শেষের পাতায় শুরু [পর্ব ৯][১]

Written by Pinuram

ঠিক সেই সময়ে রিশুর ফোন বেজে ওঠে। ফোনের দিকে না তাকিয়েই ফোন কানের কাছে এনে জিজ্ঞেস করে, “হ্যালো, হু ইজ দেয়ার?”
অন্যপাশ থেকে ভেসে আসে এক তরুণীর সুরেলা কন্ঠস্বর, “হাউ আর ইউ হ্যান্ডসাম?”
রিশুর বুকের ওপরে মাথা রেখেই শুয়েছিল ঝিনুক তাই কানের মধ্যে মেয়েলী কন্ঠের “হ্যান্ডসাম” শব্দটা যেতেই কানখাড়া হয়ে যায়। ভুরু কুঁচকে রিশুর হতবাক চেহারা দিকে দেখে হাত থেকে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে ফোনের নাম্বার দেখে হেসে ফেলে ঝিনুক। ওর একমাত্র দুষ্টু মিষ্টি বোনকে উত্তর দেয়, “কি রে কি করছিস?”
রিশু ভুরু নাচিয়ে প্রশ্ন করে, কে ফোন করেছে? ইশারায় উত্তর দেয় ঝিনুক, ঝিলিক।
দিদির গলার আওয়াজ পেয়ে সপ্তদশী তন্বী তরুণী দিদিকে ইয়ার্কি মেরে বলে, “বাঃবাআ… একদম জিজুর কোলে বসে ছিলিস মনে হচ্ছে?”
রিশুর আবেগ ভরা চোখের দিকে লাজুক হেসে বোনকে উত্তর দেয়, “না না এই তো চা খাচ্ছিলাম” রিশু জিব বের করে ঝিনুকের ঠোঁট স্পর্শ করতে যেতেই আলতো চাঁটি মেরে প্রেমিককে বিরত করে বোনকে ইয়ার্কি মেরে বলে, “বেশ তো আমাদের ছাড়াই চিকেন বিরিয়ানি খেয়ে নিলি, বল।”
রিশু ইশারায় ইয়ার্কি মেরে বলে, বাঃবা কত চা খেলাম। লোমশ বুকের ওপরে আলতো চাঁটি গোলাপি ঠোঁটের ওপরে তর্জনী রেখে ইশারায় চুপ করিয়ে দেয়।
ঝিলিক ওকে প্রশ্ন করে, “কি রে আমাদের দিল্লী যাওয়ার কথা জিজুর সাথে কিছু ডিস্কাস করলি?”
ইসসস একদম ভুলে গেছিল ঝিনুক, “এই তো ব্যাস, এই একটু পরেই তোর জিজু তোদের ফ্লাইটের টিকিট কেটে দেবে। দিয়া কোথায়?”
দিয়া ঝিলিকের পাশেই ছিল, “দাদাভাইয়ের কি মাম্মার সাথে কথা হয়েছে?”
মাথা দোলায় ঝিনুক, “হ্যাঁ রে বাবা তোর দাদাভাই মামনির সাথে কথা বলে সব ঠিক করে নিয়েছে।”
দিয়া লাফিয়ে উঠে ঝিলিককে জড়িয়ে ধরে বলে, “ইও বেব, তাহলে দিল্লী যাচ্ছি।”
ঝিলিকও স্বমসুরে বলে, “ফাক বেব, বিশ্বাস করতে পারছি না, একা একা এই প্রথম বার বাড়ির বাইরে যাবো।” “ফাক” কথাটা বলেই লজ্জা পেয়ে জিব কেটে দিদিকে জিজ্ঞেস করে, “জিজু কি কাছেই আছে নাকি?”
ওদের কথা শুনে হেসে ফেলে রিশু, “হ্যাঁ এই তো।” একটু গম্ভির হয়ে ভ্রাতৃসুলভ কন্ঠে বলে, “পড়াশুনা তো মনে হয় লাটে উঠে গেছে, এখানে এলে বই খাতা নিয়ে আসতে হবে।”
দাদার গলা পেয়েই অপ্রস্তুত হয়ে পরে দিয়া, গলা নামিয়ে ছোট্ট উত্তর দেয়, “আচ্ছা নিয়ে আসব।” সঙ্গে সঙ্গে শিশুসুলভ কন্ঠে দাদার কাছে আবদার করে, “আমার লিভাইসের জিন্স।”
হেসে ফেলে রিশু, “হবে তবে রেজাল্ট দেখে।”
কাঁদো কাঁদো কন্ঠে দিয়া বলে ওঠে, “যাও তাহলে আমি আর যাবো না।”
দিয়ার আহত কন্ঠ শুনে ঝিনুক রিশুর গালে একটা আলতো চাঁটি মেরে দিয়াকে বলে, “তুই ছাড় তো তোর দাদার কথা, তুই আয় তোর জিন্স আমি কিনে দেব।”
ওদিকে ঝিলিক ও চেঁচিয়ে ওঠে, “আমারও একটা জিন্স চাইইইই…”
হেসে ফেলে রিশু, “আচ্ছা বাবা সব হবে।”
বিছানায় রিশুর বুকের ওপরে শুয়েই দুই প্রেমে বিভোর কপোত কপোতী আরো কিছুক্ষন এই ভাবেই জড়াজড়ি করে শুয়ে ফোনে গল্প করে শেষ পর্যন্ত উঠে পরে বিছানা থেকে। সেই দুপুরে খাওয়া হয়েছিল তারপরে বাড়ি এসে আর খাওয়া দাওয়া হয়নি, খিধেতে পেটের নাড়ি ভুড়ি মোচড় দিচ্ছে দুইজনার। মেঝেতে পরে থাকা তোয়ালে গায়ে জড়িয়ে মদালসা ললনা সারা অঙ্গে ঢেউ তুলে ভারী নিটোল নিতম্ব রিশুর চোখের সামনে দুলিয়ে মুচকি হেসে বিছনা ছেড়ে উঠে পরে। সারা শরীর জুড়ে প্রেমের সহবাসের মিষ্টি প্রলেপ মাখানো। দুই নিটোল পীনোন্নত স্তনের মাঝে দুলতে থাকা বড় মুক্তোর লকেট দেখে খুব খুশি। রিশু মুচকি হেসে আলমারি খুলে একটা পায়জামা বের করে পরে নেয়। হাত বাড়িয়ে প্রেয়সীকে ধরতে যাওয়ার আগেই খিলখিল করে হেসে ছোট ত্রস্ত পায়ে দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে যায়। অগত্যা রিশু ল্যাপটপ খুলে শ্যালিকার আর বোনের জন্য চার দিন পরে ফ্লাইটের টিকিট কেটে নেয়। বাড়িতে মাকে ফোনে জানিয়ে দেয় দিয়া আর ঝিলিকের আসার কথা, মা যদিও একটু দোনামনা করছিল কিন্তু রিশু অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে মাকে আস্বস্থ করে।
রিশু রান্না ঘরে ঢুকে নিজেদের জন্য চা বানাতে শুরু করে। মন প্রান পরে থাকে বাথরুমের জলের শব্দে, মদালসা রূপসী প্রেয়সীর চুম্বনে মাখা ওর লোমশ ছাতির পেশি, সারা পিঠে নখের আঁচর, ঠোঁটের ব্যাথাটা ভীষণ মিষ্টি। অতি সন্তর্পণে দরজা খুলে ভীষণ লজ্জা জড়ানো কামতৃপ্ত ঝিনুক বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এলো। প্রেমিকার রূপ দেখে রিশুর আবার কামোত্তেজিত হয়ে ওঠে। তোয়ালেটা ভীষণ ছোট আর সেই ছোট তোয়ালে দিয়ে কোনরকমে ঝিনুক নিজের লাস্যময়ী নধর দেহ পল্লব ঢেকে রেখেছে। তোয়ালেটা ঝিনুকের উদ্ধত পীনোন্নত স্তনের মাঝের থেকে কোনোমতে ঊরুসন্ধি পর্যন্ত অতি কষ্টে নেমে এসেছে। তোয়ালেটা ঝিনুকের নিটোল পীনোন্নত স্তনের অর্ধেকটা ঢাকতে সক্ষম, তোয়ালের গিঁট গভীর বক্ষ বিভাজন মাঝে আটাকানো, যার ফলে উন্নত স্তন জোড়া আর বেশি করে ফুলে উঠেছে। ঊরুসন্ধির নিচের থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত সম্পূর্ণ অনাবৃত। সুগঠিত জঙ্ঘাদ্বয় যেন কিছুতেই আর শেষ হতে চায় না। ঘরের হলদে আলো প্রেয়সীর মসৃণ জঙ্ঘার ত্বকে পিছল খেয়ে প্রতিফলিত হয়ে যায়। বক্র পায়ের গুলি, ছোট গোড়ালি দুটোতে রুপোর নুপুরে সজ্জিত। পুরুষ্টু জঙ্ঘা বয়ে অসংখ্য অতি সরু জলের ধারা নেমে এসেছে। ঝিনুকের রোমহীন মসৃণ জঙ্ঘার কাম উদ্ভাসিত রস যেন চুইয়ে চুইয়ে গড়িয়ে চলেছে। সময় যেন স্তব্দ, বিভোর চোখে ঝিনুকের রূপ সাগরে নিমজ্জিত হয় রিশু। ফর্সা মসৃণ মরালী গর্দানে ওর দেওয়া মোটা সোনার হার ভীষণ ভাবেই জ্বলজ্বল করছে। দুই পীনোন্নত স্তন মাঝে বড় মুক্তোর লকেট শোভা পায়। নুপুরের রিনিঝিনি নিক্কন, প্রেয়সীর সদ্য স্নাত দেহের প্রমত্ত ঘ্রাণে আর মদালসা ছন্দের চলনে ওর মাথা ঝিমঝিম করতে শুরু করে দেয়।
প্রেমিকের প্রেমে বিভোর নজর ওকে তাড়িয়ে বেড়ায়, ঝিনুক ভুরু নাচিয়ে রিশুকে মিহি গলায় একটু বকুনি দেয়, “এখন একদম শয়তানি করবে না।”
রিশু চা ছাঁকতে ভুলে গিয়ে বুকের বাম দিকে কিল মেরে উত্তেজিত রক্ত শান্ত করে ঝিনুকের দিকে একপা এগিয়ে বলে, “উম্মম হানি তুমি না…”
নধর লাস্যময়ী দেহপল্লবের প্রলুব্ধকর দৃশ্য দেখে রিশুর লিঙ্গে পুনরায় রক্ত সঞ্চালন বেড়ে ওঠে। ধীর পায়ে ঝিনুকের দিকে এগিয়ে এসে ওকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে।
প্রেমিকের বাহুপাশে আবিষ্ঠ হয়ে ঝিনুকের হৃদয় আবার কেঁপে ওঠে, কিন্তু তাও কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “ইসসস ছাড়ো ছাড়ো কি নোংরা মানুষ তুমি। ছিঃ হসপিটাল থেকে এসে এখন স্নান করেনি আবার আমাকে নিয়ে পড়েছে।” সাপের মতন নরাচড়া করলেও প্রেমিকের প্রেমঘন বাহুপাশে আবিষ্ঠ হয়েও নিজেকে ছাড়ানোর বিন্দু মাত্র চেষ্টা করে না ঝিনুক।
রিশু ঝিনুকের নাকের ওপরে নাক ঘষে কাতর আবেদন করে, “একটা ছোট্ট হামি খাবো ব্যাস।”
গোলাপি পাতলা ঠোঁটের ওপরে কোমল চাঁপার কলি তর্জনী রেখে একটু রেগেই বলে, “নো হামি, ফার্স্ট স্নান তারপরে ডিনার তারপরে বাকি সব।”
বলিষ্ঠ বাহুপাশে প্রেয়সীর কোমল নধর দেহপল্লব পিষে ধরে ভুরু নাচিয়ে বলে, “বাকি সব…”
ইসসস ছেলেটা না, এইভাবে বললে একদম শুনবে না তাই মধু ঢালা মদির কন্ঠে বলে, “রুশুউউ, প্লিজ হানি স্নানে যাও।”
উফফফ এই নামটা কেন যে বারেবারে নেয়, প্রেয়সীর মধুর কন্ঠে এই নামটা শুনলেই ওর মাথা গুলিয়ে যায়, সম্মোহিত হয়ে যায় ওর প্রান। একটু ঝুঁকে সুন্দরী ঝিনুকের নরম লালচে গালে একটা চুমু খেয়ে শেষ পর্যন্ত স্নানে ঢুকে পরে রিশু। রাতের খাওয়ার পরে দুই প্রেমে বিভোর নর নারী আরো একবার নিজ নিজ বাহুপাশে বদ্ধ হয়ে সুখের সাগরে নিমজ্জিত হয়ে নিজেদের ভাসিয়ে দেয়।
সেদিনের পর থেকে ঝিনুক আর রিশুর জীবন বদলে যায়। রিশুর আগেই ঝিনুক ঘুম থেকে উঠে পরে, নতুন রাঁধুনি কোনদিন ব্রেড টোস্ট পুড়িয়ে দেয়, কোনদিন অমলেট বানাতে গিয়ে নুন বেশি দিয়ে ফেলে তাও সেই খেয়েই রিশু হসপিটালে যায়। লন্ডন যাওয়ার ভিসা এখন আসেনি, রোজদিন একবার করে এডমিন কে জিজ্ঞেস করে কবে আসবে সেই খোঁজ খবর নেয়।
তিনদিন এইভাবেই কেটে যায়। পরেরদিন সকালের ফ্লাইটে দিয়া আর ঝিনুকের আসার কথা। বিকেলে হসপিটাল থেকে ফিরে মায়ের সাথে বাড়ির সবার সাথে কথা হয়েছিল। দিপ ভীষণ জেদ ধরেছিল কিন্তু রিশু অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে তবে ওকে বিরত করতে পেরেছে, ওকে বলেছে লন্ডন থেকে ওর জন্য একটা ঘড়ি কিনে নিয়ে আসবে। মা ওকে বারবার বলে দিয়েছে একটু সাবধানে দেখিস এই প্রথমবার দুটো মেয়ে একদম একা যাচ্ছে। যদিও ঝিলিক আর দিয়া বেশ বড় হয়েছে তাও দুই মায়ের মন। হসপিটাল থেকে ফিরে যথারীতি প্রত্যেকদিনের মতন পাশের বাজারে একটু ঘুরতে যায় রিশু আর ঝিনুক। বিগত তিন দিনে ইউ টিউব দেখে আর মায়ের সাথে ফোনে ভিডিও কল করে বেশ কিছু রান্না বান্না শিখে গেছে ঝিনুক। মেয়ের এই আমূল পরিবর্তন দেখে পিয়ালী ভীষণ খুশি। যে মেয়ে বাড়িতে জলের গ্লাস পর্যন্ত নিজে গড়িয়ে খেত না সে এতদিন পরে নিজের বাড়িতে রান্না করছে জেনে ভীষণ ভালো লাগে।
মাছের বাজারে মাছ কেনার সময়ে হটাত যেন ঝিনুকের মনে হল একজন মহিলা ওদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। রিশু কাটা রুই কিনতে ব্যাস্ত, একবার ভাবে রিশুকে জানাবে তারপরে ভাবে না থাক কত লোক মাঝে মাঝে ওইভাবে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে। বিশেষ করে ঝিনুক একটু বেশি সুন্দরী আর আগে যেমন শালোয়ার কামিজ পড়ত এখন চাপা জিন্স চাপা শারট আর বুটস পরে রিশুর সাথে বের হয়। সেই দেখেও অনেকে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে। বাজার করার শেষে রিশুর বাইকের পেছনে ওঠার সময়েও আড় চোখে সেই মহিলাকে দেখতে পায় ঝিনুক। সেই মহিলাও দেখতে সুন্দরী, পরনে চাপা সালোয়ার কামিজ আর গায়ে একটা ভারী জ্যাকেট হাতে একটা বাজারের থলে। ওদের মতন মাছ কিনেই ফিরছে হবে। বেশ দুর থেকে দেখতে পেলেও সেই মহিলার তীক্ষ্ণ চোখের ভাষা পড়ে ফেলে ঝিনুক। সারাটা রাস্তা মনের মধ্যে একটা দুশ্চিন্তা ভর করে আসে।
শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে রাতে খাওয়ার সময়ে রিশুকে বলে, “এই জানো আজকে বাজারে একটা মেয়ে আমার দিকে কেমন ভাবে যেন তাকিয়েছিল।”
দুই জনে মিলে হাত পুড়িয়ে সেই প্রথমবার কাটা রুই ভেজেছে তাই রুই মাছ খেতে খেতে হেসে বলে, “আরে তুমি যা সেক্সি তাতে যে কারুর মাথা ঘুরে যাবে।”
খাওয়া থামিয়ে মৃদু ঝাঁঝিয়ে ওঠে ঝিনুক, “ধ্যাত তুমি না।” একটু থেমে বলে, “আরে সত্যি বলছি ওই মেয়েটা মাছ কিনতে এসে আমাদের দেখে কেমন একটা চোখে তাকিয়ে ছিল।”
সেই আগন্তুক মহিলার মাছ কেনার কথা শুনে ভুরু কুঁচকে ঝিনুকের দিকে দেখে প্রশ্ন করে, “কেমন ভাবে তাকিয়ে ছিল মানে? মেয়েটা কেমন দেখতে?”
ডান দিকের ওপরের দিকে একটু তাকিয়ে সেই অচেনা মেয়েটার চেহারা মনে করতে করতে বলে, “একটু ডার্ক স্কিন, চোখ জোড়া বেশ উজ্জ্বল, মুখটা বেশ মিষ্টি, একটু গোলগাল নাদুসনুদুস ফিগার।”
মেয়েটার বিবরণ শুনে চমকে ওঠে রিশু, খাওয়া থামিয়ে জিজ্ঞেস করে, “মাছের বাজারে দেখছ?”
মাথা দোলায় ঝিনুক, “হ্যাঁ।” ডান হাত মুঠো করে মুখের কাছে চেপে ধরে চিন্তিত হয়ে পরে রিশু। রিশুকে ওইভাবে চিন্তিত অবস্থায় দেখে ভীত হয়ে ওঠে ঝিনুক, “মেয়েটাকে তুমি চেনো?” মাথা দোলায় রিশু, হুম। এক অজানা আশঙ্কায় বুকের ভেতরটা ভীষণ ভাবেই দুরুদুরু করা শুরু করে দেয় ঝিনুকের। কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, “কে?”
চশমার ফাঁক দিয়ে ঝিনুকের ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া চেহারার দিকে তাকিয়ে আসস্থ কন্ঠে বলে, “কেউ একজন, তুমি খাও এখন পরে বলব।”
রিশুর মুখের ভাব বদলে যেতেই ঝিনুক খাওয়া ছেড়ে ওর দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমার এক্স? চন্দ্রিকা?”
ঝিনুকের মুখে চন্দ্রিকার নাম শুনে ধাক্কা রিশু। মাথা নিচু করে সম্মতি সুচক ভাবে মাথা দোলায়, হুম।
ভুরু কুঁচকে পালটা প্রশ্ন করে ঝিনুক, “সে চেন্নাই চলে গেছে, মামনি তো তাই বলেছিল। তাহলে এখানে কি করে?”
সেদিন যে চন্দ্রিকার সাথে হসপিটালে দেখা হয়েছিল সেটা আগেই ঝিনুককে জানিয়ে দিলে ভালো করত, কিন্তু আর জানানো হয়নি। একটা মিথ্যে ঢাকতে আরো একটা মিথ্যের আশ্রয় নিতে হয় রিশুকে।
প্রশ্ন বানে জর্জরিত হয়ে রিশু অসস্থি বোধে একটু চড়া গলায় উত্তর দেয়, “আমি কি করে জানব ও এখানে কেন? আমি কি ওর খবর নিতে গেছি নাকি? তুমি কি বলতে চাইছ?”
খাওয়া ছেড়ে রিশুর আনত চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে কোথাও কোন ভুল হচ্ছে ওর। ওর রিশু সর্বদা ওর চোখের দিকে তাকিয়েই কোন কথা বলে কিন্তু এই চন্দ্রিকার নাম শুনে থালার দিকে অথবা অন্যদিকে দেখে উত্তর দিচ্ছে দেখে একটু সন্দেহ হয় ঝিনুকের। মাছটা ভীষণ বিস্বাদ লাগে জিবে।
তাও খুঁটে খুঁটে একটু মাছ ভাত মুখের মধ্যে তুলে নরম গলায় বলে, “আমি তো তোমাকে জাস্ট জিজ্ঞেস করলাম, তাতে তুমি এত ক্ষেপে যাচ্ছও কেন?”
গলার স্বর বেশ চড়ে গেছিল রিশুর সেটা নামিয়ে এনে নরম সুরে বলে, “না মানে।”
বুকের ভেতর কেঁদে ওঠে ঝিনুকের, বহু কষ্টে পাওয়া এই ভালোবাসা আবার সেই প্রতারণার সম্মুখীন হতে হবে নাকি? তাহলে এবারে মরেও শান্তি পাবে না। চোখের কোনা ভিজে যায় ওর, বুকের ভেতরটা হুহু করে অপার শূন্যতায় ভরে যায়, কাঁপা গলায় বলে, “তুমি একবার আমাকে বলতে পারতে, রিশু।” নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে ঝিনুকের।
ধরে আসা গলার স্বর শুনে ঝিনুকের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে নরম সুরে বলে, “কি বলব?”
কান্না ভেজা গলায় ওকে বলে, “সত্যিটা রুশু, আই জাস্ট ওয়ান্ট টু নো ট্রুথ।”
রুশু নাম শুনে কান্না পেয়ে যায় রিশুর। খাওয়া থামিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে এঁটো হাতেই জড়িয়ে ধরে ঝিনুককে। রিশুর হাতের পরশ পেয়ে ভেঙ্গে পরে ঝিনুক। ঝিনুকের পাশে হাঁটু গেড়ে বসে বুক ভরা শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করে রিশু, “হ্যাঁ আমি জানতাম ও এখানে।” জল ভরা প্রচন্ড বেদনা মাখা চোখে রিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে ঝিনুক। বাঁ হাত দিয়ে ঝিনুকের চোখের জল মুছিয়ে আসস্থ করে বলে, “আমি জানি চন্দ্রিকা দিল্লী ফিরে এসেছে। কিন্তু এই তোমাকে ছুঁয়ে বলছি ঝুনু, আমার লাইফে আমার বুকে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই।”
কি বিশ্বাস করবে কিছুই বুঝতে পারে না। ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়। ভুরু কুঁচকে জল ভরা চোখে হাজার প্রশ্ন নিয়ে রিশুর দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। ধিরে ধিরে রিশু সেইদিন বিকেলের ঘটনার বিবরণ দেয়। শোয়ার ঘর থেকে নিজের ফোন এনে সেদিনের চন্দ্রিকার সেই অচেনা নাম্বার খুঁজে খুঁজে বের করে ঝিনুককে দেখায় এবং সেই সাথে এটাও দেখায় যে সেইদিনের পরে আর কোনদিন ওই নাম্বারের সাথে আর কথা হয়নি। এক বছর আগের চন্দ্রিকার বিয়ের কথাও জানায় ঝিনুককে, সেই সাথে সেই চিঠির কথাও জানায় যে চিঠি প্লেনে বসে সেই রাতে ছিঁড়ে ফেলেছিল রিশু। সব শুনে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকে ঝিনুক।
বেশ কিছুক্ষন পরে চোখের জল মুছে মৃদু হেসে ওকে বলে, “নাম্বারটা দিও তো আমাকে আমি একবার কথা বলব।”
চমকে ওঠে রিশু, “কেন? কি কথা বলবে?”
ওর চোখে বেদানার নয় তখন একটু ভালোবাসার জল লেগেছিল তাই মুচকি হেসে বলে, “একটা বড় থ্যাঙ্কস জানাতাম।”
অবাক হয়েই ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে রিশু, “মানে?”
রিশুর কপালে কপাল ঠেকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, “ও যদি আগেই আমার রিশুকে নিয়ে যেত তাহলে এই দুত্তু রুশুকে কি করে পেতাম বলো।”
শেষ পর্যন্ত হাঁপ ছেড়ে ওঠে রিশু, “উফফ তুমি না।”
ওর চোখের সামনে তর্জনী নাড়িয়ে মৃদু আদেশের সুরে বলে, “আমি তোমাকে আমার সব খুলে বলেছি, তুমি কেন এটা আমার কাছ থেকে লুকাতে গেলে?”
ডান হাত তখন এঁটো, খাওয়া অনেক আগেই মাথায় উঠে গেছে, বাঁ হাতেই মাথা চুলকে অপরাধীর মতন হয়ে বলে, “আচ্ছা বাবা মাফি চাইছি বেগম সাহিবা।”
খাওয়া আর হল না ওদের, মৃদু ঝাঁঝিয়ে ওঠে সুন্দরী ললনা, “এই প্রথমবার দুইজনে মিলে হাত পুড়িয়ে মাছ ভাজলাম আর তোমার জ্বালায় আর খাওয়া হল না।”
হেসে ফেলে রিশু, “আচ্ছা বাবা কাল আবার দুজনে মিলে মাছ ভাজবো।”
মুচকি হাসি দেয় ঝিনুক, “এবারে এইভাবে প্রেম করা লাটে উঠবে।” ভুরু নাচিয়ে বলে, “আগামী কাল সকালে দুটো যন্তর পিস বাড়ি আসছে।”
হেসে ফেলে রিশু, পরেরদিন সকালেই ওর দুষ্টু মিষ্টি বোন আর আদরের শ্যালিকার আগমন ঘটবে।

রিশু পরের দিন যথারীতি হসপিটাল থেকে হাফ ডে নেয়। প্লেনে ওঠার আগে দুই বাড়ির মধ্যে অসংখ্য বার ফোনে কথাবার্তা হয়। এমনকি ফ্লাইটে সিটে বসার আগে পর্যন্ত ঝিনুক বারবার বোনের আর দিয়ার খবরা খবর নেয়। রিশু মাথা দুলিয়ে হেসে ওকে আসস্থ করে বলে, মেয়েরা বড় হয়েছে ঠিক চলে আসবে। মুখ ঝামটা দেয় ঝিনুক, হ্যাঁ চলে আসবে, এই প্রথমবার দুটো কচি মেয়ে বাড়ি থেকে একা বেড়িয়েছে। ওইদিকে যতক্ষণ না প্লেন দিল্লীর মাটি ছোঁয় ততক্ষন দুই বাড়ির মায়ের শান্তি নেই। চাপা উত্তেজনায় ঝিনুক হাতের নখ গুলো বসে বসে পারলে খেয়েই ফেলে, রিশু যত ওকে শান্ত করতে চেষ্টা করে তত ঝিনুক ওকে বলে, তুমি বোঝ না, আচ্ছা প্লেনে যদি ঠিক ভাবে সিট বেল্ট না বাঁধতে পারে তখন কি হবে? আচ্ছা, এই ফ্লাইটে তো খাবার দেয় না, যদি ওদের খিধে পায়? আচ্ছা, লাগেজ বেল্ট থেকে যদি ঠিক সময়ে লাগেজ না নিতে পারে তখন কি হবে? হেসে ফেলে রিশু, তোমার মুড়োর ঘন্ট হবে।
সময়ের আগেই রিশু আর ঝিনুক এয়ারপোর্টে পৌঁছে যায়। প্লেন থেকে নেমেই ফোন করে দাদাকে জানিয়ে দিয়েছিল দিয়া। লাগেজ নিয়ে বের হতে আরো একটু সময় লেগে যায় ওদের। ওদের দেরি দেখে ঝিনুক ভীষণ ভাবেই ব্যাস্ত হয়ে পরে, এতক্ষন লাগে নাকি? দুই জনার শুধু দুটো ব্যাগ আর একটা করে ল্যাপটপের ব্যাগ। আজকাল কচি কচি ছেলে মেয়েরাও ল্যাপটপ ছাড়া চলতে পারে না, মোবাইল ফোন তো মনে হয় যেন শরীরের একটা অঙ্গ। অবশেষে এয়ারপোর্টের গেট থেকে দুই তন্বী তরুণীর দর্শন পায় রিশু আর ঝিনুক। ঝিনুক ওদের দেখতে পেয়েই হাঁপ ছেড়ে বাঁচে, এইবারে এসে গেছে অবশেষে। দুইজনের পরনেই চাপা জিন্স আর চাপা টি শারট, দিয়ার গায়ে একটা ঘিয়ে রঙের ফারের জ্যাকেট আর ঝিলিকের গায়ে একটা সাদা রঙের ফারের জ্যাকেট। দুর থেকে দাদাকে আর দিদিকে দেখতে পেয়েই দিয়া আর ঝিলিক দৌড়ে আসে।
দাদাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “দেখলে তো এসে গেলাম শেষ পর্যন্ত।”
বোনের মাথায় চুমু খেয়ে বলে, “হ্যাঁ তোর বউদি তো…”
হেসে ফেলে দিয়া, “না না বৌদি কিসের, সুইট সেক…” দাদার সামনে সেক্সি শব্দটা ব্যাবহার করতে লজ্জা পায় দিয়া, দাদা ওর চেয়ে অনেক বড়, দিয়ার কাছে রিশু প্রনম্য ব্যাক্তি। মুচকি হেসে বলে, “মিষ্টি ঝিনুকদি।”
রিশু ওদের বলে, “আচ্ছা বাবা, তোর ঝিনুকদি পাগল হয়ে গেছিল।”
ঝিলিক দিদিকে জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে বলে, “তুই তো পুরো ইলেক্ট্রিক শক দিচ্ছিস মাইরি।” তারপরে রিশুর দিকে দেখে চোখ টিপে বলে, “উফফ জিজু এই ক’দিনে তোকে হাই প্রোটিন রিচ ডায়েট খাইয়ে চকাচক করে…”
কথাটা শুনে রিশু আর ঝিনুকের কান গাল লজ্জায় লাল হয়ে যায়। বোনকে আদর করে আলতো চাঁটি মেরে জড়িয়ে ধরে হেসে বলে, “তোর মুখে কিছু আটকায় না আজকাল।”
গল্প করতে করতে ওরা চারজনে ক্যাবের পারকিঙ্গের দিকে হেঁটে যায়। ক্যাবে ওঠার আগে হটাত দিয়া আর ঝিলিক দুইজনেই দাঁড়িয়ে পরে। ঝিনুক ভুরু কুঁচকে ওদের ওইভাবে দাঁড়িয়ে যাওয়াতে প্রশ্ন করে। লজ্জা মাখানো হাসি দুই তন্বী তরুণীর কাজল কালো চোখে। ওদের ক্যাবের বেশ কিছু দূরে দুটো ছেলে দাঁড়িয়ে, দিয়া আর ঝিলিক ওই দুটো ছেলেকে দেখে রিশুর চোখের আড়াল করে হাত তুলে একটু আঙ্গুল নাড়িয়ে বিদায় জানায়। রিশু ততক্ষনে ক্যাবের মধ্যে সামনের সিটে উঠে বসে গেছে।
ক্যাবের পেছনের সিটে বসার আগে ঝিলিককে জিজ্ঞেস করে ঝিনুক, “কে?”
গলা নামিয়ে ফিসফিস করে উত্তর দেয় দিয়া, “আরে ঝিনুকদি, এই জাস্ট কোলকাতা এয়ারপোর্টে দেখা হয়েছিল।”
ঝিলিকের চোখের তারায় চমক, “তুই আমার মিষ্টি দিদি, কিছু না রে, জাস্ট ফ্লারটিং।”
ঝিনুক বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মৃদু হেসে বলে, “ফ্লারটিং ঠিক আছে, কিন্তু অন্য কিছু হলে আগে থেকে জানিয়ে দে।” দিয়ার দিকে দেখে বলে, “তোর দাদাভাই জানতে পারলে কি হবে জানিস তো?”
দিয়া ঝিনুকের গালে ছোট চুমু খেয়ে হেসে বলে, “তুমি রক্ষাকর্ত্রী। তবে সত্যি বলছি জাস্ট ফ্লারটিং।”
ক্যাবে ওঠার আগে দুই তন্বী দুষ্টু মিষ্টি তরুণীকে সাবধান করে দেয় ঝিনুক। ক্যাবে উঠে বাড়ির পথে যাত্রা শুরু করে ওরা। সামনের সিটে রিশু, পেছনের সিটে বসে তিন সুন্দরী। এতদিন পরে তিনজন একসাথে সামনা সামনি একে অপরকে পেয়েছে, কথার ফুলঝুরি ছুটছে পেছনের সিটে। দুই দিন পরেই বছর শেষ, দিয়া আর ঝিলিক দুইজনেই রিশুর কাছে আবদার করে পাবে যাবে পার্টি করতে। ঝিনুক আর রিশুর চোখে চোখে কথা হয়, কি করতে চাও? ঝিনুক চোখ টিপে শান্ত করে বলে পরে দেখা যাবে।
বাড়িতে পা রাখতেই ঝিলিক ছোট ফ্লাটের চারপাশ দেখে দিদিকে হাসি মুখে বলে, “বেশ তো সাজিয়ে নিয়েছিস?” দিদির সামনে দাঁড়িয়ে দিদির কাঁধে হাত রেখে চোখে চোখ রেখে হাসি মুখে বলে, “আগে তোকে একটু দেখি।” এই সেই দিদি, সেই নিদারুণ দুর্যোগের রাতে গলায় দড়ি দেওয়ার কথা চিন্তা করছিল, এই সেই দিদি এই কয় দিন আগে পর্যন্ত হাসি মুখে ওদের সাথে কথা বললেও ঝিলিক দিদির বুকের বেদনা বুঝতে পারত।
ভুরু কুঁচকে বোনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি অমন দেখছিস বলতো?”
দিয়া মুচকি হেসে ওকে বলে, “দেখছি যে ঝিনুকদি কোলকাতা ছেড়ে এসেছিল আর এই ঝিনুকদি কত ডিফারেন্ট।”
ঝিলিক হটাত দিদিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে, “তুই চলে যাওয়ার পরে বাড়িটা ভীষণ ফাঁকা হয়ে গেছে রে।”
হটাত করে এইভাবে কাঁদতে দেখে ঝিনুকের গলা ধরে আসে, “এই মেয়ে এমন ভাবে কাঁদে না, দেখ এই তো আমি।”
জল ভরা চোখে রিশুর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে, “মেনি থাঙ্কস জিজু।”
রিশু ওর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলে, “আরে পাগলি মেয়ে, দিল্লী দুর নাকি কোলকাতা থেকে? ফ্লাইটে মাত্র দুই ঘন্টা লাগে।”
চোখ মুছে হেসে ফেলে ঝিলিক, “তাও তো ফ্লাইট ছাড়ার দুই ঘন্টা আগে যাও, এখানে এসে লাগেজ নিতে নিতে আরো এক ঘন্টা, সব মিলিয়ে পাঁচ ঘন্টা লেগে যায়।”
ওর কথা শুনে সবাই হেসে ফেলে। দিয়া বান্ধবীকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “এই দেখ কেমন একা একা চলে এসছি, এরপর দাদাভাই টিকিট কেটে দিলেই চলে আসব।”
মৃদু হাসে ঝিলিক, দিদির দিকে দেখে বলে, “জানিস, তুই যেদিন দিল্লী চলে এলি সেদিন বাড়ি ফিরে বাবা তোর পড়ার টেবিলে অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে ছিল।
পরিস্থিতি হাল্কা করার জন্য রিশু ওদের বলে, “আজ রাতে ডিনার বাইরে করব।”
ওদের বাড়িতে রেখে রিশু হসপিটালের জন্য বেড়িয়ে যায়। হসপিটালে পা রাখতেই এইচ.ও.ডি ডক্টর ধিলোন ওকে জানায় যে ওর লন্ডনে যাওয়ার ভিসা এসে গেছে। এডমিন ডিপার্টমেন্ট থেকে ভিসা হাতে পেয়ে বেশ খুশি হয় রিশু। ভিসা হাতে নিয়ে কেবিনে বসে সব থেকে আগে মাকে ফোন করে জানায়। তারপরে ঝিনুকেকে ফোন করে জানিয়ে দেয় ভিসার কথা। কয়েকদিন পরেই লন্ডন চলে যাবে শুনে একটু মন খারাপ লাগে ঝিনুকের কিন্তু ওর ডাক্তারের প্রোফেশানাল ক্যারিয়ারের জন্য এই সেমিনার ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ইন্দ্রজিৎ কেও ফোন করে জানিয়ে দেয় ওর লন্ডন যাওয়ার কথা, সেই সাথে এটাও জানায় যে দিয়া আর ওর শ্যালিকা ঝিলিক এসেছে। ইন্দ্রজিৎ জানায় যে এর মাঝে একদিন সময় পেলে ওদের বাড়ি ঘুরে যাবে।
ঝিনুক দুই বোনকে পেয়ে ওর মধ্যে একটা অভিভাবক স্বত্বা দেখা দেয়। কাজের মেয়ে যদিও বেশির ভাগ রান্না করে রেখেই যায় তাও বোন আর ননদিনীর জন্য নিজে হাতে কিছু একটা বানাতে ইচ্ছে করে। দুইজনকে এক এক স্নান সারতে বলে রান্না ঘরে ঢুকে পরে ঝিনুক। গতরাতে কাটা রুই আনা হয়েছিল সেটাই ভাজতে বসে যায়। দিদিকে রান্নাঘরে মাছ ভাজতে দেখে ঝিলিকের অবাক লাগে সেই সাথে দিয়া আর ঝিলিক বেশ হাসাহাসি করে।
দুপুরে খাওয়ার পরে বসার ঘরে বসে ওদের আড্ডা জমে ওঠে। ঝিনুক জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ আর কলেজের কি খবর?”
দিয়া দুই হাত তুলে আড়ামোড়া খেয়ে আড় চোখে বান্ধবীর দিকে চোখ টিপে ঝিনুকের প্রশ্নের উত্তরে বলে, “বিন্দাস আছি।”
ঝিনুক ওদের বলে, “পড়ার বই নিয়ে এসেছিস তো, না হলে তোর দাদা ভীষণ রেগে যাবে।”
ঝিলিক চোখ টিপে বলে, “ইয়ার ঘুরতে এসেও পড়া পড়া, হ্যাঁ রে বাবা নিয়ে এসেছি। জিজু তো মাত্র চারদিন পরেই চলে যাবে তারপর…”
গম্ভির হয়ে যায় ঝিনুক, “তোর জিজু চলে যাবে তারমানে এই নয় যে আমি থাকবো না। সামনে পরীক্ষা তোদের, পড়াশুনা করতেই হবে।”
দিয়া ঝিনুকের গলা জড়িয়ে আদুরে গলায় বলে, “আরে বাবা প্লিজ এই কটা দিন মাত্র। দাদাভাই রোজদিন আমার আর ভাইয়ের পড়ার খবর নেয়। এই কটা দিন প্লিজ দাদাভাইয়ের হাত থেকে রেহাই দাও। বাড়িতে মাম্মা আর মাথার ওপরে দাদাভাই।”
ঝিলিকও আদুরে কন্ঠে বলে, “কোথায় একটু ঘুরে বেড়াব না তা না বই নিয়ে আসো, পড়াশুনা করতে হবে, ধ্যাত।” নাক কুঁচকে দিদিকে ঠাট্টা করে বলে, “জিজুর পাল্লায় পরে তোর বুলি পালটে গেছে, তুই এখন অনেক বড় বড় কথা বলছিস, নিজের বেলায় দেখ তো, কত পড়াশুনা করেছিস…”
মাথা ঝাঁকিয়ে হেসে ফেলে ঝিনুক, সত্যি কথা, এক প্রকার জেদের বশেই সায়নেস নিয়ে পড়েনি, এমন কি এমবিএ পড়ার সময়েও শুধু মাত্র বাড়ি থেকে বার হতে পারবে এই ভেবেই মাস্টার্স নিয়েছিল। তাও দুই মিষ্টি তন্বী তরুণীকে শান্ত করে বলে, “কিন্তু তোর জিজু জানতে পারলে আমাকে বাড়ি থেকে বার করে দেবে কিন্তু।” বলেই হেসে ফেলে।
হাসিতে ফেটে পরে দিয়া, দাদাভাই হসপিটাল যাওয়ার আগে যেমন ভাবে ওর ঝিনুক দিদির দিকে তাকিয়ে ছিল তাতেই ভীষণ হাসি পেয়ে গেছিল ওর আর ওর বান্ধবীর। হাসতে হাসতে ঝিনুকের থুঁতনি নাড়িয়ে বলে, “উফফ আমি শুধু ভাবছি দাদাভাই এই শীতে দশ দিন লন্ডনে কি করে একা একা বৌ ছেড়ে থাকবে।”
সেই নিয়ে আরো কিছুক্ষন ওদের মধ্যে হাসাহাসি হয়, তারপরে ঝিনুক হাসি থামিয়ে ওদের জিজ্ঞেস করে, “একটা সত্যি কথা বল তো, ওই যে এয়ারপোর্টে যাদের দেখে তোরা হাত নাড়ালি তারা আসলে কে?”
দিয়া আর ঝিলিক একে অপরের মুখ চেয়ে দেখে তারপরে ঝিলিক বলতে শুরু করে, “আরে ওদের সাথে কোলকাতা এয়ারপোর্টে দেখা। ওদের মধ্যে একটা লম্বাটে ছেলে দেখেছিলি না…” ঝিনুক মাথা দোলায়, হুম। ঝিলিক দিয়াকে দেখিয়ে বলে, “ওটা প্রভাত, ওটা দিয়ার…” বলেই চোখ টেপে।
দিয়া মুচকি হেসে ঝিলিকের কথার রেশ টেনে বলে, “আর একটা একটু গোলগাল মতন ছিল, শুভেন্দু, ঝিলিক কে দেখে পাগল পুরো…”
ঝিলিকের গালে রক্তিমাভা দেখা দেয়, দিয়াকে একটু ঠ্যালা মেরে বলে, “ধ্যাত, শালা একটু মোটা।”
দিয়া নাক কুঁচকে বলে, “উহহহ বাবা, কোক কিনে দিল তোর জন্য চুকচুক করে সেই কোক খেলি তো।” ওদের কথা শুনতে শুনতে অবাক হয়ে যায় ঝিনুক।
ঝিলিক ইয়ার্কি মেরে দিয়াকে বলে, “বাঃবা তুই ও তো কোক খেয়েছিল রে।”
হেসে ফেলে দিয়া, তারপরে ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে বাকি গল্প বলতে শুরু করে, “আসলে সিকিউরিটি চেকের পরে হাতে অঢেল সময়, আমরা ভেতরের একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসে সেখানেই ওদের সাথে দেখা। ওরা দুই বন্ধু শিবপুর থেকে পাস আউট, এই গুরগাও না কোথায় যেন একটা কোম্পানিতে এপ্রেন্টিসশিপ পেয়েছে।”
দুপুরের পরে রিতিকার ফোন এলো, একত্রিশ ডিসেম্বরে কি করছে জানতে চায়। ঝিনুক জানায় এখন কোন পরিকল্পনা করেনি কোথাও যাওয়ার তবে ওর বোন আর ননদিনী এসেছে সেটা জানাতে ভোলে না। সেই সাথে এটাও জানায় যে দিয়ার আর ঝিলিকের ইচ্ছে সেই রাতে কোন নাইট ক্লাবে যাওয়ার। রিতিকা ঝিনুকের বিয়েতে আসেনি তাই দিয়ার আর ঝিলিকের সাথে পরিচয় হয়নি। পার্টিতে গেলে দেখা হয়ে যাবে। দিদির মুখে রিতিকার নাম অনেক বার শুনেছে ঝিলিক তাই দিদিকে প্রশ্ন করে, কি ব্যাপার। হেসেই উত্তর দেয় ঝিনুক, কলেজের সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা পেছনে ফেলে এগিয়ে এসেছে ওরা। এই তো সেদিন দুই বান্ধবী একসাথে মিলে পার্লার গিয়ে পাঁচ ঘন্টা নিজেদের পরিচর্যায় বারো হাজার টাকা খরচ করে এসেছে। সেটা শুনে তিনজনেই হেসে ফেলে।
সেই রাতে বাইরে ডিনার করতে গিয়ে দুই তরুণীর মুখের দিকে তাকিয়ে শেষ পর্যন্ত ঝিনুক রিশুকে বলে, “এই শুনছো।”
রিশু মাথা দোলায়, “হুম।”
ঝিনুক বলে, “থারটি ফার্স্ট কোন নাইট ক্লাবে গেলে হয় না?”
ভুরু কুঁচকে ঝিনুকের দিকে তাকায় রিশু, “না না, তোমাদের থারটি ফার্স্ট ছুটি আমার নেই। তিন তারিখ আমার লন্ডন যাওয়ার টিকিট হয়ে গেছে, তার আগে অনেক চাপ।”
দিয়া আর ঝিলিক মুখ কাঁচুমাচু করে ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে থাকে। ঝিনুক ওদের ইশারায় আসস্থ করে রিশুকে আরো একবার বলে, “রাতের দিকে যাবো তো, তুমি হসপিটাল থেকে ফেরার পরে।”
রিশু একবার দিয়ার আর একবার ঝিলিকের দিকে দেখে ঝিনুককে গম্ভির গলায় বলে, “এখানে এসেই, এই পার্টি নিয়ে তোমার মাথা খেয়েছে?”
পার্টি করার ইচ্ছেটা ঝিনুকের মনের মধ্যে একটু ছিল তাই মৃদু হেসে বলে, “আরে না না, থারটি ফার্স্ট একটু পার্টি করা যাবে এই আর কি।”
মাথা দোলায় রিশু, “আচ্ছা দেখা যাবে। আর কেউ সাথে আছে নাকি?”
দিয়ার বুক কেঁপে ওঠে, ওর দাদা কি এয়ারপোর্টে প্রভাত আর শুভেন্দুকে দেখে ফেলেছে নাকি? ঝিনুক সঙ্গে সঙ্গে রিশুকে হেসে বলে, “রিতিকা বলছিল যাওয়ার কথা। আর না হয় ইন্দ্রজিৎদা আর শালিনীদিকে ডেকে নেবো।”
হেসে ফেলে রিশু, “হ্যাঁ তোমার ড্রিঙ্ক করার সাথী পেয়ে যাবে তো।” হাসি মুখে কথাটা বললেও একটু ঠেস দিয়েই বলে রিশু।
মুখ গোমড়া করে ঝিনুক রিশুকে বলে, “আচ্ছা বাবা যেতে হবে না। একদিন তো শুধু মাত্র ড্রিঙ্ক করলাম।”
হেসে ফেলে রিশু, “আচ্ছা ঠিক আছে, দেখি ইন্দ্রজিৎ আর শালিনী যদি ফ্রি থাকে।” একটু থেমে দিয়ার দিকে দেখে বলে, “আমি আগামী কাল হসপিটাল থেকে এসে কেমিকাল বন্ডিং আর ওরবিটাল স্ট্রাকচার নিয়ে জিজ্ঞেস করব, তারপরে ডিসাইড করব কোথায় পার্টি করা যাবে।”
ডিনারের টেবিলে পড়াশুনার কথা শুনে দিয়ার মুখ গোমড়া হয়ে যায়, “দাদাভাই, এই কটা দিন মাত্র।”
তর্জনী উঠিয়ে বোনকে চুপ করিয়ে দেয় রিশু, গম্ভির কন্ঠে বলে, “থারটি ফার্স্ট যদি নাইট ক্লাব যেতে চাস তাহলে ভালো করে চ্যাপ্টার পড়ে রাখিস।”
রিশুর চশমার পেছনে শান্ত বুদ্ধিদীপ্ত জ্বলজ্বলে চোখ দেখে ঝিলিকের খাওয়া থেমে যায়। টেবিলের ওইপাশে যেন একটা বিশাল সুন্দরবনের বাঘ বসে। ওর বন্ধু বান্ধবীদের কাছে তাদের জামাই বাবুদের সম্বন্ধে যা শুনেছে সেই সব ভুল প্রমানিত হয় রিশুর সামনে। ওর বন্ধু বান্ধবীর জামাই বাবুরা ভীষণ মিশুকে, ওর জামাই বাবু মিশুকে হাসি খুশি বটে তবে ভিন্ন মাটির মানুষ, খুব সংযত।
ঝিলিকের খাওয়া থামিয়ে ওর দিকে ওই ভাবে চেয়ে থাকতে দেখে রিশু বাঁকা হেসে বলে, “পড়াশুনার নাম শুনলেই গায়ে জ্বর আসে নাকি?”
বোনের আর দিয়ার মুখ শুকনো দেখে রিশুকে একটু ঝাঁঝিয়ে বলে ঝিনুক, “দিলে তো মেয়ে দুটোর বিকেলটা নষ্ট করে। এখানে একটু মজা করতে এসেছে, একটু ঘুরে বেড়াবে একটু ফ্রিতে থাকবে, তা না। তোমার দাদাগিরি এখানেও ফলানো উচিত।” তারপরে দিয়া আর ঝিলিকের দিকে দেখে ইশারায় আস্বস্থ করে।
মাথা নাড়ায় রিশু, “আমি বুড়ো হয়ে গেলেও ও আমার বোন থাকবে আর আমি ওর দাদা থাকব।” তারপরে দিয়া আর ঝিলিকের ব্যাথিত চেহারা দেখে হাসি মুখে বলে, “আচ্ছা বাবা, টেস্ট নেবো না। কিন্তু আমি যাওয়ার পরে পড়াশুনা যেন করিস।”
সঙ্গে সঙ্গে হাসি মুখে ঝিলিক আর দিয়া একত্রে বলে ওঠে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, তুমি লন্ডন থেকে এসে আমাদের টেস্ট নিও।”
রেস্টুরেন্টে বসেই ঠিক করা হল, যে একত্রিশ ডিসেম্বরে ওরা সবাই মিলে একটা নাইটক্লাবে পার্টি করতে যাবে। ইন্দ্রজিৎ আর শালিনীকেও ফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়। ঠিক করা হয় শালিনীর চেনাশোনা, সুজিত বাবুর ফাইভ স্টার হোটেলের নাইট ক্লাবে পার্টি করতে যাওয়া হবে। ঝিনুকও রিতিকাকে থারটি ফার্স্ট এর পার্টির কথা জানিয়ে দেয়। ওদের ঠিক হয় যে সবাই বিকেলের মধ্যে রিশুর বাড়িতে পৌঁছে যাবে তারপরে সেখান থেকেই সবাই মিলে ক্যাবে করে হোটেলে যাওয়া হবে।

বাড়ি ফিরতে একটু রাত হয়ে যায় ওদের। ক্যাবে সারা রাস্তা পেছনের সিটে বসে যথারীতি তিন কন্যের হাসাহাসি গল্প চলতে থাকে, রিশু মাঝে মাঝে যোগদান দিলেও একটু সংযত মাত্রা রেখেই গল্প করে। রেস্টুরেন্টে বসে ওইভাবে পড়াশুনা নিয়ে কথাটা উঠানো ঠিক হয়নি সেটা বুঝতে পারে রিশু, যার জন্য ওর মিষ্টি শ্যালিকা একটু বেশি চুপচাপ। দিয়া জানে ওর দাদার স্বভাব, বাইরে থেকে কড়া হলেও ভেতরটা খুব নরম, যখন যা চায় মুখ থেকে বলার আগেই পেয়ে যায়। মায়ের কাছে এই নিয়ে দাদাভাই প্রচুর বকুনি খায়। ছোট বেলায় মনে আছে, দাদাভাইয়ের হাতের ওপরে ঘুমিয়ে পড়ত। বাড়িতে কোথাও কোন দুষ্টুমি করলে মা ওকে যখন মারতে আসত তখন দাদাভাইয়ের পড়ার টেবিলের তলায় এসে লুকিয়ে পড়ত। ওদের বাড়িতে একটা ফটো আছে যেটা ওর খুব পছন্দের, তখন দিয়া খুব ছোট হাঁটতেও পারে না, হামাগুড়ি দেয়। সোফার ওপরে দাদাভাইয়ের বুকের ওপরে পাছা উলটে ঘুমিয়ে আর ওকে বুকের ওপরে জড়িয়ে ধরে দাদাভাইও ঘুমিয়ে পড়েছে। মা সেই ফটোটা সঙ্গে সঙ্গে তুলেছিল। আরো একটা ছবি ওর খুব পছন্দের, দাদাভাই তখন দিল্লী চলে এসেছে ডাক্তারি পড়তে, দিপ সবে হয়েছে। দিপের জন্ম হয়েছে শুনেই দাদাভাই কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়েছিল। সদ্যজাত কচি দিপকে ডাক্তার ওদের সামনে নিয়ে এসেছে, সেই সময়ে দাদাভাই দিপকে কোলে নিয়ে কেঁদে ফেলেছিল, পাপা সেই ছবিটা তুলেছিল। দাদাভাইয়ের নাকের ডগায় এক ফোঁটা জল আর সদ্যজাত দিপ চোখ মেলে দেখতেও পারেনা। এই দুটো ছবি ওর খুব প্রিয়।
দিয়া আর ঝিনুক গল্পে মত্ত, কলেজে কি চলছে, বাড়িতে কি চলছে এই সব নিয়েই। ঝিলিক মাঝে মাঝে কথা বলে আর ভাবে, সামনের সিটে বসা মানুষটা কেমন হতে পারে। সংযত গম্ভির, চোখের দিকে দেখে বোঝা খুব মুশকিল মনের ভেতরে কি চলছে। অনেকের চোখ প্রচন্ড কথা বলে কিন্তু সেই তুলনায় ওর জিজুর চোখ ভীষণ শান্ত। দিদির কাছেই শুনেছে জিজু মদ সিগারেট কোন কিছুর নেশা করে না। হসপিটালে থাকলে কারুর ফোন উঠায় না, বাড়িতে এসেও অনেক রাত পর্যন্ত নিজের পড়াশুনা নিয়েই ব্যাস্ত থাকে। বন্ধু বান্ধব বলতে ওই এক ইন্দ্রজিৎদা আর শালিনীদি যাদের সাথে বিয়েতেই পরিচয় হয়েছিল।
ঝিলিককে চুপচাপ দেখে রিশু ঘাড় ঘুরিয়ে শ্যালিকাকে প্রশ্ন করে, “কি ব্যাপার, তুই ঠান্ডায় জমে গেলি নাকি?”
গলার আওয়াজটা মনে হল বহুদুর থেকে ওর কানে প্রবেশ করেছে, এতক্ষন শুধু মাত্র দিদির প্রানখোলা হাসি আর ওর বান্ধবীকেই দেখে যাচ্ছিল। আচমকা জিজুর গলা পেয়ে জিজ্ঞেস করে, “কিছু বললে কি?”
মৃদু হেসে ফেলে রিশু, “বলছিলাম তুই এত চুপচাপ আছিস কেন?”
মৃদু হাসে ঝিলিক, “না কিছু না।”
রিশু প্রশ্ন করে, “কোন জিন্স কিনবি?”
জিনসের কথা শুনে দিয়া চেঁচিয়ে ওঠে, “লিভাইসের স্টোন ওয়াশ আর একটা টরন জিন্স।”
রিশু হেসে বলে, “তুই শুধু জিন্স জিন্স করেই গেলি।”
দিয়া মুখ ভার করে বলে, “সেই তো লাস্ট মান্থে একটা কিনে দিলে, এই মাসে কই কিনে দিলে।”
রিশুর সাথে ঝিনুক আর ঝিলিকও হেসে ফেলে। ঝিনুক ওকে জিজ্ঞেস করে, “তোর জিন্স খুব পছন্দ?”
মাথা দোলায় দিয়া, “হুম ভীষণ।” বাড়িতে একটা আলমারি ভর্তি ওর পোশাক আশাক, জিন্স টপস শারটস শর্টস পার্টি ড্রেস বডিকন ড্রেস ইভিনিং গাউন পার্টি গাউন নানা ধরনের নানান ডিজাইনের পোশাক আশাক জুতো সব কিছু দাদাভাইয়ের কিনে দেওয়া।
রিশু হেসে বলে, “ওর ওয়ারড্রোব দেখলে মাথা তোমার খারাপ হয়ে যাবে। কি নেই ওর কাছে, কি সব নাম বলে আমাকে কখন ইমেল করে কখন হোয়াটসএপ করে লিঙ্ক পাঠায়।”
ম্লান হাসে ঝিলিক, “হ্যাঁ আমি দেখেছি।”
ওর দিদি এমন কোনদিন ছিল না। একটু বড় হতেই দিদির সাথে দূরত্ব বেড়ে যায় ওর। দিদি যখন কলেজে তখন বোনের সাথে রেশারেশি, বড় হলেও দিদি ওর পোশাক আশাক সাজার জিনিস পত্র কোনদিন ওকে ছুঁতে দিত না। পার্থের সাথে সম্পর্ক চলাকালীন ওর দিদি এক ভিন্ন গ্রহের বাসিন্দা হয়ে গিয়েছিল। সারাক্ষন শুধু মাত্র ফোনের মধ্যেই ঢুকে থাকত। জিজুর সাথে বিয়েটা হওয়ার পরেই দিদির আমূল পরিবর্তন হয়েছে, মায়ের সাথে ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করে, ওর সাথে দিয়ার সাথে গল্প করে।
ঝিলিককে চুপ করে থাকতে দেখে ঝিনুক ওর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে যায়। বোনের হাতের ওপরে হাত রেখে মৃদু গলায় বলে, “কি ভাবছিস?”
দিদির চোখের দিকে তাকিয়ে মাথা দোলায় ঝিলিক, “না রে কিছু না।”
দুষ্টু মিষ্টি শ্যালিকার গলার আওয়াজ নেমে গেছে সেটা অনুধাবন করতে অসুবিধে হয় না রিশুর তাই হেসে বলে, “কি ব্যাপার রে, রেস্টুরেন্টে পড়াশুনা নিয়ে বলেছি বলে আমার ওপরে রাগ হয়েছে নাকি?”
ঝিলিক মাথা নাড়ায়, “না…” তারপরে হেসে বলে, “তোমার মতন মানুষের ওপরে রাগ করে থাকা যায় নাকি?” একটু থেমে মজার ছলেই জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা জিজু, তুমি এত চুপচাপ কেন?”
হেসে ফেলে রিশু, রূপসী স্ত্রীর দিকে চোখ টিপে দুষ্টু মিষ্টি শ্যালিকাকে উত্তর দেয়, “তোর দিদি প্রথম রাতেই যা ধ্যাতানি দিয়েছিল তারপরে আর মুখ খুলতে পারিনি।”
ওই কথা শুনে ঝিনুক ছাড়া বাকি সবাই হেসে ফেলে। ঝিনুক স্বামীর দিকে রোষকষিত জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “কি এমন বলেছিলাম…” বলেই মুখ টিপে হেসে ফেলে।
দিয়া আর ঝিলিক, ঝিনুকের হাসি দেখে সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন করে, “কিছু একটা তো হয়েছিল।” ঝিলিক ওর দিদির কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি রে কি হয়েছিল বল না।”
রিশু ঘাড় ঘুরিয়ে রূপসী প্রেয়সীর লাজুক চোখের দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে বলে, “বলো, বলো…”
ঝিনুক ভীষণ লজ্জা পেয়ে সামনে বসা রিশুর মাথায় আলতো চাঁটি মেরে বলে, “তুমি বাড়ি চলো তোমার হচ্ছে আজকে।”
দিয়া ওর ঝিনুকদিকে উত্যক্ত করে তোলার জন্য বলে, “বল না প্লিজ, দাদাভাই কিছু বলেছিল তোমাকে?”
না, এত বড় মিথ্যে কথা ওর গলায় পাড়া দিলেও বলতে পারবে না ঝিনুক। দিয়ার গালে হাত দিয়ে আদর করে বলে, “না রে তোর দাদাভাই কিছু বলেনি।” তারপরে লজ্জায় নিচের ঠোঁট কেটে বলে, “আমি ওকে সোফায় শুতে বলেছিলাম।” বলেই রিশুর মাথায় চাঁটি মেরে অভিমানী কন্ঠে বলে, “তোমায় আজকে আমি কেটেই ফেলব।”
ঝিলিক আর দিয়া হাসিতে ফেটে পরে। হাসতে হাসতে ঝিলিক ওদের বলে, “ইসস জিজু তুমি প্রথম রাতে সোফায় কাটিয়েছ? ইসস আমাকে বলতে আমি চলে আসতাম।” সবাই হেসে ফেলে।
রিশু ওদের জিজ্ঞেস করে, “লাস্ট অফ অল থারটি ফার্স্ট তাহলে পার্টি হচ্ছে?”
তিনজন সুন্দরী সমস্বরে বলে ওঠে, “বিলকুল হচ্ছে।”
ঝিলিক বলে ওঠে, “আমি আর দিয়া তো আগে থেকেই প্লান করে এসেছিলাম। আমরা তো পার্টি ড্রেস ও এনেছি।”
দিয়া বলে ওঠে, “ঝিনুকদি, আমাদের কিন্তু সেদিন বিউটিসিয়ান চাই।”
ঝিলিক ও বলে ওঠে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, এক নয় পার্লার না হলে বাড়িতে ডাক।”
ঝিনুক একটু হেসে বলে, “রিতিকাও আসছে। দেখি কোন বিউটিশিয়ান পেলে বাড়িতেই ডেকে নেব।”
মাথা দুলিয়ে হেসে ফেলে রিশু, “আমার কিন্তু সেদিন ডিউটি আছে।”
ঝিলিক ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “না জিজুকে সেদিন আর হসপিটাল যেতে হবে না।”
ঝিনুক বোনকে বুঝিয়ে বলে, “তোর জিজুর সেদিন ওপিডি আছে।”
এতক্ষন একটা চাপা আবহাওয়া ছিল গাড়ির মধ্যে সেটা কেটে যায়। বাড়িতে এসেও বেশ কিছুক্ষন গল্প গুজবে মেতে ওঠে ওরা সবাই। গল্প করতে করতেই রিশুর সুটকেস গুছাতে শুরু করে দেয়। এতদিন বেড়াতে যাওয়া মানেই বাড়িতে ফেরা, কোনদিন কোন কিছুই হাতে নিয়ে যেতে হয়নি বাড়িতে। হসপিটাল শেষে কাঁধে ল্যাপটপের ব্যাগ নিয়েই এয়ারপোর্টে চলে যেত। ওর বাড়িতে ওর সব জিনিস রাখা তাই কিছুই নিয়ে যেতে হত না। আর বেড়াতে গেলে মা সুটকেস গুছিয়ে দিত। সুটকেস ঘুছানো একটা মহা সমস্যা। ভারী জ্যাকেট, বেশ কয়েকটা সুট, দুই জোড়া জুতো, দাড়ি কাটার জিনিস পত্র ইত্যাদি গুছিয়ে নেয়। জামা আর প্যান্ট একদম শেষের দিনে গুছিয়ে দেবে।
ঝিনুক মুচকি হেসে ওর দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে বলে, “এত কিছু পারো আর একটা সুটকেস গুছাতে পারো না।”
দিয়া আর ঝিলিক ও দিদির কথা শুনে আর দাদাভাইয়ের অবস্থা দেখে হেসে ফেলে। বাড়িতে যখন কোথাও বেড়াতে যাওয়ার কথা উঠত ঝিনুক সুটকেস গুছাত, এই কাজটা বেশ ভালো ভাবেই পারে। সেই নিয়েই বেশ হাসাহাসি হয় ওদের মধ্যে। ঝিলিক ওর দিদিকে খেপায়, ওর দিদি নাকি একটা সুটকেস সব সময়ে গুছিয়ে রাখত, যদি ওদের বিয়ে না হয় তাহলে পার্থের সাথে পালাবে।
একত্রিশ ডিসেম্বরের সকাল, ঠান্ডাটা ভীষণ ভাবেই পড়েছে। দুই দুষ্টু মিষ্টি কন্যে বাড়িতে আসার পর থেকে রোজ দিন ঘুমাতে দেরি হয়ে যায়। সেদিন সকালে উঠেই ঝিলিকের দিদির কাছে আবদার, এখন একটা বিউটিশিয়ান ঠিক করা হয়নি। ঝিনুক জানায় রিতিকাকে বলে রাখা হয়েছে সেই ব্যাপারে দুপুরে রিতিকা বিইউটিশিয়ানকে সঙ্গে নিয়েই আসবে। দুপুরের পরে শালিনীও চলে আসবে। বিকেলে হসপিটালের পরে ইন্দ্রজিৎ আর রিশু বাড়ি ফিরলে ওরা সবাই মিলে সেই ফাইভ স্টার হোটেলের নাইট ক্লাবে পার্টি করতে যাবে। রিশু বেড়িয়ে যাওয়ার পর থেকেই বাড়িতে সাজ সাজ রব। নাইট ক্লাবে যাওয়াটা ঝিলিক আর ঝিনুকের কাছে সহজ হলেও দিয়ার কাছে এই যাওয়াটা অনেক। মাকে অনেক বলে কয়ে তারপরে দাদাভাইয়ের কাছে আবদার করে তখন দাদাভাই যদি ভালো মনে থাকে তবেই দাদাভাই মাকে বলে তবেই মায়ের কাছে অনুমতি পাওয়া যায়। বন্ধুদের সাথে বেশ কয়েক বার বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে পার্টি করেছে দিয়া তবে কোনদিন কোন নাইট ক্লাবে অথবা পাবে যায়নি।
সেদিন ওপিডি, তার ওপরে বছরের শেষ, অনেক ডাক্তার আগে থেকেই ছুটি নিয়ে নিয়েছিল। প্রচুর রুগী, শীতকালে মানুষের হাত পা এত কেন ভাঙ্গে, শীতকালেই যত দুর্ঘটনা ঘটে। এর মাঝেই একবার ইন্দ্রজিতের ফোন এলো, রিতিকা নামের মেয়েটা কে, কি করে, কোথায় থাকে ইত্যাদি হাজার প্রশ্ন। প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলেছিল রিশু, তুই তোর চরকায় তেল দে না রে ভাই। ইন্দ্রজিৎ ছাড়ার পাত্র নয়, কেমন দেখতে? রিশু ও মজা করে উত্তর দেয়, একদম ডানা কাটা পরীর মতন।
লাঞ্চের পরে বাড়িতে ফোন করে রিশু। বাড়িতে পাঁচজন মেয়ে নিজেদের নিয়ে ভীষণ ভাবেই মেতে উঠেছে। ওর ছোট ফ্লাট ভীষণ ভাবেই মেয়েদের কোলাহলে গমগম করে। হসপিটালে ছিল বলে বেশিক্ষন ভিডিও কলে কথা বলতে পারেনি ওদের সাথে। ঝিলিক নাক মুখ কুঁচকে হাত জোড় করে রিশুর কাছে কাতর আবেদন করে, প্লিজ জিজু তাড়াতাড়ি ফিরবে। হেসে ফেলে রিশু, একমাত্র শ্যালিকার এই আবেদন উপেক্ষা করা মুশকিল। মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দেয়, আচ্ছা দেখি পাঁচটার মধ্যে বেড়িয়ে যাবো।
দুপুরে লাঞ্চের পরেই শালিনী ঝিনুকের বাড়িতে পৌঁছে যায়। তার কিছু পরেই বিউটিশিয়ানকে নিয়ে রিতিকার আগমন ঘটে। পাঁচ জন মেয়েকে দেখে বিউটিশিয়ান ঈশা ভীষণ ঘাবড়ে যায়, এক হাতে এতগুলো মানুষের এক সাথে মেকআপ করা সম্ভব নয়। ঝিনুক একটু আধটু মেক আপ করতে জানে সেটা জানিয়ে দেয়। শুরু হয় ওদের সাজের পালা সেই সাথে গল্প মাতামাতি। অতি সহজে ঈশাও ওদের সাথে মিশে যায়। সাজের মাঝে আর গল্পের মাঝে দুই বার বাইরে থেকে অর্ডার দিয়ে খাবার আনা হয়ে গেছে। রিশু বাড়িতে নেই সেটা শালিনী জানত তাই এক বোতল হুইস্কি এনেছিল। সাজের আগে সবাই মিলে একটু মদ্যপান করে নেয়। বিশেষ করে শালিনী আর ঝিনুকের মদের প্রতি নজর একটু বেশি ছিল। বাঁধন ছাড়া হয়ে দিয়াও সাথে যোগদান করে, যদিও জানে যে ওর দাদাভাই যদি কোনদিন জানতে পারে তাহলে ওর কপালে মরন আছে। সাজতে সাজতে সন্ধ্যে গড়িয়ে যায়, ওদের সাজ গোজ প্রায় শেষের মুখে। ঘরিতে পাঁচটা বাজে, এতক্ষনে রিশুর হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে পরা উচিত। রিশুকে ফোন করতে গিয়ে একটা ছোট মেসেজ পড়ে ঝিনুকের মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে।
রিশুর একটা ছোট মেসেজ, “ইন ওটি। এমারজেন্সি এক্সিডেন্ট কেস। কল ইউ লেটার।”
মেসেজটা বিকেল সাড়ে চারটেতে করেছিল রিশু, ঝিনুক তখন সাজে ব্যাস্ত ছিল তাই আর তখন মেসেজ দেখা হয়নি। ঘড়ি দেখল ঝিনুক, এখন আর ফোন করে লাভ হবে না। শালিনী ইন্দ্রজিৎ কে ফোন করে রিশুর সম্বন্ধে জানিয়ে দেয়। ইন্দ্রজিতের ডিউটি শেষ, কিছুক্ষনের মধেই ওদের বাড়িতে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়ে দেয়। রিশুর বাড়ির দিকে যেতে যেতে ওদের বন্ধু ব্রিজেশকে ফোন করে রিশুর ব্যাপার জেনে নেয়। ব্রিজেশ জানায়, ওপিডির পরে বাড়ির ফেরার জন্য তৈরি ছিল রিশু, কিন্তু শেষ মুহূর্তে একটা গুরুতর দুর্ঘটনার কেস এসে যাওয়াতে আর কম ডাক্তারের জন্য ওকেই শেষ পর্যন্ত অপারেশান করতে যেতে হয়।
রিশুর বাড়িতে পা রাখতেই বাড়ির সবার মুখ থমথমে দেখে হেসে ফেলে ইন্দ্রজিৎ, “আরে ইয়ার এতে এত মন খারাপের কি আছে? চলো চলো ড্রেস আপ কর। দেখি কতক্ষনে আসে। না হলে আমরা বেড়িয়ে যাবো। ওকে বলে দেবো সোজা হোটেলেই চলে আসবে।” তারপরে ঝিনুকের ভারাক্রান্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে, “মিসেস সান্যাল, তুমি ডাক্তারকে বিয়ে করেছ তাও আবার এমসের মতন বড় হসপিটালের অরথোপেডিক সার্জেন।”
ওর উত্তরে মৃদু হাসি দেয় ঝিনুক, “হ্যাঁ বুঝতে পারছি।”
দিয়া জানে ওর দাদার ব্যাপারে, দাদাভাই একবার কোন কাজের মধ্যে ডুবে গেলে কারুর ফোন তোলে না। কতবার হয়েছে, মা বসে আছে মার্কেটে যাওয়ার জন্য কিন্তু দাদাভাই ওটিতে ব্যাস্ত, শেষ পর্যন্ত মা একাই ওদের নিয়ে শপিং করতে বেড়িয়ে যেত।
দিয়া মুচকি হেসে বলে, “দাদাভাইয়ের ব্যাপারে আমার জানা আছে। আমাদের শেষ পর্যন্ত নিজেই যেতে হবে হোটেলে।”
বাড়ি ভর্তি লোক, সবাই ওর বন্ধু স্থানীয়, সকাল থেকেই দিয়া আর ঝিলিক ভীষণ আনন্দে মেতে ছিল নাইট ক্লাবে যাবে। ওর মনের মধ্যেও পার্টি করার ভীষণ ইচ্ছে ছিল। কলেজে পড়াকালীন কোন বছর নিউ ইয়ারে পার্টি করা বাদ যায়নি ওর। বিয়ের পরে সেটা আমুল বদলে যাবে সেটা প্রথমে মানতে একটু কষ্ট হয়েছিল, এমনকি বিকেল পর্যন্ত ভীষণ খুশি ছিল যে প্রতিবারের মতন বন্ধু বান্ধবী বোন আর স্বামীর বেশে ওর প্রেমিকের সাথে নাইট ক্লাবে গিয়ে মদ খেয়ে নাচানাচি হই হুল্লোড় করা যাবে।
প্রায় সাড়ে সাতটা নাগাদ ঝিনুকের ফোন বেজে ওঠে, অন্য পাশে রিশু, “কি করছ?”
অনেকক্ষণ বাদে রিশুর গলার আওয়াজ পেয়ে প্রান ফিরে পায় ঝিনুক, এমনিতে রোজদিন ডিউটি শেষের পরে কথা হয় কিন্তু সেদিন সেই লাঞ্চের পরে আর কথা হয়নি তার ওপরে ওটি ডিউটি করেছে ভাবতেই মন কেমন করে ওঠে ওর।
রিশুকে জিজ্ঞেস করে, “ওটি শেষ?”
রিশু ছোট উত্তর দেয়, “হ্যাঁ।” একটু থেমে প্রশ্ন করে, “তোমরা তৈরি? ইন্দ্র এসে গেছে কি?”
ঝিনুক উত্তর দেয়, “হ্যাঁ আমরা সবাই তৈরি।”
ঝিলিক একটু জোরে বলে, “জিজু প্লিজ তাড়াতাড়ি এসো দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
ইন্দ্রজিৎ বলে, “তোর কত দেরি? আমরা কি বেড়িয়ে পড়ব?”
রিশু একটু ভেবে বলে, “হ্যাঁ সেটাই ভালো হবে, তোরা বেড়িয়ে পর আমি না হয় সোজা হোটেলে পৌঁছে যাবো।”
ঝিনুক ওকে বলে, “বাড়ি ফিরবে না? ওই জামা কাপড় পরেই যাবে নাকি?”
ম্লান হাসে রিশু, “তুমি বাকি সবাইকে নিয়ে ইন্দ্রর সাথে বেড়িয়ে পর আমি ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবো।”
শেষের দিকে রিশুর গলাটা অস্বাভাবিক রকমের শান্ত আর ক্লান্ত শোনায়। ঝিনুক প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে একটু বলবে?”
শুকনো উত্তর দেয় রিশু, “কিছু না একটু টায়ার্ড। তোমরা বেড়িয়ে পর।”
রিশুকে ছাড়া কোথাও যাওয়ার ভাবনা ভাবতেই পারছে না ঝিনুক, কিন্তু অন্যদিকে নাইটক্লাবে যাওয়াটা একদম মন থেকে বিদায় দিতেও পারছে না, সেই সাথে দিয়া ঝিলিক আর রিতিকার মুখের দিকে চেয়ে শেষ পর্যন্ত পার্টি পোশাক পরে সবাই তৈরি হয়ে নেয়।

More বাংলা চটি গল্প

Leave a Comment