– এই শুনছো? কি হলো?
বর উঠে পড়ল। দেখলাম ইতিউতি দেখছে । আর আমাকে সামনে পেয়েই আঁকড়ে ধরে নিল। বুঝলাম বাজে স্বপ্ন। ও মাঝে মাঝে ওই সব দেখে। দেখে আমাকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে মাঝ রাতে। আমি বুঝি আমাকে নিয়ে ও ইন্সিকিওর থাকে। না আমি চলে যাব ওকে ছেড়ে সেই জন্য না।
আমার কিছু হলে ও কি ভাবে থাকবে সেই চিন্তা ওকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। কিন্তু সেটা তো নর্মাল। আমার ও মাঝে মাঝে এই চিন্তা আসে। কিন্তু সেটা নিয়ে তো বসে থাকা যায় না। অনেক কস্টে যে মানুষ টা কে জীবনে মানিয়ে নিয়েছি, তার জন্য এই সব চিন্তা স্বাভাবিক। আজকে আমি যার বাচ্চার মা, সে যে আমার কাছে কত টা প্রিয়, সেটা আমি বুঝলেও, সেই মানুষ টা কে বোঝানো কঠিন হয়ে যায়। এই উপলব্ধি টা ওকে পেতে হবে। আমি চেস্টা করলেও এই উপলব্ধি টা ওকে করাতে পারব না।
best bangla golpo
সারা রাত আমার পেটে যন্ত্রণা করেছিল। বুঝলাম পিরিয়ড শুরু হবে। রাতে বর আবার ঘুমিয়ে যাবার কিছু পরেই আমার পিরিয়ড শুরু হলো। আমি বাথরুম থেকে প্যাড লাগিয়ে এসে শুলাম। কিন্তু ঘুম আসছিল না। খুব তলপেট ব্যাথা করছিল। বর কে তুলতেও ইচ্ছে করল না ঘুম থেকে। আহা কিছু তো করার ও নেই ওর। শুধু শুধু রাত জাগবে। ভোরের দিকে ক্লান্তি তে ঘুমিয়ে গেছিলাম আমি।
ঘুম যখন ভাঙল দেখলাম অনেক বেলা হয়ে গেছে। ধড়মড় করে উঠে বসতেই, দেখি আমার বর এক গাল হাসি নিয়ে একটা ট্রে তে করে দু কাপ চা নিয়ে আসছে। – গুড মর্নিং!!!
– গুড মর্নিং। সরি আমার উঠতে লেট হয়ে গেল।
– জানি আমাকে বলতে হবে না। আমি বুঝতে পারি সোনা। তুমি বস। চা খাও।
ততক্ষনে আমার খেয়াল পড়ল, এ মা!!!! আমার ছেলে মেয়ে দুটো? ওদের দিকে চাইতেই দেখলাম বিছানা খালি। বর সেটা বুঝে বলল
– নো চিন্তা। তাদের আমি তুলে, ফ্রেশ করিয়ে খাইয়ে দাইয়ে দিয়েছি। ওই যে এলো তোমার গুন্ডা
দেখলাম স্কেট চালিয়ে সোজা বিছানার কাছে এলো আমার ছেলে…. best bangla golpo
– গুড মর্নিং মামমাম।
– গুড মর্নিং সুনু।
মেয়েও এলো। তাকেও গুড মর্নিং করলাম। ওরা চলে গেল। আমি চেয়ে রইলাম বরের দিকে। ও চা ঢালছে আমার কাপ এ। ইশ কি মিস্টি এই লোকটা। কি করে সব বুঝে নেয় আমি না বলতেই। মিত্তি মিত্তি মিত্তি। এতোটাই মিস্টি যে মনে হয় মাঝে মাঝে খেয়ে নি ওকে।
উউউহহহহ ওই সবের চিন্তা আসলেই পিরিয়ডের সময়ে তলপেট এ যন্ত্রণা টা বেড়ে যায়। যাক বেড়ে। কি সুন্দর সকাল। আর ততোধিক মিস্টি আমার এই পরিবার। জন্ম জন্ম থাকুক আমার পিরিয়ডের যন্ত্রণা। ভাগ্যিস ছিল আমার পিরিয়ড!! ভাগ্যিস আমি এই ছেলেটাকে ভাল বাসতে পেরেছি।এ না থাকলে আমার কী হতো। কে এভাবে আমাকে ভালোবাসত। ভাগ্যিস!!!!!!!!!!!! best bangla golpo
মেয়েরা অভ্যস্ত হয়ে যায় নিজের জীবনের এই বাধ্যতা টা তে। কতজন বোঝে আমার বরের মতন যে, এই সময়ে মারাত্মক দুর্বল থাকি আমি। এই সময়ে কোন কাজ তো করতে ইচ্ছে করেই না, উলটে বর গায়ে হাত দিলেও মনে হয় ঠেলে সরিয়ে দি। এতো টাই দ্বিতীয় দিনে পেটে ব্যাথা করে। আর তার সাথে মারাত্মক ব্লিডিং হয়। সারা দিনে কম করে পাঁচবার আমাকে প্যাড বদলাতে হয়।
আমার বর বোঝে, আমাকে স্পেস দেয়। যাদের এই বোঝবার লোক টা নেই, তাদের তো এই সব নিয়েই কাজ কর্ম, ছেলে মানুষ, অফিস আদালত করতে হয়। ট্রেনে বাসে চড়ে অফিস ও যেতে হয়।
সারা দিন একলা বসে। মেয়ে আমার পাশে বসে আঁকছে না হলে পড়ছে। আর না হলে আমার সাথে কথা বলছে। বড্ড পেকেছে মেয়ে টা। মাঝে মাঝেই আমার পেটে হাত বোলাচ্ছে। জিজ্ঞাসা করতেই বলল.. best bangla golpo
– পাপা বলেছে, তোমার পেটে ব্যাথা।
– তাই? আজকে কে রান্না করল রে?
– পাপা আর রিঙ্কু মাসী।
– পাপা কি রাঁধল।
– জানিনা খেতে পারবে কিনা দেখ?
আমার হাসি পেয়ে গেল কথা টা শুনে। আমিও বলি ওর বাপ কে মাঝে মাঝে। ওর বাপ মাঝে মাঝেই আমাকে হটিয়ে রান্না ঘরে ঢুকে হুজ্জুতি করে। রাধে কিছু একটা। হয় চিকেন, না হলে ডিমের ঝোল। আমি বলি তখন কথাটা, মুখে গেলে হয়। কিন্তু রাধে ভালো। আসলে নিজের রান্না খেয়ে খেয়ে আমার ও ভালো লাগে একদিন অন্য হাতের রান্না। আর জানিনা, ওর রান্নায় নুন মিস্টি পারফেক্ট হয়। কি ভাবে হয় বলতে পারব না। আমি হেসে বললাম… best bangla golpo
– তোর ভাই আর পাপা গেলো কোথায়, দেখছি না বাড়িতে?
– পাপা আর ভাই বেড়িয়েছে।
– তুই গেলি না?
– তোমাকে একলা রেখে?
কথাটা, আমার মনের কোন গভীরে ঢুকে গেল ছুরির মতন। বিঁধল খুব কঠোর ভাবে আমাকে। কারন আমি বাড়ির কারোর ইমোশন কে কোন দিন পাত্তা দি ই নি। পাত্তা দি ই নি, আমার মা কে। ভালো হয়ত বেসেছি খুব ই। কিন্তু আমার মেয়ের মতন করে কোন দিন ভাবিনি। আমি তো শেখাই নি আমার মেয়েকে এই সব কোনদিন। নিজের থেকেই এসেছে এটা ওর। ও আঁকছে, আর আমি ওর থেকেই নিজেকে লোকাতে, উলটো দিকে মুখ ফিরিয়ে শুলাম। ফিরে গেলাম আমার ছেলেবেলায়। best bangla golpo
ভগবানের মার। কিছু তো করার নেই। মেনে নিলাম আমি একজন মেয়ে। মেনেও নিলাম আর বুঝতেও শিখলাম আমি ছেলে হতে পারব না। যতই খেলা ধুলা করি, জতই ছেলেদের প্যাদাই, সেই কোন ছেলের সিমেন এ আমার পেটে বাচ্চা আসবে। বলে না যখন কিছু করার থাকে না, তখন সেই না করতে পারা টাকে, জিবনের অঙ্গ বানিয়েই সামনে দেখতে হয়।
কেউ শেখায় নি সেটা আমাকে। কিন্তু বুঝে গেছিলাম। তাই ছেলে হতে না পারি, কিন্তু অনেক বেটার হতে পারব এই আশা মনের মধ্যে তৈরি হয়ে গেছিল। মন টা শক্ত হয়ে গেছিল। বুঝে গেছিলাম, এই বাধ্যতা, এই ব্যাপার গুলো কে সামনে নিয়েই আমার এগিয়ে যেতে হবে। অনেক দূর। অনেক অনেক দুর।
ওই সব চিন্তা মন থেকে সরিয়ে ফেললাম। পুরো মাত্রায় কন্সেন্ট্রেট করলাম পড়াশোনায়। সাথে খেলা ধুলা টাও চলত আমার।মাঝে মাঝে, বড়দি আর অর্জুন আসত। তবে ওদের আসা কমে গেছিলো অনেক। সেদিনের আমার মার খাবার পরে, আগের মতন প্রতিমাসেই আসত না। বড়দির সাথে মেজদির সম্পর্ক টাও ভেঙ্গে গেছিল অনেক টা। বড়দি মেজদি আলাদা আলাদা আসত। হয়ত ওদের ছেলে, মেয়েরা বড় হচ্ছিল, পরীক্ষা, আলাদা বোর্ড, সে কারনেও হতে পারে, স্কুল ছুটির সময় আলাদা। কিন্তু পুজো পার্বন ছাড়া, ওদের একসাথে আমি আর কোন দিন ও দেখিনি। best bangla golpo
বুঝতে পারছিলাম, বড়দি আসতে আসতে ভেঙ্গে পড়েছিল কোন কারনে। শুনেছিলাম, বড়জামাইবাবুর ব্যবসা তে বেশ বড় রকম সমস্যা চলছে। বাবাও না কি দেদার টাকা ঢালছে সেখানে। যাক ওদের ব্যাপার ওরা বুঝুক। আমার কী? আমি তো বাড়ির ভবিষ্যৎ তেজ্য কন্যা।
মা কে জিজ্ঞাসা করতে বলেছিল, মাস ছয়েকের মধ্যেই নাকি রিকভার করেছিল বড়দি রা। বাবাকে নাকি টাকাও ফেরত দেওয়া শুরু করেছিল জামাইবাবু। ভালো। আমার চিন্তা ছিল অর্জুনের পড়াশোনা নিয়ে। যাক তবে ঠিক আছে। আমার পড়াশোনার টাকা বাবাই যোগায়। কিন্তু সেটা মা আর কাকীমার মাধ্যমে।
আমিও যে দিদির মতই ভাল পড়াশোনা তে সেটা মা আর কাকীমা জেনেছিল। ছোড়দির মতন যেন কোন স্টেপ না নি সেই জন্য, কোন কিছুর অভাব রাখে নি ওরা। যা দরকার হতো সেটা বললেই পেয়ে যেতাম আমি টাকা। ইশ ছোড়দি কে দিলে আজকে সে বাড়িতে থাকত। বাবার উপর থেকে রাগ আমার কোন দিন ই যাবে না। একটা লেজেন্ডারি লেভেলের গোঁয়ার আর অশিক্ষিত একটা লোক। best bangla golpo
আমার সাথে অর্জুনের সম্পর্ক টা কথার থেকে বেশি ইশারায় ছিল। কথা খুব কম বলত ও। ভাত দিলে খেয়ে নেবে। না দিলে চাইবেও না। বকলে শুনে নেবে। না বকলেও পরোয়া নেই। যেটা করার সেটা করবে। ওর মা ওকে ডেকে ডেকে না খাওয়ালে , কোন দিন ও দেখতাম না ও খেতে চেয়েছে। বা বলেছে মা খিদে পেয়েছে। আমার ভাই টা ছিল উল্টো। সারাদিন কথার খই ফুটছে মুখে। কিন্তু ও আবার আমাকে ভয় পেত। আমি হয়ত ওকে সহ্য করতে পারতাম না, কিন্তু ও কোনদিন ও আমাকে কোন দুঃখ কস্ট দেয় নি।
বরং ওকে নিয়ে বাবা ঠাকুমা দাদু যা আদিখ্যেতা করত তাতে আমার রাগ টা বেশী হত। আমার মায়ের ও আদিখ্যেতা ছিল ভাই কে নিয়ে। আর সেটাই ছিল আমার রাগের কারন। আমি আসলে চিরকাল ই বেশি পজেসিভ। মা কে নিয়ে ছিলাম পজেসিভ। দিদি কে নিয়ে ছিলাম । এখন স্বামী কে নিয়েও মারাত্মক পজেসিভ আমি। আমার ছেলে মেয়েকে নিয়েও পজেসিভ। তাই রাগ হতো ভাই এর উপরে। best bangla golpo
অর্জুন আমার থেকে বছর পাঁচ কি ছয়েকের ছোট ছিল। ও যখন এক বছরের ছিল, আমি তখন ছয় বছরের। অমন একটা ফুটফুটে ছেলে থাকলে কার না ইচ্ছে করে কোলে নিতে। আমার ভাই কে তো দেখার সুযোগ ও ছিল না তেমন। সারাক্ষণ ঠাকুমা নিয়ে থাকত। বংশের প্রদীপ বলে কথা। তখন মাঝে মাঝে অর্জুন কে, বড়দি, নিচের তলায় দোলনায় শুইয়ে রাখত। এই রকম ই একদিন সন্ধ্যে বেলায় আমি খেলেটেলে ফিরে দেখি, অর্জুন দোলনায় শুয়ে আর খুব কাঁদছে।
বড়দি নেই। আর মেজদি তো বড়দির ফেউ।খালি বড়দির পিছনে পিছনে ঘুরত। কাজেই বাড়িতে দুজনের কেউ ছিল না। মা মনে হয় সন্ধ্যে দিচ্ছিল। আর কাকি কোথায় ছিল মনে নেই। ঠাকুমা তো ভাই কে নিয়ে আছে। নাতনির ছেলে কাঁদছে, তাতে ঠাকুমা এর কি। ছোড়দি, আমাকে বলল, – নান্দু, দেখনা বুনি, পুচু টা কাঁদছে কেন? best bangla golpo
আমি গিয়ে দেখি আহা, ছেলেকে কত মশা খাচ্ছে। আমি মশা গুলো কে তাড়িয়ে দিয়ে ইচ্ছে হলো ওকে কোলে নিতে। কি মিস্টি দেখতে ছিল বলার না। ওমা আমি কোলে নিতেই চুপ করে গেল ও। আর আমি তখন নিজেই ছোট। আর সে ছিল বলতে নেই হৃষ্টপুষ্ট একটা বাচ্চা। তাও কস্ট করে নিলাম কোলে। ছেলে চুপ ও করে গেল। আমার বেশ ভাল লাগল। আমি কোলে নিয়ে কত ঘুরলাম। ও হাসছিল। আমার মুখে হাত দিয়ে মারছিল।
ততক্ষনে ছোড়দি এসে গেছে। ছোড়দি ও তখন নয় বছরের মেয়ে। কিন্তু আমার থেকে তো বড়। ছোড়দি আমার থেকে ওকে নেবে সেই সময়ে বড়দি এসে তুমুল চীৎকার শুরু করে দিল। – কে বলেছে তোকে কোলে নিতে? পরে গেলে কি হতো।
আমার মা সন্ধ্যে দিয়ে ফিরে এসেছে ততক্ষনে। বড়দির চিৎকারে ছুটে এসেছে একেবারে। আমি তো হতভম্ভ। করলাম টা কি? মাকে তো দশ কথা শুনিয়ে দিলো বড়দি।
– কই ভাই কে তো দাও না ওর কোলে? আমার ছেলের কোন দাম নেই নাকি? কেন দিয়েছ তুমি ওর কোলে আমার ছেলেকে। বুঝেছি এ বাড়িতে আমার কতখানি দাম। best bangla golpo
আর ও হাজারো কথা। আমি বুঝে গেলাম আজকে বাবার বকুনি কিম্বা মার খেতে হবে। ছোড়দি,মা দুজনাই ঘাবড়ে গেছে। অর্জুন তখনো আমার কোলে আছে। মা তড়িঘড়ি এসে আমার কোল থেকে অর্জুন কে নিতেই অর্জুন আবার কাঁদতে শুরু করল। আমি আর ভয়ে নিতে পারছি না। ছোড়দিও নিল অর্জুন কে কোলে। কান্না থামে না। বড়দি নিল, মেজদি নিল। বড়দি ঘরে গিয়ে দুধ দিলো তাও কান্না থামে না ছেলের। আমি তো পালিয়ে এসেছি তখনি। হাত পা ধুয়ে পড়তে বসে গেছি। খাওয়ার কথা বলতেও পারছি না। আর শুনতে পাচ্ছি অর্জুন ঘ্যান ঘ্যান করে কেঁদেই যাচ্ছে।
প্রায় ঘন্টা খানেক পরে আমি আর ছোড়দি যখন পড়ছি ঘরে একসাথে, মা দেখলাম অর্জুন কে নিয়ে এল। আমাকে দেখেই অর্জুন চুপ করে গেল। আমার কোলে ঝাঁপিয়ে চলে এলো একেবারে। ছয় বছরের মেয়ের কোল আর কত টুকু হবে? কিন্তু ওতেই ও চুপ করে গেল। আমি একটু আদর করে দিলাম
– কি গো অর্জুন বাবু কান্না কেন? দুত্তুমি করছ? ওলে বাবালে? best bangla golpo
মুখ টা সামনে নিয়ে যেতেই ও হেসে ফেলছিল। খানিক খেলার পরে আমি বললাম
– এবালে মাসী পরু পরু করবে। আবার কালকে খেলব কেমন? এবারে তুমি দিদুনের সাথে যাও?
কি বুঝল কে জানে। মায়ের কোলে উঠে পড়ল। চলেও গেল হাসতে হাসতে। আমি আর দিদি মুখ তাকাতাকি করে খানিক হেসে নিলাম। যদিও পরে বড়দি বলেছিল, আমি নাকি কিছু খাইয়ে দিয়েছি ওকে। আমার মা তেড়ে গেছিল বড়দির দিকে। আমি যে একটা মাত্র ছয় বছরের মেয়ে, সেটা মা দিদিকে বার বার বলছিল। এই কথা একবার না। বার বার অনেকবার নানা সময়ে আমার বড়দি আমাকে বলেছে।
আমি আর অর্জুনের সামনে যেতাম না। কিন্তু এই দেখা হয়ে যাবার ব্যাপার টা প্রায়শই ঘটতে থাকল। আমি জানি ,হয়তো অর্জুনের মা অর্জুন কে বকে। আর আমিও নিজেকে শাসন করি। যাতে অর্জুনের সাথে কথা বলতে না হয় দেখা না হয়। আমার জন্য না। অর্জুন আমার সাথে কথা বললে হয়ত ওর মা ওকে বকবে। best bangla golpo
কিন্তু হলো অন্যরকম। মাধ্যমিক দেব আমি সেবারে। কাজেই সারাদিন পড়াশোনা করতাম, তাই ভোর বেলায় আমি দৌড়তে যাবার সময় বের করে ছিলাম। কারন পড়াশোনা চলছিল মারাত্মক রকম, আমি খেলা ধুলা সব তুলে রেখেছিলাম মাথায়। শরীর চর্চা ভালোবাসি বলে সকালে উঠে দৌড়তে যাওয়া টা বন্ধ করিনি আমি। খুব সকালে মানে ভোরে উঠতাম। দাঁত মেজে, নিজেই রান্না ঘরে কিছু বানিয়ে নিতাম। মাধ্যমিক বলে, মা আমার জন্য হরলিক্স কিনে এনেছিল।
আমি অনেক আগে উঠতাম তাই, নিজেই বানিয়ে নিতাম। হরলিক্স আর বিস্কুট খেয়ে বেরোতাম দৌড়তে। সে রকম ই একদিন উঠেছি। তখন সবে হালকা হচ্ছে আকাশ। আমি হরলিক্স বানিয়ে উঠোনের দোলনায় বসে হরলিক্স এ বিস্কুট ডুবিয়ে খাব। আর দেখি অর্জুন বেড়িয়ে এলো বাথরুম থেকে। ফ্রেশ হয়ে এলো মনে হয়। আমাকে দেখে এগিয়ে এল আমার দিকে। লজ্জা লাগল। ইশ আমি মাসী হই। হরলিক্স খাচ্ছি আর ছেলেটা কিছু না খেয়ে আছে? বললাম. best bangla golpo
– কি অর্জুন বাবু, একটু হরলিক্স খাবেন?
– হুম
– কি খাস তুই? এটা খাস না ওন্য কিছু খাস? আমি বানিয়ে দিতে পারি কিন্তু?
– না হরলিক্স ই খাই।
আমি তখনো খাই নি আমার টা। বিস্কুট টাও ডোবাই নি হরলিক্স এ। আমি ওকে দোলনায় বসতে বলে, আমার টা ওকে দিলাম। বললাম
– এটা খা। বিস্কুট দুটোই খাবি কিন্তু
– এটা তো তোমার?
– কে বলল? আমি যে জানতাম, অর্জুন বাবু ঘুম থেকে উঠে আসবেন এখনি। আমি বানিয়ে আনছি আমার টা। এটা অর্জুন বাবুর ই। best bangla golpo
এক মুখ হাসি হয়ে গেল। ইশ কি মিস্টি হাসে ছেলেটা। আমি ওকে আমার টা দিয়ে, আবার বানিয়ে নিয়ে এলাম আমার জন্য। ও দোলনায় বসে চমুক দিচ্ছে আর আমি দাঁড়িয়ে খাচ্ছি। যা বুঝলাম, ওর পরীক্ষা হয়ে গেছে । এখানে এসে আছে। ওর মায়ের ও নাকি শরীর টা খারাপ যাচ্ছে। আমি তো এলুফ থাকি আমার বাড়ির ব্যাপারে, তাই এই সব জানিও না। তবে মাধ্যমিকের আগের একমাস , আমার প্রতিদিনের রুটিন ছিল, ভোর বেলায় আমার আর অর্জুনের হরলিক্স বানিয়ে রাখা।
কোন দিন ও আগে উঠে পড়ত। কোন দিন লেট করত উঠতে। ছোট ছেলে, ওর মা তো জানত না। ওকে তুলে দেবার ও কেউ ছিল না। লেট হতেই পারে। আমি তো ভয়ে ডাকতেও পারতাম না। কি জানি ওর মা কি বলে দেবে আবার। তাই আমি অপেক্ষা করতাম, মিনিট দশেক। তার মধ্যেই ও বেড়িয়ে আসত। তারপরে দুজনে হরলিক্স ,আর বিস্কুট খেয়ে দুজনে মিলে ঘন্টা খানেক দৌড়তাম। তার পরে এসে যে যার ঘরে। আমি সারাদিন পড়াশোনা। আর ও কি করত কে জানে। সেই মনে হয় শেষ বার ও এসে অতোদিন ছিল আমাদের বাড়িতে।