বিচিত্র ফাঁদ পাতা এ ভুবনে (পর্ব-২১)

বিচিত্র ফাঁদ পাতা ভুবনে/একুশ
লেখক – কামদেব
—————————

সুরভি হোটেলে ফিরে খাওয়া-দাওয়া সেরে জানলার কাছে বসে একটা সিগারেট বের করে ঠোটে লাগায়।এখন স্মোকিং করা ঠিক হবেনা ভেবে সিগারেট জানলা দিয়ে বাইরে ফেলে দিল।নাইটি তুলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে পেটের দিকে।

কি করছে লিটল আনজান? ঘুমাচ্ছে? তার দুশ্চিন্তার প্রভাব কিছুতেই পড়তে দেবে না শিশুটির উপর।মৃদু চাপড় দেয় পেটে মনে মনে বলে,গুড নাইট।ফোন বেজে ওঠে, এত রাতে কে ফোন করল? কপালে ভাঁজ পড়ে। আনজান ফোন করেনি তো?
–হ্যালো?
–মিস লামা? মি.সহায় যাচ্ছেন।আপনি ওকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে চলে আসুন।
–মি.সহায়?
–হ্যা কাল সকালে পৌছাবেন,ম্যাডাম সে কথা বললেন।গুড নাইট।
ফোন রেখে দিয়ে সুরভিকে চিন্তিত মনে হল। হঠাৎ কি হল?এত দ্রুত তাকে তলব কেন? মালকিনের সাথে কথা হয়েছে ফোনে কোনো আভাস দেন নি।অবশ্য এদিকের কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে,এখন চলছে ফিনিশিং।ইতিমধ্যে হোটেলের লোকজন যাতায়াত শুরু করে দিয়েছে।আসুক মি.সহায় সব জানা যাবে। স্টেশনে কাল সকালে পাঠিয়ে দেবে ভীমাকে।লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ল সুরভি।
ভোরবেলা উঠে ব্রেকফাস্ট সেরে নীচে নেমে দেখল ভীমা দাঁড়িয়ে আছে।গাড়িতে উঠে বলল,চলো।
গাড়ি ছুটে চলল কাজের জায়গায়। আজ সবার কাছ থেকে বিদায় নিতে হবে।কে জানে এ.পি.নির্মানে তার আয়ু কদিন? ভালই হল তাকে তো ছুটি নিতেই হত। গাড়ি থেকে নেমে বলল,তুমি স্টেশনে চলে যাবে।ইঞ্জিনীয়ার সহায় সাহেব আসবেন ওকে নিয়ে আসবে। যদি এখানে আসতে চায় এখানে নাহলে হোটেলে নিয়ে যাবে।
ইলেক্ট্রিকের লোকজন কাজে লেগেছে।লিফট বসাচ্ছে।সুরভি কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে দেখে।তারপর সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল।যারা কাজ করছিল সেলাম ঠুকে পাশ দিচ্ছিল।দোতলায় অস্থায়ী অফিস হয়েছে।ঘরে গিয়ে বসে সুরভি।
বইয়ের মধ্যে ডুবে ছিল অঞ্জন।মি.সহায় মনে করিয়ে দিলেন,স্যর এবার নামতে হবে।বইয়ে পেজ মার্ক দিয়ে অঞ্জন প্রস্তুত হতে থাকে।সুসির কথা ভাবছে সঙ্গে মি.সহায় আছেন স্টেশনে কোন সিন ক্রিয়েট না করে।যা পাগলি মেয়ে অঞ্জনের ভয় হয়।ট্রেন স্টেশনে থামতে নেমে পড়ল।কাউকে দেখতে না পেয়ে অবাক হয়।কতদিন আগে এসেছিল কিছু মনে নেই,এবার কি করবে? মি.সহায় হয়তো জানেন কোথায় যেতে হবে।কলেজ কামাই করে আসার ইচ্ছে ছিল না একদম। মনে মনে ক্ষুব্ধ হয় মায়ের প্রতি। নজরে পড়ল গেটের মুখে হাতে প্লাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে তাতে লেখা,মি.সহায়। লোকটাকে চেনা চেনা লাগে।লোকটির সঙ্গে গিয়ে ওরা গাড়িতে উঠল।
–মিস লামাকে দেখছি না।মি.সহায় বললেন।
–সুসি ম্যাম কামের জায়গায় আছেন।সেখানে যাবেন? লোকটি জিজ্ঞেস করে।
–না না হোটেলে চলো।মি.সহায় বলেন।
অঞ্জনের ভাল লাগে,এখন একটু বিশ্রাম দরকার।সারা রাত ট্রেন জার্নি গা-হাত-পা ব্যথা হয়ে আছে।সুসির প্রতি অভিমান হয়।
–কি নাম তোমার?মি.সহায় জিজ্ঞেস করেন।
–জ্বি আমি ভীমা আছি।
মনে পড়েছে এই লোকটাই আগেরবার তাদের ট্রেনে তুলে দিতে এসেছিল।তখন সুসি ছিল এর দিকে বেশি মন দিতে পারেনি।গাড়ি থেমে গেল হোটেলের সামনে। স্টেশন হতে হোটেল বেশি দূর না।রিসেপশনে যেতেই লিজ্ঞেস করল, মি.বিপি সহায়?
মি.সহায় সম্মতিসুচক ঘাড় নাড়তেই ভদ্রলোক বলল, আপকে তো সিঙ্গেল মানে–দুসরা রুম দেখছি।
–না না সিঙ্গেলই থাক।স্যরের জন্য আর একটা রুম দেখুন।
–ও কে স্যর।
হোটেলের বয় এসে দুজনকে দুটো রুমে ঢুকিয়ে দিল।খানিক পরে জলের মগ এবং চা দিয়ে গেল।চা খেয়ে চেঞ্জ না করেই শুয়ে পড়ল অঞ্জন।
ট্রেনে ভাল ঘুম হয়নি রাতে। শুতে না শুতে চোখ বুজে এল। আধঘণ্টাও হবে না,দরজায় নক হতে ঘুম ভেঙ্গে গেল।সম্ভবত খাবার সময় হয়ে গেছে।দরজা খুলতে ম্যানেজার ঢুকে বলল,স্যর একটু বিরক্ত করছি।আপকে লিয়ে অন্য রুম আছে।
–না না এখানেই ঠিক আছে।অঞ্জন আপত্তি করে।
–নেহি ঠিক নাই,বহুৎ গড়বড় হয়ে যাবে।স্যর প্লিজ….আপ চলিয়ে সমন পৌছে যাবে।
অগত্যা ম্যানেজারের সঙ্গে যেতে হল অন্য ঘরে।ঘরটি অনেক বড়।কি ব্যাপার বোঝার জন্য জিজ্ঞেস করতে যাবে দেখল ম্যানেজার নেই।
আজব ব্যাপার! মনে হচ্ছে কোনো মহিলার ব্যবহৃত ঘর।তাহলে এটা কি সুসির ঘর?একটা বয় এসে মাল-পত্তর রেখে গেল।অঞ্জন জিজ্ঞেস করে,এটা কার ঘর?
–জ্বি সুসি ম্যামের।ফোনে ম্যানেজারসাবকে খুব বকা দিল।
অঞ্জনের মনের সব খেদ দূর হয়ে গেল।কাছে না থাকলেও তার সব দিকে খেয়াল আছে।কিন্তু স্টেশনে গেল না কেন? আর ভাবতে পারছে না চোখ জড়িয়ে আসছে ঘুমে।শুয়ে পড়ে অঞ্জন বালিশে মুখ গুজে।সুন্দর মেয়েলি গন্ধ বালিশে।
ভীমা সাইটে পৌছাতে বকাবকি শুরু করে সুসি,আরে বুদ্ধু পহেলে কিউ নাহি বোলা?
–চিনা চিনা লাগছিল কিন্তু…।বাবুটা কে ম্যাম?
সুসি লজ্জা পায় নিজের ব্যবহারে,একটু বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়ে থাকবে হয়তো।ভীমাকে বলে,তুই নাস্তা করেছিস?নাস্তা করে নে, আমি এখন হোটেলে ফিরবো।হোটেলে লাঞ্চ করবো,খাবার পাঠাবার দরকার নাই আছে।অন্যদিন হোটেল হতে পার্শেল আসে,সুসি কাজ সেরে একেবারে সন্ধ্যেবেলা ফেরে।হোটেলে ফিরে ম্যানেজারের খোজ করতে  হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসেন তিনি।
–ও লাঞ্চ করেছে?
–নেহি নিদমে বেহুশ আছে।লাঞ্চ পাঠাবো?
–বাদ মে।সুসি ঘরের দিকে এগিয়ে যায়।
–ম্যাম মি.ঘোষ কে আছে?
কথাটা কানে যেতে দাঁড়িয়ে পড়ে সুসি।ম্যানেজার অস্বস্তি বোধ করেন।সুসি হেসে বলে,পুছা নেহি? উসিকো পুছনা।
ঘরে ঢুকে দেখল সুসি ঘুমে কাদা অঞ্জন।মাথার চুলে হাত বুকিয়ে দিল।তারপর নীচু হয়ে চুমু খেল ঠোটে।নড়ে উঠল অঞ্জন।ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায়।সুসির দিকে তাকিয়ে থাকে অপলক।
–খুব টায়ার্ড? সুসি জিজ্ঞেস করে।
–কেউ নেই কি করবো? ঘুমোচ্ছিলাম।হেসে বলে অঞ্জন।
–তুমি আসবে আমাকে বলেছো? না বললে কি করে বুঝবো?
ইতিমধ্যে ম্যানেজার ঢোকে,জিজ্ঞেস করে লাঞ্চ পাঠাবো?
–আনজান ম্যানেজার সাহেব জিজ্ঞেস করছেন, তুমি কে?
–না জাস্ট কিউরিওসিটি।ম্যানেজার ব্যাপারটা লঘু করার চেষ্টা করেন।
অঞ্জন একবার সুসির দিকে তাকায় তারপর ম্যানেজারকে দেখে মৃদু হাসে।সুসি রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করে কি বলে আনজান।
–শি ইজ মিসেস ঘোষ।আমার ওয়াইফ।এনিথিং এলস?
–নো থ্যাঙ্কস।ম্যানেজার চলে যায়।
ম্যানেজারের যাওয়ার অপেক্ষায়ছিল সুসি। দ্রুত দরজা বন্ধ করে ঝাপিয়ে পড়ে অঞ্জনের উপর।
–কি হচ্ছে কি? আমার ক্ষিধে পেয়েছে।অঞ্জন বলে।
হোটেলে আসতে আসতে সুসি ভাবছিল আনজান হয়তো গুসসা করবে,কেন স্টেশনে যায় নি।কিন্তু এত আনন্দ যে তার অপেক্ষায় কল্পনাও করেনি।খবরটা মাম্মিকে দিতে হবে।তাকে নিয়ে বহুৎ টেনশন মাম্মির। বুঝতে পারছে না আনজান যা বলল তাতে ম্যাডামের সম্মতি আছে কিনা?

চলবে ———-

Leave a Comment