শীৎকার করে ওঠে। বলে, “ছাড় আমায়। লাগছে। দয়া করো তুমি!!!”
পরেশনাথ কোনো রকম কর্ণপাত করেনা। সে শুধু সুমিত্রার অসহায়তার আনন্দ নেয়।
সে একটা দুস্টু হাসি হেসে সুমিত্রার শাড়ি উপর দিকে তুলতে থাকে। একটু একটু করে। অতঃপর গাঢ় লাল রঙের প্যান্টি দ্বারা আবৃত সুমিত্রার ঊরুসন্ধি স্থল বেরিয়ে পড়ে। ফর্সা দুই সুঠাম জঙ্ঘার মধ্যবর্তী স্থানে লাল প্যান্টির আচ্ছাদন দেখে পরেশনাথ শিহরিত হয়। যেন জীবনে প্রথম কোনো নারীর সান্নিধ্য পাচ্ছে সে।
তা দেখে মুখের একটা অদ্ভুত বিকৃতি করে সুমিত্রার মসৃন দুই জঙ্ঘার মধ্যে হাত বোলায়। একদম পাতলা মিহি রোম তার হাতে আসায় সে জিভ দিয়ে সেগুলোকে চাটার চেষ্টা করে।
ওপর দিকে সুমিত্রা সামনে দিকে একটু ঝুঁকে পড়ে পরেশনাথের দু কাঁধে ঠেলা দেয় এবং নিজের শাড়ি টাকে নিচের দিকে নামানোর প্রয়াস করে । সে ক্রমাগত বলতে থাকে, “আমাকে ছাড়ো দয়া করে। ছাড়ো কেউ এসে পড়লে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ছাড়ো বলছি”।
নিচে হাঁটু মুড়ে বসে থাকা পরেশনাথ যেন বধির। সুমিত্রার কোনো কথায় তার কান অবধি পৌঁছয় না”।
সে শুধু উন্মাদের মতো বলতে থাকে,“কই দেখি না রে বউ। তোর গুদ খানা! আমার প্রিয় জায়গা ছিলো সেখানটা। এতো দিনে কত বাবুই না যাতায়াত করেছে ওখানে কে জানে!! কই দেখি দেখি!!”
পরেশনাথের উক্তি গুলো যেন তীরের ফলার মতো সুমিত্রার হৃদয়ে এসে লাগছিলো। কোথায়…? সঞ্জয় যে বলেছিলো ওই দানবটা নাকি শুধরে গেছে। এর মুখ দিয়ে নাকি তার সম্বন্ধে প্রেমের বাণী টপকাচ্ছিলো। কোথায় সেই স্বামী তার?? তাকে তো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। এতো নরাধম।পশু। পিশাচের সমরূপ।
সুমিত্রা পরেশনাথের জামা খামচে ধরে তাকে বৃথা ছাড়ানোর চেষ্টা করে।
আর পরেশনাথ নিজের লালায়িত জিহ্বা নিয়ে ওর ঊরু সন্ধি স্থলে এগিয়ে যায়। লাল প্যান্টির উপর থেকেই ওর ফোলা নরম যোনি পৃষ্ঠে নাক রগড়ে একটা গভীর প্রশ্বাস টেনে নেয়। সুমিত্রার সুন্দরী সুরভী তার নাকে এসে লাগে এবং পরেশনাথের স্নায়ু কণা গুলো কে সজাগ করে দেয়। সে সুমিত্রার প্যান্টির উপর থেকেই ওর গোপনাঙ্গে জিভ দিয়ে চাটতে থাকে।কামঈর্ষায় উন্মাদ পরেশনাথ তার জিহ্বা দ্বারা নিঃসৃত লালা রস দিয়ে সুমিত্রার প্যান্টি ভিজিয়ে ফেলে।
ওপর দিকে সুমিত্রা সেটার আভাস পেয়ে যেন সারা গায়ে কেমন একটা ঘৃণার স্রোত বইয়ে যায়। শিউরে উঠে সে। শরীর কাঁপতে থাকে তার।
শুধু দুহাত দিয়ে পরেশনাথ কে ঠেলতে থাকে পেছন দিকে।
পরেশনাথ সুমিত্রার মুখের দিকে তাকিয়ে একটা বিশ্রী অট্টহাসি দিয়ে আবার মুখ নামিয়ে ওর প্যান্টি নীচের দিকে নামাতে থাকে।সুমিত্রা আপ্রাণ বাধা দেয় তাকে। নিজের সুঠাম ঊরুদ্বয় জোড়া লাগিয়ে কঠোর হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে।
এদিকে পরেশনাথ বাম হাত দিয়ে প্যান্টি নীচের দিকে টেনে নামিয়ে রেখেছে ফলে সুমিত্রার তুলতুলে নরম পেট এবং কালো লোম দ্বারা আবৃত যোনির উপরি অংশ তার চোখের সামনে আসে। নরম ফর্সা পেট সামান্য ঝুঁকে পড়ার ফলে একটা ভাঁজের সৃষ্টি হয়েছে। এবং ঘন কালো গভীর যোনি কেশ এই দিনের আলোয় চোখের সামনে দেখে পরেশনাথের উন্মাদনা আরও চরম শিখরে পৌঁছয়। সে আর থাকতে পারে না।
বহু চেষ্টার পরেও যখন দেখে বউয়ের প্যান্টি তার দুই জঙ্ঘার সংযোগ স্থল থেকে নামাতে ব্যর্থ তখন সে উঠে দাঁড়িয়ে তাকে বিছানায় ফেলে দেয়।
ওইদিকে বরের হাতে থেকে সামান্য ছাড়া পেয়ে সুমিত্রা বিছানার মধ্যে ধপাস করে বসে পড়লেও তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়িয়ে পালাতে চায়। কিন্তু পশুরূপী পরেশনাথ তাকে ধরে জোর পূর্বক উবুড় করে শুইয়ে দেয়।
সুমিত্রার শাড়ি পা বরাবর উপরে কোমর অবধি তুলে ওর লাল প্যান্টির উপর থেকেই ওর স্ফীত নরম নিতম্ব খামচে ধরে দুই হাত দিয়ে। ক্রোধ বসত একটা থাপ্পড় মারে ওর বাম নিতম্ব পৃষ্ঠে। সুকোমল মাংসপিন্ড নরম জেলির মতো কেঁপে ওঠে। তা দেখে পরেশনাথ শিহরিত হয়। সে নিজের লুঙ্গি খুলে সুমিত্রার প্যান্টি নামিয়ে তার সাদা ধবধবে ফর্সা পশ্চাৎদ্দেশ কে উন্মুক্ত করে তার বিভাজিকার গভীরে লিঙ্গ চালনা করে।
সুমিত্রার চোখে জল আসে। সে নিজের শরীর কে কঠোর করে বাম হাত দিয়ে পেছন দিকে পরেশনাথের মুখে প্রহার করে। চুড়ির অকস্মাৎ আঘাতে পরেশনাথ ছিটকে পড়ে নিজের ডান দিকে এবং মুখে হাত তার চোটের নিরীক্ষণ করে। তখনি সুমিত্রা উঠে পড়ে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে পুনরায় পরেশনাথের মুখে একটা কিল মারে! ওতে আবার পরেশনাথ হুমড়ি খেয়ে উল্টে পড়ে। সুমিত্রা বুঝতে পারে লোকটার তেমন আর শারীরিক জোর নেই। তবে একটা আশ্চর্য রকমের যৌন প্রতিহিংসা আছে। ফলে পুনরায় পরেশনাথ উঠে গিয়ে অশ্রাব্য গালাগালি দিয়ে বলে, “রেন্ডি মাগি তোর খুব জোর হয়েছে না….!!! তবে দেখ”।
পরেশনাথের আগ্রসনে সুমিত্রার চোখ বড়বড় হয়ে আসে। ভয় এবং সাহস একসাথেই কাজ করে।
ওপর দিক থেকে ক্ষিপ্ত হয়ে আসা পরেশনাথের বাম গালে পুনরায় একটা কষিয়ে থাপ্পড় মারে সে।
সুমিত্রা চোখে ক্রোধ মিশ্রিত জল।বিপরীতে দানবীয় গুনে ভরপুর পরেশনাথ আহত জানোয়ারের রাগে ফুঁসছে।
এমন মুহূর্তে পরেশনাথের বর্তমান স্ত্রী সেখানে এসে হাজির হয়।সুমিত্রা কে দেখে তার চক্ষুশূল!
কিছু একটা বলতে যাবে সে। তখনি সুমিত্রা কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।
বিকেলবেলা কলেজ থেকে ফিরে মায়ের সাথে দেখা করতে যায় সঞ্জয় । সুমিত্রা হাসি মুখেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। ছেলের অপেক্ষায়।
সঞ্জয় কে কাছে পেয়ে সে বলে, “অনেক দিন ধরে বেড়াতে যাবি বলছিলি। চল আজকে বেড়িয়ে আসি”।
মায়ের কথা শুনে সঞ্জয় আপ্লুত হয়ে বলে, “কোথায় যাবে মা…?”
সুমিত্রা বলে, “নির্জন কোথাও। যেখানে কেউ থাকবে না। শুধু আমি আর তুই…..!”
মায়ের কথা শুনে সঞ্জয়, তার মুখের দিকে তাকায়। বেদনা চেপে রেখে একটা অপ্রাকৃত হাসি লক্ষ্য করে সে।
“বেশ ভালো কথা মা। আমি শীঘ্রই তৈরী হয়ে আসছি। আবার যাবো সেই নির্জন সরোবরে”।
ছেলের কথা শুনে সুমিত্রা, দোর গোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকে।
মা ছেলে মিলে আবার যায় ভাগীরথীর তীরে। তারা দুজন মিলে আবার বসে থাকে পড়ন্ত বিকেলে, নদী চরে। যেখানে কিছু কচি কাঁচা দূর থেকে দৌড়ে এসে জলে ঝাঁপ দেয়। তারই আওয়াজ তাদের কানে আসে মাঝে মাঝে।
সেই তখন থেকে সঞ্জয় ব্যগ্র হয়ে সুমিত্রার মুখ পানে চেয়ে থাকে। কারণ কিছু একটা বলার জন্যই মা তাকে এখানে নিয়ে এসেছে। কিন্তু তার মা তো সেই ক্ষুদে ছেলেদের দিকে তাকাতে ব্যস্ত। তারা কি যেন খুঁজছে জলের তলদেশ থেকে।
অবশেষে সে তটস্থ হয়ে তার মাকে জিজ্ঞেস করে, “মা হঠাৎ করে তুমি এখানে নিয়ে এসেছো।কোনো কারণ তো আছে নিশ্চয়ই বলোনা!”
ছেলের কথা শুনে সুমিত্রা কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর বলে, “আজ দুপুরে তোর বাবার কাছে গিয়েছিলাম”।
মায়ের কথা শুনে সঞ্জয় অবাক হয়ে ওঠে। একটা আশ্চর্য সূচক দৃষ্টি নিয়ে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে, “মা তুমি গিয়েছিলে….!!! কি হলো সেখানে? বাবা কি বলল তোমায়?”
ওর জিজ্ঞাসার মধ্যে অনেক উৎকণ্ঠা এবং উত্তেজনা মিশ্রিত ছিলো।
সে পুনরায় তার মায়ের মুখ পানে চেয়ে তার প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে বসে ছিলো।
সুমিত্রা গাঙ্গেয় ঘাটে সিঁড়ির ধাপে পা মুড়ে বসে ছিলো। একটা সুন্দর হওয়ার লহর বইছে। চারিদিক একটা বিরাম নিস্তব্ধতা।
মায়ের এভাবে আবার মৌন ধারণের ফলে তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছিলো। সে জানতে চায় তার বাবা যখন তার মাকে অনেক দিন পর দেখেছিলো তখন তার প্রতিক্রিয়া কি হয়ে ছিলো? সেকি তার মাকে তার ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলো? নাকি অন্য কিছু?
সঞ্জয় জানতে চায়।
সে আবার বলে, “বলোনা মা। চুপ করে আছো কেন? বলোনা?”
অনেক ক্ষণের বিনতীর পর সুমিত্রা ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে, “তোর কলেজে কোম্পানি কখন আসবে? তোর চাকরির জন্য”।
“আরও কিছু দিন সময় আছে মা।পরীক্ষা গুলো শেষ হোক তারপর। এখনও দুমাস ধরে নাও”। সঞ্জয় বলে।
ছেলের কথা শুনে আবার সুমিত্রা চুপটি করে বসে দূর পানে চেয়ে থাকে।
মা যেন তার প্রশ্নের উত্তর দিতে চায়না। সেকি সত্যিই আদোও গিয়েছিলো সেখানে নাকি এমনিই আমাকে বলছে সেরকম। যাতে আমি সেই বিষয় নিয়ে আর মাথা না ঘামাই অথবা মা এখানে নিজের স্বার্থ খুঁজছে। মনে মনে ভেবে আবার সঞ্জয় সুমিত্রাকে প্রশ্ন করতে উদ্যত হয়।
“মা তুমি বলবে সেখানে গিয়ে কি হলো? বাবা কিছু বলল? তোমার সাথে তার দেখা হয়েছে নাকি অন্য কিছু”।
কথা গুলো অনর্গল বলে সে মায়ের জবাব শুনতে প্রস্তুত হয়।
এমন সময় সুমিত্রা নিজের বুকের আঁচল সরিয়ে ফেলে। বলে, “এই দেখ!!!! তোর বাবার দেওয়া উপহার!”
মায়ের ব্লাউজে ঢাকা অর্ধ উন্মুক্ত স্তনদ্বয় এবং তার গভীর বিভাজিকার চারপাশে আঁচড়ের দাগ। সাদা ধবধবে ফর্সা মায়ের স্তন জুড়ে কেমন গাঢ় রক্তিম বর্ণের নখরাঘাত!!
কাঁপা বেদনা চাপা কণ্ঠে সুমিত্রা বলে ওঠে, “তুই জানতে চাইছিলি না? যে আমি ওখানে গিয়েছিলাম তো তোর বাবা আমার সাথে কেমন আচরণ করেছে? এই দেখ!!! তোর বাবা আমাকে সসম্মানে আমাকে স্বাগত জানিয়েছে! যার জন্য তোর অন্তর ফেটে যাচ্ছিলো সেই মানুষ টা তোর মাকে কতখানি সম্মান করেছে……”।
কথা গুলো বলবার সময় সুমিত্রার ঠোঁট কাঁপছিলো। আর চোখের কিনারায় বিন্দু বিন্দু জল!
তা দেখে সঞ্জয় চোয়াল শক্ত করে হাত মুঠো করে বলে, “মা আমি এর প্রতিশোধ নেবো!!”
ছেলের কথা শুনে সুমিত্রা তার হাত চেপে তাকে বাধা দিয়ে,কাঁদো গলায় বলে, “না। তুই তোর নিজের কাজ কর। পড়াশোনায় মন দে। যাতে আগামী মাসেই কোনো সুখবর শুনি আমি”।
মায়ের কথা শুনে সঞ্জয় ঢোক গিলে ভারী গলায় বলে, “আমায় ক্ষমা করে দিও মা। ওই লোকটাকে আমি ভুল চিনে ছিলাম। সে আর কোনদিন আমাদের জীবনে আসবে না। কথা দিলাম আমি”।
ক্রন্দনরত মায়ের সামনে এসে বাম হাত দিয়ে তার পিঠ জড়িয়ে ধরে তার মাথা নিজের কাঁধের মধ্যে হিলিয়ে দেয় সঞ্জয়। আর মায়ের বাম হাতের আঙুলের ফাঁকে নিজের ডান হাতের আঙ্গুল জড়িয়ে বসে থাকে।
বিকেলের সোনালী আলো ম্লান হয়ে আসছিলো। অন্ধকার এই নামবে বলে।
মায়ের নরম বাহু শক্ত করে ধরে ছিলো সে। ভারী হৃদয়। হতাশ মন।বুক এবং গলার কাছটায় কি যেন আটকে আছে বলে মনে হচ্ছে তার।
আজ আরও একবার এই নারীর প্রতি অবিচার করেছে সঞ্জয়। নিজেকে বলে সে।
আঙুলের ফাঁকে জড়িয়ে থাকা মায়ের নরম হাত চেপে ধরে তাকে নিজের দিকে টেনে আনে।
সুমিত্রার চোখ দুটো বন্ধ ছিলো। আর গোলাপি পাঁপড়ির মতো ঠোঁট যেন সঞ্জয় কে আহ্বান করছে তাকে আদর করবার জন্য।
সঞ্জয় তার মুখ এগিয়ে নিয়ে যায়। সুমিত্রার রসালো ঠোঁটে নিজের ঠোঁট রেখে একটা গভীর ভালোবাসা প্রদর্শন করে।
সুমিত্রা তাকে বাধা দেয়না। সেও নিজের ওষ্ঠ কে উন্মুক্ত করে ছেলেকে নিজের মিষ্ট লালারস আস্বাদন করতে সহযোগিতা করে । ওপর দিকে সঞ্জয়ও মাকে জড়িয়ে ধরে গাঙ্গেয় ঘাটে খোলা আকাশের নিচে একটা প্রেমময় পরিবেশে তার সুকোমল ঠোঁট দুটোকে নিজের ঠোঁটের মধ্যে পুরে চুষতে থাকে।
বহুদিন পর এমন এক সংযোগের সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে তার মাকে কাছে পেয়ে তাকে শক্ত করে আলিঙ্গন করে তার ঠোঁট চুম্বন করছে। অনেক দিন ধরে এই মধুর স্বাদ থেকে বঞ্চিত ছিলো সে। মায়ের নাক দিয়ে বয়ে আসা উষ্ণ নিঃশ্বাসের ছোঁয়া। তার গায়ের মিষ্ট সুগন্ধ এবং তার ঠোঁটের মধুর আস্বাদ পেলো সে।
এই খোলা আকাশের নীচে মা তাকে সেরকম কিছু করতে দেবে, ভাবতে পারেনি সে। তবে এখন এই মূল্যবান মুহূর্তের পর তার খেয়াল হল যে না মাও তাকে সমরূপে ভালোবাসে। এমন কি তার চেয়েও বেশি।
দীর্ঘ চুম্বনে সুমিত্রার রসালো ঠোঁটের মিষ্টি আস্বাদনের পর সঞ্জয় চোখ তুলে তাকায়। সুমিত্রাও একটা লাজুক অভিব্যাক্তি দিয়ে তার চোখ সঞ্জয়ের দিকে মেলে দিয়ে পুনরায় নীচের দিকে তাকাতে থাকে।
সঞ্জয় বলে, “মা আমি আরও একটা ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি তোমার কাছে। আমি অপরাধী। আমার তোমাকে সেখানে পাঠানো উচিৎ হয়নি”।
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সুমিত্রা পুনরায় ছেলের কাঁধে মাথা দিয়ে বলে, “সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই শুধু নিজের পায়ে দাঁড়া…..”।
মায়ের কথা শুনে সঞ্জয় বলে, “হ্যাঁ মা। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। তোমার ছেলে এতটাও দুর্বল ছাত্র নয় যে সে একটা চাকরিও তোমাকে উপহার দিতে পারবে না”।
ছেলের কথা শুনে সুমিত্রা কিছুক্ষন স্থির হয়ে বসে নদীর ঝিকিমিকি আলোর দিকে চেয়ে থাকে। তারপর বলে, “চল উঠে পড়ি। অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ফিরতে রাত হয়ে যাবে”।
কয়েকদিন বাদে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়। মা ছেলে নিজ নিজ কাজে মন দেয়।
সঞ্জয় এদিকে আগামী কলেজ ক্যামপাসিং এর জন্য প্রস্তুতি নেয়।

More বাংলা চটি গল্প

Leave a Comment