ভাবি যখন বউ [২]

লেখক -জুয়েল

পর্ব-০৬
রাতের বেলা বাসায় আসলাম, দরজা টোকা দেওয়ার একটু পর দরজা খুলে দেয়। তাকিয়ে দেখি এটা অবন্তী।
রীতিমতো একটা টাসকি খেলাম। কি ব্যাপার অবন্তীকে আমি নিয়ে আসতে গেলাম, আসলো না। কিন্তু এখন নিজে থেকেই এসে হাজির!
অবশ্য ভালোই হয়েছে। সে কোনো কথা না বলে চলে গেলো। আমি দরজা লাগিয়ে রুমে গেলাম, ফ্রেশ হয়ে এসে সবাই মিলে খেতে বসলাম।
খাওয়ার এক পর্যায়ে বাবা বললো……
বাবাঃ একটা কথা বলার ছিলো।
আমিঃ কি কথা?
বাবাঃ তোমাদের বিয়ের তো অনেক দিন হইছে, এবার অন্তত ভবিষ্যৎ এর কথা কিছু চিন্তা করো।
আমিঃ কি বলছো কিছুই তো বুঝতেছিনা।
আম্মুঃ বাসাটা খালি খালি লাগে, আমাদেরও তো ইচ্ছা করে নাতি/নাতনীর সাথে খেলতে।
আম্মুর কথা শুনে আমার গলায় ভাত আটকে গেলো, কাশতে শুরু করলাম।
মনে মনে বললাম এখনো ফ্লোর থেকে খাটে উঠতে পারিনি আর আম্মু বাচ্ছার চিন্তা করতেছে। আম্মু দিল্লী এখনো বহু দূর। তোমার কপালে নাতি নাই।
কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে উঠে গেলাম। রুমে গিয়ে বসে আছি। একটু পর অবন্তী আসলো।
আমার দিকে তাকিয়ে রইলো, দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা বলবে।
আমিঃ কিছু বলবেন?
অবন্তীঃ হুম একটা কথা ছিলো।
আমিঃ বলুন।
অবন্তীঃ তুমি আরেকটা বিয়ে করো।
আমিঃ কিহ! বিয়ে করবো মানে? আপনার মাথা ঠিক আছে?
অবন্তীঃ মাথা একদম ঠিক আছে, আব্বু আম্মু ঠিকই বলেছে, বাসাটা কেমন খালি খালি লাগে। উনাদের জন্য হলেও বিয়েটা করো।
আমিঃ বিয়ে করে লাভ কি হবে?
অবন্তীঃ তোমারও মনের আশা পূরণ হলো আর উনাদেরও নাতি নাতনী আসলো।
আমিঃ শুনেন বিয়েটা কোনো ছেলে খেলা নয়, যে বললেই বিয়ে করে ফেলবো। বিয়ে মানুষের লাইফে একবারই হয়। বুঝলেন,,,,,
অবন্তীঃ কিন্তু আমার লাইফে তো একাধিক। সেটাকে কি বলবে?
আমিঃ শুনেন এটা একটা এক্সিডেন্ট। আপনি তো আর ইচ্ছা করে করেন নি, পরিস্থিতির স্বীকার। আর আমি মনে করি আপনার লাইফে ২য় বিয়ে হয়নি।
অবন্তীঃ হয়নি মানে, কি বলছো?
আমিঃ জ্বি আমি ঠিকই বলছি। বিয়ের পর থেকে আপনার আর আমার সম্পর্ক সেই দেবর/ভাবির মতোই রয়ে গেলো। না আছে কোনো আন্ডারেস্টিং, না আছে শেয়ারি আর না আছে কেয়ারিং। আগে তো একটু হলেও হেসে হেসে কথা বলতেন কিন্তু বিয়ের পর থেকে তো সেটাও নাই।
অবন্তীঃ আমি তো আব্বু আম্মুর জন্য বলতেছি।
আমিঃ আম্মুর জাস্ট ইচ্ছা হইছে যে যদি একটা নাতি থাকতো তাহলে খেলতে পারতো তার মানে এই নয় যে, ইচ্ছাটা পূরন করার জন্য আমাকে আবার বিয়ে করতে হবে।
আমারওতো অনেক ইচ্ছা ছিলো ভালোভাবে পড়ালেখা টা শেষ করে ভালো একটা চাকরি করবো, মহা ধুমধামে বিয়ে করবো। ভাইয়া আর আমি মিলে অনেক সুন্দর একটা বাড়ি করবো, প্রতিদিন ভালোমন্দ খাবো কিন্তু ইচ্ছা কি পূরণ হইছে? হয়নি, কারণ একজন মানুষের সব গুলো ইচ্ছা পূরণ হয় না।
পড়ালেখা শেষ করা তো দূরের কথা পরীক্ষাটাও অন্যের সহযোগিতায় দিয়েছি। আর ভালো চাকরি সেটা তো এখন করতেছি এই যে ভ্যান গাড়ি ঠ্যালতেছি এর থেকে ভালো চাকরি আর কি হতে পারে। ভালো খাবার সেটা তো প্রতিদিনই খাচ্ছি, পানিতে পাউরুটি চুবিয়ে খাইতেছি এর থেকে ভালো খাবার আর কি হতে পারে?
আর বিয়ে সেটার কথা নাই বা বলি। এমন বিয়ে করেছি ধুমধাম তো দূরের কথা যাদের সাথে বড় হইছি, পড়ালেখা করেছি সেই বন্ধু গুলারেও এখনো বলতে পারিনি। যেখানে মানুষ বিয়ের পরে সুখি হয় ভালোভাবে থাকে সেখানে আমি খাট ছেড়ে ফ্লোরে ঘুমাই। সো একজন মানুষের সব গুলো ইচ্ছা পূরণ হয় না। আম্মু আব্বুরটাও হয়তো হবে না।
অবন্তীঃ……. (চুপ করে আছে)
আমিঃ আপনি যে বললেন আমাকে আবার বিয়ে করতে! কোন মেয়ে আমার কাছে বিয়ে বসবে? কোন বাপ তার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিবে? কি আছে আমার, না আছে পড়ালেখা না আছে টাকা পয়সা আর না আছে ভালো কোনো চাকরি? কিছুই নেই আমার।
তার উপর যদি শুনে আমি আরো এক বিয়ে করেছি সেখানে আমাকে মেয়ে তো দূরের কথা ঝাড়ুর বাড়ি ছাড়া কিছুই দিবে না।
আপনি বলছেন বিয়ে করার জন্য, বিয়ে করে খাওয়াবো কি? যে টাকা পাই সেটা দিয়ে নিজেও তো চলতে পারি না। এক বেলা খেলে অন্য বেলা না খেয়ে থাকি। প্রতিদিন হেটে হেটে কাজে যাই।
দুপুরে যেখানে সবাই লান্স করে সেখানে আমি পানিতে পাউরুটি চুবিয়ে খাই। সো এগুলো বাদ দেন।
অবন্তীঃ……. (আমার দিকে তাকিয়ে আছে, চোখের কোনে স্পর্শ পানি দেখা যাচ্ছে)
আমিঃ হুম এটা ঠিক যে, আমি আপনার আর আব্বু আম্মুর সব গুলো চাওয়া পূরণ করতে পারছিনা। যা যা দরকার সেগুলো দিতে পারছিনা। কিন্তু কি করবো বলেন আমিও অনেক চেষ্টা করতেছি। কিছুই হচ্ছে না। হয়তো একদিন সব হবে।
সো এসব আজাইরা কথা বাদ দিয়ে অন্য কথা থাকলে বলুন।
অবন্তীঃ তুমি ঘুমাও, অনেক রাত হইছে।
আমিঃ আপনার বান্ধবীর বিয়ে কখন?
অবন্তীঃ আগামী সপ্তাহে।
আমিঃ ওকে আমি আব্বুর কাছে ৫ হাজার টাকা দিবো। আপনি শপিং করিয়েন আর বিয়েতে কিছু একটা গিফট দিয়েন।
অবন্তীঃ লাগবে না,আমি বিয়েতে যাবো না।
আমিঃ যাবেন না কেন?
অবন্তীঃ তুমি এতো টাকা দিয়ে দিলে ঘর চলবে কেমনে?
আমিঃ সেটা আপনার না জানলেও চলবে। এখন ঘুমান,,,
আর কিছু না বলে ঘুমিয়ে গেলাম। অবন্তী কিছু বলতে গিয়েও বলনি।
মাঝরাতে কারো কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়, লাইট টা অন করে দেখি অবন্তী ভাইয়ার ছবি টা নিয়ে বসে আছে। আর কান্না করতেছে।
আমিঃ কি ব্যাপার আপনি ঘুমান নি এখনো?
অবন্তীঃ….. (চুপ করে আছে)
আমিঃ কি হইছে কথা বলেন না কেন?
অবন্তীঃ না, ঘুম আসছে না। তুমি ঘুমাও,,,
আমিঃ কেমনে ঘুমাবো, চিল্লাচিল্লির মধ্যে কি ঘুমানো যায়?
অবন্তীঃ সরি তুমি ঘুমাও।
আমি আবারও ঘুমাতে গেলাম ঘুম আসছে না, অবন্তীর হাতে ভাইয়ার ছবিটা দেখে ভাইয়ার কথা মনে পড়ে গেলো।
ঘড়ি দেখলাম ২.০০ টা বাজে, আমি উঠে বাসা থেকে বের হয়ে ভাইয়ার কবরের পাশে গেলাম।
বসে বসে কল্পনা করতে লাগলাম ভাইয়ার স্মৃতি গুলো। তারপর নিজে নিজে বলতে লাগলাম,,,,
“ভাইয়া কেমন আছিস, তোর কথা খুব মনে পড়ছে তাই চলে আসলাম। ভাইয়া তোর অবন্তীকে আমি সুখে রাখতে পারছিনা রে, কি করবো বল। সে এখনো তোকে অনেক ভালোবাসে, সব কিছুর মাঝে তোর অস্তিত্ব খুঁজে বেড়ায়।
জানিস তুই খুব লাকি, অবন্তী তোকে এতোই ভালোবাসে যে তোর জায়গায় অন্য কাওকে বসানো তো দূরের কথা, কল্পনাও করে না। জানিস ভাই সে এখনো তোর ছবি নিয়ে কান্না করে।
তুই চলে যাওয়ার পর আমাদের সবার মুখ থেকে হাসিটা চলে গেছে। সব কিছু ঠিকঠাক আছে তবুও কেমন জানি একা একা লাগে।
অবন্তী এখনো তোর পথ চেয়ে বসে থাকে। ওর ধারণা তুই আসবি।
অবন্তী তোকে এতোটাই ভালোবাসে যে, আমাকে বিয়ে করার পরও সে আমাকে বলছে অন্য কাওকে বিয়ে করে সংসার করতে।
জানিস ভাই মাঝেমাঝে অবন্তীর উপর খুব রাগ হয়, ইচ্ছা করে ওরে অনেক বকা দিই কিন্তু ওর দিকে তাকালেই তোর কথা মনে পড়ে।
জানিস ভাই আমারও অনেক কষ্ট হয় তোরে ছাড়া থাকতে, চাইলেও ভেঙ্গে পড়তে পারিনা আব্বু আম্মুর কথা চিন্তা করে,,,,
ভাই তুই যেমন আমাদের সব চাওয় পাওয়া মিটিয়ে ছিলি আমি তেমন পারছিনা রে ভাই। ভাই তুই আমাকে মাফ করে দিস, দোয়া করিস আমার জন্য যেন ওদের সবার মুখে হাসি ফুটাতে পারি। “””
আরো কিছুক্ষণ সেখানে থেকে বাসায় চলে গেলাম। তাহাজ্জত এর নামাজ পড়ে নিলাম, তারপর ফজরের নামাজ পড়ে আবারও ভাইয়ার কবরের পাশে গেলাম। কবর জিয়ারত করে বাসায় এসে রেড়ি হলাম।
প্রতিদিনের মতো রওনা দিবো তখন অবন্তী আসলো….
অবন্তীঃ জুয়েল, একটা কথা বলতাম।
আমিঃ হুম বলেন।
অবন্তীঃ বিয়েতে তুমি যেতে পারবে?
আমিঃ আমি গিয়ে কি করবো, আপনার বান্ধবীর বিয়ে আপনিই যান।
অবন্তীঃ আমার অন্য বান্ধবীরা সবাই ওদের হ্যাসবেন্ডকে সাথে নিয়ে যাবে।
আমিঃ সমস্যা কি, আপনি একা যাবেন।
অবন্তীঃ প্লিজ না করো না।
আমিঃ আমার কাজ আছে, আপনি নিজেই চলে যাবেন।
অবন্তীঃ তুমি না গেলে আমিও যাবো না। আমার নিজেরওতো একটা পার্সোনালিটি আছে।
আমিঃ তারমানে আপনার পার্সোনালিটি রক্ষা করার জন্য আমাকে নিয়ে যাবেন!
অবন্তীঃ না তোমাকে……
আমিঃ হইছে আর মিথ্যা বলতে হবে না। আমি যাবো না।
এমন সময় আব্বু আসলো,,,,
আব্বুঃ কি ব্যাপার এতো চিল্লাচিল্লি কিসের?
অবন্তীঃ দেখো না আব্বু তোমার ছেলেকে আমার সাথে যাওয়ার জন্য বলছি সে নাকি যাবে না।
বাবাঃ কিরে সত্যি নাকি?
আমিঃ আব্বু আমার কথাটা শোনো,,,,
বাবাঃ কোনো কথা শোনার দরকার নেই। তুই বিয়েতে যাবি এটাই ফাইনাল।
কিছু বলতে গিয়েও পারলাম না, সোজা বাসা থেকে বের হয়ে কাজে চলে গেলাম।
রাস্তায় আয়মানের সাথে দেখা হলো…..
আয়মানঃ কিরে জুয়েল! দোস্ত কি অবস্থা?
আমিঃ আছি। তোর কি খবর?
আয়মানঃ সব ঠিকঠাক, কয়েকদিন পর তো রেজাল্ট দিবে।
আমিঃ কোন দিবে জানিস?
আয়মানঃ মনে হয় ৫ তারিখ। তুই জানিস না,,,
আমিঃ না। তোর কাছেই শুনলাম,,, আগের মতো অনলাইনে থাকি না তেমন কোনো নিউজ জানা নেই।
আয়মানঃ আচ্ছা শোন তোর জন্য একটা সুখবর আছে।
আমিঃ কি?
আয়মানঃ একটা কোম্পানিতে কয়েকজন সুপারভাইজার নিয়োগ দিবে, স্নাতক কমপ্লিট করা লাগবে। তোর রেজাল্ট ভালো আসলে তুই আবেদন করিস।
আমিঃ থেংক্স দোস্ত।
আয়মানঃ অবন্তী এসেছে?
আমিঃ হুম এসেছে।
আয়মানঃ তুই নিয়ে আসছিস নাকি নিজে থেকেই এসেছে?
আমিঃ ও নিজে থেকেই এসেছে। আমি যখন ওর বাবার বাড়িতে গিয়েছিলাম ওরে আনতে তখন আসেনি। গত কাল নিজে থেকেই এসেছে।
আয়মানঃ তো এখন কি সিদ্ধান্ত নিলি? ডিভোর্স দিবি?
আমিঃ জানি না, তবে আমার মনে হচ্ছে অবন্তী ঠিকই আমাকে মেনে নিবে কিন্তু একটু সময় লাগবে। ভাইয়ার স্মৃতি থেকে আমি নিজেই এখনো বের হতে পারিনি। আর অবন্তী এতো তাড়াতাড়ি বের হতে না পারাটাই স্বাভাবিক,,,
আয়মানঃ হুম তাহলে তো ভালোই।
আমিঃ হুম। আচ্ছা দোস্ত তুই থাক আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। পরে বস হারামি ঝাড়ি দিবে।
আয়মানঃ আচ্ছা ঠিক আছে যা।
তারপর কাজে চলে গেলাম, রাতে আসার সময় বেতন নিয়ে আসলাম। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আব্বুর হাতে টাকা গুলো দিলাম।
আব্বু অবন্তীকে ডেকে টাকাটা দিলো। অবন্তী আব্বুকে বললো….
অবন্তীঃ আব্বু একটা কথা বলতাম।
আব্বুঃ হুম মা বল।
অবন্তীঃ আপনি একটু জুয়েলকে বলে দেন যাতে কালকে আমার সাথে একটু শপিং এ যায়, আমি কিছু গিফট কিনবো।
আব্বুঃ যাবে সমস্যা কি? এই জুয়েল কালকে ওর সাথে বের হইস।
আমিঃ বাবা আমার কাজ আছে,আমি পারবো না।
বাবাঃ পারবি না কেন?
আমিঃ আজকেই বেতন দিয়েছে আর কালকে যদি কাজে না যাই, পরের দিন গেলে লাথি দিয়ে বের করে দিবে।
বাবাঃ তাহলে সন্ধ্যায় যাবি।
আমিঃ তখন টিউশনি করানো লাগবে।
বাবাঃ একদিন না করালে কিছু হয় না। কালকে ওরে নিয়ে শপিংয়ে যাবি এটাই ফাইনাল।
আমি কিছু না বলে রুমে চলে গেলাম।
পরেরদিন কাজে গেলাম, সেখান থেকে এসে রেড়ি হয়ে অবন্তীকে নিয়ে বের হলাম। বিয়ের পর এই প্রথম অবন্তীকে নিয়ে বের হইছি।
একটা রিক্সা নিয়ে যাচ্ছি, আমি একটু সরে বসে আছি।
অবন্তীঃ তোমার কি আমার পাশে বসতে অস্বস্তি লাগছে?
আমিঃ না, কেন?
অবন্তী; তাহলে ওদিকে চেপে বসছো কেন? আরো ক্লোজ ভাবে বসো।
আমিঃ সমস্যা নেই,আমি ঠিক আছি।
তারপর দুজনেই চুপ,, নীরবতা ভেঙ্গে অবন্তী বললো…..
অবন্তীঃ জুয়েল!
আমিঃ হুম বলেন।
অবন্তীঃ তোমার কি মন খারাপ?
আমিঃ না কেন?
অবন্তীঃ গোমড়া মুখ করে বসে আছো তাই।
আমিঃ ওহ, না আমি ঠিক আছি।
কথা বলতে বলতে শপিংমলের সামনে চলে আসলাম।
অবন্তী অনেক গুলো গিফট দেখলো, তারপর একটা চয়েস করে ওটা কিনলো। এরপর একটা শাড়ির দোকানে গেলো, আমাকে বললো শাড়ি পছন্দ করে দেওয়ার জন্য। দোকানের মধ্যে অনেক লোক তাই কিছু না বলে নীল রঙের একটা শাড়ি পছন্দ করে দিলাম।
ভাইয়ার সাথে যখন বিয়ে হয়েছিলো তখন একদিন অবন্তী ওদের বাসায় যাওয়ার সময় একটা নীল শাড়ি পরেছিলো, সেদিন অনন্তীকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছিলো। সাথে ভাইয়া নীল পাঞ্জাবি পরেছিলো, দুজনকেই অনেক সুন্দর লাগছিলো।
তাই অবন্তীর জন্য নীল শাড়িটাই পছন্দ করে দিলাম।
তারপর অবন্তী আমাকে বাইরে দাঁড়িয়ে রেখে কোথায় যেন গেছে, অনেকক্ষণ পর আসলো।
আমিঃ কোথায় গিয়েছিলেন?
অবন্তীঃ ওয়াশরুমে।
আমিঃ আর কিছু নিবেন নাকি রিক্সা ডাকবো?
অবন্তীঃ রিক্সা নেওয়ার দরকার নেই, হেটে হেটে যাবো।
আমিঃ পাগল নাকি আপনি হাটবেন তাও এই রাতের বেলায়?
অবন্তীঃ কেন রাতের বেলায় হাটলে সমস্যা নাকি?
আমিঃ সেটা না।
অবন্তীঃ এতো কথা না বলে হাটো।
তারপর দুজনে হাটতে লাগলাম। খুব দারুণ একটা অনুভূতি কাজ করলো। রাস্তায় আমার আর ওর কোনো কথা হয়নি।
অনেকক্ষণ হাটার পর বাসায় গেলাম, তারপরেই……..

পর্ব-০৭
অনেকক্ষণ হাটার পর বাসায় গেলাম, আমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলাম।
তারপর আমি আব্বু, আম্মু আর অবন্তী খেয়ে নিলাম।
রুমে গিয়ে সোফায় বসে আছি, কিছুক্ষণ পর অবন্তী আসলো, এসে কিছুক্ষণ আনাগোনা করলো। তারপর বললো…
অবন্তীঃ জুয়েল! একটা কথা বলতাম।
আমিঃ হুম বলেন।
অবন্তীঃ এই নাও, এটা তোমার জন্য। (একটা প্যাকেট)
আমিঃ কি এটা?
অবন্তীঃ খুলে দেখো।
আমি প্যাকেট টা খুললাম। দেখলাম একটা পাঞ্জাবী। অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলাম….
আমিঃ এটা কখন নিলেন?
অবন্তীঃ এতো কিছু তোমার না জানলেও চলবে। হলুদের দিন তুমি এইটা গায়ে দিবে।
আমিঃ…. (হ্যা সূচক মাথা নাড়ালাম)
অবন্তীঃ মনে থাকে যেন।
আমি আবারও একটা বালিশ নিয়ে ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়লাম।
মাঝরাতে কারো নরম হাতের স্পর্শে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়, আমি জেগে গেলাম কিন্তু না জাগার ভান ধরে রাখলাম যাতে কেউ কিছু না বুঝতে পারে।
আমি আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি অবন্তী আমার পাশে বসে, মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর কান্না করতেছে।
আমি বুঝেও না বুঝার ভান ধরে শুয়ে আছি, ভালোই লাগতেছে। বিয়ের পর এই প্রথম ওর স্পর্শ পেলাম।
কিছুক্ষণ পর আমি চোখ বন্ধ করে বললাম “অনেক হইছে,এবার ঘুমিয়ে পড়ুন”।
অবন্তী আমার কথায় অবাক হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি বসা থেকে উঠে খাটে চলে যায়। আমি ওপাশ হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালবেলা রেড়ি হয়ে কাজে যাচ্ছি এমন সময় আব্বু আর অবন্তী আমার সামনে পথ আটকে দাঁড়ালো।
বাবাঃ কিরে জুয়েল কই যাস?
আমিঃ কই আবার, কাজে।
বাবাঃ কালকে তোকে কি বললাম?
অবন্তীঃ আমার বান্ধবীর বিয়ে যে, সে কথা বলিনি?
আমিঃ হুম মনে আছে।
বাবাঃ তাহলে কাজে কেন যাচ্ছিস?
আমিঃ সারা দিন বাসায় থেকে কি করবো? বিয়েতে যাবো সন্ধ্যায়।
বাবাঃ সন্ধ্যায় গেলে খাবি কখন?
আমিঃ আরে ধুর আজকে বিয়ে না। আজকে গায়ে হলুদ। সো সন্ধ্যায় গেলে হবে।
অবন্তীঃ প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি আসিও।
আমি আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেলাম। সারা দিন কাজ শেষ করে বিকালবেলা বাসায় চলে আসলাম।
এসে দেখি অবন্তী আগে থেকে রেড়ি, আমিও ফ্রেশ হয়ে রেড়ি হলাম। অবন্তী একটা ব্যাগে কাপড়চোপড় নিয়ে নিলো।
তারপর আব্বু আম্মুকে বলে বেরিয়ে গেলাম।
একটা CNG নিলাম। অনেকক্ষণ পর বিয়ে বাড়িতে গিয়ে পৌঁছালাম। চারপাশ খুব সুন্দর করে সাজানো।
বাড়িতে গেলাম, অবন্তীকে দেখেই ওর ফ্রেন্ড জড়িয়ে ধরলো। তারপর আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।
তারপর একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে বললো সেখানে যেতে। আমি ওখানে গিয়ে বসলাম।
রাতের বেলা একা একা ভালো লাগছে না। এদিকওদিক হাটতেছি এমন কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেলাম। তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে,,, আমার দিকে না তাকিয়েই বলতে লাগলো “” ওই মিয়া চোখে দেখেন না, দিলেন তো শাড়িটার ১২ টা বাজিয়ে””
তারপর আমার দিকে তাকালো, আমি তো ওরে দেখেই একটা টাসকি খেলাম। এটা যে লিমা, আমার ক্লাসমেট, আমাকে দেখেই বলতে লাগলো….
লিমাঃ আরে জুয়েল! তুই?
আমিঃ কিরে তুই, কি অবস্থা তোর?
লিমাঃ আমি তো ভালোই আছি তোর কি খবর?
আমিঃ আছি আলহামদুলিল্লাহ।
লিমাঃ তো বিয়েতে আসলি নাকি?
আমিঃ হুম, তুইও কি সেম?
লিমাঃ হুম, আমার মামাতো বোনের বিয়ে। মাহি (পাত্রী) তোর কি হয়?
আমিঃ অবন্তীর বান্ধবী।
লিমাঃ অবন্তী কে?
আমিঃ তোর ভাবি,,,,,
লিমাঃ কিহ তুই বিয়ে করেছিস? হারামি একটু বললিও না।
আমিঃ সরি রে হুট করেই বিয়েটা হয়ে গেছে।
লিমাঃ হুম হইছে। চল আমার কাজিন গুলার সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দিই।
আমিঃ সবার সাথে তো পরিচিত হলাম।
লিমাঃ অবন্তীর জামাই হিসেবে হইছস,আমার বন্ধু হিসেবে তো আর হসনি। চল তো,,,,
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে চল।
তারপর লিমার সাথে গেলাম,সবার সাথে আবারও পরিচিত হলাম। তারপর আমি আর লিমা কলেজের কথা গুলো মনে করে খুব হাসাহাসি করতেছি।
অন্যদিকে চোখ পড়তেই দেখি অবন্তী তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। আমি ওরে দেখে আরো জোরে হাসতে শুরু করলাম।
অবন্তী হঠ্যাৎ করেই এসে আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।
অবন্তীঃ ওই এখানে কি করো?
আমিঃ দেখেন না কি করি? আড্ডা দিচ্ছি।
অবন্তীঃ আড্ডা দিচ্ছো মানে? ওই মেয়েটা কে?
আমিঃ ও আমার বেস্টফ্রেন্ড।
অবন্তীঃ কিহ! তোমার মেয়ে বেস্টফ্রেন্ড আছে? কই আগে তো কখনো শুনিনি।
আমিঃ আপনাকে কে সব কিছু বলবো। আমার পার্সোনাল ব্যাপার আমার কাছেই থাকবে
অবন্তীঃ আচ্ছা খেয়ে যাও।
আমিঃ আপনি খেয়ে নেন। আমি ওদের সাথে খাবো। (একটু ভাব নিলাম)
অবন্তীঃ কাদের সাথে?
আমিঃ আমার ফ্রেন্ড আর ওর কয়েকজন বান্ধবী।
অবন্তী কিছু না বলে রাগ দেখিয়ে চলে গেলো,আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসতেছি এমন সময় পেছন থেকে কেউ একজন টোকা দেয়। তাকিয়ে দেখি লিমা,,,
লিমাঃ কিরে তোর বউ তো রেগে গেলো।
আমিঃ হা হা হা, নাহ রাগে নি
লিমাঃ জুয়েল ভাই তুই আর আমার সাথে কথা বলিস না। পরে দেখবি তোরে চিবায় খাইবো
আমিঃ শোন তোকে একটা অভিনয় করতে হবে।
লিমাঃ কি অভিনয়?
আমিঃ…….(সব শিখিয়ে দিলাম)
লিমাঃ না ভাই আমি পারবো না। তুই অন্য কাওকে বল। তোর বউ যে রাগি পরে আমার মাথা পাঠাবে।
আমিঃ প্লিজ না করিস না, তুই ছাড়াতো এতো ক্লোজ কোনো ফ্রেন্ড নাই আমার (একটু পাম দিলাম)
লিমাঃ আচ্ছা দেখি কি করা যায়।
আমিঃ দেখি না কাজটা তোকেই করতে হবে। আর তোর সাথে আরো কয়েকটা মেয়ে নিয়ে নে।
লিমাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
এরপর আমরা আমাদের প্ল্যান অনুসারে কাজ করতে শুরু করলাম। লিমা আমার হাত ধরে মাহির (পাত্রী) রুমে আসলো। অবন্তীও সেখানে ছিলো। আমাদের এই অবস্থায় দেখে অবন্তীর চোখ কপালে উঠে গেলো।
আমি আর লিমা কথা বলতেছি, লিমা হাসতে হাসতে বার বার আমার গায়ে পড়তেছে। এদিকে অবন্তী রেগে লাল হয়ে আছে। মনে মনে বললাম জানু তোমার মনে ভালোবাসা সৃষ্টি করতেছি।
তারপর আমি, লিমা আর ওর কয়েকটা কাজিন মিলে আড্ডা দিচ্ছি আর হাসাহাসি করতেছি এমন সময় দেখি অবন্তী দূর থেকে আমাকে ফলো করতেছে।
রাতে খাওয়ার সময় আমি আর লিমা একসাথে বসেছি। অবন্তীর আমাদের টেবিলে ছিলো। আরো কয়েকজন মেয়ে ছিলো।
লিমাঃ জুয়েল দোস্ত তোর মনে আছে কলেজে থাকতে তুই আমাকে খাইয়ে দিতি আমিও তোকে খাইয়ে দিতাম?
ওর কথা শুনে নিজেই আবুল হয়ে গেলাম, অভিনয় করতে বলেছি, কিন্তু এমন অভিনয় করবে আমি জীবনে কল্পনাও করিনি।
আমিঃ হুম মনে থাকবে না কেন, তুই কতো আমার আঙ্গুলে কামড় দিছস, দিন গুলো কি এতো সহজে ভুলতে পারি?
লিমাঃ মনে আছে আমার জন্মদিনে আমাকে খুব সুন্দর একটা গিফট দিয়েছিলি?
আমি; হুম, তোর জন্মদিন এর তারিখ কখনো আমি ভুলি না।
অবন্তী বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে। চোখের মধ্যে পানি টলোমলো করতেছে। আমাদের আরো কথাবার্তা দেখে সে টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো।
তারপর সবাই খেয়ে উঠলাম, অন্য মেয়ে গুলাও জানে আমাদের প্ল্যান সম্পর্কে।
তারপর বাইরে চলে আসলাম, বিয়ে বাড়িতে চিল্লাচিল্লির জন্য কোনো কথাই ভালোভাবে শোনা যাচ্ছে না।
লিমাঃ জুয়েল তোর বউ কিন্তু তোকে অনেক ভালোবাসে।
আমিঃ কচু, তুই তাহলে কিছুই জানস না। আচ্ছা তোর কথা বল, বিয়ে করেছিস?
লিমাঃ করেছি আবার করিও নি।
আমিঃ মানে?
লিমাঃ বিয়ে ঠিক হয়ে আছে, কিন্তু উনি দেশের বাইরে। এমনিতে মোবাইলে সারাদিন কথা হয়। বিয়ের পর আমাকেও নিয়ে যাবে তো তাই সব কিছু ঠিকঠাক করতে একটু সময় লাগছে।
আমিঃ বাহ! তাহলে দেশের বাইরে চলে যাবি। দেখিস আমাদের আবার ভুলিস না।
লিমাঃ একটা মাইর দিবো, ভুলবো কেন। আচ্ছা তোর ভাই কোন দেশে থাকেরে?
ভাইয়ার কথা বলার কারনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো,,,,
আমিঃ ভাইয়া এমন এক দেশে থাকে যেই দেশে গেলে কেউ আর ফিরে আসেনা।
লিমাঃ মানে?
আমিঃ…..(পুরো ঘটনা বললাম)
লিমাঃ সরি দোস্ত আমি জানতাম না।
আমিঃ ইটস ওকে।
লিমাঃ তারপর তুই তোর ভাবি মানে অবন্তীকে বিয়ে করে নিলি?
আমিঃ হুম।
লিমাঃ ভালো করছিস, মেয়েটা যথেষ্ট ভালো। তো এখন কি করিস?
আমিঃ তেমন কিছু না, চাকরি নাই। বেকার বেকার ঘুরতেছি।
সত্যিটা বললাম না, কারণ যতোই হোক একটু হলেও মান ইজ্জত আছে আমার।
লিমাঃ কি বলিস তাহলে ফ্যামিলি কে দেখে? কিভাবে চলে.????
আমিঃ আল্লাহ চালাইতেছে কোনো ভাবে।
লিমাঃ এই আমাদের কোম্পানির জন্য কয়েকজন লোক দরকার। তুই চাকরি করবি, আমি বাবাকে বলে দিলে তোর কোনো ইন্টার্ভিউ নিবেনা সরাসরি চাকরি দিয়ে দিবে।
আমিঃ কিন্তু…
লিমাঃ কিন্তু কি? বেতনের কথা বলতেছিস তো? আচ্ছা বেতনও বাড়িয়ে দিবে। তুই তোর সার্টিফিকেট জমা দিয়ে দিস।
আমিঃ থেংক্স দোস্ত।
লিমাঃ আরে থেংক্স এর কি আছে? চাকরি হয়ে গেলে ট্রিট দিবি।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে দিবো।
মনে মনে ভাবতেছি এই মেয়েটার সাথে কলেজে তেমন একটা কথা বলতাম না, জাস্ট হাই/হ্যালো ছাড়া। আর আজকে সেই আমাকে চাকরি দিয়ে দিলো। আসলেই উপরওয়ালা কাকে কখন প্রয়োজনে এনে দেয় বলা যায় না।
তারপর একটি মেয়ে এসে আমাদের যেতে বললো, হলুদ নাকি শুরু হয়ে গেছে।
লিমাঃ এই শোন!
আমিঃ হুম বল।
লিমাঃ এবার তোর বউকে আসল ডোজ দিবো।
আমিঃ কি সেটা?
লিমাঃ তুই শুধু দেখ।
তারপর সে আমার হাত ধরে স্টেজের সামনে যায়, অবন্তী আমাদের দেখে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।
গায়ে হলুদ শুরু হলো, সবাই গায়ে হলুদ দিচ্ছে। সব শেষে আমি আর অবন্তী রয়ে গেলাম। তারপর দুজনে একসাথে স্টেজে উঠলাম, মাহিকে হলুদ লাগিয়ে দিলাম। মাহি আমাকে মিষ্টি খাইয়ে দিলো আমিও দিলাম।অবন্তীও দিলো। তারপর আমি একটা মিষ্টি অবন্তীর মুখের কাছে নিলাম।
সে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলো, তারপর মিষ্টিটার কিছু অংশ খেলো। তারপর সেও আমাকে একটা মিষ্টি খাইয়ে দিলো।
ভিতরে ভিতরে আমার মনটা নাচানাচি করতেছে এমন সময় লিমা একটা অদ্ভুত কাজ করে বসলো,সে স্টেজে উঠে অনেক গুলো হলুদ নিয়ে আমার পুরো মুখে মেখে দিলো, আমিও অবন্তীকে দেখিয়ে লিমাকে হলুদ লাগিয়ে দিলাম।
লিমার কাজিন গুলা এসে আমার মাথা থেকে শুরু করে হাত মুখ সব জায়গায় হলুদের পুরো অংশ ঢেলে দিলো।
অবন্তী আমাদের এই অবস্থা দেখে উঠে চলে গেলো। তারপর বাইরে এসে আমি আবারও লিমার সাথে কথা বলতেছি এমন সময় অবন্তী কোথায় থেকে এসে আমার পাঞ্জাবীর কলার চেপে ধরে টেনে রুমে নিয়ে যায়। ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।
তারপরে……

পর্ব-০৮
আমিঃ কি ব্যাপার এই ভাবে ধরে নিয়ে আসলেন কেন?
অবন্তীঃ ওই মেয়ে দেইখলেই কথা বলতে মন চায়?
আমিঃ তাতে আপনার সমস্যা কোথায়?
অবন্তীঃ আছে অনেক সমস্যা। তুমি অন্য মেয়ের দিকে তাকাতে পারবে না।
আমিঃ কেন?
অবন্তীঃ সেটা না জানলেও চলবে।
আমিঃ আমার যেহেতু কেউ নেই সেহেতু আমি অন্যদের সাথে অবশ্যই কথা বলবো।
অবন্তীঃ না তুই কারো সাথে কথা বলতে বলতে পারবি না। আর যেন ওই মেয়েটার সাথে না দেখি।
আমিঃ সমস্যা কোথায়?
অবন্তীঃ বলছিনা কথা না বলতে?
আমিঃ যদি বলি?
অবন্তীঃ তাহলে আব্বুকে কল দিয়ে বলবো তুমি আমাকে ছড় মেরে অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করছো।
আমিঃ কিহ! আপনি এই কথা বলতে পারবেন?
অবন্তীঃ হুম। এখন পাঞ্জাবী টা খুলে শুয়ে পড়ো।
আমিঃ আপনি কোথায় ঘুমাবেন?
অবন্তীঃ পরে দেখা যাবে। তুমি শুয়ে পড়ো।
তারপর আমি পাঞ্জাবী টা খুলে রেখে বিছানায় শুয়ে পড়লাম, আপাতত কেউ নাই, একা একা শুয়ে আছি।
শুয়ে শুয়ে ভাবতেছি অবন্তী এমন রাগ দেখালো কেন? সেও কি আমাকে ভালোবাসে নাকি? ধুর এটা হয় না, সে আমাকে এখনো দেবরের মতোই দেখে। বুঝতেছিনা কেন যে অবন্তী আমাকে মেনে নিচ্ছে না আল্লাই ভালো জানে।
ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও জানি না।
সকালে ঘুম থেকে উঠতে যাবো এমন সময় বুকের উপর ভারি কিছু একটা অনুভব করলাম। তাকিয়ে দেখি অবন্তী আমার বুকের উপর ঘুমিয়ে আছে।
এটা কি হলো? আমি তো নিজের চোখকেই বিশ্বাস করাতে পারছিনা। বাহ! এটা তো মেঘ না চাইতে বৃষ্টি পাওয়ার মতো।
আমি উঠতে গিয়েও উঠিনি, এই প্রথম অবন্তী আমাকে স্পর্শ করলো তাও এমনটা একটা মুহূর্ত। আমি কেন পৃথিবীর কোনো পুরুষই এই অবস্থা থেকে উঠবে না।
আমি ঘুমের ভান ধরে শুয়ে আছি, দেখি অবন্তী কি করে?
কিছুক্ষণ থাকার পর অবন্তী উঠলো, উঠে শাড়ি ঠিক করে নিলো। আমি যেন না বুঝতে পারি সে আস্তে করে রুম থেকে চলে যায়।
আমি মনে মনে হাসতেছি, বালিকা নিজের জামাইয়ের বুকে মাথা রেখে ঘুমাইছো সেটা দেখলে সমস্যা কোথায়?
যাক একটু পর সে আবার রুমে আসলো। এসে….
অবন্তীঃ জুয়েল! এই জুয়েল!!
আমি ঘুমের ভান ধরে বললাম….
আমিঃ হুমম,,,
অবন্তীঃ এই উঠো, অনেক দেরি হয়ে গেছে।
আমিঃ আপনি যান, আমি আরেকটু ঘুমাই।
অবন্তীঃ না আর ঘুমাতে হবে না। উঠো উঠো। একটু পর বর পক্ষ এসে যাবে।
আমিঃ আচ্ছা উঠছি। এই একটা কথা বলেন তো?
অবন্তীঃ কি?
আমিঃ আপনি কালকে রাতে কোথায় ছিলেন?
অবন্তীঃ মাহির সাথে। কেন?
আমিঃ না এমনি। কেউ একজন আমার পাশে শুয়েছিলো, মনে হয় লিমা হবে। (রাগানোর জন্য)
অবন্তীঃ কিহ, আবারও অই মেয়েটার কথা বলছো? (রাগ দেখিয়ে)
আমিঃ তাহলে কে হতে পারে? আপনি কাওকে দেখেছেন?
অবন্তীঃ এই নাও তোমার ব্রাশ তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো।
এ কথা বলে অবন্তী এক রকম চোরের মতোই রুম থেকে চলে গেলো। আমি বসে বসে হাসতেছি।
ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তা করে নিলাম। তারপর কিছুক্ষণ হাটাহাটি করলাম।
বাইরে গিয়ে লিমার সাথে দেখা হয়,,,
লিমাঃ কিরে তুই বেঁচে আছিস?
আমিঃ তোর কি মনে হয়?
লিমাঃ আমার তো মনে হয় তুই মারা গেছিস। তোর আত্না ভুত হয়ে ঘুরতেছে।
আমিঃ হা হা হা হঠ্যাৎ করে এ কথা বললি কেন?
লিমাঃ কালকে রাতে তোর বউ যেই ভাবে তোরে ধরে নিয়ে গেছে সেটা দেখে মনে হইছে যে তুই আজকে শেষ।
আমিঃ আরে না, তেমন কিছু না।
লিমাঃ তোকে তো মনে হয় ভালোবাসে।
আমিঃ আরে না, অবন্তী নিজেও ঠিক মতো কথা বলে না, অন্য মেয়েদের সাথেও কথা বলতে দেয়না। একটা প্যারার মধ্যে আছি।
লিমাঃ হুম বুঝছি। আচ্ছা আর কয়েকটা ডোজ দিবো তোর বউ কে!
আমিঃ আর দরকার নেই দোস্ত। যেগুলো দিছস সেগুলোতেই আমার ১২ টা বাজছে। আর দিলে কি করবে আল্লাই জানে।
লিমাঃ সমস্যা নেই, হালকা করে একটা দিয়ে দিবো।
আমিঃ আচ্ছা দিস।
এমন সময় অবন্তী কল দিলো।
অবন্তীঃ এই জুয়েল কই তুমি?
আমিঃ আছি বাইরে।
অবন্তীঃ বাইরে কি? দরকারের সময় খুঁজে পাই না।
আমিঃ কি বলুন।
অবন্তীঃ তাড়াতাড়ি রুমে আসো।
আমিঃ কেন?
অবন্তীঃ ধুর তুমি এতো কথা বলো কেন? আসতে বলছি আসো।
আমিঃ আচ্ছা আসতেছি।
কলটা কেটে দিলাম,,,
লিমাঃ কিরে কে কল দিলো?
আমিঃ তোর ভাবি,রুমে যেতে বলছে।
লিমাঃ মনে হয়ে আমাকে তোর সাথে দেখেছে। যা তোর খবর আছে।
আমিঃ তুই দাঁড়া আমি একটু আসছি।
লিমাঃ যা বেঁচে থাকলে দেখা হবে। ওপাড়ে ভালো থাকিস বন্ধু হা হা হা
আমি; ফাজিল, থাক আমি আসছি।
তারপর রুমে গেলাম। অবন্তী দেখেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো। শাড়ি একটাকে উল্টোপাল্টো করে পড়ে আছে।
আমিঃ কি ব্যাপার আপনার এই অবস্থা কেন?
অবন্তীঃ এই তুমি আসছো,,,
আমিঃ হুম। কি হইছে?
অবন্তীঃ ধুর একা একা শাড়ি পড়া যায় নাকি? দরজাটা লাগিয়ে এদিকে আসো।
আমিঃ দরজা কেন লাগাবো?
অবন্তীঃ তো কি দরজা খুলেই শাড়ি পরবো? যাও লাগিয়ে আসো।
আমি গিয়ে দরজা লাগিয়ে আসলাম,,
অবন্তীঃ এই শাড়ির আঁচল টা একটু ধরো তো?
আমি তো অবাক হয়ে গেলাম।এটা কি বলে?
অবন্তীঃ ওই আবুলের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন?
আমিঃ না মানে স্বপ্ন নাকি বাস্তব সেটাইতো বুঝতেছি না।
অবন্তীঃ সামান্য শাড়িটা ধরতে বলেছি এতেই এই অবস্থা,অন্য কিছু বললে কি হতো?
আমিঃ অন্য কিছু কি?
অবন্তীঃ ওই এতো কথা বলো কেন? যেটা করতে বলেছি সেটা করো।
আমি গিয়ে হাটু গেড়ে বসে শাড়ির কচিগুলো ধরলাম।
আমিঃ আপনি শাড়ি পড়তে পারেন না?
অবন্তীঃ পারি তবে পুরোপুরিভাবে পারিনা।
আমিঃ তাহলে কাল কিভাবে পড়েছেন?
অবন্তীঃ বাসা থেকে আসার সময় আম্মু পড়িয়ে দিয়েছে।
আমিঃ ও আচ্ছা।
অবন্তীঃ যাও তুমি গিয়ে গোসল করে রেড়ি হয়ে নাও। একটু পর অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর গোসল করে রেড়ি হয়ে নিলাম। অবন্তী নিজের হাতেই আমার শার্টের বুতাম লাগিয়ে দিলো।
একটা জামাই জামাই ভাব আসলো শরীরে। আমি রেড়ি হয়ে বাইরে গেলাম। মাহির বাবা ডেকে নিয়ে গেলো উনার সাথে একটু দেখাশোনা করার জন্য।
আমি উনার সাথে গেলাম। বরপক্ষ চলে আসলো। খাওয়াদাওয়ার পর্ব শুরু হলো কাজের মাঝখানে আমি নিজেও খেয়ে নিলাম।
কিছুক্ষণ পর মাহিকে মানে পাত্রিকে আনা হলো, মাহির সাথে অবন্তী সহ আরো কতো গুলো মেয়ে ছিলো। অবন্তী দেখে আবারও ক্রাশ খেলাম। কালো একটা শাড়িতে একটু অন্যরকম লাগছে।
আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। এমন সময় পেছন থেকে কেউ একজন টোকা দিলো তাকিয়ে দেখি লিমা….
লিমাঃ কিরে নিজের বউকে কেউ এভাবে দেখে?
আমিঃ আরে না, আমি বিয়ে দেখতেছিলাম।
লিমাঃ বুঝি বুঝি ডালমে কুচ কালা হে। আচ্ছা বাদ দে, তুই খেয়েছিস?
আমিঃ হুম। তুই?
লিমাঃ ভেবেছিলাম আরো পরে খাবো, আম্মু জোর করে খাইয়ে দিছে।
আমিঃ ভালো করছে।
লিমাঃ এই ১৫ তারিখ তো রেজাল্ট দিবে, জানিস?
আমিঃ কিসের রেজাল্ট?
লিমাঃ আরে আমাদের অনার্স পরীক্ষার।
আমিঃ ও আচ্ছা। তোর নাম্বারটা দেতো। তোদের অফিসে যাওয়ার আগে কল দিবো।
লিমাঃ ওকে, এই নে….. (নাম্বার টা বললো)
আমিঃ দোস্ত তোরে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না।
লিমাঃ হইছে, চল তোর বউকে একটু রাগিয়ে দিই।
আমিঃ কেমনে?
লিমাঃ গেলেই দেখবি।
তারপর লিমা আমার একটা হাত ধরে স্টেজে নিয়ে যায়। তারপর বর আর কণে এর মাঝে বসিয়ে ফটো তুলা শুরু করলো। অবন্তীকে বললো আমাদের ছবি তুলে দিতে এটা দেখে অবন্তী রাগে লাল হয়ে গেছে। আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।
আমিও একটু রাগানোর জন্য লিমার সাথে ক্লোজ হয়ে বসে ছবি তুলতেছি।
এভাবেই দিনটা চলে গেলো। বিকালবেলা বসে আছি এমন সময় বস কল দিলো।
আমিঃ আসসালামু আলাইকুম,,,
বসঃ হুম, জুয়েল কোথায় তুমি?
আমিঃ আমি তো একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে আসছি।
বসঃ কালকে কাজে আসবে।
আমিঃ কিন্তু বস বিয়ে তো এখনো শেষ হয়নি বউভাত বাকি আছে।
বসঃ তোমাকে আর কাজে আসতে হবে না। তুমি বিয়ে খাও,,,
আমিঃ না বস, ঠিক আছে আমি কালকে আসবো।
বসঃ মনে থাকে যেন। নাহলে চাকরি ডিসমিস।
কলটা কেটে দিলো। আমি মনে মনে ভাবতেছি শালা লিমাদের ওখানে চাকরিটা একটু পাই তখন দেখবি। তোর এই ব্যবহারের ফল আমি সুদেআসলে দিবো।
অবন্তীর কাছে গেলাম,,,,,
আমিঃ একটু এদিকে আসেন তো।
অবন্তীঃ আমাকে কেন ডাকতেছো? তোমার তো আর মেয়ে ফ্রেন্ডের অভাব নেই।
আমিঃ দেখেন বাজে কথা না বলে সাইডে আসেন।
অবন্তীঃ কি হইছে?
আমিঃ আপনি থাকেন আমি চলে যাচ্ছি।
অবন্তীঃ চলে যাচ্ছো মানে, কোথায় যাচ্ছো?
আমিঃ বস কল করেছিলো, কালকে কাজে না গেলে চাকরি থাকবে না। এখান থেকে তো আর কাজে যাওয়া সম্ভব না। তাই বলছিলাম আপনি থাকেন বিয়ে শেষ হলে তারপর আমি এসে নিয়ে যাবো।
অবন্তীঃ দরকার নেই। দাঁড়াও আমিও যাবো।
আমিঃ মানে কি! এখনো বিয়ে শেষ হয়নি।
অবন্তীঃ আসলটা শেষ, আর এখানে থেকেও কোনো মজা পাবো না। মাহি তো চলে যাবে। সো দাঁড়াও আমিও আসছি।
কিছু না বলে দাঁড়িয়ে আছি। তারপর সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম। লিমাকে ইশারায় বলেছি মোবাইলে কথা বলবো।
তারপর একটা CNG নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
আম্মুঃ কিরে চলে আসলি যে? বিয়ে শেষ নাকি?
আমিঃ না, কাজ আছে। বস কল করেছিলো তাই।
তারপর রুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে বাইরে চলে গেলাম।
আয়মানকে কল দিয়ে আসতে বললাম, আসার পর পুরো ঘটনা ওর সাথে শেয়ার করলাম।
আয়মানঃ বাহ! তার মানে সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে?
আমিঃ এখনো সিউর না। আরো কয়েকদিন দেখি।
আয়মানঃ লিমার ডোজটায় কাজ হয়েছে না হলে অবন্তী এতো সহজে নরম হতো না।
আমিঃ হুম বন্ধু ঠিক বলছিস। লিমা অনেক হেল্প করেছে।
আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। রাতে খেয়ে রুমে গেলাম। দেখলাম অবন্তী বিয়ে তোলা ছবি গুলো দেখতেছে। আমি গিয়ে কাঁথা আর বালিশটা নিয়ে ফ্লোরে ঘুমানোর জন্য রেড়ি হচ্ছি।
অবন্তীর দিকে বার বার তাকাচ্ছি সে কিছু বলে কিনা। কিন্তু না কিছু বললো না।
আমিও শুয়ে গেলাম। শুয়ে শুয়ে ভাবতেছি, অবন্তী তো কিছুই বললো না। তাহলে বিয়েতে কেন শুয়েছিলো একসাথে?
মনে হয় এটা অন্যদের দেখানোর জন্য, মান সম্মান রক্ষার্থে এমনটা করেছে হয়তো। আমার কপালে এগুলো নেই। তাই এগুলো নিয়ে চিন্তা না করাই বেটার।
অবন্তী আগেও আমাকে মেনে নেয় নি, এখনো নিচ্ছে আর ভবিষ্যৎ এ নিবে বলে মনে হয় না। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কাজে যাচ্ছি এমন সময় আব্বু সামনে দিয়ে ঘুরাঘুরি করতেছে মনে হচ্ছে কিছু একটা বলবে।
আমিঃ কিছু বলবে?
বাবাঃ তোর কাছে কিছু টাকা হবে? তোর মায়ের মেডিসিন শেষ।
আমি জানি পকেটে মাত্র ২০ টাকা আছে, কারণ যেগুলো ছিলো সব বিয়েতে খরচ হয়ে গেছে। যাতায়াত, বিয়ের উপহার, অবন্তীর শাড়ি পুরো মাসের বেতন শেষ। কি বলবো বুঝতেছি না।
আমিঃ আচ্ছা প্রেসক্রিপশন টা আমাকে দাও আমি আসার সময় নিয়ে আসবো।
তারপর বাবার থেকে প্রেসক্রিপশন টা নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। ভাবতে লাগলাম কিভাবে কি করবো।
হেটে হেটে কাজে চলে গেলাম। প্রতিদিনের মতো সেই দোকানে দোকানে মাল দেওয়া আর ভ্যান ঠ্যালা।
কাজ শেষ করে আসার সময় বসের কাছে কিছু টাকা চাইলাম। শালা টাকাতো দিলোই না, উলটো আরো ঝাড়ি দিলো।
পরে আয়মানকে কল করে দেখা করতে বলি, ওর কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে আম্মুর জন্য মেডিসিন গুলো কিনে নিয়ে আসি।
এভাবে দিন যেতে লাগলো, কয়েকদিন পর আমাদের রেজাল্ট দিবে। এটা নিয়ে আমার তেমন মাথাব্যথা নেই। কারন আমার পরীক্ষা যে খারাপ হইছে সেটা আমি খুব ভালো করে জানি। ফেল করবো এটাই শিউর। এদিকে অবন্তী রেজাল্টের চিন্তায় শেষ।
দেখতে দেখতে রেজাল্টের দিন চলে আসলো। আমি যথারীতি কাজে চলে গেলাম।
দুপুরবেলা অবন্তী আমাকে কল দিয়েছে,,,
অবন্তীঃ এই জুয়েল, তুমি কোথায়?
আমিঃ কাজে আছি কেন কি হইছে?
অবন্তীঃ রেজাল্ট দিয়ে দিছে, আমি পাশ করেছি।
আমিঃ congratulation.
অবন্তীঃ thanks. এই তোমার রোল নাম্বার আমি ভুলে গেছি আমাকে বলো তো।
আমিঃ আমি নিজেও ভুলে গেছি, এডমিন কার্ড দেখো।
অবন্তীঃ আচ্ছা দেখতেছি।
তারপর কলটা কেটে দিলো। পাশে বস ছিলো, আমার মোবাইলে কথা বলা দেখে উনি বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে বললো…
বসঃ ওই মিয়া কাজ করতে আসো নাকি প্রেম করতে?
আমিঃ সরি বস!
বসঃ আরে রাখো তোমার সরি। মোবাইল বন্ধ করো মিয়া। এতোই যখন বউ বউ করো তাহলে কাজে আসো কেন? বউ এর কাছে থাকলেই তো পারো।
এই শালার উপর তো রাগ হচ্ছেই সাথে অবন্তীর উপরও। কল দেওয়ার আর সময় পেলো না। রেজাল দিয়েছে তো কি হইছে বাসায় গেলেও তো বলা যেতো। আমি মোবাইলটা বন্ধ করে রেখে দিলাম।
তারপর কাজ শেষ বসের কাছে টাকা চাইলাম উনি মুখের উপর বলে দিয়েছে মাস শেষ হওয়া ছাড়া কোনো টাকা দিবে না। যদি অতিরিক্ত করি তাহলে অতিরিক্ত কাজের টাকা দিবে।
আমি আরো দুই ঘন্টা করে ১০০ টাকা নিলাম। তার হিসেবে নাকি আরো কম পাবো।
তারপর গেলাম টিউশনিতে, পড়ানোর এক পর্যায়ে ছাত্রের মা আসলো। টাকা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমিঃ আন্টি কিছু বলবেন?
আন্টিঃ এই নাও তোমার এই মাসের বেতন।
আমিঃ কিন্তু আন্টি মাস তো এখনো শেষ হয়নি।
আন্টিঃ জানি, তোমাকে আর আসার দরকার নেই। আমি ওর জন্য নতুন টিচার দেখেছি।
আমিঃ কিন্তু আন্টি কেন?
আন্টিঃ তুমি রাত করে আসো, তার উপর দেখে মনে হয় ক্লান্ত, তোমার পড়ানো নাকি ওর কাছে ভালো লাগে না। আর….
আমিঃ আর কি?
আন্টিঃ আর তুমি নাকি ভ্যান গাড়ি ঠ্যালো, তোমাকে আজকে সকালে ওর ফ্রেন্ডেরা সবাই দেখেছে। তারপর স্কুলে গিয়ে ওরে অনেক রকম কথাবার্তা বলেছে। ঠাট্টা করেছে।
আমি কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। শালা ভ্যান গাড়ির সাথে পড়ানোর কি সম্পর্ক এখনো আমার মাথায় আসছে না।
কিছু না বলে ওই বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম।
এবার কি হবে? টিউশনির টাকাটা দিয়ে আব্বু আম্মুর মেডিসিন কিনি। কিন্তু এবার কি হবে?
হঠ্যাৎ করেই অবন্তীর রেজাল্টের কথা মনে পড়লো, আন্টির দেওয়া বেতন গুলো দেখতে লাগলাম। পুরো টাকা দেয়নি। অর্ধেক দিয়েছে।
বাঁশ আসকে সব দিক দিয়েই আসে, অবন্তীর জন্য ২ কেজি মিষ্টি নিলাম।
তারপর হেটে হেটে বাসায় গেলাম। কলিং বেল দেওয়ার একটু পর দরজা খুলে দিলো তাকিয়ে দেখি……

পর্ব-০৯
কলিং বেল দেওয়ার একটু পর দরজা খুলে দিলো, অবন্তী আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো।
আমি তো পুরা টাসকি খেয়ে গেলাম। কিছু বলার ভাষাই খুঁজে পাচ্ছি না।
একটু পর আম্মু রুম থেকে বের হয়ে দেখে অবন্তী আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে, আম্মু হাসতে হাসতে আমার রুমে চলে যায়। আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম।
তারপর অবন্তী আমাকে ছাড়িয়ে বলতে থাকে,,,,
অবন্তীঃ জুয়েল আমি পাশ করেছি।
আমিঃ Congratulation. এই নিন,, মিষ্টি গুলো নিয়ে যান।
অবন্তীঃ ওই আমি পাশ করছি সেজন্য আমি এতো খুশি হয়নি। খুশি হইছি এই জন্য, তুমিও ভালো পাশ করছো।
আমিঃ কিহ!
অবন্তীঃ হুম তুমিও করছো, শুধু পয়েন্ট টা একটু কম,এটা কোনো ব্যাপার না।
আমি আর কোনো কথা না বলে অবন্তীকে কোলে নিয়ে নিলাম, আসলে খুশিতে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারিনি।
ওরে কোলের কারণে ও আমার দিকে অবাক ভাবে তাকিয়ে রইলো।
আমিঃ সরি, আসলে এমন একটা খুশির খবর শুনে নিজেকেকে স্থির রাখতে পারিনি।
অবন্তীঃ ইটস ওকে। যাও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।
আমি রুমে চলে গেলাম। মনে মনে ভাবলাম এবার লিমাদের অফিসে যাবো। দেখি চাকরিটা হয় কিনা।
ফ্রেশ হয়ে আব্বু আম্মুর কাছে আসলাম, আব্বু আম্মু দুজনেই অনেক খুশি। বসে বসে অনেকক্ষণ গল্প করলাম। তারপর খাওয়াদাওয়া করে রুমে চলে গেলাম। অবন্তী রুমে আসার আগেই শুয়ে পড়লাম।
একটু পর সে আসলো, আমার পাশে বসলো, কিছুক্ষণ মাথায় হাত বুলিয়ে খাটে চলে গেলো। অবন্তী ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আমি উঠলাম।
উদ্দেশ্য হচ্ছে ভাইয়ার কাছে যাবো। আজকে এমন একটা দিনে ভাইয়া থাকলে হয়তো তিনি আমাদের চাইতেও বেশি খুশি হতেন।
আমি উঠে অজু করে ভাইয়ার কবরের দিকে রওনা দিলাম। কিছুক্ষণ পর আমি কবরের কাছে গেলাম। আমি জানি ভাইয়া আমাকে দেখে অনেক খুশি হবে। আমি কবরের মাথার পাশে গিয়ে বসলাম।
“” ভাইয়া কেমন আছিস? এতো রাতে তোরে ডিস্টার্ব করার জন্য সরি। জানি তুই অনেক বিরক্ত হবি কিন্তু কি করবো বল কথা গুলো তোকে না বললে যে আমার ঘুম আসবে না।
আজকে আমাদের রেজাল্ট দিয়েছে। যদিও রেজাল্ট নিয়ে আমার তেমন একটা মাথাব্যথা নেই, আমি চিন্তায় ছিলাম অবন্তী কে নিয়ে। আলহামদুলিল্লাহ সে পাশ করেছে। আমিও করেছি কিন্তু সেটা হয়তো তোর মনের মতো হবে না।
ভাইয়া তোর স্বপ্ন টা পূরন করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তোর আর অবন্তীর ইচ্ছা ছিলো অবন্তী যেন গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করে।
আজকে সেই দিন যেটার জন্য তুই স্বপ্ন দেখতি, আজকে সবই ঠিক আছে শুধু তুই নেই আমাদের পাশে। তোর স্বপ্ন গুলো আমি নিজের জীবন দিয়ে হলেও পূরণ করবো।
জানিস ভাই আমারও অনেক।ইচ্ছা ছিলো খুব ভালো একটা রেজাল্ট করার জন্য কিন্তু কি করবো বল সেটা হয়তো আমার কপালে নাই। তারপরও যে পাশ করেছি সেটার জন্য আলহামদুলিল্লাহ।
ভাইয়া তুই যদি থাকতি হয়তো আমিও ভালো কিছু করতাম। তুই চলে যাওয়ার পর থেকে আমার পুরো পৃথিবীটাই পালটে গেছে।
এখন বুঝতে পারছি তুই কষ্ট করে আমাদের স্বপ্ন গুলো পূরণ করেছিস, এতো কষ্ট করার পরও নিজেকে সব সময় হাসিখুশি রেখেছিস।
ভাই তোর জন্যতো আমি কিছুই করতে পারিনি,সারা জীবন তুই আমাদের জন্য করে গেছিস।
জানিস ভাইয়া অবন্তী এখনো আমাকে মেনে নেয়নি, হয়তো নিবেও না। কিন্তু তাতে আমার কোনো আফসোস নেই। সে এখনো তোকে অনেক ভালোবাসে।
অবন্তীর জন্য নাহয় আমি আমার জীবনটা স্যাকরিপাইস করে দিলাম। সে যেমন থাকতে চায় তেমনই থাকুক।
ভাই আমার টাকা পয়সা কিছুর দরকার নেই শুধু তোকে দরকার। তুই আরেকবার আমাদের মাঝে ফিরে আয়, কখনো তোকে হারাতে দিবো না। প্লিজ ভাই আয় আরেকবার। “””
আর কোনো কথাই আসছে না মুখদিয়ে। বসে বসে ভাইয়ার স্মৃতি গুলো মনে করতে লাগলাম, তারপর উঠে কবর জিয়ারত করে বাসায় চলে আসলাম।
এসে দেখি অবন্তী মন খারাপ করে বসে আছে।
আমিঃ কি ব্যাপার আপনি ঘুমান নি?
অবন্তীঃ কোথায় গিয়েছিলে???
আমিঃ এই তো একটু বাইরে, ঘুম আসছেনা তাই ঘুরে এলাম।
অবন্তীঃ মিথ্যা বলো কেন? সত্যি করে বলো।
আমিঃ ভাইয়ার কবরের কাছে।
অবন্তীঃ এতো রাতে?
আমিঃ জিয়ারত করতে গেছিলাম।
অবন্তীঃ কি কি বলেছো তোমার ভাইয়াকে?
আমিঃ কিছু না, জাস্ট জিয়ারত করে চলে আসছি।
অবন্তীঃ আমি সব শুনেছি।
আমিঃ আপনি কিভাবে শুনেছেন?
অবন্তীঃ তোমার পিছনে পিছনে গিয়েছিলাম।
আমিঃ রাত অনেক হইছে ঘুমিয়ে পড়ুন। (কথা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য)
অবন্তী কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি গিয়ে শুয়ে পরলাম।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কাজে যাবো এমন সময় অবন্তী সামনে আসলো….
আমিঃ কিছু বলবেন?
অবন্তীঃ হুম একটা কথা ছিলো।
আমিঃ হুম বলেন।
অবন্তীঃ আমি একটা আমাদের বাসায় যাবো, যদি দিয়ে আসতে ভালো হতো।
আমিঃ কিন্তু আমি তো কাজে যাচ্ছি, আর হঠ্যাৎ করে ওই বাসায় কেন?
অবন্তীঃ রেজাল্ট দিয়েছে আম্মু আব্বু শুনে অনেক খুশি হয়েছে, আর এমনিতেই অনেক দিন যাইনি। সকালে আম্মু কল দিয়ে তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে।
আমিঃ আম্মু আব্বুকে বলেছেনে?
অবন্তীঃ হুম,,,
আমিঃ কি বলেছে?
অবন্তীঃ যাওয়ার জন্য বলেছে। যদি তুমিও যাও তাহলে ভালো হতো।
আমিঃ না আমি যেতে পারবো না।
অবন্তীঃ কেন, গেলে সমস্যা কোথায়?
আমিঃ কাজ আছে। কালকে এমনিতে অগ্রিম টাকা নিয়ে নিয়েছি। এখন কাজ না করলে বের করে দিবে। পরে দেখা যাবে চাকরিটাও যাবে।
অবন্তীঃ তাহলে আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে তারপর যেও, প্লিজ না করো না। একা একা ভয় করে।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে, রেড়ি হয়ে নেন।
অবন্তীঃ ওয়েট, যাবো আর আসবো।
আমি বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম, অবন্তী রেড়ি হয়ে আব্বু আম্মুকে সালাম করে বেরিয়ে গেলো।
একটা রিক্সা নিয়ে ওদের বাসার দিকে রওনা দিলাম। কালকে যেই মিষ্টি গুলো আমি কিনে নিয়ে আনলাম সেগুলো আম্মু ওর সাথে দিয়ে দিয়েছে। যারে আর ওখানে যাওয়ার সময় কিছু কেনা না লাগে।
কিছুক্ষণ পর অবন্তীদের বাসায় চলে আসলাম। ওর ব্যাগপত্র নামিয়ে দিয়ে চলে আসতে যাবো এমন সময় অবন্তী ডাক দিলো…..
অবন্তীঃ জুয়েল!
আমিঃ হুম বলেন,,,
অবন্তীঃ কিছু খেয়ে যাও।
আমিঃ এখন না, এমনিতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে। আসি, আল্লাহ হাফেজ।
অবন্তীঃ জুয়েল!
আমিঃ আবার কি?
অবন্তীঃ রাতে আসতে পারবে?
আমিঃ রাতে এসে কি করবো?
অবন্তীঃ আম্মু তোমাকে আসতে বলেছে। রাতে এসে দেখা করে নিও, রাত থেকে পরের দিন এখান থেকে কাজে যেও।
আমিঃ চেষ্টা করবো।
এ কথা বলে আবার রওনা দিলাম। মনে মনে ভাবলাম আজকে হঠ্যাৎ করে অবন্তী এতো ভালোবাসা দেখাচ্ছে! কারন কি? মনে হয় কাল রাতে সব কিছু শুনে ফেলেছে।
ধুর এতো কিছু ভেবে লাভ নেই, ও আমাকে মেনে নিবে না। ভালো পাশ করার কারনে হয়তো কৃতজ্ঞতা দেখাচ্ছে।
অবন্তীকে ওদের বাসায় রেখে আমি কাজে চলে গেলাম। সারা দিন কাজ করলাম এর মাঝে অবন্তী বেশ কয়েকবার কল দিয়েছে। খেয়েছি কিনা, ভালো আছি কিনা, ওদের বাসায় কখন যাবো আরো অনেক কিছু বলেছে।
রাতে আমি আমাদের বাসায় চলে গেলাম।
আম্মুঃ কিরে তুই এখানে কেন?
আমিঃ মানে কি!
আম্মুঃ অবন্তী তোকে কিছু বলেনি?
আমিঃ হুম বলেছে, ওদের বাসায় যাওয়ার জন্য বলেছে।
আম্মুঃ তো যাস নি কেন?
আমিঃ আরে আজব তো, ও বললেই কি যেতে হবে?
আম্মুঃ হুম অবশ্যই। অবন্তী অনেক বার কল দিয়েছিলো তুই আসলে যেন ওদের বাসায় যেতে বলি।
আমিঃ আমি যাবো না এখন। অন্যদিন যাবো,,,,
বাবাঃ যাবি না মানে? এক্ষুনি যা,,,
আমিঃ কিন্তু বাবা!
বাবাঃ কোনো কিন্তু নয়, রেড়ি হয়ে অবন্তীর কাছে যা।
কি আর করা রেড়ি হয়ে ওদের বাসার দিকে রওনা দিলাম। প্রায় ৩০ মিনিট পর ওদের বাসার সামনে গেলাম।
কলিং বেল দেওয়ার সাথে সাথেই দরজা খুলে দিলো। কি ব্যাপার এটা কি হলো? মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দরজা খুলে গেলো। মনে হয় দরজার কাছেই কেউ ছিলো।
তাকিয়ে দেখি অবন্তী, আমাকে দেখে একটা হাসি দিয়ে বললো…
অবন্তীঃ এতো দেরি হলো যে?
আমিঃ রাস্তায় জ্যাম ছিলো।
অবন্তীঃ যাও সোফা রুমে যাও। আম্মু আব্বু ওখানে আছে।
আমি ওই রুমে গেলাম, উনাদের সালাম করলাম, অনেকক্ষণ বসে বসে গল্প করলাম। তারপর একসাথে খেয়ে আমি অবন্তীর রুমে চলে গেলাম।
রুমে গিয়ে খাটে শুয়ে রইলাম এমন সময় অবন্তী আসলো। আমি যেই উঠে যাবো, তখনই…..
অবন্তীঃ এই কই যাও?
আমিঃ আপনি ঘুমাবেন না?
অবন্তীঃ হুম ঘুমাবো তো, কিন্তু তুমি খাট থেকে নামো কেন?
আমিঃ না নামলে আপনি কোথায় ঘুমাবেন?
অবন্তীঃ সেটা তোমার জানতে হবে না। তুমি ঘুমাও,,
আমিঃ কিন্তু…
অবন্তীঃ ওই ঘুমাতে বলছিনা! ঘুমাও,,,
আমি কিছু না বলে ঘুমিয়ে গেলাম, অবন্তী রুম থেকে চলে গেলো। মনে হয় অন্য রুমে থাকবে, যাক ভালোই হইছে।
আমি অন্তত খাটে ঘুমাতে পারবো, এই ফ্লোরে থাকতে থাকতে পিটে ব্যথা হয়ে গেছে।
আর শ্বশুর বাড়ি এসে যদি নিচে থাকি আর সেটা যদি কেউ দেখে তাহলে আমার মান ইজ্জত সব শেষ।
শুয়ে শুয়ে ভাবছি অবন্তী কি আসলেই আমাকে মেনে নিবে না? আমারওতো ইচ্ছা করে বউয়ের সাথে থাকতে, ওর সাথে ভালো একটা সম্পর্ক রাখতে। মনের গহিনে যত কথা লুকিয়ে আছে সব গুলো শেয়ার করতে।
কিন্তু এমন কপাল নিয়ে দুনিয়াতে আসছি যেই কপালে সুখ নামের কোনো কিছু লেখা নেই।
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম,,,,
রাতের বেলা মনে হলো কিছু একটা আমার মুখের উপর চাপ দিয়ে আছে, আস্তে আস্তে চোখ খুললাম তাকিয়ে দেখি অবন্তী আমার পাশেই শুয়ে আছে আর একটা হাত আমার মুখের উপরে অন্য একটা হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।
আমি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম, স্বপ্ন দেখতেছি নাতো? নাহ স্বপ্ন না আসলেই সত্যি।
কিছুক্ষণ অবন্তীর মায়ামাখা মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম, দেখে মনে হচ্ছে ছোট একটা বাচ্ছা আমার বুকে শুয়ে আছে।
তারপর আমিও ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ওর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো,,,,
অবন্তীঃ কি ব্যাপার মহারাজ, আর কতো ঘুমাবেন। কাজে যাবেন না?
আমিঃ ওহ সরি, আপনি আমাকে আরো একটু আগে ডেকে দিতেন।
অবন্তীঃ সমস্যা নেই এখনো সময় বেশি হয়নি। আমি নাস্তা রেড়ি করতেছি তুমি ফ্রেশ হয়ে হয়ে ডাইনিং রুমে আসো।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে আপনি যান, আমি আসছি।
অবন্তী চলে গেলো, আমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেড়ি হয়ে ডাইনিং রুমে গেলাম। এতো গুলো নাস্তা দেখে একটু টাসকি খেলাম। আসলে অনেক দিন হইছে এতো নাস্তা একসাথে খেয়েছি যে। প্রতিদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই বাইরে গিয়ে কলা পাউরুটি খেয়ে নিতাম।
যাইহোক সবাই মিলে নাস্তা করে নিলাম, নাস্তা করে ওর আব্বু আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে আমি ওদের বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। উদ্দেশ্য কাজে যাবো
গেইটের বাইরে আসতেই অবন্তী ডাকলো….
অবন্তীঃ জুয়েল!
আমিঃ কিছু বলবেন?
অবন্তীঃ কাজে না গেলে হয় না?
আমিঃ আজকে বাজার করতে হবে, কাজে না গেলে কি দিয়ে বাজার করবো?
অবন্তীঃ এখানে আবার আসবে??
আমিঃ জানি না, তবে মনে হয়না।
অবন্তীঃ প্লিজ আসিও।
আমিঃ চেষ্ঠা করবো।
তারপর বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলাম।
সোজা কাজে চলে গেলাম, কাজ করতেছি এমন সময় লিমার কথা মনে পড়লো, সে তো বলেছে রেজাল্টের পর ওর বাবার অফিসে যেতে। রেজাল্ট তো দিলো, দেখি কিছু একটা হয় কিনা। সেখানে চাকরিটা হয়ে গেলে অন্তত আর ভ্যান গাড়ি নিয়ে হেটে হেটে মাল বিক্রি করা লাগবে না।
লিমাকে কল দিলাম। কয়েকবার রিং পড়লো কিন্তু ধরলো না। আবার দিলাম, এবার ধরলো….
আমিঃ হ্যালো লিমা কেমন আছিস?
লিমাঃ জুয়েল নাকিরে?
আমিঃ হুম, ভুলে গেলি নাকি?
লিমাঃ আরে হারামি তোরে কেন ভুলবো, বল কি অবস্থা?
আমিঃ এইতো মোটামুটি। তোর কি অবস্থা? রেজাল্ট কি?
লিমাঃ বলিস না ভাই যেটা আশা করেছিলাম সেটা হয়নি। তোর কি?
আমিঃ কোনোমতে পাশ করছি। আচ্ছা একটা কথা ছিলো!
লিমাঃ হুম বল।
আমিঃ তুই যে বলেছিলি তোদের অফিসে লোক লাগবে, সেই ব্যাপারে তুই কি তোর বাবার সাথে কথা বলেছিস?
লিমাঃ কথা বলা লাগবে না, তুই তোর সব কাগজপত্র নিয়ে চলে আসিস, আমি থাকবো। ঠিকানা তোরে মেসেজ করে দিবো।
আমিঃ থেংক্স দোস্ত।
লিমাঃ থেংক্স দিয়ে কাজ হবে না। ট্রিট দিবি,,
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে দিবো। কাল কয়টায় আসবো?
লিমাঃ ১০ টায় আসিস।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
কলটা কেটে দিলাম। মনের মধ্যে একটু শান্তি আসলো।
বিকাল পর্যন্ত কাজ করে, বাজার করে বাসায় গেলাম। অবন্তী কয়েকবার কল দিয়েছিলো ওদের বাসায় যাওয়ার জন্য, আমি না করে দিছি।
খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম, সকালে ঘুম থেকে দেরিতে উঠলাম কারন কাজে যাবো না। ৯ টার সময় রেড়ি হয়ে আব্বু আম্মুকে সালাম করে নিলাম।
আম্মুঃ কিরে তোর আবার কি হইছে?
আমিঃ কেন সালাম করতে পারি না?
বাবাঃ আরে পারবিনা কেন, কিন্তু হঠ্যাৎ করে করতেছিস তো তাই জিজ্ঞেস করলো।
আম্মুঃ কিছু কি হয়েছে?
আমিঃ সেটা বিকালবেলা বলবো।
বাবাঃ এখন বল।
আমিঃ সারপ্রাইজ,,,
এ কথা বলে বাসা থেকে রওনা দিলাম। লিমার দেওয়া ঠিকানা মতো চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি লিমা বসে আছে।
লিমাঃ কিরে আসছিস?
আমিঃ হুম।
লিমাঃ আয় বাবার সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দিই। আর বাবাকে তোর ব্যাপারে সব বলেছি।
আমিঃ থেংক্স দোস্ত।
লিমাঃ যা ভিতরে যা, সব কিছু দিয়ে আয়।
আমি ভিতরে গেলাম, সবার সাথে পরিচিত হয়ে কাগজপত্র সব জমা দিলাম। এরপর বাইরে এসে লিমার সাথে বসলাম।
একটুপর ম্যানেজার এসে আমাকে আর লিমাকে ডেকে নিয়ে যায়।
ভিতরে গেলাম,,, লিমার বাবা বললো….
আংকেলঃ দেখো বাবা তোমার SSC & HSC এর রেজাল্ট ভালো ছিলো কিন্তু অনার্সের রেজাল্ট খুব একটা ভালো না। আমাদের রুল অনুযায়ী চাকরিটা তুমি আসলে পাচ্ছো না।
আমিঃ…….(চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম)
আংকেলঃ কিন্তু আমার মেয়ে এতো করে বলছে যে চাকরিটা না দিয়ে পারছিনা। তুই চাইলে কালকে থেকে জয়েন করতে পারো।
আমিঃ ধন্যবাদ স্যার।
খুশিতে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো। আমি আর লিমা ওর বাবার রুম থেকে বের হলাম।
আমিঃ লিমা কি বলে তোকে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারছি না।
লিমাঃ হুম, তোর বউ কেমন আছে?
আমিঃ আছে ভালোই।
লিমাঃ এখন কি ঠিক হইছে?
আমিঃ আগে থেকে একটু ঠিক হইছে। বাকিটা আগের মতোই।
লিমাঃ টেনশন করিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমিঃ হুম। চল এখন,,,,
লিমাঃ কোথায়?
আমিঃ ট্রিট নিবি না?
লিমাঃ আজকে না, অন্যদিন।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে, আজকে যাই। বসের সাথে কিছু হিসাব আছে ওগুলো শেষ করি আসি।
লিমাঃ হুম যা, কালকে থেকে চলি আসিস।
আমিঃ ওকে আল্লাহ হাফেজ,,,
তারপর লিমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ওদের অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তায় আসলাম,,,,
আয়মান কল দিলো, ওর সাথে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছি এমন সময় কিছু একটা সজোরে এসে আমাকে ধাক্কা দিলো। ধাক্কা খেয়ে অনেক দূরে গিয়ে পড়ি। তারপর আর কিছুই মনে নেই।
যখন জ্ঞান আসলো নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম, তাকিয়ে দেখি অবন্তী আমার পাশে বসে আছে, আমি ওর দিকে তাকালাম, আমার তাকানো দেখেই….

পর্ব-১০
আমার তাকানো দেখে অবন্তী আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করলো।
কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে বললো…
অবন্তীঃ এখন কেমন লাগছে?
আমিঃ ভালো।
অবন্তীঃ টেনশন এর দরকার নাই, খুব বেশি কিছু হয়নি, ডাক্তার বলেছে ২-১ দিনের মধ্যেই বাসায় চলে যেতে পারবে।
আমিঃ হুম।
অবন্তীঃ আমি তোমার আব্বু আম্মু কে কল দিয়ে আসতে বলেছি।
বুঝলাম না অবন্তী হঠ্যাৎ করে আমার আব্বু আম্মু বলছে কেন? তারওতো আব্বু আম্মু। কিছু না বলে চুপ করে রইলাম।
অবন্তীঃ উনারা আসছে, তুই শুয়ে থাকো।
আমিঃ আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
অবন্তীঃ আমার একটু কাজ আছে।
আমার এই অবস্থায় অবন্তী আমার পাশে থাকবে সেটা না করে বলতেছে তার নাকি কাজ আছে।
আমিঃ বাবা মা আসা পর্যন্ত থাকুন।
অবন্তীঃ না দেরি হয়ে যাবে, অন্য কোনো দিন দেখে যাবো।
অবন্তী উঠে চলে গেলো, আমি শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম হঠ্যাৎ করে অবন্তীর কি এমন হলো যে এতো কাজ আমাকেও জানাচ্ছে না।
আম্মু আব্বু আসলো, এসে আমাকে ধরে কান্না করতে লাগলো। আমু শান্তনা দিলাম যে আমি ঠিক আছি। শুধু মাথায় একটু আঘাত লাগছে।
আম্মুঃ অবন্তী কই?
আমিঃ এই তো একটু আগে গেছে। ওর নাকি খুব একটা জরুরী কাজ আছে!
বাবাঃ কি এমন জরুরী কাজ যে তোর পাশে থাকতে পারছেনা।
আমিঃ বাদ দাও, আবার চলে আসবে।
আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললাম, সেদিন হাসপাতালে থেকে গেলাম। আব্বু আম্মুও থেকে গেলো।
পরেরদিন হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে গেলাম। কিন্তু এই ২ দিনে অবন্তী একবারও আসেন এবং একটা কলও দেয়নি।
আমিও আর নিজে থেকে দিই নি।
এক সপ্তাহ পর মোটামুটি সুস্থ, তাই চিন্তা করলাম নতুন অফিসে জয়েন করে ফেলি, বসে থাকা ঠিক হবে না।
তারি রেড়ি হয়ে সকালবেলা বের হচ্ছি আম্মু সামনে আসলো….
আম্মুঃ কোথাও যাচ্ছিস?
আমিঃ হুম, নতুন চাকরী পেয়েছি, বেতনও আগে থেকে ভালো। কষ্টও কম তাই চিন্তা করলাম আজ থেকে শুরু করে দিই।
আম্মুঃ সে কিরে, তুই তো আমাদের একবারও বলিস নি। কখন ফেলি???
আমিঃ যেদিন এক্সিডেন্ট করেছিলাম সেদিন।
আম্মু বাবা কে ডেকে বললো, বাবাও অনেক খুশি, দুজনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হবো এমন সময় আবার দাঁড়িয়ে গেলাম….
বাবাঃ কিছু বলবি?
আমিঃ অবন্তীকে কেউ কিছু বলবে না, বলার দরকার নেই।
আম্মুঃ কেন রে এমন একটা খুশির খবর মেয়েটাকে না দিয়ে পারি।
আমিঃ না দেওয়ার দরকার নেই। সময় হলে জানবে, এখন নিজে থেকে কেউ কিছু বলবে না।
বাবাঃ আচ্ছা ঠিক আছে বলবো না।
আমি আর কিছু না বলে রওনা দিলাম। ৩০ মিনিট পর অফিসে গেলাম। ম্যানেজারকে সালাম দিলাম। উনি সব কিছু ঠিকঠাক করে দিলো।
আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আমার ডেস্ক দেখিয়ে দিলো। এবং কাজ বুঝিয়ে দিলো।
নতুন অফিস নতুন কাজ ভালোই লাগছে, কিন্তু বার বার অবন্তীর কথা মনে পড়তে লাগলো। আজকে এতো দিন অবন্তী একবারও একটা কল দেয়নি কারনি কি?
অবন্তী কি নতুন কারো সাথে!! না এটা হতে পারেনা।
বসে বসে ওর কথা ভাবতেছি এমন লিমা এসে একটা টোকা দিলো,,,,
লিমাঃ কি ব্যাপার স্যার, ম্যাম এর কথা খুব মনে পড়ছে বুঝি?
আমিঃ আরে না, তুই কখন আসলি?
লিমাঃ আসছি তো অনেক আগে, এসে দেখলাম তুই বসে বসে কি নিয়ে চিন্তা করতেছি।
আমিঃ না তেমন কিছু না।
লিমাঃ নতুন অফিস কেমন লাগছে?
আমিঃ ভালোই।
লিমাঃ কোনো প্রবলেম হলে ম্যানেজারকে বলিস।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
লিমাঃ তুই থাক আমি বাবার সাথে দেখা করে আসি।
আমিঃ ওকে যা।
তারপর আবার কাজ করতে লাগলাম। কিন্তু বার বার অবন্তীর কথাই মাথায় ঘুরতে লাগলো।
বিকালবেলা অফিস শেষ করে আয়মানকে কল দিয়ে আসতে বললাম…
আয়মান আসলো, দুজনে একটা রেস্টুরেন্ট এ গেলাম, কিছু খাওয়ার অর্ডার দিলাম।
আয়মানঃ কিরে তুই তো পুরাই চেইঞ্জ, চাকরি পাইছিস?
আমিঃ হুম।
আয়মানঃ শালা একবারও বললি না।
আমিঃ তোর জন্য সারপ্রাইজ ছিলো। এখন তো বলে দিলাম।
আয়মানঃ হুম, তা আজকে কয়দিন?
আমিঃ আজকেই জয়েন করলাম। লিমাদের অফিসে,,,
আয়মানঃ কোন লিমা?
আমিঃ আরে আমাদের কলেজ ফ্রেন্ড লিমা।
আয়মানঃ ও আচ্ছা ভালো। আমার জন্যও একটা দেখ।
আমিঃ তুই চাকরি করলে তোর বাবার টাকা কে খাবে???
আয়মানঃ আরে না আগের মতো টাকা দেয়না। আব্বা কি পরিমাণ কিপটে তুই সেটা ভালো করেই জানিস।
আমিঃ আচ্ছা দেখবো।
আয়মানঃ তোর ভাবি বউ কেমন আছে?
আমিঃ ভাবি বউ মানে?
আয়মানঃ আগে ছিলো ভাবি এখন হইছে বউ, দুইটা মিলে ভাবি বউ।
আমিঃ তুই কোনো দিন ঠিক হবি না।
আয়মানঃ তো কি অবস্থা উনার, এবার তো অনেক খুশিতে থাকবে তাই না?
আমিঃ ওরে কিছু জানাই নি।
আয়মানঃ কেন?
আমিঃ…….(সব কিছু বললাম)
আয়মানঃ জুয়েল, দোস্ত! তোরে আমি আগে যেই কথাটা বলছি এখনও সেম কথাই বলতেছি। ওই মেয়েটার মধ্যে কোনো ঘাবলা আছে।
আমিঃ যেমন…
আয়মানঃ প্রথমত তোর ভাই মারা যাওয়ার পর অবন্তী যদি তোদের বাসা থেকে চলে যেতো খুব ভালো বিয়ে করতে পারতো না। ওর ভাগ্য ভালো যে তুই ওরে আবার বিয়ে করেছিস।
দ্বিতীয়ত তোর বাবা মা অবন্তীকে যে পরিমাণ ভালোবাসে, আদর করে আমার মনে হয়না পৃথিবীর অন্য কোথাও এমন আদর পাবে।
সব কিছু থাকা স্বত্বেও অবন্তী তোর সাথে একই খাটে থাকে না, একসাথে মিশে না। এই থেকেই তো বুঝা যায় ওর মাঝে কোনো ঘাবলা আছে।
আমিঃ কিন্তু আমি তো ওরে কোনো অভাব দেখাইনি। ওর সব গুলো স্বপ্নই পূরণ করেছি।
আয়মানঃ আমার মনে হয় ওর কোনো পুরোনো বয়ফ্রেন্ড আছে।
আমিঃ আরে না, এটা হয়না।
আয়মানঃ এটাই হবে, গরিবের কথা বাসি হলেও মিষ্টি হয়।
আমিঃ কি করবো বল, আম্মু আব্বুর দিকে তাকিয়ে ওরে কিছু বলতেও পারছি না।
আয়মানঃ ও এখন কোথায়?
আমিঃ ওর বাবার বাসায়। আমার এক্সিডেন্ট এর আগে গেছে এখনো আসেনি।
আয়মানঃ একবারও আসেনি?
আমিঃ না, কল করে জিজ্ঞেসও করেনি আমি বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি।
আয়মানঃ তাইলে সিউর থাক ওর অন্য কোথাও রিলেশন চলতেছে।
আমিঃ দোস্ত ওরে ফলো করতে পারবি?
আয়মানঃ ওকে করলাম, সমস্যা কোথায়। কিন্তু এটা সিউর যে অবন্তী তোর কাছে থাকবে না। আগে হোক আর পরে হোক ওরে ডিভোর্স দিতে হবেই, তুই না দিলেও সে তোকে দিবে।
আমিঃ আচ্ছা তুই শুধু ফলো কর।
আয়মানঃ ওকে।
আরো কিছু কথা বলে বাসায় চলে আসলাম।
এসে ফ্রেশ হলাম। আম্মু রুমে আসলো….
আমিঃ কিছু বলবে?
আম্মুঃ হুম।
আমিঃ বলো। আব্বু কোথায়???
আম্মুঃ বাইরে গেছে।
আমিঃ ও কি বলবা বলো।
আম্মুঃ মেয়েটা অনেকদিন বাসায় নেই। বাসাটা কেমন খালি খালি লাগছে, যা না বাপ ওরে নিয়ে আয়।
আমিঃ কাকে?
আম্মুঃ অবন্তীকে। ওরে অনেক মিস করছি, তোর আব্বু বলেছিলো বিকালবেলা যাবে কিন্তু আমি দিই নি। আমি বলেছি তুই গিয়ে নিয়ে আসবি।
আমিঃ ও নিজে থেকে আসবে,আমি নিয়ে আসতে পারবো না।
আম্মুঃ এটা কেমন কথা, একা একটা মেয়ে কি করে আসবে।
আমিঃ আরে আজব এতো রাতে ওরে কেমনে নিয়ে আসবো। সকাল হোক আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিবো, ও চলে আসবে।
আম্মুঃ না তুই এখন যা, ওরে নিয়ে আয়।
আমিঃ মানে কি এখন নিয়ে আসবো মানে? এই রাতের বেলা,,,,
আম্মুঃ তোরে কি বলছি আজকে রাতেই নিয়ে আসতে হবে, আমি বলছি তুই এখন যাবি রাতটা ওখানে থাকবি কালকে সকালে ওরে নিয়ে আসিস।
আমিঃ পারবো না।
আম্মুঃ ঠিক আছে আমিই যাচ্ছি।
আমিঃ পাগল হইছো! এতো রাতে ওদের বাসায় যাবা মানে?
আম্মুঃ হুম যাবোই তো, তুই যেহেতু যাবি না আমি নিজেই গিয়ে আমার মেয়েকে নিয়ে আসবো।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে যাচ্ছি।
কি আর করা ইচ্ছা না থাকা স্বত্তেও রেড়ি হয়ে অবন্তীদের বাসার দিকে রওনা দিলাম।
৪০ মিনিট পর ওই বাসায় গেলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৯.০০ টা বাজে। কলিং বেল দিলাম কিছুক্ষণ পর অবন্তীর মা এসে দরজা খুলে দেয়।
আমি সালাম দিলাম ভিতরে গেলাম, উনি বললো অবন্তী রুমে আছে। আমি অবন্তীর রুমে গেলাম গিয়ে দেখি অবন্তী কার সাথে হেসে হেসে মোবাইলে কথা বলতেছে, আমাকে দেখে এক রকম চোরের মতো হয়ে গেলো।
অবন্তীঃ তু তু তুমি এখানে?
আমিঃ কোনো প্রবলেম?
অবন্তীঃ প্রবলেম না, কিন্তু আসতে তো পারমিশন লাগে।
নিজের বউয়ের রুমে আসবো সেখানেও পারমিশন!!!
আমিঃ সরি।
অবন্তীঃ কেন আসছো?
অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
আমিঃ আম্মু আব্বু আপনাকে অনেক মিস করতেছে। এখানে আসলেন যে তো অনেক দিন হইছে, এবার বাসায় চলেন।
অবন্তীঃ দেখো তোমাকে অনেক দিন ধরে একটা কথা বলবো ভাবতেছি কিন্তু বলা হয়নি।
আমিঃ এখন বলেন।
অবন্তীঃ দেখো আমারও তো ইচ্ছা আছে আমি চাই নিজের পায়ে দাঁড়াতে।
আমিঃ মানে?
অবন্তীঃ মানে আমি মাস্টার্স করবো তারপর একটা ভালো জব করবো।
আমিঃ আপনাকে আগেও বলেছি এখনও বলছি আমি চাইনা আপনি চাকরি করেন।
অবন্তীঃ তোমার চাওয়া না চাওয়ায় আমার কিছু যায় আসে না।
আমিঃ আপনি এগুলো কি বলতেছেন?
অবন্তীঃ তুমি আমার জন্য অনেক করছো, তোমার ফ্যামিলিতে থাকা মানে তোমার করুণায় থাকা। কিন্তু আমি কারো করুণা নিয়ে থাকতে চাই না।
আমিঃ করুণা করছি মানে? স্বামী হিসেবে এগুলো আমার দায়িত্ব।
অবন্তীঃ কিন্তু আমি তোমাকে কখনো স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না।
আমিঃ আপনি এতো দিন পর এগুলো কি বলতেছেন?
অবন্তীঃ আমারওতো একটা ভবিষ্যৎ আছে,,,
আমিঃ আপনি কি বলতে চাইছেন ক্লিয়ার করে বলেন।
অবন্তীঃ দেখো জুয়েল, আমি তোমার সাথে এইভাবে থাকতে পারবো না।
আমিঃ আব্বু আম্মুকে কি বলে বুঝাবেন? উনারা কি আপনাকে নিজের মেয়ের চেয়ে কম কিছু করেছে?
আমিঃ দেখো আমি এতো কিছু বুঝি না, আমি জাস্ট মুক্তি চাই। তোমার সাথে আমার যায়না।
আমিঃ যায়না মানে?
অবন্তীঃ মানে তোমার এই টানাটানির সংসারে আমি থাকতে পারবো না। যে টাকা বেতন পাও তা দিয়ে কিছুই হবে না।
আমিঃ টাকাই কি সব?
অবন্তীঃ হুম টাকাই সব, কয়টা ইচ্ছা পূরণ করেছো আমার? কয় টাকা হাত খরচ দাও আমাকে, কয়বার শপিংয়ে নিয়ে গেছো আমাকে? বিয়ের পর থেকেই তো এইভাবে রাখছো লজ্জা করেনা আবার নিজেকে স্বামী বলে দাবি করতে।
আমিঃ আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আর কি করবো?
অবন্তীঃ আমি এতো কিছু বুঝি না।
আমিঃ তারমানে আপনি যাবেন না এইতো?
অবন্তীঃ হুম,,,,
আমি আর কোনো কথাই বললাম না, অবন্তীদের বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। কাওকে কিছু বললাম না। এতো রাতে বাসায় যাওয়াও ঠিক হবে না। আব্বু আম্মুকে যদি জানাই তাহকে উনারা অনেক কষ্ট পাবে। আর কিছুদিন দেখি পরে না হয় সময় করে সব উনাদের জানিয়ে দিবো।
আয়মানকে কল দিলাম, আজ রাত তার সাথেই থাকতে হবে। তারপরেই……

More বাংলা চটি গল্প

Leave a Comment