আনিতা- নাহলে কি সুনিধি?
সুনিধি- নাহলে তো আকাশ সবসময় দুখী হয়ে থাকে। ওর চেহারায় ওর মনের ব্যাথা প্রকাশ পায়।
(আনিতা সুনিধির কথা শুনে একটু চুপ হয়ে যায়। তারপর ভাবে সুনিধি তো আকাশের বন্ধুর মতো
তাই ওকে কিছু জিজ্ঞাসা করবে যেটা আকাশকে কোনোদিন জিজ্ঞাসা করেনি।)
আনিতা- সুনিধি, তুমি কি আকাশ আর প্রীতির ব্যাপারে জানো কিছু?
সুনিধি- হ্যাঁ দিদি, ওরা তো অনেকদিন আগে গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড ছিল, তাই না?
আনিতা- হ্যা, কিন্তু এখন ওদের ভিতর কি হয়েছে?
সুনিধি- বেশি কিছু জানি না তবে আকাশ বলেছিলো যে সে অন্য কারো প্রেমে পড়েছে, কিন্তু মেয়েটা তার প্রপোজাল গ্রহণ করেনি।
(আনিতা সুনিধির দিকে তাকিয়ে খুব মনোযোগের সাথে তার কথা শুনতে থাকে।)
fantasy choti
সুনিধি- বেচারা আকাশ তাকে অনেক ভালোবাসে। তাকে না পেয়ে হাসতেও ভুলে গেছে, ও শুধু দিনরাত যেন সেই মেয়েটাকেই চায়।
সুনিধির কথা শুনে আনিতার খুব কষ্ট হয়, আকাশের কষ্টের কথা শুনে তার চোখ ভিজে ওঠে। সুনিধির কথা শুনে আনিতা আরও জানার আগ্রহ নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করে,
আনিতা- তুমি জানলে কি করে?
সুনিধি- ওর চোখে দেখেই বোঝা যায় দিদি যে ও মেয়েটিকে কতটা ভালোবাসে। সুরাজও বলছিল যে আকাশ এখন অন্য কোন মেয়ের সাথে কথাও বলে না ঠিক ভাবে। সেদিন আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন এমন করছে, সেদিন ও সত্যিটা বলে যে ও কাওকে ভালোবাসে কিন্তু মেয়েটা ওকে ভালোবাসেনা।
আনিতা নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে, “ছেলে ছেলে বলে আমি লাফাই কিন্তু গত দুইবছর আমার ছেলেটা কতটাই না শূন্যতা নিয়ে ছিলো আমি সেটা বুঝতেও পারিনি?”
সুনিধি- কি হয়েছে দিদি, তোমার চোখে জল কেন?
আনিতা অনুভব করে চোখ দিয়ে জল বের হচ্ছে। তবে এখন কারণ তো আর বলা যায়না যে ছেলে তার মায়ের প্রেমে পাগল। তাই কথা ঘুরিয়ে বলে,
অনিতা- কিছু না, চোখে ময়লা গেছে।
সুনিধি- ওহ, বাই দ্য ওয়ে, আজ আকাশকে তোমার সাথে খুশি দেখে আমিও খুব খুশি হয়েছি জানো? ও তোমাকে কতটাই না ভালোবাসে, তুমি চলে যাওয়ার পর থেকে তার দুনিয়ায় যেন বদলে গিয়েছে। কলকাতা থেকে আসার পর থেকে ওকে সবসময় খুশি লাগছে। আকাশ বলেছিলো যে ও যাকে ভালোবাসে সে কলকাতার।
এই কথা শুনে আনিতার দম বন্ধ হয়ে যায় যায়। “সুনিধি আবার কিছু বুঝে যায়নি তো! না না কিভাবে বুঝবে! মা-ছেলের এই চিন্তা কেও করতেই পারেনা।” আনিতা মনে মনে বলে)
সুনিধি- জানো দিদি, আকাশ যাকে ভালোবাসে সেটা যদি আমি হতাম তবে কবেই হ্যা বলে দিতাম। এতো ভালো কেও কখনো কাওকে বাসতেই পারেনা দিদি। এমন ভালোবাসা কে মিস করতে চায় বলো তো দিদি। আমিতো এমন ভালোবাসার খোঁজ করেছি আজীবন। অন্যদিকে আমার স্বামী আমাকে একেবারেই ভালবাসেন না।
আনিতা সুনিধির কথা বলে প্রায় ১২ঃ৩০ পর্যন্ত এরপর দুজনেই সুনিধির স্কুটিতে করে আকাশের কলেজের দিকে যায়।
অনিতা আর সুনিধি গেটের বাইরে আকাশ আর সুরাজের জন্য অপেক্ষা করে। দুজনেই একে অপরের সাথে গল্প করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আকাশ আর সুরাজ বাইরে বের হয়ে আসেম)
পরিক্ষা শেষ করে বাইরে বের হয়েই মাকে খুজতে থাকি। খেয়াল করি মা আর সুনিধি মাসি একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। সুনিধি মাসি আমাদের দেখে হাত নাড়ে, আমরা দুজন তাদের কাছে যাই।
সুনিধি- তোদের দুজনের পরীক্ষা কেমন হলো?
সুরাজ- দারুন।
আমি- খুব ভালো।
আমরা ৪ জন কিছুক্ষণের জন্য একসাথে কথা বলি। সুনিধি মাসি আমাদের লাঞ্চের জন্য আমন্ত্রণ জানায় কিন্তু যেহেতু মায়ের কাজ ছিল, আমরা আমন্ত্রণটি নিতে পারিনা আর আগামীকাল কালকের কথা বলি।
মা- কাল অবশ্যই একসাথে লাঞ্চ করবো সুনিধি।
সুনিধি- প্রমিস করো দিদি।
মা- আচ্ছা প্রমিস।
আমি আর মা ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা আমাদের গন্তব্যে যেতে থাকি। পথেই আমরা আমাদের খাবার খেয়ে নিই। রেস্টুরেন্টে বসে,
মা- আকাশ আমার পুরোনো অফিসে কিছু কাজ আছে, আমার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে হবে যেটা কোম্পানির নামে রয়ে গেছে।
আমি- হ্যাঁ তাহলে যাও। (ভান করে)
মা- তুইও যাবি আমার সাথে।
আমি একটু খুশি হলাম।
আমি- ঠিক আছে চলো মা।
মা- তোর কোনো সমস্যা আছে?
আমি- না মা আমার সমস্যা কেন হবে।
আমি জানতাম যে ওই বুড়ো টাক আংকেলও সেখানে থাকবে। হয়তো মা ওই লোকের ভয়েই আমাকে যেতে বলছে। মায়ের এই ভরসা আমি নষ্ট করতে পারিনা। তাই মায়ের অফিসে গেলাম। সেখানে ওই আংকেলের কোনো অস্তিত্বও দেখিনি। মা ওই অফিসের একটা মাহিলার সাথে বসে বসে কাজ করছিলো আর আমি সোফায় বসে এটা ওটা দেখতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর ওই বুড়ো আংকেল অফিসে এলো, আসতেই মাকে দেখতে লাগলো। আমি এটা দেখে তার সামনে গিয়ে দাড়ালাম, এটা দেখে লোকটা মাথা নত করে বলল,
আংকেল- বাবা, তুমি আর তোমার মা এখানে কিভাবে?
আমি- গতবারের মারের কথা মনে আছে?
আংকেল- কি বলছো বাবা? (ভয় পেয়ে)
আমি- আর যদি আমাকে ন্যাকামো করে বাবা বলিস তাহলে তোর খবর আছে। আর সবাইকে এটাও বলে দেবো যে তুই আমার মায়ের দিকে নোংরা চোখে তাকাস আর তার শ্লীলতাহানি করেছিস। আমি তোর নামে মানহানির কেস করবো, এই বিষয়ে মা আমাকে পুরোপুরি সমর্থন করবে।
আংকেল- বুঝেছি আমি।
আমি- তুই যদি অপমানিত না হতে চাস তাহলে মায়ের কাছে ক্ষমা চাইবি এখনই।
(আনিতা আকাশকে সেই লোকটার সাথে কথা বলতে দেখে ভয় পেয়ে যায় যে আকাশ যেন তার রাগ লোকটার উপর না ঝাড়ে। সে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার কাজ শেষ করে আকাশের কাছে যায়।)
মা- আকাশ।
আমি- আরে মা, তোমার কাজ শেষ? (দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
মা- হ্যাঁ সোনা চল।
আমি- চলো মা।
( আনিতা লোকটার দিকে না তাকিয়েই আকাশের হাত ধরে অফিসের বাইরে বের হয়ে আসে। লোকটাও ওদের পিছু পিছু অফিসের বাইরে চলে আসে আর তাদেরকে ডাক দেয়।)
আংকেল – আনিতা!!!
মা থেমে যায় আর লোকটা এগিয়ে আসে।
আংকেল- আমি দুঃখিত আনিতা, আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, আমাকে মাফ করে দাও।
(এটা শুনে আনিতার চোখ জলে ভেসে ওঠে। ও শুধু “ঠিক আছে” বলে)
মা- চল আকাশ।
(আনিতা তার দিকে না তাকিয়ে আকাশের হাত ধরে এগোতে থাকে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। সে জানে যে এসবের পিছনে আকাশের হাত আছে। তাইতো একটু আগে চোখে সুখের জল এসে গেছিলো।)
মা- আকাশ, তোর আর ওই লোকটার মধ্যে কি চলছিল?
আমি- কিছু না আমার প্রিয় মা, সেদিন তাকে মারার জন্য দুঃখিত বললাম। আর তাকে বোঝালাম যে সে যেটা করছিলো সেটা ভুল, তাই সে তার ভুল বুঝতে পেরেছিলো। তখন সে আমার কাছেও ক্ষমা চেয়েছিলো। আর এখন তোমার কাছেও চাইলো।
(এ সব শুনে আনিতার একটু অদ্ভুত লাগলেও সে খুশি হল। “আমার ছেলে কত বড় হয়ে গেছে আর বুদ্ধিমানও হয়ে গেছে। আগের সেই উগ্রতা আর নেই। চরম ঘৃণিত মানুষকেও না মেরে বরং তাকে তার ভুলের কথা বুঝিয়ে দেয়৷ মনটা ভরে উঠলো আজ। আমার সোনা আকাশ।” আনিতা মনে মনে বলে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে তার হাতটা একটু শক্ত করে ধরে।)
মা- আকাশ!
আমি- হ্যা মা।
মা- তুই অনেক বুদ্ধিমান হয়ে গেছিস সোনা।
আমি- ধন্যবাদ মা।
(আকাশ আর আনিতা হোটেলে ফিরে আসে। সেখানে দুজনেই মন খুলে কথা বলে, আনিতা আকাশকে তার মনের কথা বলতে পারছিলো না তবে আকাশ বলে যাচ্ছিলো।)
হঠাৎ আমার মায়ের শাড়ির কথা মনে পড়লো । ভাবলাম এখনই মাকে শাড়িটা দিলে ভালো হবে। আমি গিয়ে শাড়ির প্যাকেটটা নিয়ে মায়ের কাছে গেলাম।
আমি-মা।
মা- হ্যা সোনা বল।
আমি- এটা তোমার জন্য।
আমি শাড়িটা বের করে মায়ের হাতে দিলাম। মা হঠাৎ চুপ হয়ে শাড়ির দিকে তাকাতে লাগলো।
আমি- মা কি হয়েছে, শাড়িটা তোমার ভালো লাগেনি?
মা- ভালো না লাগার কিছু নেই, শাড়িটা অনেক সুন্দর তার উপর এটা তোর দেওয়া উপহার, কিন্তু…….
আমি-কিন্তু কি মা?
মা- কিন্তু এমন রং তো আমি পরিনা।
আমি- কেন মা।
মা- তুই তো সবই জানিস, আমি এমন রঙিন শাড়ি পরলে লোকে কি বলবে। আমার শাড়িগুলো দেখেছিস? রঙিন হলেও কোনো নকশা নেই, আর এই শাড়িটাই নকশা ভর্তি।
মা- কে কি বলল তাতে কি আসে যায় মা? তাছাড়া আমরা এখন বাড়িতেও নেই। এখানে কেউ তোমাকে কিছু বলবে না। পৃথিবী বদলে গেছে মা, কে কি বলবে এই চিন্তা ছেড়ে নিজেকে নিয়ে চিন্তা করো।
মা- কিন্তু আকাশ….
আমি- কোনো কিন্তু নেই। এটা আমি পছন্দ করে কিনেছি তোমার জন্য। তোমাকে এতে চমৎকার দেখাবে। আমার দিকে তাকাও মা।
এই বলে আমি মায়ের থুতনিতে হাত দিয়ে তার মাথা তুললাম।
আমি- আমার জন্য মা, শুধু আমার জন্য এই শাড়িটা পরবে মা।
মা- ঠিক আছে কিন্তু আজকে না। কালকে পরবো।
আমি- কথা দাও মা।
মা (একটু ইতস্তত করে) – ঠিক আছে কথা দিলাম।
আমি মায়ের গালে একটা চুমু দিলাম। তারপর গল্প করলাম সন্ধ্যা পর্যন্ত। আমি মায়ের নরম থাইয়ে আমার মাথা রেখে শুয়েছিলাম আর মা তার হাত দিয়ে আমার চুল ম্যাসাজ করে দিচ্ছিলো। আমি যখন মায়ের থাইয়ে মাথা দিয়ে শুয়ে ছিলাম তখনকার অনুভূতি প্রকাশ করে শেষ করতে পারবোনা। আমার মাথা থেকে মাত্র কয়েক ইঞ্চি দুরেই আমার জন্মস্থান বিদ্যমান।
যেখানে থেকে আমি বের হয়েছি, ওটা যেন আমার কাছে স্বর্গের থেকে কম কিছু না। আমি আজীবন ওই স্বর্গের পুজো করতে চাই। মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকার সময় মায়ের গা থেকে মিষ্টি একটা গন্ধ বের হচ্ছিলো, এটাকে সাদামাটা ভাষায় মাতৃঘ্রাণ বলে। যেটা আমার নাকের ভিতর দিয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছে যাচ্ছিলো।
সন্ধ্যার পর আমরা ঘুরতে বের হলাম।
(আকাশ আর আনিতা দুজনেই দিল্লির একটা সুন্দর জায়গায় বেড়াতে গেলো। আনিতা আকাশের হাত ধরে ছিল আর আকাশও আনিতার হাত ধরে ছিলো। কেও ভরসা দিতে চায়, কেও ভরসা পেতে চায়।
আনিতা আকাশের সঙ্গ পুরোপুরি উপভোগ করতে থাকে, তার সুনিধির কথা মনে পড়ে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে “আকাশ আমাকে কতটা ভালোবাসে, আমি যদি ওর মা না হতাম তাহলে ওর সাথে সারাজীবন পার করে দিতাম।
সত্যিই নিয়তি আজ আমাকে বেধে দিয়েছে। আমি চাইলেও আকাশকে প্রেম দিতে পারবোনা।”
হাটার সময় আনিতা আকাশের কাঁধে মাথা রাখে। এটা আকাশের জন্য খুবই খুশির ব্যাপার ছিলো। আকাশ সাপোর্ট দেওয়ার জন্য আনিতার অন্য কাঁধের উপর তার হাত রাখে আর একহাত আনিতার হাতের মধ্যে রাখে৷ এভাবেই তারা বেশকিছুক্ষন ঘুরতে থাকে। যে কেও তাদেরকে দেখলে মা ছেলে বলবেনা। বলবে কোনো কপোত-কপোতী তাদের সুন্দর ভালোবাসা প্রকাশ করছে।
আনিতা মনে মনে অনেক খুশি ছিলো যে আকাশের সাথে একান্ত সময় পার করতে পারছে। ওদিকে আকাশও খুশি ছিল যে সে অনিতার সাথে একা সময় পার করছে। আকাশ এটাই চাচ্ছিলো বহুদিন ধরে যে আনিতা এমন একান্ত সময়েই তার ভালোবাসা ফিল করতে পারবে। ফলাফল ঠিক তাইই হচ্ছিলো প্রায়, আনিতা আকাশের ভালবাসাকে পুরোপুরি জানতো তবে এখন বুঝেও গেছে। সে আকাশের ভালোবাসাকে ফিল করতে পারে। যেটা আগে পারতোনা।
সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আকাশকে বুঝিয়ে বলবে যে সে যা চায় সেটা ঠিক না। কিন্তু সুনিধির কাছ থেকে আকাশের সমস্ত কথা শুনে আনিতা যেন এই সব ভুলে গেলো। ও বুঝে যায় যে আকাশকে বোঝাতে পারবে না। কেউ যদি তার মাকে প্রেমিকার মত ভালোবাসে, তাহলে সমাজ তাকে কি বলবে, এই নিয়ে আনিতা বেশ ভয়ে ছিলো। সমাজ যে এসব মেনে নেবেনা।
এসব ভাবনার মানেই হলো আনিতার মনে আকাশ তার জায়গা করে নিয়েছে অল্প হলেও, যেটা আনিতা নিজেও এখনো বুঝতে পারছেনা। আকাশকে মিস করা, তার সাথে কথা না বলতে পেরে ছটফট করা, এগুলো যেন একজন প্রেমিকার চাহিদা। নিজের অজান্তেই আনিতা আকাশের প্রেমিকা হয়ে গেছে, যেটার অনুধাবন আনিতা এখনো করতেই পারেনি।)
সন্ধ্যা ৭টায় মা আর আমি কুতুব মিনারের কাছে বসে ছিলাম। মা আমার কাঁধে মাথা রেখে কুতুব মিনারের আলোর খেলা দেখছিলো।
আমি- গার্লফ্রেন্ড!!
মা- হ্যা আকাশ?
আমি- কি সুন্দর দৃশ্য তাই না?
মা- হ্যাঁ আকাশ, অনেক সুন্দর।
আমি- তোমার সাথে থাকলে আমার মুহূর্তগুলো আরও সুন্দর লাগে।
মা- তুই আমার প্রশংসা করার কোনো সুযোগই ছাড়িস না।
আমি- সত্যি বলছি গার্লফ্রেন্ড, কুতুব মিনারের এই আলোর খেলা আমার কাছে তোমার থেকে বেশি সুন্দর না।
মা- যাহ বদমায়েশ। (মা হাসি দিয়ে আমার কাঁধে তার মাথা দিয়ে হালকা গুতো মারে)
আমি- মা একটা কথা বলবো?
মা- হ্যাঁ বল।
আমি-তুমি হাসলে তোমাকে আরও সুন্দর লাগে।
মা- তাই?
আমি- হ্যাঁ মা তাই। তুমি এভাবেই হাসিখুশি থাকবে।
মা- ঠিক আছে জনাব।
আমি মায়ের অন্য কাঁধে হাত রাখলাম
আমি-তুমি চাইলে তোমাকে আমি সারাজীবন সুখে রাখবো।
(এই বলে আকাশ চুপ হয়ে যায়, আনিতা মাথা তুলে মায়াবী চোখে আকাশের দিকে তাকায়। সেও কিছু বলে না, আকাশ সামনে টাওয়ারের দিকে তাকিয়ে ছিল। আনিতা আবার আকাশের কাঁধে মাথা রেখে সামনের দিকে তাকিয়ে কুতুব মিনার দেখতে থাকে । আনিতা জানে এবং বোঝে যে আকাশ ওকে অনেক সুখে রাখবে। কিন্তু ওই যে নিয়তিতে বাধা!
কিছুক্ষণ সেখানে বসে থাকার পর আকাশ আর আনিতা হোটেলে যাওয়ার প্লান করে। যাওয়ার পথে তারা একটা রেস্টুরেন্টে খেতে যায়। আনিতা মাথা নিচু করে খাবার খাচ্ছে আর আকাশ আনিতার পাতলা ঠোঁট নাড়ানো দেখছে। হঠাৎ একটা ভাত আনিতার ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা দেখে আকাশ সেটা আঙুল দিয়ে মুছে দেয়। আনিতা অবাক হয়ে এই ভালোবাসা দেখে। স্নিগ্ধতায় যেন চারপাশ ভরে ওঠে।)
আমি- মা।
মা- হ্যাঁ সোনা বল।
আমি-আমি কি ভালো বয়ফ্রেন্ড তোমার?
মা- হ্যাঁ আকাশ, তুই খুব ভালো বয়ফ্রেন্ড।
আমি- ধন্যবাদ মা, তুমিও কিন্তু কম না।
মা- তাই?
আমি- হ্যাঁ মা। তোমার সব গুণ আছে।
মা- যেমন, কয়েকটা উদাহরণ শুনি!
আমি- তুমি কঠোর পরিশ্রমী, সুন্দর, প্রেমময়, যত্নশীল মহিলা, খুব ভাল মা, তুমি খুব ভাল রান্না করতে পারো। আরও অনেক গুণ আছে মা, যা কেবল এক ধরণের মহিলার মধ্যেই থাকতে পারে।
মা- কি ধরনের মহিলা?
আমি- একজন প্রফেক্ট মহিলা যার মধ্যে বউ হওয়ার সমস্ত গুণ আছে।
(এটা শুনে আনিতা লজ্জায় লাল হয়ে যায় আর মুচকি হাসে)
মা- তাই?
আমি- হ্যাঁ। এইজন্যই তো তোমার কাছে এতো এতো বিয়ের প্রস্তাব এসেছে আর প্রত্যাখ্যান সবাইকে করেছো, আমাকেও।(মন খারাপ করে।)
(এ কথা শুনে আনিতা চুপ হয়ে যায়)
মা- ফালতু কথা বাদ দে নয়তো কিন্তু মার দেবো।
আমি- এমনিতেই তো আমাকে মারতেই আছে মা।
( আগেই এই টাইপ কমেন্ট শুনতে আনিতার মোটেই ভালো লাগতোনা, কিন্তু এখন আকাশের এমন কমেন্ট আনিতা পছন্দ করতে শুরু করেছে। আনিতা মনে মনে বলল- “আকাশের কাছে সে সব গুন আছে যার কারণে ও একজন ভালো বিএফ হতে পারবে। আকাশের মা না থাকলে আমি আকাশের প্রস্তাব সাথে সাথেই মেনে নিতাম।” আনিতা এসব ভাবতে খাওয়া শেষ করে।)
দুজনেই খাওয়া শেষ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এলাম। গলির রাস্তা হওয়ার কারণে অটো পাওয়া যায় না, তাই দুজনেই হাটতে থাকি। মা আমার হাত ধরে হাঁটছে। পাশ দিয়ে দু-একজন লোক যাচ্ছিল। তারা মাকে আমার হাত ধরে হাঁটতে দেখে। কিন্তু মা বা আমি এসবে পাত্তা দিইনা। হাত ধরে এগিয়ে যেতে থাকি।
মেইন রোডে যাওয়ার জন্য হাটতে লাগলাম। হঠাৎ কিছুটা দূরে লস্যির দোকান দেখতে পেলাম।
আমি-মা চলো লস্যি খাই।
মা- না আমার পেট ভরে গেছে।
আমি- প্লিজ মা একবার।
মা- ঠিক আছে ঠিক আছে, চল।
আমি- একটু ভাং মিশিয়ে খেলে ভালো লাগবে মা।
মা- না না, এটা করলে নেশা হয়ে যাবে।
আমি- আরে জিএফ কম দিতে বলবো। ভাং দিয়ে লস্যি খেলে ভালো লাগবে।
মা- না না না। আমি খাবোনা।
আমি- মা তুমি হোলির সময় ভাং দিয়ে লস্যি খেয়েছো না?
মা- হ্যাঁ কিন্তু সেটা অনেকদিন আগে।
আমি- কিছু হয়েছিলো?
মা- না।
আমি- তাহলে আজও কিছু হবে না। তাছাড়া তো আমরা রুমে গিয়ে ঘুমাবো। নেশা হলেই বা কি আর না হলেই বা কি।
মা- ঠিক আছে। বাপরে বাপ। এতো জেদ তোর!
আমি- তোমারই তো ছেলে!
এই বলে আমি মাকে দাঁড় করিয়ে লস্যি আনতে গেলাম।
আমি- আংকেল ২টা লস্যি দেন তো।
দোকানদার- ঠিক আছে আমি বানাচ্ছি বাবু।
আমি- আংকেল একটু ভাং দেবেন। (আস্তে আস্তে বলি যাতে কেও শুনতে না পায়)
দোকান – বাবু আমরা ভাং রাখি না।
আমি- মিথ্যা কেন বলছেন আংকেল? আমি আগেও দুইবার এখান থেকে লস্যি খেয়ে গেছি।
আমি তার হাতে ভাং আর লস্যির দাম দিয়ে দিলাম আগেই। লোকটার ভয় কেটে গেলো। তাই ভাং দিয়ে লস্যি বানিয়ে দিলো। মূলত আমার দেহের গড়ন দেখে পুলিশ ভেবেছিলো লোকটা। যায়হোক, আমি ভাং মেশানো লস্যি নিয়ে মায়ের কাছে যাই।
আমি- মা এই নাও লস্যি। তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও আমাদের হোটেলে ফিরতে হবে।
মা- ঠিক আছে ঠিক আছে।
আমরা মা-ছেলে দুইজন দুই গ্লাস ভাং মেশানো লস্যি খেয়ে নিলাম। এরপর গ্লাসটা লস্যি বিক্রেতাকে দিয়ে মায়ের কাছে এলাম।
আমি- দেখেছো কিছুই হয়নি?
মা- হ্যাঁ তুই ঠিকই বলেছিলি।
আমি- তাহলে চলো।
মা- হ্যা চল।
আমরা মেইনরোডে অটো পেয়ে যাই। অটোতে উঠে হোটেলের সামনে নেমে পড়ি। অটো থেকে নামার পরই মাথার ভিতর চক্কর দিচ্ছিলো। আমি আস্তে করে মায়ের কানে বললাম,
আমি- মা তুমি ঠিক আছো?
মা- আমার মাথা ঘুরছে আকাশ।
বুঝলাম লস্যিতে ভাং একটু বেশি হয়ে গেছিলো।
ক্রমশ