বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে রুমে চলে যায় নিলয়। আজকে মাথা থেকে অনেক বড় একটা চিন্তার অবসান হলো। এরপরও ভাবে মেয়েটাকে এখন থেকে আরও নজরে নজরে রাখতে হবে, আর ঐ ছেলেটার একটা ব্যবস্থা করতে হবে যেন তথাকে আবার চলতি পথে ডিস্টার্ব না করে।
[সমস্ত পর্ব
মায়া – আমরা সবাই বাঁধা যেখানে – 7 by nextpage]
বিছানায় বসে স্টক শীট নিয়ে বসতেই নিলয়ের ফোনটা বেজে উঠে। দোলন ফোন করেছে
-কিরে কি খবর? বিরাট ব্যস্ত নাকি?
-(সত্যিই তো আজ সন্ধ্যায় ওকে ফোন করতে ভুলেই গিয়েছিল) ঐ একটু আরকি।
-(খোঁচা দিয়ে) বউয়ের সেবাযত্ন করছিলি বুঝি।
valo golpo
-(রাগান্বিত স্বরে) হুম করছিলাম বটে। বউ যেহেতু আমার আমিই তো সেবা করবো, তাই না।
-(অভিমানী কন্ঠে) যা যা বউয়ের সেবা কর, আমি কে যে আমার খবর নিতে যাবি। আমার সাথে কথা বলতে হবে না।
-ঐ দেখ উনি এখন গোস্সা করেছে। তুই তো ঐ কথা তুললি। আমার কি দোষ।
-(আহ্লাদ ভাব করে) হু সব দোষ আমার তাই না। তোকে নিয়ে টেনশন করি সেটাই আমার দোষ।
-মাতা রানী ক্ষমা করুন আমাকে, এ পাপী সব দোষ নিজ মস্তকে নিচ্ছে।
-(হু হু করে হাসতে হাসতে) তবেরে, সামনে পাই তকে তোর একদিন তো আমার একদিন।
-সে দেখা যাবে। কেমন আছিস রে, তর দাদুর শরীরটা এখন কেমন?
-তোকে দূরে রেখে আমি ভাল থাকি কি করে। দাদু আগের থেকে ভাল। দিন চারেক এর মাঝে চলে আসবো তোর কাছে। তথার কি খবর? এখন ঠিক আছে? valo golpo
-হুম এখন আর জ্বর নেই। একটু দুর্বল আছে শরীরটা, ঠিকমত কয়েকদিন খাওয়া দাওয়া করলে ঠিক হয়ে যাবে। তুই থাকলে আমার কষ্ট একটু কম হতো।(বাকি ঘটনা গুলো সম্পর্কে দোলন কে কিছু জানায় না)।
-(মুখে ভেংচি কেটে) সখ কতো, আমি নাকি আমার সতীনের সেবা যত্ন করবো। ভাগ্য ভালো আমি ছিলাম না, নইলে গলা টিপে দিতাম।
-(মুচকি হেসে) ছি ছি দোলন, তুই এমন হলি কবে থেকে। শেষে নাকি তুই আমার বউকে মারতে চাস। না না এখন তো দেখছি ওকে আর চোখে চোখে রাখতে হবে, তুই না আবার কখন কি করে ফেলিস।
-(ঝগড়া করার মত তেড়ে) যা যা তোর বউ সিন্ধুকে ভরে রাখ। তোর পাশে আমার কাউকে সহ্য হয়। মেরেই দেব সুযোগ পেলে।
-থাম থাম, যেভাবে চেচাচ্ছিস কেউ শুনলে কি বলবে তোকে। কাউকে মারতে হবে না, তোর জায়গা তোর জন্যই থাকবে। কি করিস?
-এই তো বাইরে বারান্দায় বসে আছি।
-খাওয়া হইছে? valo golpo
-হুম, তোর?
-ওই তো বাইরে থেকেই খেয়ে এসেছি।
-বউ কে নিয়ে গিয়েছিলি?
-আবার শুরু করলি তো?
-না না স্যরি। কিরে তোর শরীরটা কেমন আছেরে? ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করছিস তো।
-(সত্যিটা বললে ও চিন্তা করবে ভেবে) আজ্ঞে ম্যাডাম। সব ঠিকঠাক চলছে। তুই থাকতে আমার শরীর খারাপ থাকবে এত সাহস আছে নাকি। ওর ঘাড়ে কয়টা মাথা।
-এবার সত্যিই তোর ঘাড় টা মটকাবো। আগে আসতে দে আমাকে, তখনি দেখবো নে কেমন কথামত চলছিস। যা রাত হয়েছে এখন ঘুমিয়ে পড়। valo golpo
-এইতো একটু কাজ আছে, সেটা শেষ করেই ঘুমিয়ে পড়বো। তুইও ঘুমিয়ে পড়।
মোবাইল টা রেখে দরজার দিকে তাকাতেই নিলয়ের মনে হয় কেউ যেন ওখান থেকে সরে গেল। বাইরের কেউ তো আর আসার কথা না তাহলে তথা এসেছিল হয়তো। ওর রুমের দরজায় টুকা দিয়ে ভিতরে উকি দিতেই দেখে তথা ঘরের ভিতর পায়চারি করছে।
-কিছু বলার জন্য ঘরে গিয়েছিলে?
-হুম, কিছু টাকার দরকার ছিল।
-ঠিক আছে, কাল কলেজ যাবার সময় এটিএম থেকে তুলে দেব নে। আর কিছু?
-না। এর জন্যই. valo golpo
-ওকে, পড়া থাকলে পড়ো না হলে বেশি রাত করো না ঘুমিয়ে পড়ো। আর শুনো এখন থেকে আমার সাথেই কলেজে যাবে আর টিউশন থেকে ফেরার সময় কল করবে, আমি নিতে যাবো।
বাধ্য মেয়ের মত মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় তথা।
—★★★—
গত দিন ত্রিশে জীবনটা পুরো পাল্টে গেছে তথার। এখন নিজেকে কেমন খাঁচায় বন্দী পাখির মত লাগে। সকালে কলেজ যাওয়া থেকে শুরু করে বিকেলে টিউশন থেকে ফেরা সব কিছু নিলয়ের নিয়ন্ত্রণে। কোন নোট নিতে গেলে কিংবা কোন সাজেশন আনতে কলেজ বান্ধবীদের ওখানে গেলেও সাথে নিলয় থাকেই। বাসায় এসেও শান্তি নেই, কখন কি খাবে কি খাবে না সব নিলয়ের কথা মত চলতে হয়। valo golpo
একটু এদিক ওদিক হলেই বকাঝকা শুরু করে দেয়। নিজের উপর রাগ হয় তথার, ঐ বোকামি টা না করলে তো আগে দিব্যি ছিল সেভাবেই থাকতে পারতো। এখন সেই সুযোগটাও নেই। বাসায় পড়তে বসলেও মিনিট বিশেক পর পর এসে দেখে যায় নিলয়। রুটিন টাইমে চা, দুধ বা হরলিক্স টেবিলে হাজির হয়ে যায়। যে দুধ সহ্য হয় না সেটাও আজকাল নাক চিপে ধরে খেয়ে নিতে হয়। না খেতে চাইলেই ধমকে উঠে, তার চেয়ে খেয়ে নেয়া ঢেড় ভালো ভাবে তথা। রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে উঠে কিন্তু প্রকাশ করতে পারে না সে।
ফিজিক্স টিউশনে যাওয়া শুরু করা পর প্রথম দিন খুব ভয় হচ্ছিলো তথার, যদি পার্থের সাথে দেখা হয়ে যায়। পার্থ কি না কি বলে, টিউশন থেকে বের হবার পর যদি রাস্তা আটকায় কি করবে সে। নিলয় কে ফোন করবে? সেও তো আসতে কিছুটা সময় লাগবে। ধুরু ধুরু বুকে টিউশনে গিয়ে প্রথম দিন অবাক হয়। না আজ পার্থ আসে নি, হাফ ছেড়ে বাঁচে তথা৷ কিন্তু পরদিন কি হবে, ভয়টা ভিতর থেকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তথাকে। valo golpo
পরপর কয়েকদিন পার্থ কে আর টিউশনে আসতে দেখে না। ওকে আসতে না দেখে ভয় ভাব টা কমতে থাকে, কিন্তু মনে একটা প্রশ্ন উঁকি দেয়। ছেলেটা কোথায় গেল? রাস্তাঘাটেও দেখে না। একদিন সাহস করে পার্থের সাথে আরেকটা ছেলে আসতো তাকে জিজ্ঞেস করে বসে পার্থের ব্যাপারে। ছেলেটি বললো, কেউ একজন পার্থকে শাসিয়ে গেছে যেন এই টিউশনে আর না আসে, আর পার্থ যে মেয়েটিকে নিয়ে ঘুরতে যেত তার আশে পাশেও যেন ওকে না দেখে। তথা বুঝতে পারে কাজটা কে করেছে, মনে মনে খুশি হয়। যাক বাবা এখন আর ভয়ে ভয়ে থাকতে হবে না।
সেদিন নিলয়ের বাসায় ফিরতে দেরি হচ্ছিলো, ওদিকে তথার মাথা টা খুব ধরেছে। তাই ও নিজেই চা করতে যায়। জল গরম হচ্ছে এমন সময়ই নিলয় এসে হাজির, আর সে কি বকাবকি শুরু করলো।
-সামনে তোমার পরিক্ষা, আর তোমার ইচ্ছে হাত পুড়িয়ে ঘরে বসে থাকা। আর কত কি বললো। চুপচাপ ঘরে চলে যায় তথা। কিছুক্ষণ পর চা নিয়ে দিয়ে আসে নিলয়। valo golpo
এরকম ভাবে ওর বাবাও কখনো ওকে বকাবকি করে নি। প্রথমে খুব খারাপ লাগতো নিলয়ের এমন আচরনে। নিজেকে বন্দী বন্দী লাগতো। কিন্তু আজকাল তথার কাছে নিলয়ের শাসন গুলো ভাল লাগে। যতই বকাবকি করুক না কেন একটু ঠিকই গিয়ে আবার ঠান্ডা গলায় বুঝিয়ে বলে আসে। সারা শরীর রাগে জ্বলতে থাকে কিন্তু যখনি নিলয়ের হাত ওর মাথা স্পর্শ করে সব রাগ সব অভিযোগ নিমিষেই উধাও হয়ে যায়৷ এমনটা ওর বাবা করতো। কোন কারণে বকা দিলেও ঠিকি পরে মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে বুঝিয়ে বলতো ঠান্ডা গলায়৷
নজরবন্দী জীবন টাও আজকাল ভালো লাগে তথার কাছে। ও ব্যাপারটা উপভোগ করতে শুরু করেছে। ও জানে দুটো চোখ সবসময় ওকে নজরে রাখে। একজন আছে যে তাকে নিয়ে ভাবে, তার জন্য চিন্তা করে। এ ব্যাপারটা যখন ভাবে তখন অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করে তথার মাঝে। মাঝে মাঝে খাঁচায় বন্দী থাকার মাঝেও যে সুখ থাকতে পারে সেটাই উপলব্ধি করে সে। আগেও এমন ভাবে সবসময় ওর কথা ভাবতো, ওকে নিয়ে চিন্তা করতো, ওকে শাসন করতো, আবার আদরও করতো আরেকজন ব্যক্তি তথার বাবা৷ এখন যেন সে নিলয়ের মাঝেই নিজের বাবার ছায়া দেখতে পায়।