ঝিনুকের কোলবালিশ নিয়ে ঘুমানোর অভ্যেস, নতুন বাড়ি নতুন জীবনে পদার্পণ করার পরে সেই কোলবালিশ পায়নি, তবে একটা বালিশকে কোল বালিশ বানিয়ে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে লেপের তলায় একটু কুঁকড়ে রোজদিন ঘুমাতো। ভোরের বেলায় আধোঘুমে আধো জাগরনে ওর মনে হল সেই কোলবালিশ আর ওর পাশে নেই। মাথার নিচে চির পরিচিত বালিশের অনুপস্থিতি অনুভব করতে পেরে পদ্মকুড়ির মতন চোখ জোড়া মেলে ঘুমন্ত রিশুর দিকে তাকায়। গতকাল কখন যে রিশুকে জড়িয়ে ধরে এই ভাবে ঘুমিয়ে পড়েছিল খেয়াল নেই। রিশুর একদিনের না কাটা খোঁচা খোঁচা দাড়িভর্তি গালের ওপরে আঙ্গুল বুলিয়ে রিশুর বাহু বেষ্টনীর আগল ভাঙতে চেষ্টা করে। হাতের ওপরে টান পড়তেই ঘুম ঘুম চোখ মেলে তাকায় রিশু, চোখের সামনে সুন্দরী প্রেয়সীর মিষ্টি মুখবয়াবের দর্শন পেয়ে মুচকি হাসি দেয়। গত রাতে নেশামত্ত প্রেমিকাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরার কথা মনে পড়তেই বাহুবেষ্টনি আরো নিবিড় করে বেঁধে ফেলে ঝিনুকের নধর দেহপল্লবের ওপরে।
ঝিনুক রিশুর মুখের ওপরে আলতো উষ্ণ ফুঁ দিয়ে মিহি কন্ঠে বলে, “ওঠ গো, রোজি চলে আসবে একটু পরে।”
রিশু ভীষণ ভাবেই ঝিনুককে জড়িয়ে ধরে মিহি কন্ঠে বলে, “ভোর হয়ে গেল?”
হেসে ফেলে ঝিনুক, অন্যদিনে ঝিনুকের আগেই রিশুর ঘুম ভেঙ্গে যেত আর সেইদিন রিশুর ঘুম ঘুম চোখ দেখে ভীষণ ভাবেই প্রেমাবেগ পেয়ে বসে ওকে। বাঁ হাতের কোমল চাঁপার কলি আঙ্গুল মেলে রিশুর মুখের ওপরে আঙ্গুল বুলিয়ে মিষ্টি করে বলে, “আচ্ছা তুমি শুয়ে থাকো আমি চা বানিয়ে আনছি।”
মুখের ওপরে কোমল আঙ্গুলের পরশে সর্বাঙ্গের রোমকূপ একত্রে উন্মিলিত হয়ে মিলনেচ্ছুক হয়ে ডাক ছাড়ে, “উমমমম… আর একটু…”
পাতলা টপ ফুঁড়ে পীনোন্নত স্তন যুগল রিশুর প্রসস্থ ছাতির ওপরে পিষে যায়। ঝিনুকের হৃদয়ের মৃদু ধুকধুকানির কম্পন অনায়াসে নিজের ছাতির ওপরে অনুভব করে বিহ্বল হয়ে পরে রিশু। রিশুর বুকের ছোঁয়া পেয়ে ঝিনুকের স্তনাগ্র জোড়া তপ্ত নুড়ি পাথরের মতন কঠিন হয়ে ওঠে, রিশুর ছাতি জ্বালিয়ে দিতে তৎপর হয়ে ওঠে সুগোল নিটোল স্তন জোড়া। রিশুর পেটের সাথে ঝিনুকের পেট মিশে যায়, নিজের তুলতুলে নরম পেটের ওপরে রিশুর তপ্ত পুরষত্ত্ব নিজের অস্তিত্বের অবস্থানের জানান দেয়। দিল্লীর ভোরের এই ঠান্ডায় দুই কামড়ার ছোট এক ফ্লাটের ছোট একটা ঘরের মধ্যে এক বিছানায় ধিকিধিকি করে প্রেমের আগুন জ্বলতে শুরু হয়।
ঠিক সে সময়ে কলিং বেলের টুং টাং আওয়াজে হেসে ফেলে ঝিনুক, “বেশ হয়েছে, এবারে আমি চললাম।” যদিও প্রেমিকের উষ্ণ বাহুডোর ছেড়ে একদম উঠতে ইচ্ছে করছিল না তাও বহু কষ্টে উষ্ণ বাহুপাশ ছাড়িয়ে লেপ ছেড়ে উঠে পরে বলে রিশুকে উত্যক্ত করার জন্য নাক কুঁচকে ইয়ার্কি মেরে বলে, “ডাক্তার বাবু হসপিটাল যেতে হবে।”
অগত্যা রিশুকে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়তে হয়। গায়ের ওপরে একটা কারডিগান চাপিয়ে মাথার চুল মাথার পেছনে একটা এলো খোঁপায় বেঁধে রিশুর গায়ের ওপরে লেপ টেনে দিয়ে মুচকি হেসে বলে, “উঠতে হবে না, আমি চা নিয়ে আসছি।”
বিছনায় চা খাওয়ার অভ্যেস নেই ওর। বাড়িতে থাকলে মায়ের বকুনির ফলে আগে দাঁত ব্রাশ করতে হয় তারপরে বসার ঘরে সবাই মিলে বসেই সকালের চায়ের পর্ব চলে। প্রেয়সীর হুকুম অমান্য করার সাধ্য এই পৃথিবীতে কারুর নেই, অগত্যা রিশু ঘুম জড়ানো চোখেই নধর দেহপল্লবে ঢেউ তুলে ওর মাধবীলতাকে সদর দরজার দিকে এগিয়ে যেতে দেখে। সদর দরজা খুলে কাজের মেয়েকে বাড়ির মধ্যে ঢুকিয়ে ঝিনুক রান্নাঘরে ঢুকে পরে চা বানানোর জন্য। চায়ের জল চাপিয়ে মনে মনে হেসে ফেলে, রাতের কথা ভাবতেই বুকের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে। রিশুর উষ্ণ পরশে কখন ঘুম এসে গিয়েছিল খেয়াল নেই, শীতের রাতে এক লেপের তলায় সাপের মতন একে ওপরকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরার আনন্দ অনুভতি ওর সারা অঙ্গে মাখোমাখো ভাবে লেগে। চায়ের জল চাপিয়ে দিয়ে বাথরুমে ঢুকে ব্রাশ সেরে ফেলে ঝিনুক। কাজের মেয়েটা ঘরের কাজে লেগে পরে।
বিছানায় শুয়ে রিশু নিজের বাম বাজু দেখে, এই বাজুর ওপরে মাথা রেখে ওর নববিবাহিতা স্ত্রী সারা রাত ঘুমিয়েছে, ওর নাকে এখন ঝিনুকের গায়ের মিষ্টি গন্ধের রেশ ভেসে আসে। মাখনের মন্ডের মতন কোমল ঝিনুকের দেহপল্লব, পিচ ফলের মতন নরম গালে চুমু খাওয়ার ইচ্ছেটা ওই কাজের লোক এসে ভেস্তে দিল। ধ্যাত, এইভাবে শুতে ভালো লাগে নাকি? কোথায় গেল মেয়েটা, চা বানাতে এত সময় লাগে নাকি? আড়ামোড়া ভেঙ্গে বিছানা ছেড়ে শেষ পর্যন্ত উঠে পড়ল রিশু। শোয়ার ঘর থেকে বেড়িয়ে রান্নাঘরে উঁকি মেরে ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে দেখে যে ও চা ছাঁকতে ব্যাস্ত। গলা খ্যাঁকরে নিজের জানান দিতেই ঘাড় ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে ঝিনুক, কি হল উঠে পরলে যে? এই প্রশ্নটা ওর চোখে মুখে স্পষ্ট। মুখ বেঁকিয়ে ইশারায় উত্তর দেয়, তুমি নেই একা একা বিছানায় শুয়ে কি করব।
ব্যাথা বুঝতে পেরে ঝিনুক হেসে ফেলে, “আচ্ছা বাবা, যাও ফ্রেশ হয়ে নাও চা তৈরি।”
বাথরুমে ঢুকে ব্রাশে পেস্ট নিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি ব্রাশ করেছ?”
মাথা দোলায় ঝিনুক, “হ্যাঁ।”
ব্রাশ করে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে সোফায় বসে পরে রিশু। দুটো কাপে চা নিয়ে একটা ওর হাতে ধরিয়ে পাশ ঘেঁষে বসে পরে ঝিনুক। “কাল রাতে শেষ পর্যন্ত ঘুমিয়েই পরলে।” চোখে মুখে ভীষণ একটা আদুরে দুষ্টুমির হাসি।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে উত্তর দেয়, “যাঃ বাবা, আমার আগে তুমি ঘুমিয়ে পড়লে তার বেলায় কিছু না।”
রিশুর কাঁধের ওপরে মাথা রেখে ওর দিকে ঘুরে তাকিয়ে নিচের ঠোঁট দাঁতে কেটে ফিসফিস করে বলে, “ওইভাবে জড়িয়ে ধরলে কার না ঘুম পায় বলো।”
রেশমি চুলের মধ্যে নাক ঘষে প্রেয়সীর গায়ের সুঘ্রাণ আস্বাদন করে জিজ্ঞেস করে, “তুমি তাহলে আজকে শপিং করতে যাচ্ছও?”
একটু ভেবে ঝিনুক উত্তর দেয়, “এখন ঠিক জানি না, রিতিকা ফোন করলে তবে বুঝতে পারবো।”
মাথা দোলায় রিশু, “সাবধানে যেও, আর হ্যাঁ ওর ফোন নাম্বারটা আমাকে দিয়ে যেও।”
ফিক করে হেসে ফেলে ঝিনুক, “কেন আমার ওপরে বিশ্বাস নেই নাকি?”
রিশু উত্তরে বলে, “যার ওপরে তোমার বিশ্বাস নেই তার ওপরে আমার কি করে বিশ্বাস থাকবে বলো।”
কথাটা ঠিক ভাবে বুঝতে পারল না ঝিনুক, “মানে?”
রিশু বুঝিয়ে বলে, “কেন, গতকাল রাতে তুমি বললে যে রিতিকা তোমার ব্যাচমেট, এর বেশি তোমাদের মধ্যে সেই ভাবে বন্ধুত্ত ছিল না কোনদিন।” মাথা দোলায় ঝিনুক, একদম ঠিক। রিশু বলে, “তাই বলছি।”
চা শেষ করতেই রিশুর ফোন বেজে ওঠে, অপর প্রান্তে ওদের ডিপারটমেন্টের এইচওডি ধিলোন স্যার, “হ্যালো গুড মর্নিং, মেইল চেক করেছ?”
হটাত করে কি হল, “না স্যার, কিছু হয়েছে কি?”
রিশুকে ফোনে কথা কাজের কথা বলতে শুনে একটু তফাত হয়ে বসে। রিশু ওকে ইশারায় জানিয়ে দেয় যে ওর এইচওডি ফোন করেছেন।
ডক্টর ধিলোন হেসে বলেন, “লন্ডন থেকে তোমার লেটার এসে গেছে।”
ওর ডাক্তারির ক্যারিয়ারের জন্য এই সেমিনারে যাওয়া ভীষণ ভাবেই জরুরি, কিন্তু এখন এই বিষয়ে ঝিনুককে কিছুই বলা হয়নি। উচ্ছাস চেপে ফোনে উত্তর দেয়, “ওহ তাই নাকি স্যার? আচ্ছা আমি চেক করে নেব।”
ডক্টর ধিলোন বলেন, “তোমার পাসপোর্টটা এডমিন ডিপার্টমেন্টকে আজকেই দিয়ে দিও। এই সপ্তাহের মধ্যে তোমার ভিসা এসে যাবে। জানুয়ারির ফার্স্ট উইকে স্পাইন এন্ড নেক ইঞ্জিউরির ওয়ার্কশপ তারপরে দুইদিন সেমিনার।”
কথাটা শুনে ভীষণ ভাবেই অপ্রস্তুত হয়ে পরে রিশু, “কিন্তু স্যার, সেমিনার সেকেন্ড উইকে হওয়ার কথা ছিল যে।”
ডক্টর ধিলোন বলেন, “সেমিনার সেকেন্ড উইকে তবে ওয়ার্কশপটা ওরা এগিয়ে দিয়েছে।”
মাথা দোলায় রিশু, “ওকে স্যার, আমি পাসপোর্ট নিয়ে আসবো।”
ধিলোন স্যারের ফোন রাখার পরে ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে দেখে, ওর চোখে হাজার প্রশ্ন, “তুমি কোথাও যাচ্ছও?”
প্রশ্ন শুনে একটা অপরাধবোধ জেগে ওঠে রিশুর মধ্যে, হয়ত ওকে আগেই এই ব্যাপারে জানিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। মাথা দোলায় রিশু, “হ্যাঁ, নেক্সট মাসের শুরুতে লন্ডনে আমার একটা ওয়ার্কশপ আর সেমিনার আছে।”
কথাটা শুনে ভীষণ ভাবেই আহত হয় ঝিনুক, ছলছল চোখে সোফা ছেড়ে উঠে ওর দিকে দেখে বলে, “এতদিন জানাওনি তো?”
ঝিনুকের ছলছল চোখ দেখে ভীষণ ভাবেই ব্যাথিত হয় রিশুর বুক। প্রেয়সীকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “লেটার আজকে এইমাত্র এসেছে। না আসা পর্যন্ত কি করে তোমায় বলি?”
গভীর চোখে রিশুর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে, সত্যি বলছে না মিথ্যে বলছে? কিন্তু এইমাত্র রিশুর এইচওডি তাই জানালো যে লেটার এই মাত্র এসেছে। গুটিগুটি পায়ে রিশুর সামনে এসে দাঁড়িয়ে ওর দিকে মুখ তুলে শুকনো গলায় বলে, “আর আমি…”
ঝিনুকের দুই কাঁধে হাত রেখে কাছ টেনে বলে, “আমি তোমাকে কোলকাতা রেখে আসবো, এই মাত্র কয়েকদিন।”
নাহ, এই তো সবে ওদের মাঝের বরফ গলতে শুরু করেছে আর এর মধ্যেই আবার দূরে সরে যাবে? বিরহ বেদানায় মুখ পাংশু হয়ে আসে ঝিনুকের, “না আমি কোথাও যাবো না।”
কাজের মেয়ের রান্না শেষ হয়ে গেছে, ওর সামনে ঝিনুককে জড়িয়ে ধরতে লজ্জা লাগে রিশুর, তাও সেই লজ্জার মাথা খেয়ে প্রেয়সীর চিবুকে আঙ্গুল দিয়ে নিজের দিকে তুলে ধরে বলে, “প্লিজ একটু বুঝতে চেষ্টা কর। এখানে একা থাকবে কি করে?”
মাথা ঝাঁকিয়ে কচি বাচ্চার মতন অভিমান করে বলে, “আমি কিছু জানি না, বাট আমি কোলকাতা যাবো না।”
ঝিনুকের মুখখানি আঁজলা করে নিজের দিকে তুলে ধরে বলে, “আচ্ছা আমি শালিনীর সাথে কথা বলে দেখি, তুমি না হয় ওই কদিন ওদের সাথে থেকে যেও।”
চুপ করে রিশুর মুখের দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে, দূরত্ব ব্যাবধান বিরহ হয়ত এই ওর কপালে লেখা। ত্বকের থেকে এখন রিশুর উষ্ণ ওমের রেশ মুছে যায়নি তার আগেই বিরহের সুর বেজে উঠেছে। ডাক্তার সত্যি ওকে অনেক ভালোবাসে, ওর যাতে ঠান্ডা না লাগে তাই প্লেন থেকে নেমে সুটকেস খুলে একটা শাল বের করে গলায় মাথায় জড়িয়ে দিয়েছিল। ওর সামনে দাঁড়িয়ে মানুষটা শুধু মাত্র ওর প্রেমিক ওর স্বামী নয়, সে একজন নামকরা হসপিটালের অরথপেডিক সার্জেন। বুকে যদিও একটু ব্যাথার সুর বাজছে কিন্তু এইভাবে কান্নাকাটি করা ঠিক নয় সেটা বুঝতে ওর দেরি হয় না।
চোখের কোল মুছে ঠোঁটে হাসি টেনে বলে, “আচ্ছা আমি মামনিকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে নেব।”
টুক করে কোমল গালের ওপরে একটা চুমু খেয়ে বলে, “এই তো, আমার দুষ্টু মিষ্টি সব বোঝে।”
গালে যেখানে রিশুর ঠোঁট ছুঁয়েছিল সেখানে আঙ্গুল ছুঁয়ে মিষ্টি হেসে বলে, “এবারে হসপিটালের জন্য দেরি হচ্ছে না?”
চোখে মুখে অপ্রস্তুতের হাসি মাখিয়ে বলে, “যাচ্ছি বাবা।”
অন্যদিনে সকালের চা পাঁচ মিনিটে খাওয়া হয়ে যায়, সেদিন ঘুম থেকেই উঠতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল, তারপরে এইভাবে কোল ঘেঁষে প্রেয়সীকে বসিয়ে চা খেতে খেতে অনেকটা সময় কেটে যায়। তাড়াতাড়ি স্নানে ঢুকে পরে রিশু। অন্যদিন সকালে ঝিনুক বেশির ভাগ সময় নিজের শোয়ার ঘরের মধ্যেই কাটিয়ে দেয়, শুধু মাত্র রিশু বেড়িয়ে যাওয়ার সময় একটু বেড়িয়ে দরজা বন্ধ করে একটু বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু সেদিন, আলমারি খুলে রিশুর জন্য কাচা জামা কাপড় বের করতে প্রস্তুত হয়ে যায়। কাজের মেয়ে সকালের খাবারে রুটি আর আলুর তরকারি বানিয়েছিল সেটা একটা প্লেটে করে খাওয়ার টেবিলে সাজিয়ে রাখে। রিশুর ঘরে ঢুকে ওর স্টেথোস্কোপ আর এপ্রন গুছিয়ে দেয়। স্নান সেরে বেড়িয়ে ঝিনুককে দেখে রিশুর অবাক হওয়ার পালা, ওর জন্য জামা কাপড় বিছানার ওপরে তৈরি করে রাখা, স্টেথো আর এপ্রন গুছিয়ে রাখা। ঝিনুককে ছেড়ে যেতে কিছুতেই ইচ্ছে করছিল না রিশুর, কাজের মেয়েটা কাজে না থাকলে হৃদয়ের আগল মুক্ত করে চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে তুলতো প্রেয়সীকে। কোমল টসটসে গালে চুমু খেয়ে ঠিক মন ভরেনি ওর। হাতে এখন সময় নেই না হলে বাহুপাশে বদ্ধ করে ঝিনুককে উড়িয়ে নিয়ে চলে যেত কোন অজানা প্রান্তরে।
জামা কাপড় পড়তে পড়তে ঝিনুককে জিজ্ঞেস করে, “এই কয়দিনে অনেক কিছু দেখে শিখে গেছো?”
বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মিষ্টি হেসে মাথা দোলায় ঝিনুক, “কাল রাতেই তো বললে তুমি নাকি আমার ঘুড়ির লাটাই।” ওর বুকের কাছে সরে এসে জামার বোতাম গুলো এক এক করে লাগাতে লাগাতে বলে, “সুতো যেদিকে নড়বে ঘুড়ি সেদিকেই উড়বে, তাই না।”
জামাকাপড় পরে তৈরি হয়ে কোন মতে সকালের জলখাবার খাওয়া সারে রিশু। সারাটা সময় ওর আশেপাশে ঘুরঘুর করছিল ঝিনুক, কিছুতেই ছাড়তে ইচ্ছে করছিল না।
অফিসে বেড়িয়ে যাওয়ার আগে, ঝিনুকের দিকে একটু ঝুঁকে কপালে কপাল ঠেকিয়ে মৃদু হেসে বলে, “তুমি দশ পর্যন্ত গুনো দেখবে আমি তার মধ্যে চলে আসব।”
সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাওয়া পর্যন্ত দরজা খুলে ওর দিকে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ঝিনুক। সিঁড়ির ল্যান্ডিঙ্গে দাঁড়িয়ে আরো একবার প্রেয়সীর দিকে ঘুরে তাকায়।
মনে মনে খুব তাড়াতাড়ি গুনতে শুরু করে, এক-দুই-তিন-চার-পাচ-ছয়-সাত-আট-নয়… ডান হাত তুলে একটু নাড়িয়ে হৃদয় নিঙরে ঝিনুকের ঠোঁট থেকে বেড়িয়ে আসে, “দশ…”
প্রেয়সীর সুমিষ্ঠ গলা শুনে ঘুরে দাঁড়ায় রিশু। মাথা নাড়িয়ে মনে মনে বলে, আজকে আমাকে হসপিটাল যেতেই দেবে না। বড় বড় পা ফেলে এক দৌড়ে নিজের ফ্লাটের দরজায় উঠে চলে আসে। সব কিছু ভুলে ওকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে এসে বুকের ওপরে ঝাঁপিয়ে পরে ঝিনুক। ল্যাপটপের ব্যাগ মেঝেতে রেখে, আঁজলা করে সুন্দরী ললনার মুখ নিজের দিকে তুলে ধরে। বড় বড় কাজল কালো চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে রিশুর দিকে। ঝিনুকের প্রসাধনিহীন নরম গোলাপি ঠোঁট জোড়া আসন্ন প্রেমের আবেগের বশে তিরতির করে কাঁপতে শুরু করে দেয়। রিশুর মাথা নেমে আসে ঝিনুকের মুখের ওপরে। দুই হাতে রিশুর জ্যাকেটের কলার চেপে ধরে ওর মাথা টেনে নামিয়ে আনে নিজের ঠোঁটের কাছে। অন্তর্বাসহীন নিটোল পীনোন্নত স্তন যুগল পিষে ধরে দয়িতের প্রসস্থ বুকের ওপরে। রিশুর উষ্ণ শ্বাসের ঢেউয়ে ভরে ওঠে ঝিনুকের মুখমন্ডল। তৃষ্ণার্ত কপোতের অধর মিশে যায় কপোতীর কোমল অধরে। ঝিনুকের নিচের ঠোঁট আলতো করে দুই ঠোঁটের মাঝে নিয়ে আলতো চুষে ধরে। তিরতির করে সারা শরীর কেঁপে ওঠে ঝিনুকের, রিশুর প্রথম চুম্বনে হারিয়ে যায়। মাথা একদিকে বেঁকিয়ে দিয়ে গোলাপি জিব ঠেলে দেয় রিশুর মুখের মধ্যে। রিশু একবার ঝিনুকের নিচের ঠোঁট আলতো করে চুষে দেয় তারপরে নিচের ঠোঁট ছেড়ে উপরের ঠোঁট চুষতে শুরু করে। প্রেমের অতিশজ্যে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারে না ঝিনুক, ওর শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, চোখ বন্ধ করে কামড়ে ধরে রিশুর নিচের ঠোঁট। সময় থমকে দাঁড়িয়ে পরে প্রেমে বিভোর দুই কপোত কপোতীর অধর ওষ্ঠ মিলনের দৃশ্যে।
বেশ কিছুক্ষন পরে প্রগাড় চুম্বন ভঙ্গ করে বুকের কাছে সুন্দরী ললনাকে জড়িয়ে ধরে মিহি কন্ঠে বলে, “দুষ্টু মেয়ে…”
রিশুর বুকের বাম দিকে একটা কিল মেরে মিষ্টি লাজুক হেসে বলে, “শয়তান…”
বহুকষ্টে সেই প্রাগড় প্রেমের বাহুপাশ কাটিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ল রিশু। ডিসেম্বরের শেষের দিক, দিনের বেলা হলেও কুয়াশার রেশ কাটেনি তখন। শীতকালে দিল্লীতে কুয়াশার চেয়েও যেটা ভয়ঙ্কর সেটা হল আশে পাশের রাজ্যের মাঠে জ্বালানো খড়কুটোর ধোঁয়া, এই ধোঁয়া দিল্লীর বাতাসে মিশে দুষিত করে তোলে, মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। বাইকে কিক মারার আগে নিজের ফ্লাটের বারান্দায় চোখ চলে যায়। ওর ঠোঁটে ওর বুক জুড়ে তখন প্রেয়সীর প্রথম প্রেমের চুম্বনের পরশ মাখা। ওর রূপসী তন্বী স্ত্রী ওর জন্য বারান্দায় দাঁড়িয়ে। দরজা বন্ধ করার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত গায়ে ঘেঁষে ছিল, কিছুতেই যেন ওকে ছাড়তে চাইছিল না। হেলমেট পরার আগে, ঠোঁট কুঁচকে ছোট এক চুমুর ইশারা করে প্রেয়সীর দিকে। অন্যদিন এতটা ফাঁকা ওর লাগত না, কিন্তু সেদিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে রিশুকে বাইক স্টার্ট করতে দেখে হুহু করে ওঠে ওর বুকের পাঁজর। কিছু একটা যেন হারিয়ে যাচ্ছে ওর জীবন থেকে। যতবার নিজেকে বুঝাতে চেষ্টা করে, তোর ডাক্তার তোর কাছেই আছে শুধু মাত্র হসপিটাল যাচ্ছে। ধ্যাত পোড়া মন, এতদিন পরে খুঁজে পাওয়া প্রেমের আবেগ এইভাবে নিমেষের মধ্যেই শেষ হওয়া যায় নাকি?
ডাক ছেড়ে ওঠে ওর বুকের পাঁজর, “সাবধানে যেও।”
রাস্তার বাঁকে রিশুর বাইক হারিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত বারান্দায় দাঁড়িয়েছিল ছিল ঝিনুক।
এতদিন একটা দুঃস্বপ্নের মধ্যে যেন ওর জীবনটা কাটছিল, এই বদ্ধ ঘরের মধ্যে মাঝে মাঝেই শ্বাস আটকে আসতো ওর। সেই এক দেয়াল, সেই এক বিছানা তাও যেন সবকিছুর মধ্যে মুক্তির আভাস পায়। অন্যদিনে রিশু বেড়িয়ে যাওয়ার পরে বাড়িটা ভীষণ ভাবেই ওকে চেপে ধরতে আসতো, কিন্তু সেদিন মনে হল এই দেয়াল এই সোফা এই চেয়ার টেবিল এই বিছানা সব যেন ওর কতদিনের চেনা পরিচিতি। ওর পা যেন আর মাটিতে পড়ছে না, বদ্ধ জীবন আর বদ্ধ নয়, ঝিনুক যেন খাঁচা ছাড়া এক পাখি।
গতকাল বিকেলের পরে আর বাড়িতে ফোন করা হয়নি। গতকাল বিকেল থেকেই একটা নেশার ঘোরের মধ্যে যেন ওর সময় কেটে গেছে। বোনের সাথে বেশ কয়েকদিন ভালো করে কথা বলা হয়নি, এতদিনের একটা দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটেছে। গতকাল সকালে ওর মা বলছিল যে দিয়া নাকি ওদের বাড়িতে রাতে আসবে।
বোনকে ভিডিও কল করল ঝিনুক, “কি রে কি করছিস?”
বড়দিন উপলক্ষে এক সপ্তাহের জন্য স্কুল ছুটি তাই বাড়িতেই ছিল ঝিলিক, সকাল সকাল দিদির ফোন পেয়ে বেশ আশ্চর্য হয়ে বলে, “ওহ বাবা, আজকে সকাল সকাল আমার কথা মনে পড়ল?” বলেই খিলখিল করে হেসে ফেলে ষোড়শী তন্বী তরুণী।
পাশের থেকে রিশুর বোন দিয়া বান্ধবীর তালে তাল মিলিয়ে উত্তর দেয়, “মনে পড়ল তাহলে?”
কিঞ্চিত লজ্জিত হয়েই উত্তর দেয় ঝিনুক, “নারে আই মিন টু সে, তোদের না মনে করে কি থাকা যায় নাকি?”
দিয়া প্রশ্ন করে, “আজকে ওপিডি আছে তো। দাদাভাই বেড়িয়ে গেছে?”
উত্তর দেয় ঝিনুক, “হ্যাঁ, এই একটু আগেই বেড়িয়ে গেছে। তোরা কি করছিস?”
ঝিলিক উত্তর দেয়, “বাঙালি আর কি করবে, শুয়ে শুয়ে ইন্সটা এফবি দেখছি আর ল্যাদ খাচ্ছি।”
দিয়া পাশ থেকে হেসে উত্তর দেয়, “আন্টি আজকে চিকেন বিরিয়ানি বানাচ্ছে। আমরা তোমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাবো।”
ঝিনুক জিজ্ঞেস করে, “তোদের পড়াশুনা নেই?”
দিয়া খিলখিল করে হেসে ফেলে, “কে বলেছে পড়া নেই, এই তো মাঝে মাঝেই এরতার সাথে প্রেমে পড়ছি, কখন বিছানা থেকে পড়ছি, কখন শুয়ে পড়ছি আর শোনার কথা…”
ঝিলিক ওর বান্ধবীর কথার রেশ টেনে বলে, “সারাদিন আন্টির আর মায়ের ঘ্যানর ঘ্যানর শুনছি…” বলেই হিহি করে ফেলে।
দুই বান্ধবীর কথা শুনে ঝিনুক হেসে ফেলে, “তোরা দুটো মহা শয়তান।” যদিও দিয়ার সাথে আগে থেকে সেই ভাবে পরিচয় হয়নি ঝিনুকের তাও এই কয়দিনে ফোনে একটু কথাবার্তা বলে অনেকটা সহজ হয়ে গেছে।
দিয়া ঝিনুককে জিজ্ঞেস করে, “কাল বিকেলে দাদাভাই ফোন করেনি কেন?”
ইসস, এদের সাথে কথা বলতে বলতে গতকালের কথা একদম ভুলে গেছিল ঝিনুক, “না রে কাল আর সময় পায়নি তোর দাদাভাই। ইন্দ্রজিতদা আর শালিনীদি এসেছিল ওদের সাথেই ডিনার করতে বেড়িয়েছিলাম আর কি।”
ঝিলিক চুকচুক করে বলে, “ইসস ডিনারে শুকনো কিছুই গিলতে হল তোকে?”
বোনের কথা শুনে ঝিনুক হেসে ফেলে, “না রে কালকে দুই গ্লাস ফ্রেঞ্চ ওয়াইন খেলাম তারপরে কি যেন এক উদ্ভট নামের হুইস্কি খেলাম।”
দিয়া আর ঝিলিক ভীষণ আশ্চর্যচকিত হয়ে সমস্বরে প্রশ্ন করে, “জিজুর সামনে তুই হুইস্কি খেলি? তোকে খেতে দিলো?”
লাজুক হেসে উত্তর দেয় ঝিনুক, “তোর জিজু একদম ভিজে বেড়াল…”
কথাটা বুঝতে না পেরে দিয়া জিজ্ঞেস করে, “মানে? দাদাভাই ড্রিঙ্ক করে নাকি?”
ঝিনুক সঙ্গে সঙ্গে বাধা দিয়ে বলে, “না না তোর দাদাভাই ড্রিঙ্ক করে না, আমি সে কথা বলতে চাইনি।” তারপরে নরম গলায় বলে, “মানে আমাকে বারণ করেনি।” বলেই লাজুক হাসি হাসে।
ঝিলিক খিলখিল করে হেসে বলে, “তাহলে তোর পোয়াবারো। তুই কি লাকি মাইরি। জিজু ড্রিঙ্ক করে না কিন্তু পেয়ারের বউ ড্রিঙ্ক করলে বারণ করে না। ইসসস ভাগ্যে যদি আমার একটা এমন বর জুটতো।”
ঝিনুক ড্রিঙ্ক করেছে শুনে দিয়ার মুখের ভাব ক্ষনিকের জন্য বদলে যায় তবে সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে নিয়ে হেসে বলে, “আমার দাদাভাই ইস দ্যা বেস্ট দাদাভাই অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড।”
মাথা দোলায় ঝিনুক, কলেজে পড়ার সময়ে অনেকের সাথেই মেলামেশা করেছে, এমন কি একজনের সাথে ছলনার প্রেমে জরিয়েও পড়েছে তবে ডক্টর অম্বরীশের মতন ঠান্ডা মাথার মানুষ আর দুটো দেখেনি। মানুষটা কথা না বলেও ভালবাসতে জানে, আর যখন ভালোবাসে তখন বাঁধ ভাঙা ভালোবাসে। ননদিনী আর বোনকে বলে, “তোরা দিল্লী চলে আয়।”
দিদির কথা শুনে ঝিলিক নেচে ওঠে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি তো এক পায়ে খাড়া, জিজু কবে আসছে নিতে?”
দিয়াও সেই সাথে নেচে ওঠে, “ঠিক ঠিক, দাঁড়াও আমি দাদাভাইকে ফোন করে বলছি।”
ঝিনুক কিছুক্ষন থেমে একটু ভেবে বোনকে বলে, “তোর জিজু নেক্সট মান্থে লন্ডন যাচ্ছে…”
অবাক হয়েই দিয়া প্রশ্ন করে, “মাম্মা জানে?”
ঝিনুক উত্তর দেয়, “আজ সকালে ওর এইচওডির ফোন এসেছিল তখন জানতে পারলো যে জানুয়ারিতে লন্ডনে কোন এক সেমিনার আছে, এক সপ্তাহের জন্য লন্ডন যেতে হবে। তোরা তার আগেই আমার এখানে চলে আয়।”
দিয়া মাথা দুলিয়ে হেসে বলে, “আমি দাদাভাইকে ম্যানেজ করে নেবো আর দাদাভাই মাম্মাকে ম্যানেজ করে নেবে।”
ঝিলিক চোখ বড় বড় করে দিয়াকে জিজ্ঞেস করে, “একা একা দিল্লী যাবো নাকি, জিজু আমাদের নিতে আসবে না?”
দিয়া কাঁধ ঝাঁকিয়ে বুক ফুলিয়ে হেসে বলে, “একা না যাওয়ার কি আছে, ফ্লাইটে যাবো অসুবিধে কি?”
উচ্ছ্বাসিত হয়ে ঝিলিক বলে, “উফফফ মাইরি, দিল্লী গিয়ে খুব ঘুরবো আর খুব শপিং করব।”
দিয়ার কাছে দিল্লী এখন পাশের পাড়ার মতন মনে হয়, সেই ছোটবেলা থেকে যখনি ওদের ছুটি হত তখনি ওর মা ওকে আর ওর ভাইকে নিয়ে দিল্লীতে ওর দাদাভাইয়ের কাছে চলে যেত। বান্ধবীর উচ্ছ্বাসিত কন্ঠ শুনে হেসে বলে, “করিস তবে অনেক বারগেনিং করতে হয়।” তারপরে ঝিনুককে জিজ্ঞেস করে, “তোমাকে শপিং করাতে কোথায় নিয়ে গিয়েছিল?”
হেসে ফেলে ঝিনুক, “মারকেটের নাম তো ভুলে গেছি।”
ঝিলিক খিলখিল করে হেসে দিয়ার কাঁধে ধাক্কা মেরে বলে, “তোর দাদাভাই কি কঞ্জুস মাইরি। আমার দিদিকে শপিং মলে শপিং না করিয়ে কোন এক নাম না জানা এঁদো মারকেটে নিয়ে গেছে শপিং করাতে।”
দিয়া হেসে বলে, “ওইখানে শপিং মলের চেয়ে ভালো জিনিস মারকেটে পাওয়া যায়।” চোখ টিপে বলে, “আমার একটা লিভাইসের জিন্স আর থাইহাই বুটস পাওনা আছে।”
ঝিলিক দিদিকে একটু ঠেস মেরে হেসে বলে, “তোর তো রান্নাবান্নার বালাই নেই, গায়ে হাওয়া লাগিয়ে দিব্বি আছিস। কাজের মেয়ে রান্নাবান্না করে ঘরের কাজ করে চলে যায়।”
মুচকি হাসে ঝিনুক, “তোর জন্য এমন একটা খুঁজে আনবো।”
ফিক করে হেসে ফেলে দিয়া, “দাদাভাইকে ওয়ান এন্ড ওনলি পিস বানিয়েছিল ভগবান, তারপর সেই ডাইস ভেঙ্গে ফেলেছে।”
ঝিলিক মুখ বেঁকিয়ে দিয়াকে বলে, “উফফফ পারি না, তোর শুধু দাদাভাই আর দাদাভাই। আমার দিদি কি বানের জলে ভেসে এসেছে নাকি?”
দিয়া ঠোঁট কুঁচকে মোবাইলের মাধ্যমে ঝিনুকের দিকে চুমু ছুঁড়ে দেওয়ার ভঙ্গি করে বলে, “একদম নয়, ঝিনুকদি ইস দ্যা মোস্ট হটেস্ট বেব ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড।”
ঝিনুক একটু লজ্জিত হয়ে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ অনেক হয়েছে। তোরা প্যাকিং শুরু কর আমি মামনির সাথে কথা বলে নেবো।”
দিয়া ঠোঁট বেঁকিয়ে বলে, “তোমার মামনি যন্তর পিস কিন্তু। তবে হ্যাঁ, ভাই যদি সাথে যায় তাহলে আমাদের মজা করা লাটে উঠে যাবে। সব কথা কিন্তু মাম্মাকে বলে দেবে।” বলেই হিহি করে হেসে ফেলে।
ঝিনুক হেসে ফেলে বলে, “বাঃ রে, আমার দশটা নয় পাঁচটা নয় একটা মাত্র ছোট্ট আদরের দেওর।”
দিয়া হিহি করে হেসে বলে, “তোমার পেয়ারের দেওর না আস্ত একটা বাঁদর।”
ঝিনুক মিষ্টি হেসে বলে, “ওর চিৎকারের শুনেই তোর দাদাভাই কোলকাতা ছুটে গিয়েছিল। ওকে না নিয়ে এলে কি করে হবে।”
দিয়া মুখ বেঁকিয়ে বলে, “ধ্যাত, আমি ভাবলাম এই প্রথমবার একা একা ঘুরতে গিয়ে একটু মস্তি করব তা না।”
ঝিনুক ওকে জিজ্ঞেস করে, “দিপ যদি বায়না ধরে তখন কি করবি?”
দিয়া একটু ভেবে বলে, “মাম্মা এখন বাড়ি ছেড়ে যেতে পারবে না, তাই দিপ ও যেতে পারবে না। বাকিটা তুমি দাদাভাইকে বুঝিয়ে বলো দাদাভাই মাম্মাকে ম্যানেজ করে নেবে।”
ঝিনুক একটু ভেবে উত্তর দেয়, “আচ্ছা আমি দেখি মামনির সাথে কথা বলে কি বলে তারপরে তোদের জানাচ্ছি।”
ঝিলিক একটু ভেবে বলে, “হ্যাঁ তুই আন্টির সাথে কথা বল, আন্টি মাকে বলে দিলে মা আর তাহলে না করতে পারবে না। সব কিন্তু এখন তোর হাতে।”
ঝিনুক মৃদু হেসে উত্তর দেয়, “আচ্ছা বাবা, বলছি তো তোরা প্যাকিং শুরু কর, আমি মামনিকে ম্যানেজ করে নেব।”
ঝিনুক ফোন রেখে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে বুকের নিচে বালিশ চেপে মোবাইল খুলে ওদের বিয়ের ছবি দেখতে শুরু করে। যদিও এর আগে মাঝে মাঝে মোবাইলে ওদের বিয়ের ছবি দেখেছে, তবে সেদিন ওর কাছে সব কিছুই যেন একটা ঘোরের মতন। বিয়ের সময়ের নিজেদের শুভ দৃষ্টির কথা মনে পড়তেই ভীষণ লজ্জায় হাসি পেয়ে যায় ঝিনুকের, সামনে কে আছে দেখার দরকার নেই, ওকে যেন সবাই ধরে বেঁধে কসাইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে। প্রথম দেখার ঘটনা মনে পরে যায়, কেউ কি ওইভাবে গালের দিকে দেখে বলে নাকি, এমা কি হয়েছে, অয়েন্টমেন্ট লিখে দেবো লাগিও। ওর অবচেতন হৃদয় সেই মুহূর্তে জোড়া লেগে গিয়েছিল। ঠোঁটে এখন রিশুর তীব্র প্রেমঘন চুম্বনের পরশ লেগে। সারা শরীর জুড়ে ভালোবাসার প্রথম ছোঁয়ার আবেগ অনুভূতি ঢেউ খেলে বেড়ায়। নিটোল স্তন জোড়া ভীষণ ভাবেই পিষে ধরে বালিশের ওপরে, দুই পা ভাঁজ করে দুলিয়ে দুলিয়ে রিশুর ছবি দেখে আর লাজুক হাসি হাসে।
রিশুর ছবিতে নাক ঘষে দুষ্টুমি করে বলে, “তুমি না মহা শয়তান। আগে কেন দেখা করতে আসোনি আমার সাথে? তুমি যদি আগেই আমার জীবনে আসতে তাহলে কি আর এই অঘটন হত নাকি? নাহ তুমি পালিয়ে চলে গেলে কোথায়, সেই রাঁচি। না হলে কেমন বেশ ছোটবেলায় দেখা হয়ে যেত, একটু লুকিয়ে চুরিয়ে দুষ্টু মিষ্টি প্রেম করতে পারতাম। তা না, মাঝ রাতে কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসলে আমার জীবনে।”
ঠিক সেই সময়ে রিতিকার ফোন এলো, “হ্যালো কি রে কি করছিস?”
রিশুর ছবি দেখতে দেখতে এক প্রকার মোহাচ্ছন হয়ে পড়েছিল ঝিনুক, হটাত করে ফোন এসে যাওয়াতে সেই মোহাবেশ কেটে যায় ওর। “এই কিছু না রে। তোর কি খবর? আজকে কি সত্যি আমরা যাচ্ছি?”
রিতিকা হেসে বলে, “তুই বল, আমি তো অফিস থেকে লিভ নিয়ে নিয়েছি।”
কিছুক্ষন ভেবে উত্তর দেয় ঝিনুক, “আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে।”
রিতিকা বলে, “ওকে ডারলিং, আমি এই বারোটার মধ্যে তোর বাড়ি পৌঁছে যাবো।”
হেসে উত্তর দেয় ঝিনুক, “ওকে।”
বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল ঝিনুক, ঘড়িতে এগারোটা বাজে, হাতে মাত্র এক ঘন্টা সময়। বিয়ের কয়েকদিন আগে সেই একবার বিউটি পার্লার যাওয়া হয়েছিল তারপরে দিল্লীতে এসে সেইভাবে নিজের পরিচর্যা করা হয়নি। পায়ে লোম গজিয়ে গেছে, ভুরু জোড়া একটু মোটা হয়ে গেছে। আশেপাশে পার্লারের খোঁজ জানে না, ওয়াক্সিং থ্রেডিং ম্যানিকিওর পেডিকিওর ইত্যাদি করাতে হবে। স্নান সারার জন্য জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পরে ঝিনুক। রিতিকা আসার আগেই তৈরি হয়ে নিতে হবে। রিতিকাকে নিয়ে রিশুর হসপিটালে যাবে দেখা করতে, একেবারে চমকে দেবে ওকে। অন্যদিনে স্নানের তাড়া থাকে না, ওর হাতে অঢেল সময় থাকে। অন্যদিনে বাথরুমে ঢুকে আয়নায় নিজের দিকেই অনেকক্ষণ শুন্য দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। সেদিনও বাথরুমে ঢুকে আয়নায় নিজেকে দেখেই ফিক করে হেসে ফেলে। ওর জীবনের গতিপথ বদলে গেছে।
গিজার চালিয়ে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে গুনগুন করে গান ধরল ঝিনুক, Can I touch you? I can’t believe that you are real, How did I ever find you? You are the dream that saved my life You are the reason I survived।
স্নান সেরে শোয়ার ঘরে ঢুকে হেয়ার ড্রাইয়ার চালিয়ে চুল শুকাতে শুকাতে একবার ফোনের দিকে দেখে নেয়, এতক্ষনে নিশ্চয় রিশু হসপিটাল পৌঁছে গেছে। ওপিডি ডিউটি, খুব ব্যাস্ত নিশ্চয়, না আর এখন মেসেজ করে লাভ নেই। একেবারে সোজা চমক দেবে প্রেমিককে। ঠিক তখনি রিতিকার ফোন আসাতে একটু ব্যাস্ত হয়ে পরে, ফোনেই রিতিকাকে বাড়ির ঠিকানা আর রাস্তা বুঝিয়ে দেয়। আলামারি খুলে বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকে, কি পোশাক পড়বে সেটাই ঠিক করতে পারছে না। গতকাল জিন্স পড়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু প্রথমবার রিশুর সাথে বাইরে কোথাও ডিনারে যাচ্ছে ভেবেই শেষ পর্যন্ত শাড়ি পড়েছিল। তবে আজকে রিশু নয় বান্ধবীর সাথে মারকেটে যাচ্ছে শপিং করতে তাই একটা টরন স্টোন ওয়াশ নীল রঙের জিন্স আর একটা উঁচু গলার সাদা রঙের সোয়েটার বের করে। শীতকাল, সকালেই বারান্দায় বেড়িয়েই বুঝে গেছে বাইরে কত ঠান্ডা তাই জিনসের নিচে একটা স্কিন কালারের ইনার লেগিন্স পরে নেয়। চাপা জিন্স কোমরের নিচ থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত আঠার মতন ওর ত্বকের সাথে লেপটে যায়। দুই ঊরু কাছে বেশ ছেঁড়া, হাঁটুর নিচেও একটু ছেঁড়া এটাই বর্তমান ফ্যাশান। হাইনেক সোয়েটার পরে জিনসের ভেতরে বাকিটা গুঁজে নেয়। পাতলা কোমরে একটা বেল্ট লাগিয়ে নেয়। আয়নাটা বিশেষ বড় নয় তাই নিজেকে সম্পূর্ণ দেখতে একটু অসুবিধে হয় ঝিনুকের। বাম হাতের কবজিতে সোনার পাতে মোড়া লোহা বাঁধানো, ইচ্ছে করেই পোশাকের সাথে মিলিয়ে হাতের শাঁখা পলা বাঁধানোটা খুলে ফেলে। দুই কানে বড় গোল রিং পরে নেয়, গলায় একটা পাতলা সোনার চেন। মাথার চুল একপাশ করে আঁচড়ে নিয়ে মুখমন্ডলের প্রসাধনির জন্য ছোট আয়নার সামনে বসে পরে। মেকআপ বাক্স খুলে চোখের পাতার ওপরে হাল্কা কালচে আইশ্যাডো লাগিয়ে চোখ জোড়া একটু স্মোকি করে তোলে, দুই চোখের পাতায় আইল্যাশ আঠা দিয়ে আটকে চোখের পলক গুলো একটু বড় করে তোলে, চোখের নিচে কাজল পরে চোখের আকার আরো একটু টানাটানা করে তোলে। একগাদা লিপস্টিক খুলে বসে পরে, কি লাগালে এই পোশাকের সাথে মানাবে সেটা ভাবতে ভাবতেই ওর দরজায় কলিং বেল বেজে ওঠে।
দরজা খুলতেই রিতিকা ওকে দেখে আশ্চর্য হয়ে যায়, “ইয়ো বেব ইউ আর লুকিং হট।” বলেই ঝিনুক কে জড়িয়ে ধরে।
রিতিকার পরনে চাপা কালো রঙের জিন্স, গায়ে একটা লম্বা কালো রঙের জ্যাকেট আর তার নিচে একটা লাল রঙের শারট। ঠান্ডার জন্য মাথায় একটা ক্যাপ পড়েছে তবে সেটা ঠান্ডা আটকানোর জন্য নয় সেটা স্টাইলের জন্য। মনে মনে নিজেকে রিতিকার পাশে দাঁড় করিয়ে একবার প্রতিদ্বন্দ্বী অবচেতন মন যাচাই করে নেয় কে বেশি সুন্দরী। কলেজের সেই রেষারেষি এখন ঠিক ভাবে কাটেনি, ভাবতেই মনে মনেই হেসে ফেলে ঝিনুক।
হেসে ফেলে ঝিনুক, “কাম অন ইয়ার, কতদিন পরে দেখা বলতো।”
রিতিকা বাড়ির চারপাশে চোখ বুলিয়ে সোফায় বসে ওকে জিজ্ঞেস করে, “আর তোর কি খবর বল?”
ঝিনুক সোফায় বসে উত্তর দেয়, “আই এম ইন ক্লাউড নাইন…”
রিতিকা ওর দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে দেখে মিষ্টি হেসে বলে, “বিয়ের পরে তুই যেন আরো হট হয়ে গেছিস।”
লজ্জায় ঝিনুকের গালে লালচে আভাস দেখা দেয়, সকালের রিশুর প্রথম চুম্বন এখন ওর ঠোঁট থেকে মুছে যায়নি। লাজুক হেসে উত্তর দেয়, “ইউ সে। হোয়াট এবাউট হরিশ?”
মৃদু হেসে রিতিকা উত্তর দেয়, “আমাদের অনেকদিন আগেই ব্রেকআপ হয়ে গেছে।”
ভুরু কুঁচকে ঝিনুক প্রশ্ন করে, “কি হল?”
রিতিকা উত্তর দেয়, “নাথিং মাচ, ছাড় না ওর কথা।”
চোখ কুঁচকে একবার রিতিকাকে জরিপ করে বলে, “ওকে একটু দাঁড়া আমি একটু সেজেই বেড়িয়ে পড়ছি।”
চোখ বড় বড় করে হেসে ফেলে রিতিকা, “আরো সাজ বাকি?”
মাথা দোলায় সুন্দরী ললনা, “এই জাস্ট লিপস্টিক লাগিয়ে বেড়িয়ে যাবো।”
তর্জনী আর মধ্যমা নিজের ঠোঁটে ছুইয়ে ঝিনুকের দিকে একটা ছোট চুম্বন ছুঁড়ে দিয়ে বলে, “তুই এখন সেই ঝিনুক আছিস।”
মনে মনে হেসে ফেলে ঝিনুক, ডুবে গেছিলাম রে ও না থাকলে কোথায় যে তলিয়ে যেতাম নিজেই জানিনা। লাজুক হেসে উত্তর দেয়, “দাঁড়া লিপস্টিকটা লাগিয়ে আসছি।”
শোয়ার ঘরে ঢুকে ঠোঁটে গাড় বাদামি রঙের একটা লিপস্টিক লাগিয়ে আয়নায় নিজেকে একবার জরিপ করে বেড়িয়ে পরে ঝিনুক। গায়ে গাড় নীল রঙের রিশুর কিনে দেওয়া ওভারকোট চাপিয়ে নেয়, পায়ে থাই হাই গাড় বাদামি রঙের বুট। বেরনোর আগে রিতিকা ওর আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে, কাকে ঘায়েল করতে চলেছে? রিতিকা প্রশ্ন করলে উত্তরে বলে, সব থেকে আগে এইএমএস যাবে ওর নতুন “বয়ফ্রেন্ড”কে একটা চমক দিতে। নতুন বয়ফ্রেন্ডের কথা শুনে রিতিকা বেশ চমকে যাওয়াতে হাসিতে ফেটে পরে ঝিনুক। ক্যাবে বসে রিশুর হসপিটালের দিকে যেতে যেতে একটা মেসেজ করে জানিয়ে দেয় যে ওরা দুইজনে শপিং করতে বেড়িয়ে পড়েছে, কিন্তু এটা জানায় না যে ওরা রিশুর সাথে দেখা করতে আসছে।
হসপিটাল পৌঁছাতে অন্যদিনের চেয়ে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল রিশুর। সারাটা রাস্তা শুধু মাত্র মনে হচ্ছিল ছুটি নিলে ভালো হত, কিন্তু কর্তব্য সবার আগে আর এডমিন ডিপার্টমেন্টে ওর পাসপোর্ট জমা দিতে হবে। হসপিটালে ঢুকে সব থেকে আগে এইচওডির সাথে দেখা করে যে ইমেল এসেছিল সেটার একটা প্রিন্টআউট নিয়ে ডক্টর ধিলোনের একটা চিঠি নিয়ে এডমিন ডিপার্টমেন্টে জমা দিয়ে দেয়। এপ্রন আর গলায় স্টেথো ঝুলিয়ে চেম্বারের দিকে হাঁটতে হাঁটতে মাকে ফোন করে রিশু।
আম্বালিকা ছেলের ফোন পেয়েই একটু আহত কন্ঠে বলে, “কি রে কাল রাতে আর ফোন করলি না?”
মাথা চুলকে অপরাধীর হাসি হেসে উত্তর দেয়, “মানে ওই ডিনার করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেল তাই আর ফোন করা হয়নি। পাপা বেড়িয়ে গেছে?”
হেসে ফেলে আম্বালিকা, “হ্যাঁ তোর পাপা অনেক আগেই বেড়িয়ে গেছে। তোর কি খবর? তোরা কেমন আছিস?”
মাথা চুলকে লাজুক হাসি দিয়ে উত্তর দেয়, “পা বাড়িয়েছি, মাম্মা।”
ছেলের ভালোবাসার কথা শুনে আম্বালিকার বুক ভরে যায়, ধরা গলায় আশীর্বাদ করে ছেলেকে বলে, “আশীর্বাদ করি বাবা তোরা যেন ভালো থাকিস।”
মায়ের ধরা গলা শুনে রিশুর দৃষ্টি মুহূর্তের জন্য ঝাপসা হয়ে যায়, “মাম্মা…”
ছেলের গলায় মা ডাক বড় মধুর। আম্বালিকা চোখের কোল মুছে হাসি মুখে ছেলেকে বলে, “না রে কিছু না, আমার সেই ছোট্ট ছেলেটা আজকে অনেক বড় হয়ে গেল তাই…”
রিশু ধরা গলায় মাকে বলে, “প্লিজ মাম্মা।” একটু থেমে মাকে জানায়, “আচ্ছা শোনো না, জানুয়ারির ফার্স্ট উইকে একটা সেমিনারের জন্য আমাকে লন্ডন যেতে হবে।”
ওর মা ওকে জিজ্ঞেস করে, “ঝিনুককে নিয়ে যাচ্ছিস কি?”
মাথা নাড়ায় রিশু, “না গো, বেড়াতে যাচ্ছি না, হসপিটালের কাজে যাচ্ছি।”
ওর মা ওকে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে ঝিনুক কোথায় থাকবে? যাওয়ার আগে তাহলে ওকে কোলকাতায় পৌঁছে দিয়ে যা।”
রিশু উত্তরে বলে, “আমি ওকে বলেছিলাম কোলকাতায় যেতে, কিন্তু ও কিছুতেই কোলকাতা যেতে চাইছে না।”
ছেলের কথা শুনে হেসে ফেলে আম্বালিকা, নিজেও এক সময় প্রেম করেছে তাই ঝিনুকের মনের অবস্থা ওর বুঝতে বিন্দু মাত্র অসুবিধে হয় না, “সে তো বুঝলাম কিন্তু একা একা কি করে থাকবে?”
একটু ভেবে রিশু মাকে বলে, “আমি বলছিলাম কি যদি বোন দিন দশেকের জন্য এখানে আসতে পারে।”
একটু ভেবে ওর মা ওকে বলে, “আচ্ছা দেখছি কি করা যায়, ফেব্রুয়ারিতে ফাইনাল এক্সাম শুরু হবে। পড়াশুনা তো এমনিতে করেই না।”
রিশু মুচকি হেসে বলে, “আরে মাত্র দশ দিনের তো কথা, আমি বলে যাবো ও পড়াশুনা করবে।”
হেসে ফেলে আম্বালিকা, “হ্যাঁ তোর বোন কত কথা শোনে জানা আছে।” একটু ভেবে বলে, “তোর পাপার সাথে কথা বলে দেখি কি বলে। দিয়া গতকাল পিয়ালির বাড়িতে গেছে, দিয়া যাবে শুনলে হয়ত ঝিলিক ও যেতে চাইবে, তার ও তো দিদির বাড়ি।”
মাথা দোলায় রিশু, ওর একটা ভীষণ দুষ্টু মিষ্টি শ্যালিকা আছে তবে সেইভাবে সেই শ্যালিকার সাথে কোনদিন মন খুলে আলাপ পরিচয় হয়নি, তাই মাথা দুলিয়ে মাকে বলে, “আচ্ছা তাহলে দুইজনকেই পাঠিয়ে দিও, আমি বিকেলের মধ্যে ওদের টিকিট কেটে পাঠিয়ে দেবো।”
ওর মা হেসে ফেলে, “আরে বাবা, আগে তোর পাপার সাথে কথা বলে দেখি পিয়ালির সাথেও কথা বলে দেখি ওরা কি বলে।”
রিশু মাকে হেসে বলে, “কাকে কি ভাবে ম্যানেজ করবে সেটা তোমার ব্যাপার, আমি টিকিট কেটে তোমাকে জানিয়ে দেবো।”
আম্বালিকা পারলে ফোনের মধ্যে থেকেই হাত বাড়িয়ে রিশুর কান টেনে যেন বলে, “তুই সেই ছোট বেলা থেকে বড্ড জেদি, সব কিছু আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিস।”
হেসে ফেলে রিশু, “তুমি সব পারো মাম্মা। আচ্ছা এখন আমার ওপিডি আছে, দেরি হয়ে যাচ্ছে পরে ফোন করব, রাখছি।”
চেম্বারে ঢুকতেই দেখে প্রচুর রুগী ওর জন্য অপেক্ষা করছে। ভেবেছিল একবার ঝিনুককে একটা মেসেজ করবে কিন্তু সেটা আর করা হল না। কয়েকজন জুনিয়ার ডাক্তারদের নিয়েই একের পর এক রুগী দেখা শুরু করে দিল। রুগী দেখতে দেখতেই মাঝে মাঝে ওর চোখ মোবাইলের দিকে চলে যায়, এতক্ষনে নিশ্চয় বান্ধবীর সাথে শপিং করতে বেড়িয়ে পড়েছে। টুং করে মোবাইলে আওয়াজ হতেই ক্ষনিকের বিরতি নিয়ে মোবাইল খুলে প্রেয়সীর ছোট মেসেজ পড়ে নেয়, “আমরা বেড়িয়ে গেছি।” প্রেস্ক্রিপসান লিখতে লিখতেই অন্যহাতে মোবাইল কি-প্যাড টিপে উত্তর দেয়, “সাবধানে যেও, লাভ ইউ।” সঙ্গে সঙ্গে ওর প্রেয়সীর উত্তর আসে, একটা চুম্বনের ইমোজি সেই সাথে অসংখ্য লাল হৃদয়ের ইমোজি।
ট্যাক্সিতে বাড়ি থেকে রিশুর হসপিটাল পৌঁছাতে বেশি সময় লাগে না। হসপিটালের বিশাল বিলডিং দেখে ঝিনুক আর রিতিকা দুইজনেই বেশ ধন্ধে পরে যায়, কাকে কি জিজ্ঞেস করবে? বুকে বল নিয়েই কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে অরথোপেডিক ডিপার্টমেন্টে পৌঁছে যায় ওরা। ওদের দেখে ডিপার্টমেন্টের বাইরে দাঁড়ানো দারোয়ান জিজ্ঞেস করাতে ঝিনুক জানায় যে ডক্টর অম্বরীশ সান্যালের স্ত্রী। দারোয়ান ওদের রিশুর চেম্বার দেখিয়ে দিয়ে চলে যায়। চেম্বারের বাইরে বিশাল ভিড় দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পরে ঝিনুক।
রিতিকা ফিসফিস করে ওকে জিজ্ঞেস করে, “উফফ কি ভিড় রে বাবা। তোর ডক্টর কোথায়?”
ভিড় ভর্তি চেম্বারের মধ্যে উঁকি মেরে ঝিনুক রিশুকে দেখতে চেষ্টা করে। একটা টেবিলের পাশে তিনজন ডাক্তার বসে রয়েছে, একটা বড় চেয়ারে চশমা পরে বসে রিশু কোন এক রুগীর চিকিতসায় ব্যাস্ত। ঝিনুক রিতিকার বাজু টেনে রিশুর দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলে, “ওই যে বসে আছে।”
রিতিকা রিশুকে দেখে বড় বড় চোখ করে বলে, “মাই গুডনেস, করেছিস কি? ওই হ্যান্ডুটা তোর ডক্টর?”
লাজুক হেসে মাথা দোলায় ঝিনুক, “হুম…”
রিতিকা ওর কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে বলে, “ডাক, একটু কথা বলি।”
চেম্বার ছেড়ে বেড়িয়ে এসে রিতিকাকে বলে, “তোর মাথা খারাপ নাকি? ও এখন ব্যাস্ত আছে, কাজ শেষ হোক তারপরে ডাকবো।”
রিতিকা বিষণ্ণ গলায় ওকে বলে, “মানে? কতক্ষন দাঁড়াতে হবে কে জানে।”
মিষ্টি হেসে ঝিনুক উত্তর দেয়, “আমি তো এখানেই ওর জন্য ওয়েট করবো।”
রিতিকা ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, “শপিং?”
হেসে ফেলে ঝিনুক, “সারপ্রাইজ আগে তারপরে শপিং, তার জন্য যদি আমাকে এখানে দুই ঘন্টাও বসে থাকতে হয় তাতেও আমি রাজি।”
রিতিকা ঝিনুককে আলতো ধাক্কা মেরে মুচকি হেসে বলে, “উফফফ পারি না, ডারলিং একদম মজে গেছে মাইরি।”
লাজুক হাসি হেসে ঝিনুক বলে, “চল বাইরে চল দেখি কোথাও বসার জায়গা পাওয়া যায় নাকি।”
বাইরে বের হতেই একজন ডাক্তারের সাথে ওদের দেখা হয়। সেই ডাক্তার ওদের দিকে হাত বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “মিসেস সান্যাল?”
ঝিনুক ভুরু কুঁচকে সেই আগন্তুক ডাক্তারকে নিজের পরিচয় দিয়ে বলে, “ইয়েস, ইটস মি।”
সেই ডাক্তার ওর হাতে হাত মিলিয়ে হেসে নিজের পরিচয় দেয়, “আমি ডক্টর ব্রিজেশ সিনহা, সান্যালের কলিগ।” রিশুর চেম্বারে উঁকি মেরে দেখে ওদের আক্ষেপ করে বলে, “দুটোর আগে ফ্রি হবে না মনে হচ্ছে।”
ম্লান হাসি দেয় ঝিনুক, “দ্যাটস ওকে, আমি ওর জন্য ওয়েট করবো।”
মুচকি হাসি দেয় ব্রিজেশ, “তুমি দাঁড়াও আমি দেখি ওকে বলে।”
ব্রিজেশ চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পরে চেম্বার ছেড়ে বেড়িয়ে ঝিনুককে দেখে ভীষণ ভাবেই অবাক হয়ে যায় রিশু, “তুমি? এই সময়ে? এখানে?”
ওর পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে মিষ্টি হেসে উত্তর দেয়, “সারপ্রাইজ…” তারপরে পাশে দাঁড়ানো রিতিকার সাথে পরিচয় করিয়ে বলে, “আমার বান্ধবী, রিতিকা, যার কথা তোমাকে গতকাল বলছিলাম।”
রিতিকার দিকে একবার তাকিয়ে সুন্দরী প্রেয়সীর আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে অবাক হয়েই ফিসফিস করে বলে, “তুমি না পাগল আছো। এই সময়ে আসতে হত তোমাকে?”
ঝিনুক একটু মুখ ভার করে বলে, “আমি এসেছি বলে তোমার অসুবিধে হচ্ছে? ভাবলাম একটা সারপ্রাইজ দেব। আমি কিন্তু তোমাকে ডাকতে যাইনি, তোমার বন্ধুটা বলল না হলে আমি তো এখানে তোমার লাঞ্চ আওয়ার পর্যন্ত জন্য ওয়েট করতাম।”
এই সাজে ওর রূপসী প্রেয়সী সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপে ওর সামনে আবির্ভূত দেখে চোখ ফেরাতে অক্ষম হয়ে পরে রিশু। প্রেয়সী ললনার গভীর কাজল কালো চোখের তারায় প্রেমের ঝলকানি দেখে সব কিছু ভুলে যায় রিশু। বড় বড় কালো চোখের মণির মাঝে নিজের প্রতিফলন দেখে একটু হেসে বলে, “ইউ আর ম্যাড।”
হিল তোলা থাই হাই বুট পড়ার জন্য ঝিনুকের মাথা রিশুর কাঁধ ছাড়িয়ে যায়। রিশুর মুখে হাসি দেখে দুই হাতে ওর বাজু জড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে গলা নামিয়ে বলে, “ফর ইউ ওনলি।”
হসপিটাল ভর্তি লোকের সামনে রিশুর প্রেয়সী ওর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকাতে ভীষণ ভাবেই অপ্রস্তুতভাব বোধ করে রিশু। ঝিনুকের কোমল হাতের ওপরে হাত রেখে বলে, “চলো একটু ক্যান্টিনে গিয়ে বসি।”
ঝিনুক চারপাশে তাকিয়ে দেখে অনেকেই ওদের দিকে কেমন যেন একটা ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে, সেই দেখে ভীষণ ভাবেই অপ্রস্তুত হয়ে রিশুর হাত ছেড়ে একটু তফাতে দাঁড়িয়ে মিষ্টি হেসে বলে, “না না, এই তো তোমার সাথে দেখা হয়ে গেল, আমরা যাচ্ছি তুমি পেসেন্ট দেখো।”
মেয়েটা সত্যি পাগল, এই দুই মিনিটের জন্য দেখা করতে এসেছিল নাকি? যত দেখে তত যেন নতুন মনে হয় এই সুন্দরীকে। পরনে হাল ফ্যশানের ছেঁড়া জিন্স আর গলা উঁচু চাপা সোয়েটার তার ওপরে গাড় নীল রঙের ওভারকোট, ললনাকে দেখে গতরাতের শাড়ি পরিহিতা রূপসী স্ত্রী বলে মনেই হচ্ছে না, মনে হয় কোন ম্যাগাজিনের পাতা থেকে উঠে আসা অপূর্ব সুন্দরী এক মডেল। এতদিন এমন আধুনিকা সুন্দরীরদের থেকে একটু দুরেই থাকত রিশু, একটু হীনমন্যতায় ভুগত, তবে ওর অবচেতন মন ভীষণ চাইত এমন সুন্দরীদের একটু ছোঁয়া পেতে।
রিশু ওকে বলে, “তোমরা ফার্স্ট টাইম আমার হসপিটালে এসেছ, এক কাপ কফি হয়েই যেতে পারে।” নিজের চেম্বারে উঁকি মেরে ইশারায় ব্রিজেশকে ওর কাজ দেখতে অনুরোধ করে।
ঝিনুক ওকে আস্বস্থ করে বলে মিষ্টি হেসে বলে, “আরে না না, আমি চাইনা তোমার কোন অসুবিধে হোক। তুমি শুধু ঠিক সময়ে লাঞ্চ করে নিও।”
হেসে ফেলে রিশু, “ওকে, বাই দ্যা ওয়ে, চল তোমাদের বাইরে পর্যন্ত ছেড়ে আসছি।”
রিশুর বাম বাজু দুইহাতে জড়িয়ে ধরে ওর পাশে হাঁটতে হাঁটতে চারপাশে তাকিয়ে দেখে ঝিনুক, অসংখ্য মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এই হসপিটালে আসে চিকিৎসা করাতে, কতজনের কত ধরনের রোগ। কথায় কথায় রিশু জানায়, দিল্লীর এমস ভারতের সব থেকে নামকরা হসপিটাল, সেটা শুনে গর্বে ঝিনুকের বুক ফুলে যায়, ওর রিশু ভারতের সব থেকে নামকরা হসপিটালের ডাক্তার। নিজে চোখেই দেখছে এই জনসমুদ্র। সুন্দরী স্ত্রীর দিক থেকে কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারছিল না রিশু, বারে বারে ওর তৃষ্ণার্ত চোখ ঝিনুকের কোমল অধর আর গভীর কালো চোখের দিকে চলে যাচ্ছিল। রিশুর আবেগঘন চোখের চাহনিতে ভীষণ ভাবেই আন্দোলন জেগে ওঠে ঝিনুকের ছোট হৃদয়ের অভ্যন্তরে। হসপিটালের বাইরে বেড়িয়ে শীতকালের মিষ্টি রোদে মাখামাখি করে ওরা তিনজনে আরো কিছুক্ষন গল্প করে। রিতিকা বিশেষ কথা না বললেও বারেবারে ওর চোখ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল রিশু আর ঝিনুককে। ট্যাক্সিতে ওঠার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত রিশুর পাশ ছাড়তে একদম ইচ্ছে করছিল না ঝিনুকের, এই মিষ্টি রোদে দাঁড়িয়ে গল্প করার মজাই আলাদা।
ট্যাক্সিতে ওঠার আগে রিতিকা রিশুর দিকে হাত বাড়িয়ে মৃদু হেসে বলে, “তোমার কার্ড পাওয়া যাবে?”
পার্স থেকে নিজের কার্ড বের করে রিতিকার হাতে দিয়ে ওকে বলে, “তোমরা সাবধানে যেও।”
বান্ধবীর কাঁধে হাত রেখে মিষ্টি হেসে উত্তর দেয় রিতিকা, “তোমার বৌকে সাবধানেই নিয়ে যাবো।”
লাজুক হেসে রিশুর হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে মিষ্টি হেসে ঝিনুক ওকে বলে, “ঠিক সময়ে লাঞ্চ করে নিও আর আমি মেসেজ করব।”
ট্যাক্সি ছাড়তেই রিতিকা ঝিনুকের বাজুতে আলতো ধাক্কা দিয়ে ইয়ার্কি মেরে বলে, “ফাক বেব, কি হাত মেরেছিস মাইরি। সোজা এমসের অরথোপেডিক সার্জেন?”
মৃদু হাসে ঝিনুক, “দেখলি তো কত বিজি মানুষ, আবার নেক্সট মান্থে লন্ডন যাচ্ছে।”
আশ্চর্যচকিত রিতিকা ওকে জিজ্ঞস করে, “বাপরে, লন্ডন? তুইও যাচ্ছিস নাকি?”
ঝিনুক ম্লান হেসে উত্তর দেয়, “না রে আমি যাচ্ছি না, আমার পাসপোর্ট কোলকাতায় আছে এখানে আনা হয়নি। ওর একটা সেমিনার আছে সেইজন্য যাচ্ছে। ও খরচা হসপিটাল দিচ্ছে সো আমি যাচ্ছি না।”
রিতিকা ওকে চোখ টিপে প্রশ্ন করে, “হানিমুনে এখন গেলি না?”
ঝিনুক লাজুক হেসে উত্তর দেয়, “এই তো কোলকাতা থেকে দিল্লীতে এসেই আমাদের হানিমুন হচ্ছে।” একটু থেমে ওকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা এখানে কাছাকাছি কোথায় পার্লার আছে জানিস?”
রিতিকা প্রশ্ন করে, “কেন রে?”
মুচকি হেসে ঝিনুক ওকে উত্তর দেয়, “অনেক দিন গ্রুমিং করা হয়নি।”
রিতিকা হাসিতে ফেটে পরে, “যাহ্ তেরি, এতদিন তাহলে এনাকোন্ডা জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছিল নাকি?”
রিতিকার বাজুতে কিল মেরে লাজুক হেসে বলে, “ইউ আর আ বিচ, রিয়ালি। বল না পার্লার কোথায় আছে?”
রিতিকা একটু ভেবে বলে, “তোর এরিয়াতে খুঁজে দেখতে পারিস।” ফোনে গুগুলে খুঁজে দেখে ওকে দেখিয়ে বলে, “তোর বাড়ির কাছেই একটা পার্লার আছে, শপিং এর পরে না হয় যাওয়া যাবে?”
মুচকি হাসে ঝিনুক, “শপিং আজকে করতে হবে না, চল আগে পার্লার যাই তারপরে দেখা যাবে।”
ট্যাক্সি ঝিনুকের বাড়ির দিকে নিয়ে যেতে অনুরোধ করে। হরিশের ব্যাপারে জানতে চাইলে রিতিকা জানায় যে ওদের মাঝে ছাড়াছাড়ি অনেকদিন আগে হয়ে গেছে। হরিশ ব্যাঙ্গালোরে একটা কোম্পানিতে চাকরি পায়, প্রথমে রিতিকাকে ব্যাঙ্গালোর যেতে বলেছিল হরিশ। ব্যাঙ্গালোরে দুইজনে লিভ-ইন রিলেশানে থাকত, কিছুদিনের মধ্যেই অন্য একটা চাকরি পায় রিতিকা, সেখানে ওর মাইনে হরিশের চেয়ে বেশি হয়ে যাওয়াতে হরিশের মনের মধ্যে হীনমন্যতা জাগে। বাড়ির বেশির ভাগ খরচ খরচা ওকেই বহন করতে হত, মাঝে মাঝেই হরিশ মদ খেয়ে বাড়ি ফিরত, যদিও রিতিকাও মদ খায় তবে হরিশ প্রায় রোজদিন মাতাল হয়েই ঘরে ঢুকত। এই নিয়ে অনেকবার ওদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়, শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে, রিতিকা দিল্লীতে চাকরি নিয়ে চলে আসে। সব শুনে ঝিনুক আক্ষেপ করে বলে, মেয়েদের ব্যাথা খুব কম পুরুষ বুঝতে পারে। কথায় গল্পে ঝিনুক তার আগের রাতের ডিনার পার্টির গল্প করে।
সব শুনে রিতিকা ম্লান হেসে বলে, “সব মানুষ কি আর তোর মতন লাকি, এমন একটা ডাক্তার পেয়েছিস, নিজে ড্রিঙ্ক না করলেও তোর ড্রিঙ্ক করাতে ওর আপত্তি নেই।”
ওর কথা শুনে গর্বে ঝিনুকের বুক ফুলে যায়, ঠোঁটে দুষ্টুমি মাখানো হাসি দিয়ে বলে, “আমি লাকি কিনা জানিনা তবে আমারটা না ভীষণ শয়তান।” বলেই ঠোঁট চেপে হেসে ফেলে।
পার্লার ঢোকার আগে রিশুকে একটা মেসেজ করে দেয় ঝিনুক, পার্লার যাচ্ছি। উত্তর আসে সঙ্গে সঙ্গে, আজকে সত্যি মারবে নাকি? ঝিনুক উত্তর দেয়, একদম দুইজনে মিলে একসাথে মরব। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরো। রিশুর উত্তর আসে, ডেফিন্টলি হানি। হানি শব্দটা পড়ে ঝিনুকের মনময়ূরী নেচে ওঠে, একগাদা চুম্বনের ইমোজি পাঠিয়ে দেয়।
পার্লারে ঢুকে দুই বান্ধবী নিজেদের সাজিয়ে তুলতে ব্যাস্ত হয়ে পরে। চুলে নতুন করে রঙ করতে হবে, সেই সাথে কয়েক গোছা হাইলাইটিং করাতে হবে, আইব্রো ট্রিমিং, ওয়াক্সিং, ফেসিয়াল, থ্রেডিং পেডিকিওর ম্যানিকিওর ইত্যাদি সারতে সারতে প্রায় ঘন্টা চার পাঁচ লেগেই যাবে। প্রসাধনি করার সময়ে দুই বান্ধবী গল্পে মেতে ওঠে, পুরানো দিনের কলেজের গল্প। পার্থের কথা জিজ্ঞেস করাতে সংক্ষেপে জানিয়ে দেয় ছেলেটার উদ্দেশ্য বিশেষ ভালো ছিল না তাই শেষ মুহূর্তে বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে। রিশুর পরিচয় দেয় ঝিনুক, ওর মায়ের প্রিয় বান্ধবীর বড় ছেলে তাই সেই বিয়ের দিনেই ওদের বিয়ে হয়ে যায়।
ঝিনুক বেড়িয়ে যাওয়ার পর থেকে রিশুর চোখের সামনে শুধু মাত্র রূপসী তন্বী ললনার ছবি ভেসে বেড়ায়। ওর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বারেবারে যখন নিজের চুলে হাত দিচ্ছিল তখন পাগল হয়ে গেছিল রিশু। পিচ ফলের মতন লালচে কোমল গালের লালিমা দেখে ভীষণ ইচ্ছে করছিল একটা চুমু খেতে। বারে বারে ডান হাত দিয়ে ডান কানের ওপরে চুল সরিয়ে যেন ওকে কানের লতিতে চুমু খেতে আহবান করছিল ওর প্রেয়সী। ফর্সা মসৃণ মরালী গর্দানের দর্শন পেয়ে ভীষণ ইচ্ছে করছিল ওর মসৃণ ত্বকের ওপরে জিবের ডগা দিয়ে লালার দাগ ফেলে দেয়।
নিজের চেম্বারের দিকে পা বাড়াতেই ওর অনেক সহকর্মী ডাক্তার বন্ধুরা ওকে ঘিরে ধরে। ব্রিজেশ ইতিমধ্যে ওদের ডিপার্টমেন্টের মধ্যে কথা ছড়িয়ে দিয়েছে, ডক্টর অম্বরিশ সান্যালের স্ত্রী কোন বড় ম্যাগাজিনের সেন্টারফোল্ড মডেলের মতন দেখতে। সেই কথা নিয়ে দুপুরে লাঞ্চের সময় খুব হাসাহাসি হয় ওদের বন্ধুদের মধ্যে। লাঞ্চের পরে বেশ কয়েকবার মেসেজেই কথাবার্তা হয় ঝিনুকের সাথে। তাতেই জানতে পারে বাড়ির কাছের কোন পার্লারে গেছে সাজতে, সেটা শুনে মনে মনে হেসে ফেলে রিশু, রাতে হৃদরোগে না আক্রন্ত হয়।
লাঞ্চের পরে ব্রিজেশকে বলে হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে পরে, বিয়ের পরে কোন উপহার কিনে দেওয়া হয়নি ওর রূপসী প্রেমিকাকে। হসপিটালের কাছেই একটা বড় মার্কেট, সেখানে অনেকগুলো বড় বড় গয়নার দোকান। চোখ বুজে প্রেয়সীর ফর্সা মরালী গর্দান একবার বুকের ভেতরে এঁকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত একটা মুক্তোর লকেট দেওয়া সোনার হার কেনে। আংটি কেনার ইচ্ছে ছিল, ভেবেছিল মুখের মধ্যে আংটি রেখে প্রেয়সীর নরম চাঁপার কলি আঙ্গুল মুখের মধ্যে নিয়ে পড়িয়ে দেবে, কিন্তু আংটির সঠিক মাপ না জানাতে হার কেনে। অন্যদিকে ওর জন্য সাজতে ব্যাস্ত ওর মদালসা রূপসী স্ত্রী, যত দেখে তত যেন নতুন করেই ধরা দেয়, অবশ্য এই কয়দিনে ঠিক ভাবে দেখাই হয়নি ঝিনুকের দিকে। আগে সর্বদা শালোয়ার কামিজে দেখছে, বিয়ের দিন আর গতকাল ডিনারেই শাড়িতে দেখেছিল, কিন্তু যে পোশাকে ওর হসপিটালে দেখা দিয়েছে তাতে ভীষণ ভাবেই অবাক হয়ে গেছে। চোখ বুজলেই চোখের সামনে নীল ছেঁড়া জিন্স পরিহিত অসম্ভব সুন্দরী একজন নর্তকীকে দেখতে পায়। জিনসের প্যান্ট ঝিনুকের কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত ওতপ্রোত ভাবে লেপটে গিয়ে দুই মোটা কদলি কান্ডের মতন জঙ্ঘার আকার অবয়াব অতি সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলে, পায়ে থাই হাই বুট জোড়া ভীষণ ভাবেই ঝিনুকের সাজের সাথে মিলে গেছে। পিচ ফলের মতন নরম মিষ্টি লালচে গালের দৃশ্য মনে পড়তেই ভীষণ ভাবেই প্রেয়সীকে চুম্বনে চুম্বনে অস্থির করতে ইচ্ছে হয়।
হার কিনে হসপিটাল পৌঁছে নিজের চেম্বারে বসে ঝিনুককে ফোন করে রিশু, “কি করছ?”
অন্যপাশ থেকে প্রেয়সীর মিষ্টি সুরেলা কন্ঠস্বর ভেসে আসে, “এই তো, ওয়াক্সিং করাচ্ছি। তুমি লাঞ্চ করেছ?”
রিশু একটু হেসে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ অনেক আগে হয়ে গেছে।” ভীষণ ভাবেই দেখতে ইচ্ছে করছিল প্রেয়সীকে তাই ওকে বলে, “একটা সেলফি পাঠাও না প্লিজ?”
খিলখিল করে হেসে ফেলে ঝিনুক, গলা নামিয়ে ফিসফিস করে বলে, “ধ্যাত শয়তান, তোমার কোলেই তো ফিরে যাবো।”
“ধ্যাত শয়তান” বলে প্রেয়সীর খিলখিল হাসির কলতান রিশুর বুকের মধ্যে বিঁধে যায়, “তুমি না মহা দুষ্টু মেয়ে।”
মুচকি হাসি দিয়ে ঝিনুক উত্তর দেয়, “এতদিন পরে জানলে?”
হেসে ফেলে রিশু, “না না, তোমাকে দেখার আগেই জেনেছি।”
ক্ষনিকের জন্য মুখের ভাব বদলে যায় ঝিনুকের সঙ্গে সঙ্গে রিশুকে প্রশ্ন করে, “কি এমন জেনেছ শুনি?”
কথাটা ঠিক হয়নি বুঝতে পেরেই রিশু হেসে বলে, “তুমি না, সব কিছুতেই উল্টো মানে খুঁজতে যাও। আই ওয়াজ জাস্ট জোকিং।”
ফোনের মধ্যেই রিশুর উদ্দেশ্যে একটা চুমু ছুঁড়ে দিয়ে বলে ঝিনুক, “কখন বাড়ি ফিরবে?”
ওর কথা শুনে রিশু হেসে ফেলে, “তুমি এখন সাজতে ব্যাস্ত তারপর আবার রিতিকার সাথে শপিং করবে। আমি তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে কি করব? আমিও একটু কাজ সেরে তবেই বাড়ি ফিরব।”
ঝিনুক উত্তর দেয়, “না না আজকে আর শপিং করতে যাবো না। এই পার্লার থেকে সোজা বাড়িতেই ফিরব।”
মাথা নাড়ায় রিশু, “না না সেটা নয়। তোমার বান্ধবীর সাথে ঠিক ভাবে পরিচয় হল না, একদিন ডিনারে ইনভাইট কর ওকে।”
ঝিনুক মুচকি হাসি দিয়ে বলে, “সকালে বললে ওর ওপরে বিশ্বাস নেই আবার এখন বলছ ডিনারে ইনভাইট করতে, কি ব্যাপার ডক্টর, দুইদিনেই কি আমি পুরানো হয়ে গেলাম নাকি?”
প্রেয়সীর কথা শুনে হাসিতে ফেটে পরে রিশু, “তুমি না…”
ঝিনুক ও হেসে উত্তর দেয়, “খুব দুষ্টু তাই না…”
হাসি শুনে বুকের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে, প্রেয়সীকে হেসে উত্তর দেয় রিশু, “খেয়ে ফেলব কিন্তু।”
কথাটা শুনে হৃদয় ভীষণ ভাবেই চঞ্চল হয়ে ওঠে ঝিনুকের, ভীষণ একটা দুষ্টুমিতে পেয়ে বসে রূপসী ললনাকে, “কামড়ে না কেটে?”
রিশু ফিসফিস করে উত্তর দেয়, “একেবারে দুই হাতে চটকে।”
কথাটা শুনে ঝিনুকের সারা শরীরের সকল রোমকূপ একত্রে উন্মিলিত হয়ে ওঠে, “এই শয়তান, তোমার ওই ডিপ ভয়েস শুনলে আমার বুকের ভেতরে কিছু একটা হয়, চুপ কর প্লিজ।”
এইভাবে ফোনে কারুর সাথে কোনদিন কথা বলেনি, কিন্তু নিজের স্ত্রীর সাথেই এইভাবে পরকীয়া প্রেম করাতে ওর শরীরের রক্ত ভীষণ ভাবেই টগবগ করে ফুটতে শুরু করে দেয়, “আচ্ছা বাবা, তবে আজকে কিন্তু সত্যি বলছি…”
মিলনের ইচ্ছায় উন্মাদিনী প্রেমিকার হৃদয় ডাক ছেড়ে ওঠে, রিতিকার কান বাঁচিয়ে যথাসম্ভব গলা নামিয়ে বলে, “তোমার জন্যেই তো পার্লার এসেছি।”
বুকের বাঁ দিকে কিল মারে রিশু, “ইউ আর ইরেসিস্টেবেল, তোমার পার্লার না গেলেও চলত।”
ভালোবাসার মানুষের মুখে রূপের প্রশংসা শুনে বুক ভরে ওঠে ঝিনুকের, ওকে প্রশ্ন করে, “ধ্যাত তুমি ও না। আচ্ছা শোনও না, চুলে কি কালার করাব? ডার্ক ব্রাউন না রেডিস ব্রাউন?”
হেসে ফেলে রিশু, “যাঃ বাবা, তোমার চুল তুমি কি রঙ করাবে তুমি জানো।”
আদুরে কন্ঠে ঝিনুক ঝামটা দিয়ে ওঠে, “ধ্যাত, তুমি না, এই প্লিজ বলো না কি কালার করাবও?”
রিশু মুচকি হেসে উত্তর দেয়, “আচ্ছা তোমাকে যদি জিজ্ঞেস করি যে হুমেরাসে কম্পাউন্ড ফ্রাকচার হয়েছে…”
সঙ্গে সঙ্গে ঝিনুক ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “হ্যাঁ হ্যাঁ হয়েছে, কেন মরতে তোমাকে জিজ্ঞেস করতে গেছিলাম কে জানে।” গলা যথাসম্ভব নামিয়ে এনে ভীষণ লজ্জা মাখানো কন্ঠে রিশুকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা আরো একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল।”
রিশু ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি?”
ঝিনুকের গাল কান লাল হয়ে তপ্ত হয়ে ওঠে তাও লজ্জার মাথা খেয়ে শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করেই ফেলে, “পুরো ক্লিন না বাটারফ্লাই না স্ট্রিপ?”
কথাটার অর্থ কিছুই বোধগম্য হয় না রিশুর তাই আবার ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি এইগুলো?”
ঝিনুক ভীষণ লজ্জা পেয়ে উত্তর দেয়, “থাক কিছু না সরি।”
পুরো পাগলি মেয়ে, মাথা ঝাঁকিয়ে রিশু ওকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা এত যে সাজ সাজছ, টাকা কোথায় পেলে?”
মুচকি হেসে ঝিনুক উত্তর দেয়, “আছে আমার কাছে।”
রিশু ওকে প্রশ্ন করে, “আছে মানে? আমার কাছ থেকে টাকা নিতে দোষ?”
হেসে ফেলে ওর প্রেয়সী, “আচ্ছা দাও তাহলে, ছয় হাজারের মতন খরচ হবে দুইজন মিলিয়ে বারো।”
রিশু উত্তরে বলে, “আচ্ছা দিয়ে দেবো। তবে বেশি দেরি কর না। কিন্তু বারো হাজার কেন?”
গলা নামিয়ে ঝিনুক উত্তর দেয়, “রিতিকার একটু মুখ ফুলে গেছে, শপিং এর জন্য লিভ নিয়েছিল কিন্তু তোমার সাথে হসপিটালে দেখা করলাম সেখানে বেশ টাইম চলে গেল তারপরে বললাম যে পার্লার যাবো তাতে অনেক টাইম যাবে তাই ভাবলাম ওর পার্লারের খরচ দিয়ে দেই না হলে মুখ ফুলিয়ে থাকবে।”
হেসে ফেলে রিশু, “ওকে বুঝলাম, তাও যদি তোমার ইচ্ছে হয় তাহলে শপিং এ যেতে পারো।”
মাথা দোলায় ঝিনুক, “না না, এখান থেকে সোজা বাড়ি তারপরে তুমি আর আমি…”
সন্ধ্যের পরে বাড়িতে কি হবে সেটা ভেবেই রিশুর হৃদয়ে এক অদ্ভুত হিল্লোল দেখা দেয়, “তাড়াতাড়ি এসো তাহলে।”
ঝিনুক ফোনের মধ্যে থেকেই মিষ্টি ছোট্ট একটা চুমু ছুঁড়ে দেয় রিশুর দিকে, “মুহআআয়া… ওকে বেবি।”
চুম্বনের আওয়াজে ওর মস্তিকের সকল স্নায়ু উন্মাদ ঘোড়ার মতন ভীষণ ভাবেই লাফালাফি দাপাদাপি শুরু করে দেয়, “আমি হসপিটালে আছি ডারলিং, এমন করলে আমি মারা পড়ব।”
ঝিনুক ও কম যায়না, খিলখিল করে হেসে উত্তর দেয় দয়িতকে, “হু স্টারটেড বেবি?”
হেসে ফেলে রিশু তারপরে একটু থেমে ওকে বলে, “আচ্ছা, আমি মাকে ফোন করেছিলাম, আমি লন্ডন যাচ্ছি সেটা জানালাম। মাকে বললাম যদি পারে তো দিয়াকে সেই সময়ে হয়ত পাঠিয়ে দেবে এখানে।”
কথাটা শুনে ঝিনুক হেসে ফেলে, “সকালেই তোমার বেড়িয়ে যাওয়ার পরেই আমার সাথে ঝিলিক আর দিয়ার কথা হয়ে গেছে। তবে এখন মামনিকে ফোন করা হয়নি। ওরা কিন্তু এখানে আসার জন্য এক পায়ে খাড়া।”
মাথা নাড়িয়ে হেসে ফেলে রিশু, ওর মনের কথা গুলো মনে হয় ওর প্রেয়সী আগে থেকেই বুঝে যায়, “তাহলে টিকিট কেটে ফেলবো কি?”
একটু ভেবে ঝিনুক ওকে বলে, “তুমি যা ভালো বোঝ সেটাই কর। একটু তাড়াতাড়ি ফিরতে চেষ্টা করো। আচ্ছা শোন আমি এখন ফেসিয়াল করব এখন রাখছি, মুয়াআহহহহহ।” বলে ফোনের মধ্যে ছোট একটা চুমু খেয়ে ফোন রেখে দেয় ওর প্রেয়সী।
ওপিডি অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। ওয়ার্ডে রাউন্ড দেওয়া হয়ে গেছে, ইন্টার্ন ডাক্তারদের রোগীর ব্যাপারে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ক্যান্টিনে বসে কফি খাচ্ছিল রিশু। ঝিনুককে একবার ফোন অবশ্য করেছিল, ওর প্রসাধনি তখন শেষ হয়নি, কি কি নাম বলল সেই সব বাকি, আন্ডারআর্মস থ্রেডিং কি সব বলল যার একটারও অর্থ ওর বোধগম্য হয়নি। তাও ফোন হাতে নিয়ে নরাচড়া করতে করতে মনে মনে হেসে ফেলে। এরপর প্রেয়সী ধ্যাতানি দেবে, তর সইছে না নাকি? ঠিক তখন, মোবাইলে একটা অচেনা নাম্বারের ফোন আসে। সারাদিনে প্রচুর এমন অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে ওর কাছে, কখন কোন ক্রেডিট কার্ড, কখন কোন মেডিকেল রিপ্রেসেন্টটেটিভ ইত্যাদি।
ফোন উঠিয়ে চিরাচরিত ভাবেই ইংরেজিতে প্রশ্ন করে, “আপনি কে বলছেন?”
ওপাশ থেকে পরিষ্কার ইংরেজিতে ভেসে আসে এক মহিলার সুরেলা কন্ঠ, “হাউ আর ইউ ডুইং, ডক্টর সান্যাল?”
কন্ঠস্বর ভীষণ চেনা চেনা মনে হয় রিশুর, হটাত করেই শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে ওর, তাও সংশয় দুর করার জন্য প্রশ্ন করে, “হু আর ইউ?”
সেই কন্ঠস্বর একটু হেসে উত্তর দেয়, “ভুলে গেলে আমাকে? এবারে আমি কিন্তু আর তোমাকে ফোন করে ডিস্টার্ব করিনি। আমি জানি তুমি খুব বিজি, তাই তোমার ডিউটি শেষ হওয়ার অপেক্ষা করেছি।”
কিছুক্ষন চুপ করে চোখ বুজে চাপা সংশয় আয়ত্তে আনে রিশু, ঠান্ডা গলায় চন্দ্রিকাকে জিজ্ঞেস করে, “এতদিন পরে?”
ম্লান হাসে চন্দ্রিকা, “এমনি জাস্ট। পারকিঙ্গে তোমার বাইকের কাছেই আমি দাঁড়িয়ে আছি।”
কথাটা শুনে চোয়াল কঠিন হয়ে যায় রিশুর, কফি খেতে আর ইচ্ছে করল না ওর। এপ্রন, স্টেথো ল্যাপটপ ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে আরো একবার ঝিনুকের জন্য কেনা হারের বাক্সটা দেখে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ার আগে প্রশ্ন করে, “কিছু কাজ ছিল কি?”
চন্দ্রিকা ঠান্ডা গলায় উত্তর দেয়, “কাজ না থাকলে কি দেখা করা যায় না?”
বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মাথা দোলায় রিশু, “না ঠিক তা নয়, কিন্তু এতদিন পরে ফোন করলে তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
ভীষণ একটা অস্বস্তিবোধ নিয়েই পারকিঙ্গের দিকে পা বাড়ায়। ভুলতে চেয়েছিল, ভুলে গেছিল চন্দ্রিকাকে, বারে বারে চঞ্চলা হরিণীর চুম্বন মনে পরে যায়, কানের মধ্যে বেজে ওঠে, “মুয়াআহহহহ…” পারকিঙ্গে পৌঁছে চন্দ্রিকাকে দেখতে পেয়ে ধির পায়ে নিজের বাইকের দিকে এগিয়ে যায়। চন্দ্রিকার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে রিশু, ওর চোখে মুখে একটু হাসি একটু সংশয়। আগের থেকে একটু গোলগাল হয়ে গেছে, শেষ দেখা ছয় বছর আগে রিশুর এমএস পড়ার আগেই চন্দ্রিকা ওকে ছেড়ে চলে গেছিল। ওকে দেখতে পেয়ে ম্লান হাসি দিয়ে চন্দ্রিকা ওর দিকে এগিয়ে আসে।
মৃদু হাসি দিয়ে রিশু ওকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কেমন আছো?”
ম্লান হাসি নিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বড় বড় কাজল কালো চোখ মেলে ওর দিকে তাকিয়ে বলে, “চলছে কোন রকমে। তুমি তোমার কথা বল।”
উত্তর দেয় রিশু, “আমি বেশ ভালোই আছি।” বুক ভরে শ্বাস নিয়ে চন্দ্রিকার চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “তোমার হাজবেন্ড কেমন আছে?”
বুকের ওপরে দুই হাত ভাঁজ করে রিশুর দিকে এক পা এগিয়ে আসে চন্দ্রিকা, ওর দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে বেদনা ভরা কন্ঠে বলে, “আই এম সরি রিশু। তোমায় সত্যি ভুল বুঝেছিলাম, পরে অনেক ভেবেছি কিন্তু তোমার সামনে আর আসার সাহস হয়নি।” বুক ভরে শ্বাস নিয়ে একটু থেমে ওকে বলে, “বিজয়ের সাথে আই মিন আমার হাজবেন্ডের সাথে তিন মাস আগে সেপারেশান হয়ে গেছে। আমি দিল্লীতে ফিরে এসেছি।” রিশুর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ওর হাতের ওপরে হাত রেখে ধরা গলায় বলে, “আমি এম সরি রিশু। আমরা কি আর…” ঠিক তখুনি রিশুর ফোন বেজে ওঠে।
হাতের ওপরে চন্দ্রিকার কোমল হাতের ছোঁয়া পেতেই রিশুর চোয়াল কঠিন হয়ে ওঠে, চন্দ্রিকার শেষ বাক্য শুনে ক্ষনিকের জন্য মাথায় রক্ত চড়ে যায়। ঠিক তখুনি ওর পকেটে রাখা ফোনটা আবার বেজে উঠতেই রিশু নিজের হাত ছাড়িয়ে ফোন বের করে দেখে ঝিনুকের মিষ্টি মুখ ভেসে উঠেছে মোবাইল স্ক্রিনে।
ফোনের স্ক্রিন চন্দ্রিকাকে দেখিয়ে বলে, “আমার মিসেসের ফোন।”
তৎক্ষণাৎ চন্দ্রিকার দুই চোখ ছলকে ওঠে, কাঁপা কন্ঠে ওকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি বিয়ে করেছ?”
ওর প্রশ্নে ছোট্ট উত্তর দেয় রিশু, “হ্যাঁ।” তারপরে চন্দ্রিকার দিকে তর্জনী উঠিয়ে চুপ করতে অনুরোধ করে ফোন তুলে বলে, “কি ব্যাপার কোথায় আছো?”
অন্যপাশে প্রেয়সীর মদির কন্ঠ, “বেড়িয়েছ কি?”
চন্দ্রিকার চোখে চোখ রেখে ফোনে ঝিনুককে উত্তর দেয়, “এই জাস্ট বাইকে উঠব।” কথাটা শুনে চন্দ্রিকার ঠোঁট জোড়া মৃদু কেঁপে ওঠে।
অন্যপাশে উচ্ছল চঞ্চল ঝিনুক মধুর কন্ঠে ওকে প্রশ্ন করে, “এই শোন না, তুমি ফিস ফ্রাই খাবে নাকি ডিমের ডেভিল?”
অবাক হয়ে রিশু প্রশ্ন করে, “তোমার সাজ গোজ শেষ? তুমি এইসব কোথায় পেলে?”
হেসে ফেলে ওর প্রেয়সী, “হ্যাঁ আমার পার্লারের কাজ শেষ, আমি আর রিতিকা এখন মার্কেট ওয়ানে আছি। বেড়িয়ে যখন পড়েছ তখন তুমিও চলে এখানেই চলে এসো।”
চন্দ্রিকা রিশুর সামনে থেকে সরে দাঁড়ায়। রিশু বাইকের বসে উত্তর দেয়, “জো হুকুম, আমি এই আসছি।” বলে ফোন রেখে দেয়।
বাইকে উঠে কিক মেরে স্টার্ট করে চন্দ্রিকার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে বলে, “বিশ্বাস করে তখন তোমাকে অনেক কিছু বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি সেদিন আমার কোন কথায় কান দাওনি।” একটু থেমে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে চন্দ্রিকাকে বলে, “আজ ছয় বছর পরে তোমার সেপারেশানের পরে আমাকে মনে পড়েছে? আমি আর সেই রিশু নেই, মিসেস চন্দ্রিকা।” শেষের শব্দটা জোরেই বলে রিশু।
কথাটা শুনে চন্দ্রিকার বুক ভেঙ্গে যায় তাও বুকে জোর এনে ওকে বলে, “তুমিও তোমার অহং বোধ ধরে ছিলে। চাইলে তুমিও আমাকে একবার বুঝাতে আসতে পারতে। কিন্তু তুমি সেটা করনি ডক্টর অম্বরীশ। একবার আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখতে, যে অবস্থায় তুমি ছিলে…”
চন্দ্রিকার দিকে তর্জনী উঠিয়ে চুপ করিয়ে কঠিন চোয়াল নিয়ে গুরু গম্ভির কন্ঠে ওকে বলে রিশু, “শালিনী আমার বোন মিসেস চন্দ্রিকা, একটা ভাই আর বোনের সম্পর্ক তুমি এত নিচ চোখে দেখতে পারো সেটা ধারনার বাইরে। তুমি চোখ খুলেও সেটা বিশ্বাস করতে পারনি। জানো, আমার স্ত্রী, ঝিনুক, বিয়ের আগে পর্যন্ত আমাদের কথাও হয়নি, দেখা তো অনেক দুরের কথা। কিন্তু সে চোখ বন্ধ করে আমাকে বিশ্বাস করে আমার সাথে পা বাড়িয়েছে।” বাইকের এক্সিলারেটরে মোচড় দিয়ে একটু জোরে আওয়াজ করে ওকে বলে, “আস্থা ভরসা বিশ্বাস। অনেক সময়ে আমরা যা দেখি সেটা সত্য হয় না চন্দ্রিকা। দিনের বেলা আমাদের চারপাশে সূর্যের রশ্মি থাকে, আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে পারবে সেই সূর্যের রশ্মি? না দেখাতে পারবে না, কিন্তু আছে আমাদের চারপাশে। আমি মন থেকে বলছি, আমি চাই তুমি ভালো থাকো, সুখে থাকো, তোমার জীবনে কেউ আসুক। তবে আজকের পরে আর কোনদিন আমাকে কল কর না।”
চোখ জোড়া ভীষণ ভাবেই জ্বালা করে চন্দ্রিকার, শেষ মুহূর্তে হাত বাড়িয়ে কিছু একটা পেতে গিয়েও যেন পেলোনা। চন্দ্রিকার উত্তরের অপেক্ষা না করে বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পরে রিশু। ওর রূপসী মদালসা প্রেমিকা ঝিনুক অনেকদিন পরে নিজের খোলস থেকে বেড়িয়েছে, সেই মিষ্টি মধুর হাসি আর বাড়ানো দুই হাতের আহবানে ধরা দিতে ছুটে যায়। পেছনে ফাঁকা বাইক পারকিঙ্গের জায়গায় শুন্য হৃদয় নিয়ে চন্দ্রিকা রাতের অন্ধকারে একাকী দাঁড়িয়ে।