হে ঠাকুর গত ছয় মাস,মাথায় বয়ে নিয়ে চলা সিঁদুরের ঋণ তুমি এই ভাবে শোধ করলে? মুখের দিকে চাইতে পারছি না আমি। মনে হচ্ছে এবারে পড়ে যাব আমি। মাথা ঘুরছে আমার। কেউ একজন আমাকে ধরল। ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে আমার। মনে হচ্ছে শেষ করে ফেলি এই দুনিয়া কে। ধ্বংস করে দি সব কিছু। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে তছনছ করে দি এই পৃথিবী। সব ঠিক চলছে আর আমার ভালবাসার এই অবস্থা? রাগে ফুঁসতে লাগলাম আমি।
bangla coti
মন শক্ত করলাম। সেই ছোট থেকেই তো মন শক্ত করে আছি। কত বিপদ এই শক্ত মনের ভরসায় আমি কাটিয়েছি। আরো একবার সই। এখনো বেঁচে আছে ও। শেষ চেষ্টা করতেই হবে আমাকে। নিজের জীবন দিয়ে হলেও ওকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এ কী রকম প্রেম দিলে তুমি আমার জীবনে ঠাকুর? এমন প্রেম যেন কেউ না করে। যেন কেউ না করে।বড়দির চোখে শুধু আকুতি আর চরম ভয় ছাড়া কিছুই দেখছি না আমি। ছোড়দির চোখেও মারাত্মক ভয় শুধু। ভয় কি আমি পাই নি? অর্জুনের কাছে গিয়ে দাঁড়াতে পারছি না আমি ভয়ে। জানিনা কি করব আমি।
পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম আমি। মন টা শক্ত করে আছি। বাইরে কাঁদছি না। মনে মনে আকুল হয়ে কাঁদছি। দুর্গা মায়ের মুখ টা মনে পড়ছে। হে মা ভরসা দিও। জীবনে কিচ্ছু চাইনি। আজ চাইছি। আমাকে শক্তি দাও। ওকে ভালো করে তোলার মতন ক্ষমতা দাও।
ব্যস আমার ঠিকানা হয়ে গেল ওই ঘর টা। প্রথম দশ দিন ও কিছু চিনতেও পারে নি। দশ দিন পড়ে মনে হয় বুঝতে পারল আমাকে। হাসতেও যত টুকু শক্তি লাগে সেই টকুও ছিল না ওর কাছে। কিন্তু ঠোটের কোনায় হাসির আভাস আমি বুঝতে পারলাম। বুঝলাম আমাকে ও ক্ষমা করেছে। bangla coti
দশ দিন ওর কোন কিছুই আমি কাউকে করতে দিই নি। নিজেই করেছি সব কিছু। আমাকে চেনার পর থেকে দেখলাম, স্যালাইনের প্রয়োজন বাড়তে শুরু করল।যে প্রয়োজন টা একটা সময়ে কমতে শুরু করেছিল। বডি সামান্য স্যালাইন ও ইনটেক করতে পারছিল না।
আমি নিঃশব্দে ওর কাজ করছি, ওকে খাইয়ে দেওয়া , পাশে থাকা, স্যালাইন বদলে দেওয়া। আর ও ঘুমোলে উল্ট দিকে ফিরলেই কাঁদছি। ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে আমার। কিন্তু সামলে নিচ্ছি ।পরের দিন কুড়ি শুধু স্যালাইনেই চলল ওর। ডাক্তার সকালে বিকালে আসছে।
আমি ছোড়দি কে বললাম, ডাক্তারের এর কাছে সকালে বিকালে ওর প্রোগ্রেস বা ডিক্লিনেশন দুটোর ই রিপোর্ট চাই। আমি আমার সমস্ত ডেবিট কার্ড দিদির হাতে তুলে দিলাম। বড়দি কিছু বলল না শুধু কাঁদল।
ওর বাঁচার ইচ্ছে টাই ছিল না। যেমন ভাবে শেষ হয়ে গেছিল আমার। সেটা ফিরে আসলেই আমাদের অর্ধেক কাজ হয়ে যাবে। বাকি টা ওকে সেবা শুশ্রষা, সেটা আমার দায়িত্ব। কাউকে দরকার নেই আমার। আমার জিনিস আমি বুঝে নেব। ছোট বেলার সেই মারাত্মক জেদ টা ফিরে এলো আমার মধ্যে। bangla coti
দিন পনের পরে ডাক্তার বলল, অনেক বেটার। হার্ট বিট স্বাভাবিক এর কাছাকাছি আসছে। তবে এখন ওকে খুব খুব হালকা তরল খাবার দেওয়া যেতে পারে।
আমি সকালে উঠে সব সবজি ভাল করে বেছে ধুয়ে, মিক্সি তে গ্রাইন্ড করে, ভীষণ হালকা সুপ বানাতে শুরু করলাম। প্রতি দু ঘণ্টায় দিতে থাকলাম, ডাক্তারের কথা মতন।
রাতে ওর বেডের পাশেই কোনরকমে শুয়ে পড়তাম। ঘুমতাম না পাছে ওর কিছু দরকার হয়। শুধু কি তাই? চেক করতাম ও বেঁচে আছে তো!
সকালে স্নানের পরে, মোটা করে সিঁদুর টা লাগাতে ভুলতাম না। ওইটাই এখন জোর আমার। বয় কাট চুলে, অমন মোটা সিঁদুর, সবাই দেখতে পেত, কিন্তু কেউ কিছু বলার সাহস পেত না।
আরো দিন পনের পরে, ও প্রথম নর্মাল ইউরিন করল। নর্মাল পায়খানা করল। আমি সব পরিষ্কার করে ডাক্তার কে ফোন করতেই, ডাক্তার এসে দেখে গেল। বলল আর ভয় নেই তেমন। কিন্তু ওর সব অর্গান প্রায় কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছিল। সেগুলো কে যেন ধীরে ধীরে আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়। বেশী ফুড বেশি জল একদম না। এই পরিস্থিতি তে দ্রুত রিকভারি ভাল না। খুব ধীরে ধীরে রিকভারি করাতে হবে আমাদের। bangla coti
ধীরে ধীরে, অর্জুনের শ্রী ফিরতে শুরু করল। স্যালাইনের জিনিস পত্র আমি বাইরে বের করিয়ে দিলাম। কথা বলতে পারত না কিন্তু আমাকে দেখলেই হাসত। আর চোখ দিয়ে জল গড়াত ওর। আমি হাইজিনিক টিস্যু দিয়ে পরম যত্নে মুছিয়ে দিলাম ওর চোখের জল। আমি পাশে থাকলে হাত টা নিয়ে ঘুমাত। আর বড়দি পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদত।
একদিন বড়দি কে বললাম
– কাঁদিস না, আর তো ভয় নেই। চিন্তা নেই তোর , তোর আগের ছেলেকে আমি তোর কাছে ফিরিয়ে তবে শান্তি পাব।
বড়দি, কথা বলার অবস্থায় ছিল না। শুধু কান্না আর কান্না। ছোড়দি, সকাল বিকাল আসত। বিকালে এসে থাকত রাত অব্দি। বাড়িতে অনেক লোক জমে থাকত। ওদের রান্না বান্না থাকত। আমাদের পরিবারের ই না। অর্জুনের বাবার দিকের অনেক আত্মীয় স্বজন ও আসত অনেক। রোজ ই কেই না কেউ দেখতে আসত। আমি একমাত্র ভিতরে থাকতাম। কাউকে ভিতরে আমি আলাউ করতাম না। bangla coti
একদিন আমার বাবা মা এল। আমি কথাও বলিনি। ওরা বাইরে থেকে দেখে চলে গেল। আমার কাজ ই ছিল রোজ সকালে অর্জুনের জন্য সুপ তৈরি করা। তারপরে স্নান করে মন্দির যাওয়া। মায়ের কাছে মনের অনেক কথা বলে ফিরে এসে অর্জুন ঘুম থেকে উঠলে দাঁত মাজিয়ে দেওয়া। কিছু টা সুপ খাওয়ানো। তারপরে ওকে তুলে ভাল করে গা স্পঞ্জ করিয়ে দেওয়া। বেড শিট বদলে দেওয়া। সব একার হাতে করতাম আমি। কাউকে ভরসা করতে পারতাম না আমি। ভরসা করে তো দেখলাম একবার।
মাঝে ওর অফিস থেকে দেখতে এসেছিল। ও জয়েন করার সাত দিনের মধ্যেই ওর এই ব্যাপার টা শুরু হয়েছিল। ওকে দেখে রিপোর্ট পাঠানোর দরকার ছিল ওদের। আমিও কথা বললাম। বললাম ওর নর্ম্যাল লাইফ এ ফিরতে আরো মাস ছয়েক তো লাগবেই।
একদিন ডাক্তার বলল, বাচ্চা মুরগীর স্টু খাওয়ালে খুব ভালো হতো। বড় মুরগীর মাংসে, ফাইবার বড় হয়। হজম করতে পারবে না। আমি কাউকে দিয়ে ভরসা পেতাম না। নিজেই যেতাম বাজার। সকালে বাজার থেকে বাচ্চা মুরগী কাটিয়ে আনতাম। রোজ। ফ্রিজে রাখা জিনিস ওকে খাওয়াতাম না। ওকে স্টু বানিয়ে দিতাম। bangla coti
এই মুরগীর স্টু বানানোর আগে একটা ঘটনা ঘটেছিল। ও কথা বলছিল না বলে আমরা ডাক্তার কে বার বার বলছিলাম। একদিন দুপুরে আমি, ওকে সব্জির গ্রাইন্ডেড সুপ খাওয়াচ্ছি। মুখ টা প্যাঁচার মতন করে খাচ্ছে। দুম করে বলে উঠল – ধুর রোজ রোজ এটা খাওয়া যায় নাকি? আমি আর বড়দি ছিলাম ওখানে। আমি খাওয়াচ্ছিলাম আর বড়দি ওকে তুলে ধরেছিল। আমরা তো আনন্দে খানিক কেঁদেই নিলাম। সন্ধ্যে বেলাতেই ডাক্তার আসায় ডাক্তার কে ওর কথা টা বলতেই, বাচ্চা মুরগীর স্টু এর কথা বলেছিল।
বুঝলাম, দুষ্টু টা ইচ্ছে করেই কথা বলে না। রাতে ওকে শুইয়ে দিয়ে বললাম,
– ইচ্ছে করে কথা না বলে আমাকে কস্ট দেওয়া না?
আমার দিকে তাকিয়ে রইল। চোখে আবার জল ওর। আমি ছুটে এলাম। মুছিয়ে দিলাম টিস্যু দিয়ে বললাম… bangla coti
– চোখে জল কেন?
ও কিছু বলল না, সরু হয়ে যাওয়া হাত টা তুলে বলল
– আজকে কোন মাস?
– জুন চলছে, কেন?
– মানে ছয় মাস থেকে দুমাস বাদ দিলে থাকে চার মাস।
– হ্যাঁ তাতে কি।
– একজন আমার সাথে ছয় মাস কথা বলে নি। আমিও এখন চার মাস বলব না।
আমি তাকিয়ে রইলাম। মনে মনে কত অভিমান জমা করে রেখে দিয়েছে। ইচ্ছে হলো ওকে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু এখন ও বেশ দুর্বল। জড়িয়ে ধরা ঠিক হবে না। শুধু ওর মাথার উপরে চুমু খেয়ে বললাম… bangla coti
– কথা দিলাম, কোন দিন ও ছেড়ে যাব না আমি।
– আমিও কথা দিলাম।
– কি?
– মরব না।
– মনে থাকে যেন।
– হুম, এবারে ঘুমাই?
ওকে তো বলে দিলাম হ্যাঁ ঘুমো। কিন্তু মনে মধ্যে ভয় থাকত। রাতে বার বার উঠে দেখতাম ওর বুকের ধুকপুকনি চলছে কিনা। গা হাত পা গরম আছে কিনা। আমার শরীর টাও ভেঙ্গে পরছিল আসতে আসতে। তবে প্রথম দিকের তুলনায়, এই ঘন ঘন চেকিং এর ব্যাপার টা আমার অনেক কমে গেছিল। bangla coti
ছোড়দি এসে লক্ষ লক্ষ কথা বলে অর্জুনের সাথে। অর্জুন চুপ থাকে। ও কোন কথা বলে না। আর হাত পায়ে হালকা হালকা করে হাত বুলিয়ে দেয়। আমি তখন একটু রিলিফ পাই। ঘুম দরকার আমার ঘুম। দুপুরে বড়দি বসে থাকত ওর কাছে। আমি তখন নিচে ঘুমিয়ে নিতাম একটু। কিম্বা ছোড়দি সন্ধ্যে বেলায় থাকার সময়ে ঘুমিয়ে নিতাম। সারা রাত জাগার এনার্জি তো রাখতে হবে। বিপদ এখনো কাটে নি।
দিন পনের কেটে গেছে আরো। এখন ও বিছানাতেই শুয়ে থাকে কিন্তু মাঝে মাঝে উঠে বসছে। এখন ওকে খাবার দাবার উঠিয়েই খাওয়াই আমি। ও উঠে বসে আর আমি চামচ এ করে খাইয়ে দি। তবে ওই সুপ ই। এর বেশি না। এখন ভালই কথা বলছে। পুটপুট করে। শুধু ওর মা আর আমার ছোড়দির সাথে কথা বলে না। ওরা এলেই বড্ড গুটিয়ে যায় ও।
ভাই এলো একদিন। সকালে এল। রবিবার ছিল। ভাই এর ট্রান্সফার হয়ে গেছিল তখন কলকাতায়। আমি ভাই কে বললাম বসতে ওর কাছে। ওর মা মানে বড়দি রান্না ঘরে ছিল। স্নান করার ছিল আমার। স্নান করে ঢুকব ঘরে, শুনলাম ভাই বলছে
– কি রে একটা খাম্বা কিনেছি তো মামা ভাগ্নে তে খাব বলে। ঠিক করে বল, শালা ভগীনপোত এ খাবি না মামা ভাগ্নে তে খাবি? bangla coti
ইশ কি লজ্জা। মানে এরা সবাই জেনে গেছে ব্যাপার টা। মনের মধ্যে মারাত্মক ভয় ঢুকল আমার আবার। অর্জুন কি বলল আমার কানে ঢুকল না। কিন্তু আলোচনা টা বন্ধ করে দিতে চাইছিলাম আমি। আমি ঢুকতেই দুজনে চুপ করে গেল। তাই যতই অর্জুনের রিকভারি হচ্ছে, আমার মনেও ভয় ঢুকছে। সেই সব ব্যাপার গুলো আলোচনা হবে এবারে যেগুল আমি এড়িয়ে যেতে চাই। কি দরকার রে বাবা। ছেড়ে দাও না আমাদের কে আমাদের মতন করে। সেটা কেউ দেবে না। শুধু শুধু ওকে এই ছয় মাস ধরে কস্ট দিল সবাই মিলে। আর আমি কাউকে ওকে কস্ট দিতে দেব না।
আমি বুঝে গেছি, এবারে আমাকেই মুখ খুলতে হবে। আমাকেই স্ট্যান্ড নিতে হবে একটা। মোক্ষম স্ট্যান্ড। তাতে যা হবার হোক। কেউ নিজের মুখে বলবে না এখানে, যা তোরা নিজেদের মতন থাক। কেউ বলবে না।
আরো দিন কুড়ি পড়ে, অর্জুন নিজে নিজেই বাথরুম যেতে শুরু করে ছিল। ডাক্তার কে দেখালাম, দীর্ঘদিন শুয়ে শুয়ে ওর স্কিন এর সমস্যা হচ্ছিল। পিঠে অনেক ঘা এর মতন হয়ে গেছিল। অনেক ওষুধ পালা দিল। ওকে স্পঞ্জ করিয়ে দেবার পরে আমি নিয়ম করে ওষুধ গুলো লাগাতে লাগলাম। আগের ছেলে টা কে ফেরাতেই হবে। কি জেল্লা ছিল গায়ের। সব টা পাই টু পাই ফিরিয়ে আনব আমি। bangla coti
ওকে প্রথমে দেখে যে হাল হয়েছিল, সেখান থেকে এই দুই মাস যাবার পরে, নিজের কনফিডেন্স অনেকটাই ফেরত পেয়েছি আমি। মনে মনেই কথা বলি, ওকে ফিরিয়ে আনতেই হবে। একেবারে আগের মতন। কোন এদিক ওদিক চলবে না। যে ছেলেকে আমি রেখে গেছিলাম, ঠিক তেমন করেই চাই।
আরো মাস খানেক যাবার পরে পরিস্থিতি অনেক টাই স্বাভাবিক হল। অর্জুন এখন সলিড খাবার ও খেতে পারছে। কম দি ওকে কিন্তু বারংবার দি খেতে দি। বড়দির বাড়িতে খুশীর আবহাওয়া। আমি জীবনে বড়দির বাড়ি আসিনি আগে। প্রথম বার এলাম তাও ওই অবস্থায়। অর্জুনের সুস্থতার খবর পেয়ে, অনেকেই দেখা করতে আসছিল। আমি দেখা করতাম না ওদের সাথে। ওরা অর্জুনের ঘরে আসলে আমি থাকতাম না সেখানে। অনেক প্রশ্ন উঠবে।
এতোদিনে তো অনেকেই জেনে গেছে আমি কে আর ওর কি হই। কিন্তু অনেকেই যেটা বুঝতে পারছে না সেটা হলো, এমন কি হলো, যে আমি আসার পরে অর্জুনের বাঁচার ইচ্ছে টা আবার ফিরে এল। আমি জানি এই সব কথা উঠবে। তাই এড়িয়ে চলি। আর আমার মাথার সিঁদুর টা তো বিশাল প্রশ্ন চিহ্ন সবার সামনেই। এক মাত্র অর্জুন ছাড়া কেউ সেটা জানে না। bangla coti
সেদিনে দুপুরে অনেক লোক ছিল ঘরে। যতই অর্জুন ভালো হয়ে উঠছে, ভিড় বাড়ছে। আর ধীরে ধীরে আমি ব্রাত্য হয়ে পড়ছি। রবিবার ছিল। ছোড়দি, বড়দি বর জামাইবাবু, ভাই, ভাই এর বউ সবাই ছিল ঘরে। আমি ফল কেটে দিচ্ছিলাম অর্জুন কে। সবাই গল্প করছে মনে আনন্দে। অর্জুন কে নিয়ে নয়, নানান ব্যাপারে। আর ওদের চোখ গুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার উপরে। বুঝলাম অনেক প্রশ্ন ওদের মনে। উত্তর তো আমাকেই দিতে হবে। আমার মনেও কম প্রশ্ন নেই। উত্তর না পেলে এদের কাউকেই আমি ছাড়ব না ।
সমস্যা হলো অর্জুনের সামনে এই কথা বলা যাবে না। আর অন্য ঘরে বসে যে কথা বলব সম্ভব হচ্ছে না। ও পনের মিনিট আমাকে দেখতে না পেলে ঘন্টা বাজাচ্ছে বাচ্চাদের মতন। বড়দি গেলেও শুনছে না। আর কেউ গেলে শুনছে না। আমি গেলেই ঘন্টা বাজানো বন্ধ করছে। কিছু না, একবার দেখে একটু হাসে। আমিও একটু হাসি, বাস দরকার শেষ। এখন এমন না যে আমাকেই খাইয়ে দিতে হয়। যে কেউ খাইয়ে দিলে খেয়ে নেয়, কিন্তু প্রতি পনের মিনিটে আমাকে দেখতে পাওয়া চাই। bangla coti
ধাবকা হয়ে গেছে ওর। হয়ত আবার চলে যাব। ও এখন অনেকটা সুস্থ। তাই ভয় টাও বেশী হয়ে দাঁড়িয়েছে। বড়দির কাছে আমি, সাপের ছুঁচো গেলার মতন অবস্থায় আছি। গিলতেও পারছে না, আর ছেলের জন্য ফেলতেও পারছে না। বললাম না নিজেকে ব্রাত্য লাগছে। মনে হচ্চে সবাই চাইছিল ছেলেটা সুস্থ হয়ে যাক। এখন অনেক টা সুস্থ তাই আমার উপস্থিতি টা সবাই কে লজ্জা আর বিশাল প্রশ্ন চিহ্নের সামনে দাড় করিয়েছে।
কিন্তু আমি ভেঙ্গে পড়িনি এতে। আমি আর ওকে ছেড়ে যাব না ব্যস। সবাই মিলে বললেও না। এবারে আমার জীবনের হাল আমি ধরব। সমাজ যা বলে বলুক। লোকে হাসুক। আমাকে রাক্ষসী বলুক। দানবী বলুক, নষ্টা বলুক। কিচ্ছু যায় আসে না আর আমার। এতোই রেগে আছি ভিতরে ভিতরে ছোড়দির সাথেও কোন কথা বলিনি। শুধু অর্জুনের দিকে তাকিয়ে আমার রাগ আমি চেপে রেখে দিয়েছি। ও কোনদিন ও দেখেনি আমার চন্ডাল রাগ।
ইমিউন সিস্টেম তা অর্জুনের এখনো পোক্ত হয় নি, তাই প্রায়শই জ্বর আসত ওর। ডাক্তার বলে দিয়েছিল, এটা থাকবে, ধীরে ধীরে কমতে থাকবে এই ব্যাপার টা। যত ইমিউন সিস্টেম পোক্ত হবে ততই এই ব্যাপার টা ও স্বাভাবিক হবে। বলতে নেই জ্বর আসার ব্যাপার টা এখন অনেক কম। তিন চার দিন বাদে গা টা দেখি ছ্যাঁক ছ্যাঁক করে। খাইয়ে দাইয়ে ওষুধ দিয়ে দি। ঘুমিয়ে উঠলে ফ্রেশ হয়ে যায় ও। এখন আর ভয় পাই না আমি। bangla coti
এই রকম ই এক জ্বরের রাতের ঘটনা। ছোড়দি ছিল সেদিন বড়দির বাড়িতে। ললিত দা আসে নি কিন্তু সুবর্ন এসেছিল। ছিল আমার মা। বাড়ি একটু থমথমে। আমি বুঝছিলাম আজকে হবে আলোচনা। কিন্তু আমার ভাল লাগছিল না। আমার মাথার সিঁদুর নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। অর্জুন এর সামনে উঠলে ভালো হত। নাহ থাক, এই অবস্থায় ওর এতো উত্তেজনা ভাল না। আমার কথা বিশ্বাস করলে করবে না করলে তাতেও কিছু যায় আসে না আমার আর। কিন্তু আমি ঠিক করে নিয়েছি, অর্জুন কে ছেড়ে আমি আর চলে যাব না। আর যা সিদ্ধান্ত নেব আমার ব্যাপারে সেটা অর্জুনের সামনে অর্জুনের মতে।
অর্জুন ঘুমোচ্ছে। আমরা বসে আছি, যে বিছানা পেতে আমি নীচে ঘুমোতাম সেই বিছানায়। বড় জামাইবাবু দাঁড়িয়ে আছে। মা বড়দি আর ছোড়দি বসে আছে আমি আছি দাঁড়িয়ে হেলান দিয়ে অর্জুনের পাশেই। এই আড়াই মাসে আমার চুল কিছু বেড়েছে। বার বার চশমার উপরে পড়ছিল চুল গুলো তাই একটা হেয়ার ব্যান্ড পরে নিয়েছি আমি। সবার চোখে একটা ভয়। সাথে ঘেন্না মিশ্রিত রাগ। চোখের ভাষা ভুল আমি পড়ি না। আমি জানি, এই ঘরে সব থেকে বেশি আহত করা হবে আমাকে। bangla coti
খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আমার মন টা কে রক্তাক্ত করা হবে। বলার সুযোগ তো দূর, আমার নীরবতা কে নিজের মতন করে উত্তর বানিয়ে সামনে রাখা হবে। পারছি না আর আমি, আমার হাত পা কাঁপছে। কত ঝড় সইব আর? এদের কি মায়া দয়া নেই? গত আড়াই তিন মাস আমি ঠিক করে ঘুমাই নি অব্দি। কি খেলাম সেটাও কেউ দেখেনি। আর আজকে আমাকে নিয়ে বসেছে এই সম্পর্কের মীমাংসা করতে। মরতে তো পারব না। কাজেই, অর্জুনের অলক্ষ্যেই আমি রক্তাক্ত হব সারা জীবন। কেউ না কেউ, প্রতিদিন, জিহ্বার তলোয়ার আমার দিকে চালাবে। রক্তাক্ত হব আমি। সারা জীবন। নাহ আজকে কথা বলব আমি। বলবই।