লেখক – সত্যকাম+বিচিত্রবীর্য
অমিতের আগমন
(সপ্তম পর্ব )
—————————
সময় চলিয়া যায় নদীর জলের মতো কিন্তু আখতার যেটা ভেবেছিল সেটা হচ্ছে না । প্রতি রাতে একবার হলেও সম্ভোগ করার পর আখতারের বারবার মনে হতে লাগলো আর শেষ একবার। তারপর পালাবো । কিন্তু সেই শেষ একবার , আসে না কখনো । এক অদৃশ্য বন্ধনে যেন বাঁধা পড়েছে আখতারের মন । ববিতার শরীরের প্রেমে পড়েছে নাকি মনের প্রেমে পড়েছে সেটা immature আখতার বুঝতে পারে না । সে শুধু ববিতার শরীরটা কে চেয়েছিল তাহলে তার মন এখন কেন বিদ্রোহী হয়ে উঠছে ? ওর মন কি ববিতার শরীরের নেশায় মেতে উঠেছে ? নাকি মনের প্রেমে পড়েছে ?
একদিন দুপুর বেলা ত্রিয়াদি আর ববিতা গল্প করছিল । রাজকুমার তখন ঘুমিয়ে । ববিতা বেশ লাজুক মুখ করে বললো “ তুমি বলেছিলে না আখতার কে বেঁধে রাখার জন্য কিছু একটা করতে । „
“ হ্যাঁ , হ্যাঁ বলেছিলাম। তা কি করলি তুই ? „ ত্রিয়াদির উৎসাহ দেখার মতো বিষয়।
ববিতা বেশ লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে বললো “ আমি প্রেগন্যান্ট । „
“ আরে এতো খুবই সুখবর । „ বলে ববিতাকে জড়িয়ে ধরলো । “ আখতার কে জানিয়েছিস ? „
“ না । „
“ কখন জানাবি ? „
“ যখন জানানোর দরকার পড়বে ! „
ত্রিয়াদি বেশ ইয়ার্কির ছলে বললো “ বা !! অনেক বুদ্ধি খুলেছে তোর । „
শনিবার স্কুল হাফ ডে হয় । তাই আখতার আর রবি দুপুরেই বাড়ি চলে এলো । বাড়ি ফিরে স্নান করে খেয়ে দেয়ে যখন সবাই বসেছে । তখন দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো । ববিতা গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে সামনে ত্রিয়াদি দাড়িয়ে আছে কোলে রাজকুমার ঘুমিয়ে আছে আর পাশে সূর্যও আছে ।
“ আরে তোমরা সবাই একসাথে । „ খুশি হয়ে বললো ববিতা ।
“ হ্যাঁ ! আসতে হলো । অনেক দিন ধরে সূর্যের ইচ্ছা ছিল আখতারের সাথে দেখা করার। তাই আজকে সুযোগ বুঝে চলে এলাম । „ বললো ত্রিয়াদি।
“ আরে বাইরে দাড়িয়েই কথা বলবে নাকি !!! এসো ভিতরে এসো । „
সূর্য জিজ্ঞেস করলো “ কেমন আছো মাসি ? „
“ আগের থেকে অনেক ভালো । সোফায় বসো তোমরা । আমি ওকে ডেকে দিচ্ছি । „ বলে রবির ঘরে চলে গেল।
সেখানে রবি আর আখতার খাটে শুয়ে ফোনে গেম খেলছে । “ এই শুনছো !! তোমার সাথে একজন দেখা করতে এসছে । বাইরে এসো । „
আখতার গেম বন্ধ করে বাইরে এলো “ কে আবার আমার সাথে দেখা করতে এলো এই সময়ে । „
বাইরে এসে দেখে সোফায় বসে আছে একজন চব্বিশ পঁচিশ বছরের সুদর্শন ক্লিন শেভড যুবক । “ আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না !! „
“ আরে চেনার জন্যেই তো এলাম । বসো বসো । „ বলে মুচকি হেঁসে পাশে সোফার ফাঁকা অংশটা হাত দিয়ে দেখিয়ে দিল সূর্য ।
আখতার বসলো । দেখলো সামনে ত্রিয়াদিও বসে আছে । ত্রিয়াদির সাথে আগে দেখা হয়েছে আলাপও হয়েছে কিন্তু তেমন কথা হয়নি । ত্রিয়াদির শরীরের সৌন্দর্য অনেকটা ববিতার মতোই বা বলা চলে ববিতার থেকেও ভালো। কিন্তু ত্রিয়াদি কে দেখে আখতারের তেমন কোন উত্তেজনা হয়নি । বরং দিদি বলেই ডাকতে ইচ্ছা হয়েছে আখতারের । এমন ইচ্ছার কারন জানা নেই আখতারের ।
আখতার সোফায় বসতেই সূর্য কথোপকথন শুরু করলো । “ তোমার পুরো নাম কি ? „
“ আখতার হোসেন । আর আপনার ? „
“ আপনি না ! তুমি । আমায় তুমি বলে ডাকতে পারো । আমার নাম সূর্য পাল । আমি নিউটাউনের একটা IT sector এ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর চাকরি করি । 10-6 PM এর চাকরি । „
ববিতা আর ত্রিয়া দি পাশাপাশি একটা সোফায় বসে আছে আর রাজকুমার ঘুমিয়ে আছে ত্রিয়াদির কোলে ।
কিছুক্ষণ পর সূর্য রাজকুমার ঘুমিয়ে আছে দেখে নিয়ে আবার বললো “ আমি মায়ের মুখে তোমার আর মাসির সম্পর্কের কথা শুনলাম । শুনে খুব খুশি হয়েছি যে , এতদিনে মাসির দুঃখ ঘুঁচেছে । তুমি হয়তো জানো না তোমার আসার আগে মাসির জীবন নরক ছিল বললে ভুল হবে না !!! „
“ আমি জানি সব । „ মাথা নিচু করে বললো আখতার । “ রবি আর ববিতা আমাকে বলেছে । „
ত্রিয়াদি ববিতা সূর্য সবাই চুপ। কিছুক্ষণ পর সূর্য বললো “ তুমি যদি সত্যি মাসিকে ভালোবেসে থাকো , তাহলে তোমাকে কিন্তু ভবিষ্যতে অনেক কঠিন পরিক্ষা দিতে হবে !!!! „
“ এই খোকা ! কি হচ্ছে এসব ? ও এখনো ক্লাস টেনে পড়ে আর তুই ওকে ভয় দেখাচ্ছিস । „ রেগে গিয়ে বললো ত্রিয়াদি ।
শান্ত গলায় সূর্য বললো “ মা আমি সত্যিটা বলছি। তুমি আর আমি ভালো করে জানি ভালোবাসা প্রেম এগুলো মানুষকে কোন না কোন এক সময় বড়ো পরিক্ষার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। ………. „
কথাটা হয়তো শেষ হয়নি। হয়তো সূর্য আরো কিছু বলতো কিন্তু ঠিক সেই সময়ে ববিতার ফোন বেজে উঠলো তাই সূর্য চুপ করে গেল । ববিতা সূর্য আর আখতারের কথোপকথন শুনে বেশ উদাসীন মনমরা হয়ে পড়েছিল। তাই সে উদাসীন মুখেই ফোনটা দেখলো । ফোনে চোখ পড়তেই ববিতা চমকে ওঠে আর ওর হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায় । ত্রিয়াদি ববিতার পাশেই বসেছিল তাই সে বেশ অবাক হলো ববিতার এই রকম হঠাৎ চমকে ওঠায় সে কিছুটা অবাক হয়ে নিচে পড়ে থাকা ফোনটা তুলে দেখলো । তখনও রিং হয়ে যাচ্ছে ত্রিয়াদি চোখ তুলে ভীত কন্ঠে বললো “ অমিত । „ তার মুখ ভীত ও সন্ত্রস্ত ।
নামটা শুনেই আখতারের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে উঠলো সাথে একটু ভয়ও পেলো । সূর্য বুঝলো অমিত ফোন করেছে। “ মা তুমি ফোনটা রিসিভ করে স্পিকারে দাও আর মাসি তুমি ভয় না পেয়ে কথা বলো । „
ত্রিয়াদি তাই করলো ।
“ হ্যালো । „
“ হ্যালো !!! হ্যাঁ । আমি অমিত বলছি । „
“ হ্যাঁ । আমি ববিতা । তুমি কেমন আছো ? „
“ কালকে রবিবার । কালকে বাড়ি আসবো বলে ফোন করেছি। বেশ কয়েকদিন থাকবো । এখান কাজে ব্যাস্ত তাই ফোন রাখছি । „ বলে ফোনটা কেটে দিল ।
“ দেখলে জানোয়ারটাকে ! মাসি কেমন আছো জিজ্ঞেস করলো , কোন উত্তর দিল না। এমনকি মাসি রবি সুস্থ , ঠিকঠাক আছে কিনা সেটাও জিজ্ঞেস করলো না। „ বেশ বিরক্তিকর গলার সুরে বললো সূর্য।
সবাই চুপ। কিছুক্ষণ পর সূর্য শান্ত অথচ আপসোস এর কন্ঠে বললো “ মা তুমি কিছুক্ষণ আগে আমাকে থামতে বলছিলে না। দেখো এখন সত্যি সত্যি আখতারের পরিক্ষা শুরু হয়েছে। কালকে সেই পরিক্ষা। „
কথাটা সত্যি । তাই সবাই চুপ । কারোর মাথায় কিছু আসছে না । কিন্তু এটা সবাই বুঝতে পারছি সবাইকে এক হয়ে যা করার করতে হবে। কিন্তু কি করবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না। ঘরের ভিতর থেকে রবি সবকিছু শুনতে পাচ্ছিল । অমিতের নাম শুনেই রবি বাইরে বেরিয়ে এসেছিল ফোন ধরার আগে । রবি বললো “ আমি করবো যা করার । „
সবাই রবির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো । সবাই এখন কোন এক অজানা ভয়ের আশঙ্কায় ভীত ।“ আমি বলবো বাবাকে ডিভোর্সের কথা। „
আখতার খুব ভয় পেতে লাগলো অমিতের আগমনের কথা চিন্তা করে । কিন্তু তাকেই যে এই নাট্যমঞ্চের নাটকের মূখ্য চরিত্রে অভিনয় করতে হবে । না , অভিনয় নয় । যুদ্ধ করতে হবে । যুদ্ধ জিতে , বন্দিনী ববিতাকে উদ্ধার করতে হবে । কিন্তু বাঁ কাঁধের ত্রিশূল ধারী শয়তানটা বারবার বলতে লাগলো , পালা এখান থেকে । এসব প্রেম ভালোবাসা মিথ্যে। নিজের জীবন বাঁচা । পালা এখান থেকে ।
“ দেখো। আমি একা কিছু করতে পারবো না । যদি আমি একা বাবাকে ডিভোর্সের কথা বলি তাহলে বাবা আমাকে ফের হসপিটালাইজড করে দেবে। তাই তোমাদের সবার সাহায্য দরকার। „ সবাই রবির কথা মন দিয়ে শুনলো ।
ত্রিয়াদি রবির কথা শোনার পর বললো “ মনে হচ্ছে তোর কোন প্ল্যান আছে । „
“ আছে তো মাসি। অবশ্যই আছে। বিগত এক মাস ধরে আমি এই দিনটারই অপেক্ষা করছিলাম। একটা প্ল্যান আছে শোনো সবাই। „
তারপর সবার মধ্যে কিছুক্ষণ ধরে একটু গুজুর গুজুর করে কথা কাটাকাটি হলো । তারপর সবাই মিলে রবির প্ল্যান টাকে ফুল প্রুফ করে দিল ।
তারপর সবাই মিলে আড্ডা দিয়ে চা বিস্কুট খেয়ে যে যার কাজে চলে গেল ।
{ ( এখানে অমিতের চরিত্র সম্পর্কে বলা উচিত )
( ছোটবেলা থেকেই মেয়ে বাজী করে বড়ো হয়েছে অমিত। খুবই কিপ্টে দুশ্চরিত্র বদমেজাজি প্রকৃতির মানুষ। উচ্চতায় 5’5 । শ্যামলা গায়ের রং। চোখ সব সময়ই রক্তজবা। মুখের ভাষা খারাপ। বাবা মা ভেবেছিল বিয়ে দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তাই ববিতার সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়। বিয়ে করার পরেই কলকাতা চলে আসে অমিত। তারপর কনস্ট্রাকশন এর কাজ শুরু করে। এরাজ্য ও রাজ্য করে বেড়াতে লাগলো । সেখানে যতো বেশ্যা পাড়া আছে কল গার্ল আছে সবাই কে দিয়ে নিজের শরীরের ক্ষিদে মেটায়। যখনই ববিতার শরীরের কথা মনে পড়ে তখন সে এসে ববিতাকে ভোগ করে চলে যায়। সংসার করার, সন্তান লালনপালন করার কোন ইচ্ছা নেই অমিতের। যতোটা পরিমাণ টাকা না দিলেই নয় ততো পরিমানেই ববিতাকে পাঠায়। এতে খুব কষ্ট করে রবির পড়াশোনা আর খাওয়া দাওয়া চলে। ববিতার সাজগোজ শখ আহ্লাদ মেটে না। ) }
পরের দিন রবিবার। রবির প্ল্যান মতো আখতার ঘুম থেকে উঠেই নিজের সমস্ত জামা কাপড় টুথব্রাশ নিয়ে ত্রিয়াদির ফ্ল্যাটে চলে গেল। যেসব জিনিস আখতারের অস্তিত্ব প্রমাণ করে সেই সব কিছুই সে সাথে নিয়ে নিচে নেমে গেল ।
নিচে নেমে ত্রিয়াদির ফ্ল্যাটের ডোরবেল বাজালো আখতার। কয়েক সেকেন্ড পর সূর্য দরজা খুলে দিলো । “ এসো ভিতরে এসো । „
ফ্ল্যাটে ঢুকে লিভিং রুমের সোফায় বসলো আখতার। বসার পর দেখলো লিভিংরূমের দেওয়ালে একটা অঙ্কন চিত্র। ভালোভাবে দেখার জন্য কাছে গিয়ে দেখে দ্রোপদীর বস্ত্রহরণের মুহুর্তে যখন সেই মহিয়সী নারী কৌরব বংশের ধ্বংসের অভিশাপ দিচ্ছিল ঠিক সেই মুহুর্তের পেন্টিং। অস্ফুটে মুখ ফুটে বেরিয়ে যায় “ আরে এতো দিদির পেন্টিং । „
“ তুমি মাকে দিদি বলছো কেন ? মা তোমার থেকে বয়সে অনেক বড়ো হয় যে !!! „ সূর্য হাঁসতে হাঁসতে জিজ্ঞেস করলো । রাজকুমার তখনও ঘুমিয়ে।
আখতারও হাঁসতে হাঁসতে বললো “ দেখো ! যদি ববিতা সম্পর্কে আমার স্ত্রী এর মতো হয় আর আমার স্ত্রী যদি ত্রিয়াদি কে দিদি বলে ডাকে তাহলে তোমার মা সম্পর্কে আমার শালী হয়। „ কথা বন্ধ করে একটু হেঁসে নিল আখতার তারপর আবার বললো “ এবার বয়সে তোমার মা আমার থেকে অনেক বড়ো তাই শালীর জায়গায় দিদি বলাই ভালো । „
এইরকম যুক্তি শুনে সূর্য থ মেরে গেল আর রান্নাঘরে কাজ করতে থাকা ত্রিয়াদি আখতারের যুক্তি শুনে মুক্তোর মতো দাত নিয়ে হেসে ফেললো । “ ভালো যুক্তি দেখিয়েছিস তো। „
আখতার নিজের জামার কলারটা একটু ঠিক করে নেয় । এটা দেখে সূর্যও হেঁসে ফেলে । “ বসো তোমার সাথে অনেক কথা আছে । আর হ্যাঁ ওটা মায়েরই পেন্টিং আমি এঁকে ছিলাম। „
“ আঁকার হাত সুন্দর তোমার । „
“ ধন্যবাদ । তা এসো না মাঝে মাঝে আমাদের বাড়ি ছুটির দিনেয়। আড্ডা হবে জমিয়ে । মাঝে মাঝে শপিং করতে ঘুরতেও যেতে পারি । „
“ আড্ডা দিতে আমার খুব ভালো লাগে। কলকাতায় আছি তবে এখনো কলকাতা দেখা হয়নি। „
“ আমার শনি রবিবার পুরো ছুটি। ছুটির দিনেই যাওয়া ভালো আর সবাই মিলে ঘুরতে গেলে জমে ভালো। „
দুপুরে খাওয়ার জন্য ত্রিয়াদি রেঁধেছে মাংস ভাত। রবিবার দুপুরে বেশিরভাগ বাঙালী বাড়িতে এটাই রান্না হয় । হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসে একটা অবাক জিনিস দেখলো আখতার । লোক চার জন কিন্তু খাবার প্লেট মাত্র দুইজন । সে কিছু বলতে পারলো না। জিজ্ঞাসাও করতে পারলো না যে বাকি দুজন খাবে না?
আখতারের জন্য ভাত বাড়া হয়ে গেলে ত্রিয়াদি আর একটা থালায় তিনজনের খাবার এর মতো ভাত নিল। আখতার শুধু দেখছে এই মহিলা কি করছে । ভাত বাড়া হয়ে গেলে ত্রিয়াদি ঘরে থাকা সূর্যের উদ্দেশ্যে ডাক দিল “ খোকা চলে আয়। „
সঙ্গে সঙ্গে সূর্য হাত মুখ ধুয়ে এসে ত্রিয়াদির পাশে বসলো । ত্রিয়াদি মাংস ভাত মেখে নিজে খেতে শুরু করলো এবং পাশে বসা চব্বিশ বছর বয়সের সূর্যকেও নিজে হাতে খাওয়াতে শুরু করলো।
আখতারের এই অবাক দৃষ্টি এবং কৌতূহল দেখে ত্রিয়াদি হেঁসে বললো “ ছোটবেলা থেকে খাইয়ে দিয়ে অভ্যাস খারাপ হয়ে গেছে। এখন ধেড়ে হয়ে গেছে তবুও না খাইয়ে দিলে খাবেই না। „
আখতার মুচকি হেঁসে বললো “ এসব ছোট ছোট জিনিসই তো প্রেম ভালোবাসার আসল প্রতীক । যখন মানুষের শরীর আর কাম চায় না তখন ওই ছোট ছোট জিনিস গুলোই মানুষের সুখের নীড়ে পরিনত হয় । „
“ বাব্বা তুমিতো বেশ শব্দের জাদু জানো। তা এই শব্দের বাণ চালিয়েই কি আমার শান্ত মিষ্টি স্বভাবের ভোলাভালা বোনটাকে সম্মোহন করে রেখেছো । „
আখতার লাজুক হেঁসে মাথা নিচু করে ভাত খেতে থাকে । আখতারের এই লাজুক ব্যবহার দেখে সূর্য ত্রিয়াদি দুজনেই মুচকি হাঁসতে লাগলো ।
সূর্য ও ত্রিয়াদির খাওয়া হয়ে গেলে। ত্রিয়াদি রাজকুমার কে ঘুম থেকে তুলে দিয়ে খাইয়ে দিতে লাগলো। কিন্তু তিন বছরের বাচ্চা এক জায়গায় বসে থাকবে কেন। সে এক গ্রাস মুখে নেয় আর এদিক ওদিক ছুটতে থাকে । শেষে রণে নামতে হলো সূর্যকে। সূর্য আর আখতার ক্রিকেট খেলা দেখছিল। সূর্য উঠে গিয়ে রাজকুমার কে ধরে কোলে নিয়ে সোফায় বসলো। আর ক্রিকেটের চ্যানেল পাল্টিয়ে ডোরেমন এর কার্টুন চালিয়ে দিল। ত্রিয়াদি সূর্যের পাশে বসে রাজকুমার কে খাইয়ে দিল। এইটুকু ভাত কিন্তু খেতে সময় নিল প্রায় এক ঘন্টার কাছাকাছি। আখতারকে দেখে ত্রিয়াদি ইয়ার্কি করে বললো “ তোমার আর ববিতার যখন সন্তান হবে তখন সামলাতে পারবে তো ? „
“ আগে সন্তান সুখ পাই তারপর সন্তানের দুষ্টুমির সুখও সহ্য করে নেবো। আমার অভ্যাস আছে। বাড়িতে চাচার এই কয়েক বছর আগে ছেলে হলো। রাজকুমারের বয়সী। তাকে কোলে নিয়ে অনেক বার সামলিয়েছি । „
“ কিন্তু ! ভাই আমার ! অন্যের সন্তান আর নিজের সন্তান যে সম্পূর্ণ আলাদা !! „
“ আগে সন্তান হোক তখন দেখা যাবে। তবে কুড়ির আগে আমি সন্তান চাই না। পড়াশোনা শেষ করবো তারপর সন্তান দেখভাল করবো। „
আখতারের কথা শুনে ত্রিয়াদি হাঁসে কিন্তু এই হাঁসির অর্থ কেবল মাত্র সূর্য ব্যাতীত আখতার বুঝতে পারে না।
রাজকুমারকে খাওয়ানো হয়ে গেলে তার এঁটো মুখ ধুয়ে দেওয়ার পরমুহুর্তেই সূর্যের ফোন বেজে উঠলো ।
“ হ্যালো । হ্যাঁ আমি রবি বলছি। „
“ হ্যাঁ বল ! „
“ বাবা চলে এসছে । বাথরুমে গেছে ফ্রেস হতে।এক্ষুনি বেরিয়ে আসবে। আমি এখন রাখছি। ঠিক সময় মত আবার ফোন করবো তখন তোমরা সবাই উপরে চলে এসো। „
“ হ্যাঁ ! সে ঠিক সময়ে চলে যাবো । সাবধানে থাক। „
সূর্যের মুখে অমিতের আগমন শুনে সবার মুখে একটা সন্ত্রস্ত ভাব দেখা গেল । কেউ কিছু বললো না । সবাই রাতের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
দুপুরে যখন অমিত এলো তারপর থেকে একবারও রবিকে কিংবা ববিতাকে জিজ্ঞাসা করেনি কেমন আছো ? সবকিছু ঠিকঠাক চলছে কিনা ।
রাত ঠিক দশটার কিছু আগে যখন অমিত টিভি দেখছিল । আর ববিতা দুপুরের রান্না গরম করে ডাইনিং টেবিলে রাখছিল। তখন রবি এসে পাশে বসলো। অমিত রবির দিকে তাকালো কিন্তু কিছু বললো না । রবি খুবই সাবধানে নিজের ফোনটাকে সাইলেন্ট করে দিয়ে সূর্যকে ফোন করলো। সূর্য সেটা রিসিভ করলো দেখে রবি বললো “ বাবা তোমার সাথে কিছু ছিল । „
” বল । „
“ আমি আর মা দুজনেই এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চাই । „
“ কোন পরিস্থিতি। এই বাড়িতে আর থাকতে চাইছিস না তোরা । তোদের থাকার জন্য কি আমি তাজমহল বানিয়ে দেবো । „ ক্রুর হাঁসি হেঁসে বললো অমিত। আর অমিতের কথা শুনে ববিতা ভয়ে কেঁপে উঠলো ।
“ না বাবা । আমি বাড়ি বদলানোর কথা বলছি না। আমরা তোমার হাত থেকে থেকে মুক্তির কথা বলছি। „ ভয়ে ভয়ে কাঁপা গলায় বললো রবি।
রবির বাবা মারমুখী হয়ে ওঠার ঠিক আগেই দরজায় কলিংবেল বেজে উঠলো । ববিতা গিয়ে দরজা খুলতেই আখতার , ত্রিয়াদি আর সূর্য ঢুকলো। সবার মুখেই তখন ভীত সন্ত্রস্ত ভাব। কেউ জানে না কি হবে।
“ তোমরা এতো রাতে এখানে। আর এই ছোকরটি কে ? „ অমিত গর্জে উঠলো।
“ বাবা এর নাম আখতার। মাকে খুব ভালোবাসে। তাই আমি তোমাদের ডিভোর্সের কথা বলছি। „ রবির গলা আরো কাঁপছে
“ জানোয়ারের বাচ্চা ! বাবা মায়ের ডিভোর্স করাবি তুই। „ বলে রবিকে মারতে উদ্ধত হয় অমিত ।
“ না তুমি এটা করতে পারো না । „ কঠিন দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠলো ত্রিয়াদি । “ তুমি যদি ওর গায় হাত তোলো তাহলে আমি পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো। „
“ আমার ছেলের গায় আমি হাত দেবো তুই কেরে মাগী কথা বলার । „ অমিত গর্জে উঠলো।
“ খবরদার আর একটি বার যদি মাকে নিয়ে কিছু বলো তাহলে তোমার গলার টুটি আমি ছিঁড়ে ফেলবো । „ সূর্য চোখ বড়ো বড়ো করে রেগে গিয়ে বললো। গলায় তার ক্রুদ্ধতার স্বর স্পষ্ট।
“ হয় তুমি এদেরকে পুরোপুরি মেরে ফেলো , নাহলে এদের স্বাধীন ভাবে বাঁচতে দাও। এইভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যু ভালো। „ ত্রিয়াদি আবার দৃঢ় কন্ঠে আদেশের সুরে বললো ।
“ হ্যাঁ ঠিক বলেছিস। মেরে ফেলবো আমি এই মাগীকে। „ বলে ববিতার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে ।
“ না । আমায় গায় দাত দিও না। আমি প্রেগন্যান্ট !!!! „ ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বসে পড়ে ববিতা।
এই মহিলা , বিচক্ষণ মহিলা । যখন যুদ্ধ সমাপ্ত হতে যায় কিন্তু জেতার কোন লক্ষন দেখা যায় না , তখন ব্রহ্মাস্ত্র চালাতে হয় । ঠিক তেমনি ব্রহ্মাস্ত্র চালালো ববিতা । এই প্রেগন্যান্সির খবর শুনে ঘরে দুইজন ব্যাক্তির দুইরকম অভিব্যাক্তি হলো । আখতারের চোখ খুশিতে জলজল করে উঠলো। আর অমিতের চোখে ক্রুদ্ধ ও নিষ্ঠুরতার ছাপ স্পষ্ট । “ তবে রে নষ্টা বেশ্যা মাগী । স্বামীর পিছন পিছন পেট বাঁধিয়ে বসে আছিস। „ বলে এগিয়ে গেলো ববিতাকে মারার জন্য ।
“ না !!!! „ ভয় আর রাগ একসাথে বেরিয়ে আসে আখতারের গলা থেকে । আখতার দৌড়িয়ে গিয়ে অমিতকে কিছু বুঝতে দেওয়ার আগেই , আখতার তার ডান কাঁধ দিয়ে অমিতের পেটে গুঁতো মারলো। ( WWE এর ভাষায় একে বলে spear ) এই আকষ্মিক ঘটনায় সবাই হতবাক। এমন কোন ঘটনা ঘটবে সেটা কেউ ভাবতেই পারেনি। সবাই আরো বেশি ভীত সন্ত্রস্ত।
আখতারের মার খেয়ে অমিত ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠে “ আহহহহঃ „ আওয়াজ করে পরে গেল মেঝেতে। তারপর আখতার আরো দুটো ঘুষি বসিয়ে দিল অমিতের গালে। অমিত কাতরাতে লাগলো ব্যাথায়। সে আখতার কে একটা সজোড়ে লাথি মেরে সরিয়ে দিল । আখতারকে মারার ইচ্ছা হচ্ছিল খুব কিন্তু ততক্ষণে সূর্য এগিয়ে আসছে দেখতে পেল। তাই ভাবলো “ এখন না পরে , এরা সব দলবেঁধে এসেছে । এদেরকে দেখে নেবে। „
অমিত উঠে বাইরে ফ্ল্যাটের বাইরে যেতে যেতে বললো “ শুয়োরের বাচ্চা গুলো তোদের দেখে নেবো আমি। সবকটাকে দেখে নেবো আমি। কাউকে ছাড়বো না । জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেবো সবকটাকে। „ একটা ক্রুঢ় নিষ্ঠুর পৈশাচিক হাঁসি হেঁসে চলে গেল।
কয়েক মিনিটের মধ্যে এতকিছু হয়ে যাবে সেটা কেউ ভাবতে পারেনি। প্রায় তিন চার মিনিট পর সবাই স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে এলো । ববিতা একটু স্বাভাবিক হতেই কেঁদে ফেললো। চোখ দিয়ে বার হলো অজস্র বারিধারা। আখতার সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য ববিতার কাছে গিয়ে তাকে আলিঙ্গন করলো । ত্রিয়াদি আর সূর্য ববিতাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো “ দেখ ববিতা ! রাত যতই অন্ধকার হোক না কেন , ভোরের আলো ঠিক অন্ধকার দূর করে দেয়। এখন যেটা হলো সেটার পর একটা সমাপ্তি আসবেই। সমাপ্তিটা খারাপ হবে কি সুখের হবে , সেটা জানি না । তবে আমরা সবাই একসাথে লড়বো। কাঁদিস না বোন আমার। সব ঠিক হয়ে যাবে। „
কিছুক্ষণ তারা ববিতাকে সান্ত্বনা দেওয়ার পর সূর্য বললো “ মা ! রাজকুমার একা ঘুমিয়ে আছে , জেগে গেলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। „
“ আমরা আসি ববিতা । „ বলে ববিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ত্রিয়াদি ও সূর্য চলে গেল।
রাতে আখতারকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা রেখে শুয়ে আরো কাঁদলো ববিতা “ আমার খুব ভয় করছে জানো ও যদি কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করে। „
“ তোমার আর আমার সন্তানের কোন ক্ষতি আমি হতে দেবো না। তুমি আমাকে বলোনি কেন তুমি প্রেগন্যান্ট ? „
“ আমি সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। „
চলবে —————————