মাঝে মাঝে ওর শরীরের মাপ বদলে যায়। তখন সেই মাপের আরো কিছু বানিয়ে রেখে দি। বস্তুত একটা কাবার্ড ওর পুলিশের পোশাকে আমি ভর্তি করে রেখেছি। প্যান্ট শার্ট আর শু। ব্রাউন শু। সেগুলো কে কেচে, আয়রন করে আমি বাগিয়ে গুছিয়ে রেখে দি। এটা আমার অভ্যেস। ইভেন ও যে ঘরে পরে গোল গলা টি শার্ট সেগুলো ও আমি আয়রন করিয়ে রাখি রিঙ্কু দি কে দিয়ে। এমন ও হয়েছে কিনে এনেছি ভালো লাগবে বলে, ওর ভাল লেগেছে, কিন্তু আমার ভালো লাগে নি বলে আমি বদলে এনেছি।
new golpo 2022
এতো কথা বললাম কারন, ওর এই ব্যাপারে কোন উৎসাহ নেই। শুধু নিজের পোশাকে দাগ থাকলে একটু ক্ষুণ্ণ হয়। সেই জন্য ওর পোশাক আমার দায়িত্বে থাকে। মাঝে মাঝে ছোড়দিও ওকে গিফট করে। সেটা হয়ত ওর পছন্দ হয়, কিন্তু আমার না হলে ফেরত দিয়ে আসি। তাই এখন আর ছোড়দি ওকে কিনে দেয় না, আমাকে টাকা দেয়। আমি কিনে বলে দি ছোড়দি কে কি কিনেছি। ওর মা ওকে দিলে পাজামা পাঞ্জাবী দেয়। আর এক কালারের দেয়। সেটা ওকে যে কোন কালারেই ভালো লাগে বলে আপত্তি করি না।
আর আমার ছেলে মেয়েদের তো আমি ই কিনি। ওদের ঠাকুমা ও আমাকে টাকা দিয়ে দেয়। আমি কিনে সবার নামের স্টিকার লাগিয়ে রাখি। যখন পরে, সবাই কে বলে দি, এটা তোমার দেওয়া। হ্যাঁ মানে আমি ওদের লুকস এর ব্যাপারে পজেসিভ। তাতে কেউ আপত্তি করে না। কারন আমি যখন ওই টাকায় কিনে আনি ওদের ড্রেস, ওরা এতাই বলে, এর থেকে ভালো ওরা কিনতে পারত না। new golpo 2022
সামনেই পুজো আসছে তাই এতো কথা বললাম । না হলে বলতাম না। আপনাদের ই বা কি যায় আসবে শুনতে আমার এই ভাট বকা। পুজো আসলেই অনেক আনন্দ, অনেক উত্তেজনা, অনেক ভালোলাগা। আর অনেক ভয়। ভয় কেন পরে বলব। কিন্তু কত কেনাকাটি থাকে! সবাই কে দেওয়া থাকে! ছেলে, মেয়ে, বরের কেনাকাটি। খুব আনন্দ নিয়ে করি আমি এখন এগুলো। যখন ভালো লাগত না, তখন লাগত না।
এখন সে সব ফেইজ জীবনে নেই, এখন ভালো লাগে। তখন আমার মধ্যেকার মেয়েটা ডিস্টার্বড ছিল। এখন সে সুখী। সে তার চাকরী করে এই সময় টা বের করে নিজের মানুষ গুলোর জন্য। আর আমাদের বাজার কম হয় না? ভাবুন পাঁচ দিদি, এক ভাই, তাদের পুরো পরিবার, বাবা, মা কাকা কাকি, কেউ বাকি থাকে না। সবার জামাকাপড় আমি নিজে কিনি। আর শুধু কিনি ই না, আমার বর টা কে নিয়েও যাই কিনতে। বেচারী চুপ করে বসে থাকে হাতে ডেবিট কার্ড টা নিয়ে। ছেলেরা মনে হয় বিয়ের জন্য রিগ্রেট করে এই সময় টা তেই। new golpo 2022
পুজো তে আমি বাড়ি যাই না আর। না আমার বর যায়। ওর তো সময় হয় না। পুজোর সময়ে ওর মারাত্মক ব্যস্ততা। আর ও না গেলে আমার ও ভাল লাগে না। ওকে শহরে থাকতেই হয়। আর ওই চার পাঁচ দিন আমরা সন্ধ্যের পরে সবাই মিলে ঠাকুর দেখতে বের হই। বর উচ্চপদস্থ, তাই মন্ডপে ঢুকতে সমস্যা হয় না। আলাদা লাইনে, ভীর ভাট্টা ছাড়াই আমরা দেখে আসি ঠাকুর। বাইরে খাই। ভোরের দিকে বাড়ি ঢোকা। এই আমাদের পুজোর রুটিন। প্রতিদিন সন্ধ্যের পরে বর টাকে পাই, এটাই অনেক আমার কাছে।
তাছাড়া আছি আমি আমার মতন আমাদের সাথে। বাড়ি গেলেই কত স্মৃতি। কি দরকার খুঁচিয়ে ঘা করার। সেটা আমি আর বর, কারোর জন্যেই ভালো হবে না। আর আমাকে কেউ অপমান করলে বর খুব রেগে যায়। অনেক কস্ট করে ওকে আটকে রাখি। তবে এবারে বাড়ি থেকে বড়ই জোর আসছে, যাবার জন্য। জানিনা কি করব। বর কে জপানোর চেস্টা করতে হবে। একান্তই যদি ও যেতে না পারে, পরের বারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। new golpo 2022
যাই হোক সে রাতে আমি গুয়াহাটির টিকিট কেটেছিলাম। সিয়ালদা থেকে যখন ট্রেন ছাড়ল তখন বেজে গেছে রাত বারোটা। নিজের সিট নাম্বার টা দেখে উঠে বসে আছি। কিছুই খেয়াল নেই। রাতে সবাই শুয়ে পড়েছিল হয়ত। আমি যে ভাবে বসেছিলাম, হেলান দিয়ে সেই ভাবেই বসে রইলাম। সকালে চমক ভাঙল যখন চা ওয়ালা এল।
আমার কিছুই ইচ্ছে করছিল না খেতে। শুধু জানি গুয়াহাটি তে গিয়ে আমার এক বন্ধুর কাছে থাকব একদিন। তারপরে ওখানে চাকরী খুঁজতে হবে। দরকারে চলে যাব আপার আসামের দিকে। কেউ খোঁজ না পেলেই হলো। বন্ধুটির বাড়ি আমি গেছিলাম আগে। ওখানে সেকতা সেমিনারে গিয়ে , আমার কলেজের বন্ধুটির বাড়িতে গেছিলাম। সে ওখানে কলেজে পড়ায়। চিনি বাড়ি টা। জায়গা টার নাম মনে করে পৌঁছে গেলাম ওর বাড়ি।
বন্ধুটির নাম ছিল দীপান্বিতা। ও বাঙালী। খুশী হলো আমাকে দেখে। প্রথমে তো চিনতেই পারে নি। কারন আমি শাড়ি পরে গেছিলাম। অর্জুনের জন্য যে বাহ্যিক রূপ আমার ছিল ও সেটাই দেখেছে। অবাক হবার ই কথা। আমি যে কত সুন্দর সেটা কলেজে ও বোঝে নি। সেটাই বার বার আমাকে বলছিল। বার বার আমার সিঁদুরে রাঙানো মুখ নিয়ে কথা বলছিলো ও। new golpo 2022
বাথরুম এ গিয়ে সিঁদুর টা পরিষ্কার করার সময়ে খুব যত্ন করে রেখে দিলাম সিথির সিঁদুর টা। লুকিয়ে রাখলাম সেটা। ছোট্ট করে চুলের ফাঁকে রেখেদিলাম অর্জুনের মঙ্গল নিজের মাথায় করে। তবে সময় লাগল না আমার বদলে নিতে। পরের দিনেই কোমর অব্দি লম্বা হয়ে যাওয়া চুল কেটে, বয় কাট করে নিয়েছিলাম। শাড়ি ছেড়ে জিন্স, আর শার্ট পড়তে শুরু করে দিয়েছিলাম।
টাকা পয়সার কমতি ছিল না আমার কাছে কোন কালেই। যথেষ্ট উপার্জন করেছি গত পাঁচ বছরে। কাজেই আমি সময় নিয়ে কাজ খুঁজতে শুরু করে দিলাম। এদিকের সমস্যা হলো যাতায়াত। কিছু এয়ারপোর্ট আছে। কিন্তু বাকি যায়গায় যেতে গাড়ী তো লাগবেই। আমি একটা গাড়ি ও কিনে নিলাম। এবারে আমি আমার কেরিয়ার এ মনোনিবেশ করব। আমি এসেই আমার পুরোন কলেজের রেসিগ্নেশন পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। গুয়াহাটি তে একটা কলেজে পেলাম কাজ, কিন্তু সাথে যোরহাট এও পেলাম। শুনলাম যোরহাটের কলেজ টা অনেক বেশী ঐতিহ্য বাহী কলেজ। আমি শিফট করলাম যোরহাট। new golpo 2022
কলেজে পড়াই আর বাড়ি এসে রান্না বান্না করে, পড়াশোনা করি। আমার নেট স্লেট দুটোই ক্লিয়ার ছিল। তাই কাজ পেতে অসুবিধা খুব একটা হলো না। কলকাতার মতন না হলেও, এরাও আমাকে খুব একটা কম স্যালারি দিলো না। কিছু দিনের মধ্যেই আমার পড়ানোর খ্যাতি আসামে ছড়িয়ে পড়ল। আবার সেই পুরোন রুটিন। কলেজ, পড়াশোনা আর সকালে দৌড়। শরীরে মেয়ে সুলভ যে কমনীয় তা এসেছিল, সেটা কে ঝেড়ে ফেলার জন্য যেন মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম আমি। চাইছিলাম কাটখোট্টা জীবন। স্যাডিস্ট এর মতন জীবন যাপন ছিল আমার উদ্দ্যেশ্য।
অনেক কস্ট করে মন থেকে ঝেড়ে ফেলেছিলাম আমার বাড়ির চিন্তা। জানিনা, আমি চলে আসার পরে কি অবস্থা হয়েছে বাড়িতে। প্রশ্ন তো উঠবেই। কেন পালিয়ে এসেছি আমি। রোজ স্নানের পরে বিন্দু সম সিঁদুর সিঁথি তে লাগানো আমি অভ্যেস করে ফেললাম। কিছু তো করার নেই। যতই সমাজ না মানুক। আমি তো এই সিঁদুর মিথ্যে বলে ফেলে দিতে পারছি না। একেবারে মুছে ফেলতে পারছি না। মনে হয় আমার থেকেও বেশী ভালবাসে কেউ, ওর নাম করে সিঁদুর যেদিনে পরবে, সেদিন হয়ত আমি এই সিঁদুর মুছতে পারব। তার আগে নয়। new golpo 2022
নিজের বাহ্যিক রূপ বদলে ফেললেও, অনেক শান্ত হয়ে গেলাম আমি। বাড়িতে একলা বসলেই মনে হাজারো চিন্তা ভিড় করে আসত আমার। কি জানি, সব ঠিক আছে নাকি? ঠাকুর ডাকতাম মনে মনে, হে ঠাকুর সব যেন ঠিক থাকে। অর্জুন যেন সব টা মেনে নেয়। নিজেকে যেন আমার বাইরে ভাবতে শিখে নেয়। আমি এখানে, আর ওখানে ও যদি কিছু করে বসে তবে জানি না আমি কি করে ফেলব। যে ঠাকুর তুমি রক্ষা কোর সবাই কে।
নিজেকে এতো টাই দূরে সরিয়ে নিয়েছিল্ম বাহ্যিক জগত থেকে যে, খবর, ই মেইল সব কিছু চেক করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। নিজের ফেস বুক, টুইটার সব রকম আকাউন্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম। গত দুমাস আমি ওসব কিচ্ছু করিনি। কলেজেও আমি হার্ড কপি তে কাজ করি। পড়াই, নিজেই খরচা করে নোটস বানিয়ে ক্লাসে দি। ওরা ফোট কপি করিয়ে নেয়। আমার কোন রকম ফোন নাম্বার, কোন আই ডি আমি কাউকে শেয়ার করিনি। প্রফেসর গ্রুপের হোয়াটস এপ এও আমি অনুপস্থিত থাকি। new golpo 2022
আমাকে সবাই ভাবে খুব অহংকারি। কিন্তু ওই পিছনেই। কাউকে অতো পাত্তা দি না। আর দেবার ই বা কি দরকার। আমি নন্দনা ডি। যে ইন্সটিটিউট এ পড়েছি, সেখানে প্রথম ছেড়ে কোন দিন দ্বিতীয় হই নি। আমার একাডেমিক কেরিয়ার সেই কথাই বলে। কাজেই, কেউ পছন্দ না করলেও, কারোর বলার ও কিছু ছিল না। নন্দনা ডি র জন্য, কলেজের নাম পুরো আসামে নতুন করে ছড়িয়ে পড়ল বলার অপেক্ষা রাখল না। এমনি করে একটা মাস আরো কেটে গেল।
গত মাসে, তিনটে সেমিনার করেছি। যে থিসিস টা আমি, রেখে দিয়েছিলাম কোন স্টুডেন্ট এর জন্য, সেটা আমি পাবলিশ করিয়েছিলাম নিজের নামেই। বিজ্ঞানী মহলে ভালই সাড়া ফেলেছিল সেটা। আর সেই সুত্রেই সেমিনার। অনেকেই আমাকে চিনত। ওই থিসিসের জন্য আমার কলেজ মেইল আই ডি দেওয়া ছিল। সেখানে অনেকের ই মেইল আসতে লাগল। যে গুলো পছন্দ হতো উত্তর দিতাম, যে গুলো পছন্দ হতো না উত্তর দিতাম না।
কিন্তু একদিন একটা মেইল এলো কলকাতা থেকে। আমার পুরোন কলেজের প্রিন্সিপ্যাল মেইল টা করেছেন। খুললাম। পড়লাম। new golpo 2022
মোটামুটি বাংলা করলে যা দাঁড়ায় তা হলো
নন্দনা,
আশা করি সব ঠিক ঠাক চলছে তোমার জীবনে। আমি আজো বুঝলাম না তুমি আমাদের কলেজ ছেড়ে গেলে কেন। তোমার বিয়ে এবং স্বামীর পোস্টিং সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে আমাকে বলতে পারতে। তোমাকে আসাম থেকেই আমি অপারেট করাতাম। আমি এবং তোমার কলেজ আজ ও তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে। তোমার থিসিস টা পড়লাম। গর্ব হয় তোমার জন্য। ভালো থেক। প্রয়োজন হলে আমাকে জানিও। সব সময়ে থাকব তোমার পাশে।
ইতি………….
কি লিখব এই কথার উত্তরে? কিন্তু না লেখা তা কিছু বাজে হয়ে যায়।
তাই লিখে দিলাম
স্যার,
আমার একান্ত কিছু নিজ সমস্যার জন্য আমার এই সিদ্ধান্ত। নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি নিজেদের মধ্যে থেকে। এখানে একান্তে গবেষণা করতে চাই। আপনাকে দুঃখ দেবার জন্য দুঃখিত। আশা করি আপনি ভাল আছেন
ইতি… new golpo 2022
আমি একা হলেই মনের মধ্যে শুধু অর্জুন কে নিয়েই ঝড় চলে। তাই নিজেকে যত টা সম্ভব এনগেইজ রাখি। ব্যস্ত রাখি নিজেকে নানান কাজে। খাই না তেমন, কিন্তু রান্না করি অনেক।রান্না করলে অনেক সময় ব্যয় হয় । অতো রান্না খাইয়ে দি আমার বাংলোর পাশে অনেক বাচ্ছাদের। বাংলোর লন টা ভর্তি করে ফেলেছি গাছ লাগিয়ে। ফুল এখনো আসে নি, কিন্তু আসবে খুব শীঘ্র। রাত দশ টা অব্দি এতোই ব্যস্ত থাকি যে কিছু নিয়ে ভাবার অবকাশ থাকে না আমার।
বাড়িতে পড়তে বসলে মন বসে না। উলটো পালটা চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে যাই, তাই সন্ধ্যে বেলায় রান্নার পরে চলে যাই কলেজ। লাইব্রেরী তে পড়াশোনা করি। এখানে বড্ড তাড়াতাড়ি সন্ধ্যে নামে। তাই সকাল সকাল রান্না করে আমিও কলেজে চলে যাই। ওখানে কোন স্টুডেন্ট থাকলে তাকে বুঝিয়ে দি বা কোন সমস্যার সমাধান করে দি। না হলে নিজেই পড়াশোনা করি।
সব ঠিক আছে, কিন্তু রাতে শোবার সময়ে? তখন কি করব? পুরো বিধ্বস্ত হয়ে না শুলে তো ঘুম আসে না আমার। বিছানায় শুয়েও নিজেকে সেই সুযোগ দিতাম না। উপন্যাস পড়তাম। গল্পএর বই পড়তাম। যতক্ষণ না আমার চোখ টেনে আসত ঘুমের কোলে। এই করেই দিন কেটে যাচ্ছিল আমার। এক একদিন ঘুম আসত না তার পরেও। new golpo 2022
সেদিনে মনে হত, ও হয়ত আমাকে ভুলে যাবার কথা মেনে নিয়েছে। কিন্তু আমি কেন পারছি না। কেন ওর দেওয়া সিঁদুর মাথায় বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি আমি। চোখে জল আসত। এই জন্য না যে আমি ওকে ভুলতে পারছি না। এই জন্য যে ও আমাকে ভুলে যাবার কথা মেনে নিয়েছে। ওকে ভুলতে আমি পারব না আমি বুঝে গেছি। হয়ত পরের জন্মেই শোধ হবে মাথার সিঁদুরের এই ঋণ।
এখন চিন্তা করলে ভাবি, কি অপরিনত কাজ ই না করেছিলাম। লজ্জা লাগে। লজ্জায় নুয়ে যাই আমি। ইশ কি পাগল ই না ছিলাম। সত্যি বাবা প্রেম কাহিনী লিখেছিলাম বটে দুটো পাগলে। কিন্তু সেই সময়ে এই সব পাগলামো ই খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমার কাছে। ওকে মনে পড়লেই আমার মাথায় হাত চলে যেত, যেখানে ওর ই পরিয়ে দেওয়া জায়গায় এক ফোঁটা সিঁদুর আমি ওর নাম করে পরতাম। আর চোখে জল। new golpo 2022
শরীর ভেঙ্গে পড়ছিল আমার। সেটা আমি বুঝতে পারছিলাম। সকালে দৌড়তে যেতে আর ভাল লাগে না। ঘুম ই ভাঙ্গে না আমার। ক্লান্তি লাগে সারাদিন। লাগবে না কেন, রাতে তো ঘুম ই হয় না ভাল করে। ভাবলাম এই ভাবেই চলুক কিছু দিন। নিজে নিজেই শেষ হয়ে যাব। আলাদা করে মরার কথা ভাবার ও দরকার নেই। না হলে একা আছি, আত্মহত্যা তো করাই যেত।
আমি তো অর্জুনের জন্যে বাঁচছিলাম। ওই যখন আমাকে ভুলে থাকার কথা মেনে নিয়েছে, তখন বাঁচার তো দরকার নেই। কিন্তু আত্মহত্যা করলে যদি পরের জন্মে এই সিঁদুরের ঋণ শোধ করতে না পারি? তাই শনৈ শনৈ মৃত্যু ই ভাল। পাগলের মতন কাজ করতে শুরু করলাম। এক এক দিনে দুটো করে ক্লাস নিতাম। বাইরে সেমিনার থাকলে, এক দিনে শিলচর থেকে গুয়াহাটি, দুটো সেমিনার। এই রকম ভাবে নিজেকে নিয়ে যাচ্ছিলাম, যেন রাতে শোবার সময় টুকু অব্দি না পাওয়া যায়। শুলেই মাথায় যত বাজে চিন্তা। new golpo 2022
বলেছিলাম একটা কথা আগে, যেখানে অর্জুন থাকে বা ছিল, আমার সেই সমস্ত জায়গা, মানুষ জন সবাই কেই মনে থাকে। যোগাযোগ থাকে। কিন্তু যেখানে আমি ওকে পাইনি, সেখানে কিছুই মাথায় থাকে না আমার। আর মনে তো নয় ই। সেদিন ক্লাস শেষে আমি আমার বাংলো তে এসেছি। রান্না করব। ছেলে গুলো কে দেব, আবার কলেজ যাব। পড়ব একটু। সেমিনার আছে চার দিন বাদে একটা, গুয়াহাটি তে। নতুন থিসিসের উপরে। রান্না করছি। জানালা দিয়ে দেখলাম, একটা গাড়ী এলো। এক ভদ্রলোক নামলেন সেখান থেকে। আমি দরজা খুলে যেতেই বলল
– নন্দনা, আই হ্যাভ কাম টু টেক ইউ এট কলেজ নাও।
আমি তো ভদ্রলোক কে চিনতেও পারলাম না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম
– উই নো ইচ আদার?
– ও কাম অন, আই এম সুরোজিত বরোগোহাইন। ইওর কলেজ ডিন।
উপস, আমি জানি ওনাকে, দেখেওছি। কিন্তু কি যে হয়েছে। চিনতে পারিনি একদম । বললাম new golpo 2022
– সরি স্যার, মাই মিস্টেক। বাট, আই নিড সাম টাইম। আই এম কুকিং রাইট নাও।
– সরি নন্দনা, ইউ হ্যাভ সাম ভিসিটর টু সি। ইটস ইমার্জেন্সী। দে আর ক্রাইং।
– হোয়াট? ওদের কে এখানে আনলেন না কেন?
– আসতে চাইল না। প্লিস চল।
আমি গ্যাস অফ করে, শার্ট এর উপরে, জ্যাকেট টা চাপিয়ে, মাথায় টুপি পরে, স্যার এর গাড়ি তে উঠে বসলাম। কলেজে পৌঁছে ডিনের ঘরে ঢুকে দেখলাম, আমার দুই দিদি বসে আছে। বড়দি আর ছোড়দি। আমার বুক টা ধড়াস করে উঠল। ওরা এখানে কেন? অর্জুন ঠিক আছে তো। নাকি বাড়িতে কারোর কিছু হয়েছে? বাবা না মা? আমি নিশ্চিত কিছু একটা খারাপ খবর শুনব। ডিনের দরজায় আমি নিজেকে হেলান দিয়ে দিয়েছি। ইদানীং শরীরে আর বল পাই না আমি। জানিনা কি শুনব। new golpo 2022
দুজনা যখন ফিরে দেখল আমাকে। হাঁ হয়ে গেল। পুজোর সময়ে আমাকে যা দেখেছে তার অর্ধেক ও আমি আর নেই। আর আমি দেখলাম ওদের চোখে জল। আমার মন ক্যাল্কুলেট করতে শুরু করেছে। এই দুজনা এসেছে। মানে মা বাবা র কিছু না। এমন একজনের সম্পর্কিত কোন খারাপ খবর, যেখানে আমরা তিনজন জড়িত। বাবা মা হলে ভাই আসত। না হলে ছোড়দি একলা আসত। বা কেউ ই আসত না। ডিন কে মেইল করে দিত বা বড়োজোর ফোন করে দিত আমাকে বলার জন্য।
বড়দি কে নিয়ে আসার দরকার ছিল না। মানে এটা অর্জুন সম্পর্কিত ব্যাপার। নিশব্দে কাঁদছে বড়দি। মানে অর্জুন এখনো আছে পৃথিবী তে। ওর কিছু হলে হাউ হাউ করে কাঁদত বড়দি। হ্যাঁ অর্জুনের ই কিছু হয়েছে। আর দুজনায় এসেছে মানে আমাকে ওরা নিয়ে যেতে চায়। আমি আর থাকতে পারলাম না। ইচ্ছে করছে বসে পড়ি আমি। মাথা ঘুরছে মারাত্মক আমার। বমি বমি পাচ্ছে যেন। বসে পড়লাম আমি দেওয়াল ধরে আসতে আসতে। বড়দি ছোড়দি দুজনাই ছুটে এল আমার দিকে।