গত ১৫/১৬ বছরে কত কি পাল্টে গেছে। রাস্তা-ঘাট, যানবাহন, পরিবেশ তার সাথে যেটা সবচেয়ে বেশি বদলে গেছে সেটা মানুষ। মানুষ আর এখন মানুষ নেই কেমন যন্ত্রের মত হয়ে গেছে। বাস ছুটে চলছে, তখন ৫ টাকা ভাড়া ছিল সেটা এখন ৩০ শে ঠেকেছে। সুযোগের সদ্ব্যবহারে সেটা প্রায়ই ৫০/৬০ টাকাও হয়ে যায়। তাতে কি আসা যায়, মানুষের হাতে এখন টাকা এসেছে, সময় কমেছে। যে যার মত করে ছুটছে। জীবনের তাগিদে, জীবিকার চাপে।
পাশে বসা মেয়েটির ডাকে হঠাৎ চিন্তায় ছেদ পড়েছে নিলয়ের। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি লম্বা স্বাস্থ্যবান, মাথায় পাতলা চুল, চোখের নিচে হালকা কালো দাগ আর রোদে পোড়ে গায়ের রঙ শ্যামলা হয়ে যাওয়া নিলয়।
-দাদা বাচ্চাটাকে একটু ধরবেন। ওর ডায়পার টা চেঞ্জ করতাম।
সম্মতিসূচক মাথা দুলিয়ে বাচ্চাটাকে কোলে তোলে নেয়। বাচ্চাদের প্রতি অসম্ভব দূর্বলতা কাজ করে ওর। বাচ্চারা ঈশ্বরের অংশ, কিন্তু বড় হতে থাকে আর আসুরিক শক্তির প্রভাবে পড়ে যায়।
choti new
বাচ্চাটার মুখের হাসিটা ওর মুখেও চিলতে হাসির কারণ হয়ে যায়। ইশ কত্ত মায়াবী মুখটা। গোল গোল চোখ, সূচালো নাক, দাঁত না উঠা লালচে মাড়ি বের করা হাসি। দেবতার হাসি, আবার দেবীও হতে পারে। বাচ্চাটার মুখটা দেখে আরও একজনের মুখাবয়ব টা মনে পড়ে যায়, হাসিটার দুরন্ত মিল। একইরকম মায়াভরা সেই মুখ, যেন মুক্ত ঝরে পড়ে। ডায়পার চেঞ্জ শেষে বাচ্চাটি আবার তার মায়ের কোলে ফিরে গেছে।
জানালার দিকে মাথাটা হালকা বের করে দিয়ে আবার পুরনো স্মৃতি পুকুরে পড়তে চলেছে সে।
নিলয় অনার্স পাশ করে একটা প্রাইভেট বেভারেজ কোম্পানির সেলস এ কাজ করছে। অনেকদিন হলো মা- বাবা পরপারে চলে গেছেন। গ্রামের বাড়িটা ফাঁকাই থাকে। এখানে সে নিজেও থাকে না। শহরের ৪ তলা বাড়ির ছাদঘরে ওর ঠিকানা৷ এই খরুচে শহরে সস্তায় থাকতে গেলে এ ছাড়া আর উপায় কি। সে সহ দুটো মানুষের খরচ ওকেই দেখতে হয়। দুর্মূল্যের বাজারে এখন টেকা দায়। এই সেলসের টাকায় টানাটানি হয়ে যায়। ওর একার হলে দিব্যি চলে যেত। কিন্তু ঘরে আরেকটা প্রাণ যে আছে। choti new
নিজের খরচের চেয়ে ওই প্রাণটার পিছনেই ব্যয় সবচেয়ে বেশি। না সে ব্যয়ে ওর বিন্দুমাত্র আফসোস নেই, বরং এটা করতে পেরে ওর একটু হলেও শান্তি আসে মনে। ঐ দেবতাতুল্য মানুষটা ওর জন্য যা করেছে সেটাই আজকাল নিজ রক্তের কজন করে।
-নীইইইইইলু
চিৎকার শোনেই নিজের মাথাটা গাড়ির ভিতরে নিয়ে আসে, আর তখনি সাই করে আরেকটা গাড়ি ওদের বাসের একদম পাশ কেটে চলে যায়।
ভাগ্যিস মাথা টা ভিতরে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু পরক্ষণেই চিন্তা করে ডাকটা দিলো কে। আশেপাশে চেয়ে দেখলো না কেউ তো নেই যে ওকে এই নামে ডাকে। নীলু নামে তো আমাকে ঐ একজনই ডাকতো। কিন্তু কই সে তো এখানে নেই, থাকার কথাও না। কপালে ভাঁচ পরার চিহ্ন স্পষ্ট। বারবার ও আমাকে ঠিকই বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দেয়। কিন্তু আমি, আমি কি করেছি… choti new
বিল্ডিং এর সামনে পৌছে সিড়ি ধরে উঠতে থাকে নিলয়। ছাদে পৌঁছে ঘরের সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়। দড়জায় তালাটা এখনো ঝুলছে। এর মানে ও এখনো আসে নি। মোবাইলের ঘড়িতে সময়টা আরেকবার দেখে নিলো।
না এতক্ষণে তো চলে আসার কথা। আজ তো শনিবার, বিকেলের টিউশন শেষে তো এ টাইমে বাড়িতে থাকার কথা ওর। দেরি করছে কেন?? একটা ফোন করবো?? ফোন করলে যদি আবার রেগে যায়।
মেয়ের সাথে স্যারের বড্ড অমিল এখানেই। স্যার ছিল ঠান্ডা শান্ত আর মিষ্ট স্বভাবের। কোনদিন রাগতে দেখিনি৷ কিন্তু এমন বাবার এমন মেয়ে হয় কি করে। তথা গত দুবছর ধরে ওর এখানেই আছে। বছর দুয়েক আগে স্যার যখন স্ট্রোক করে মারা গেলেন তার পর থেকেই। স্যারের ইচ্ছে ছিল মেয়েকে ডাক্তারি পড়ানোর। যাবার আগে শেষ ইচ্ছে দায়িত্ব নিলয়ের কাঁধেই বর্তালো। নিলয় যেবার ক্লাস নাইনে তখনি পরপর কয়েক মাসের মাঝেই বাবা-মা দুজনেই পরপারের পাড়ি দিলো। choti new
সে তখন অনাথ, সামনের সবকিছু অন্ধকার। সেই সময় স্যার এর আলোর দিশারী হয়ে এসেছিল। ওর ভরনপোষণ, স্কুলের খরচ যাবতীয় সব স্যার তার অল্প আয়ের মাঝেই ম্যানেজ করে গেছেন। স্কুল পাশ করে কলেজে ভর্তি সব স্যারের হাতে। কলেজ উঠে টিউশনি শুরু করলো স্যারের কষ্ট একটু লাঘব করার জন্য। শিক্ষক বরাবরই মহান। কিন্তু এই শিক্ষকতার কদর কম এদেশে। সম্মানীর নামের বেতন টুকু দিয়ে কীভাবে সংসার চালায় সেটা নিজের চোখ দিয়ে দেখা নিলয়ের। শিক্ষকরা জাতির ভবিষ্যৎ গড়েন কিন্তু তাদের ভবিষ্যৎ কি সেটাই দেশের সিস্টেমে আজও অবহেলার আরেক উদাহরন।
যাক সে কথা। স্যারের মৃত্যুর সময় ও তখন সদ্য দশম শ্রেণির ছাত্রী। স্যারের কথা মত নিলয় ওকে ওর কাছে নিয়ে আসে। কিন্তু রাখবে কোথায়?? ভেবেছিল আলাদা মেসে তুলে দিবে কিন্তু ওর সল্প আয়ের মাঝে দুটো আলাদা খরচ চালানো খুব কঠিন হয়ে পড়বে। বাধ্য হয়েই ছাদের দুটো ছোট্ট রুমের ঠিকানায় ঠায় হয় তথার। সেও অনেক কান্ড কীর্তির পর। পৃথিবী এখন অনেক এগিয়ে গেছে। তৃতীয় বিশ্বে লিভ ইন এখন বৈধ্য বিষয়। পাশের দেশ ভারতের শহর গুলোতে এখন এটা নরমাল বিষয়৷ choti new
কিন্তু এদেশে এটা ট্যাবু৷ ভীষন নোংরা ভাবেই দেখা হয়। সামাজিক অবনতির কারণ ভাবা হয়। তারপরও কলেজে উঠার পর একবার তথাকে হোস্টেলে পাঠিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ওর রগচটা স্বভাবের কারণে বেশিদিন মিলেমিশে থাকতে পারে নাই। তাই সেবার বাধ্য হয়েই নিলয়ের ওখানে ওর পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করতে হয়। বিল্ডিং ও গুঞ্জন শুরু। চলতি পথে কিংবা মোড়ের দোকানে নানান কটু কথা শোনেতে হয়। নিজে এসব গায়ে মাখতো না ও। কিন্তু তথার এসব কথা সহ্য করতে হয় এটা ভেবে গা শিউরে উঠে ওর।
তখন ও সিদ্ধান্ত নেয়ে তথাকে একটা সম্মানের সম্পর্ক দেবার। তবে সেটাও ওদের দুজনের একটা ডিলের মাধ্যমে। নিলয় বা তথা কেউ কখনো একে অন্যের উপর অধিকার আদায়ের চেষ্টা করবে না আর মেডিকেলে চান্স পাবার পর ওরা আলাদা হয়ে যাবে এবং ওদের বিয়ের কথাটা যেন কোনভাবেই তথার কলেজে বা ফ্রেন্ডদের কাছে প্রকাশ না পায়। দুজনের সম্মতিতে নাম মাত্র বিয়ে করে নেয় ওরা।
সিড়িতে পায়ের শব্দ, কেউ উপরে আসছে। এগিয়ে গিয়ে দেখার চেষ্টা করে নিলয়। সিড়ির অন্ধকার টা কেটে যেতেই মুখটা নজরে পড়ে নিলয়ে, সাথে সাথে একটা দীর্ঘশ্বাস তবে সেটা নিশ্চিন্ত হবার… choti new
ওর মুখ দেখে কেউ বলতে পারবে না যে তথা এত রগচটা মেয়ে। কথায়
কথায় রেগে যাওয়াটা ওর হিমোগ্লোবিনের সাথে মিশে গেছে। কিন্তু সেটার খুব কম প্রভাবই নিলয়ের উপর পরে। ওদের মাঝে দরকার ব্যতীত তেমন কোন কথাই হয় না৷ এক সকালে নাস্তার টেবিলে আর রাতে খাবার সময়। তাছাড়া দুজন দুটি ভিন্ন জগতের বাসিন্দা।
আর আট-দশটা বাঙালীর মতই উচ্চতা তথার। ঐ কত হবে ৫ ফুট কিংবা ১/২ ইঞ্চি বেশি। গায়ের রঙে দুধে আলতা ফর্সা সেটা বলার উপায় নেই, তবে এ ফর্সা মানান সই। চোখ দুটি বড় বড়, হালকা লম্বা নাক। তবে রেগে গেলে যখন নাকের পাটা দুটো ফুলে উঠে তখন বেশ লাগে দেখতে। সুন্দর ঠোঁটে হালকা গোলাপি আভার সাখে এমন শেইপ যে আলদা করে লিপ লাইনার না ব্যবহার করলেও চলে। লম্বা ঘন চুল কোমড় অব্দি। আজকাল অনেকেই আবার চুল লম্বা রাখতে শুরু করেছে, হালের ফ্যাশন বলে কথা। choti new
স্বাস্থ্য মাঝারী গড়নের। রোগাও না আবার মোটাও না। বুক আর নিতম্বের কম্বিনেশন চোখ জোড়ানো। মাঝারী আকারের স্তন দুটো ভারী নয়, কোমড়ের কাছটা সরু হয়ে নেমে গেছে।
সিড়ি দিয়ে আসার সময় যে হালকা হাসি ভাব টা ছিল ঘরের সামনে পৌঁছে নিলয় কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সেটাও নিভে গেল। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো তালা এখনো ঝুলছে। নিচু সুরে বললো
-আজ একটা নোট নিতে দেরি হয়ে গেল। রাস্তায় জ্যামও ছিল। তা এতক্ষণ এখানে না দাড়িয়ে থেকে দরজা টা কি খোলা যেত না? চাবি তো দুজনের কাছেই আছে। নাকি এটা আমাকেই করতে হবে।
শেষের দিকে গলার স্বরটা হঠাৎ উঁচু হয়ে গেল। কোন তর্ক চায় না নিলয়। কোন কথা না বলে এগিয়ে যায় দরজার তালা খুলতে। তালা খোলার পর যে যার রুমে চলে যায়। choti new
ছোট্ট দুটি রুম, আসলে দুটো মিলে একটা রুম হলে মানান সই হতো। ছাদঘরে এর চেয়ে বড় আশা করা বোকামি। দুবছর ধরে ওরা এখানেই আছে। সকালের নাস্তাটা নিলয় রান্না করে। দুপুরে রান্নার জন্য এক খালা আসে, সে দুবেলার রান্না একসাথেই তৈরি করে রেখে যায়। রাতে নিলয় ভাতটা রান্না করে নেয় আর খাবার গুলোও গরম করে নেয়। নিলয় চায় না তথার পড়াশোনায় কোন ব্যাঘাত ঘটুক, আর তথা নিজ থেকেও কখনো রান্না ঘরের দিকে পা মাড়ায় নি। তাই ঐ কাজটা নিলয় নিজ থেকেই করে নেয়।
ফ্রেশ হয়ে চুলায় চা বসায় নিলয়। চোখ বন্ধ করে কিছু একটা চিন্তা করছে ও। সেই বাচ্চার মুখটা ভেসে উঠে সামনে। ওদের হাসিটা নির্ভেজাল, পবিত্র। এর পিছনে কোন স্বার্থ বা অভিসন্ধি লুকিয়ে নেই। বাচ্চাটার মুখের সাথে আরেকজনের মুখটা খুব করে মিলে যাচ্ছে। সেই হাসিটাও ছিল নির্ভেজাল, পবিত্র। আর ভাবতে চায় না ও। চোখ খুলে দেখে চা ফুটে উপচে পড়তে চলেছিল এখন। দু’কাপ চা নিয়ে ও তথার রুমে দিকে এগিয়ে যায়। দরজায় নক করতে ভিতর থেকে আওয়াজ আসে ভেতরে যাবার। এক কাপ চা তথা হাতে দিয়ে দাড়িয়ে থাকে নিলয়। choti new
-পড়াশোনা কেমন চলছে?
-ভাল।
-এ মাসের কলেজ ফি, টিউশন ফি গুলো ক্লিয়ার হয়েছে।
-হুম।
-স্যারের সঞ্চয় পত্রের মাসিক ইন্টারেস্ট টা তুলেছিলে।
-গতকালই তুলে নিয়েছিলাম। আমার কিছু কেনাকাটা ছিল।
-তোমার হাতে কি টাকা আছে? যদি প্রয়োজন হয় আমাকে জানাবে।
-না না। যেটা আছে চলবে। তুমি যেটা করছো সেটাই অনেক। আমার আর লাগবে না। বাকিটা ম্যানেজ করে নেব। choti new
-এরপরও,(নিলয় কিছু বলার আগেই)
-(বেজার মুখশ্রী ভঙ্গিতে) ঠিক আছে ঠিক আছে সে না হয় দরকার হলে চেয়ে নেব। আর কিছু বলার আছে??
নিলয় বুঝতে পারে ওর উপস্থিতি তথা পছন্দ করছে না। ও ঘর থেকে বেরিয়ে খোলা ছাদের দিকে এগিয়ে যায়। অন্ধকার আকাশটার দিকে তাকিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দেয়। তথাকে ওর কাছে নিয়ে আসার পর থেকে ওর স্কুল, কলেজের ফি, টিউশন ফি, কোচিং ফি এসব নিলয় নিজের বেতনের টাকা থেকে খরচ করে।
স্যারের মৃত্যুর পর পেনশনের ৫ লাখ টাকায় ৫ বছরের সঞ্চয় পত্র কিনে রাখে। সেটা থেকে মাসে মাসে সাড়ে চার হাজারের কিছু বেশি টাকা আসে। সেই টাকা নিজের খরচে ব্যবহার করে তথা। বেশিরভাগটাই খরচ হয় জামাকাপড়ের পেছনে। সময়ের সাথে তাল মেলাতে নিত্যনতুন ড্রেস কিনে চলে। আর এছাড়াও মেয়েদের আরও কত খরচ। ওসব নিয়ে মাথা ঘামায় না নিলয়। choti new
ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। শরীর জুড়িয়ে যায় নিলয়ের, শান্তির আবেশে চোখ বন্ধ হয় আসে।
কানে বেজে উঠে সেই ডাক টা আবার
-নীইইইইইইলু।