জীবন চলার পথে

শেষ পর্য্যন্ত বদলীর অর্ডারটা চলে এলো।
বদলীর ব্যাপারগুলো সত্যিই ঝামেলার। অথচ, আমি মন খারাপ করলাম না। হাসি মুখেই অর্ডারটা বরন করে নিলাম। বিদায়ের ব্যাপারগুলো কষ্টেরই থাকে। তবে, আমার কষ্ট হলো না। কেনোনা, সেকেণ্ড বস, বিগ বস দুজনের সাথেই দীর্ঘদিন ধরে, রেষারেষিরই একটা সম্পর্ক ছিলো। প্রকৌশলী হয়েও সেলস অফিসে বদলী হতে একটুও দ্বিধা করলাম না আমি। সেলস অফিসের সহকারী ম্যানেজার আমার পূর্ব পরিচিত। সেই হিসেবে, কাজের ধরন যাই হউক না কেনো, অন্তত প্রাণ খুলে কথা বলা যাবে, সেটাই ছিলো একমাত্র ভরসা।

১৫ই অক্টোবর, ২০১১ সাল।
নুতন এক শহর, শরৎগঞ্জ। শরৎগন্জে এসে প্রথম যে সমস্যাটায় পরেছিলাম, তা হলো একটি বাসা নিয়ে। জীবনে প্রথম শরৎগন্জ! ছোট খালার বিয়ের পর থেকেই শরৎগন্জের পাশের শহরেই থাকতো। অথচ, কখনো যাওয়া হয়নি। তাকেই বলেছিলাম একটা বাসা ঠিক করার জন্যে।
ছোট খালা কলেজ শিক্ষিকা। ধরতে গেলে শৈশবেই শেষ বারের মতো দেখেছিলাম। মায়ের মৃত্যুর পর পরই বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো। দূরের শহরে চলে গিয়েছিলো বলেই যাতায়াত হতো না। যোগাযোগ যা হতো, চিঠিতে! ইদানীং মোবাইলে। কেনোনা, মাতৃহীন আমি শৈশব থেকেই একা একা বসবাস আর এখানে সেখানেই জীবন কেটেছে। তাই, আমার যেমনি ছোট খালার বাসায় যাওয়া হয়নি, ছোট খালাও বিয়ের পর নিজ সংসার, এটা সেটা ঝামেলার কারনে, আমাকে দেখতে আসার সুযোগ হয়নি। সেই খালা ঠিক আমার বদলী হয়ে আসার আগের দিনই জানালো, ব্যাস্ততার মাঝে সময় করে বাসা খোঁজাটা হয়ে উঠেনি। আপাততঃ আমি যেনো তার বাসাতেই থাকি। মদনগন্জ থেকে শরৎগন্জ কতই বা দূর? বাসে ঘন্টা খানেকের পথ! আমি যেনো নিজের বাসা নিজেই খোঁজে বেড় করি, সেই পরামর্শই দিলো।
ছোট খালার সাথে আমার বয়সের ব্যাবধান দশ। ছোট খালার বয়স সাত্রিশ হলেও দেহ ও ত্বকের এমনি যত্ন নেয় যে, দেখে কখনো সাত্রিশ বলে মনে হবে না। বরং, তার মেয়ে আঠারো বছর বয়সের মোহনা যখন পাশাপাশি দাঁড়ায়, দু বোন বলে ভুল করার সম্ভাবনাই অনেক বেশী। শুধু তাই নয়, প্রথম যখন ছোট খালার বাসায় এলাম, তখন দরজাটাও ছোট খালা নিজেই খুলেছিলো। ছোট খালার মেয়ে মোহনার নাম জানতাম, তবে কখনোই দেখিনি। তাই ভুল করে, মোহনা ভেবে বলেই ফেলেছিলাম, কেমন আছো মোহনা? আমি তোমার ভাইয়া, অনি।
ছোট খালা চোখ গোল গোল করেই, রহস্যময়ী হাসি হেসে বলেছিলো, তুমি আমার ভাইয়া নও, আমি তোর খালা!

মোহনা ছোট খালার একমাত্র মেয়ে। কলেজে পড়ে। নদী আর সমুদ্রের মোহনা কতটা উত্তপ্ত, কতটা অশান্ত আমার জানা নেই। তবে, মোহনাকে দেখা মাত্রই বোধ হয়, সব ছেলেদের মন যেমনি অশান্ত হয়ে উঠার কথা, ঠিক তেমনি দেহের রক্তের শিরায় উপিশরায়, বিচ্ছৃংখল ঢেউয়ের সমাহার হয়ে হয়ে, লিঙ্গের চূড়াতেই হস্তের মোহনা খোঁজে পাবার অবকাশ পাবার কথা।
মোহনার সাথে প্রথম দেখা হলো, আমার থাকার ঘরটা দেখিয়ে দেবার সময়। মোহনা যদিও খুব সহজভাবেই কথা বলছিলো, আমি অতটা সহজ হতে পারলাম না। কেনোনা, ঘরে মোহনার পোষাক অস্বাভাবিক ধরনের সংক্ষিপ্ত! নিম্নাংগে অত্যাধিক খাট ন্যাভি ব্লু জিনসের হাফ প্যান্ট! ফোলা ফোলা ফর্সা উরু দুটুই নয় শুধু, টাইট হাফপ্যান্টের ভাঁজে নিম্নাংগের অবস্থানও অনুমান করার মতো। আর উর্ধাংগে, ছেলেদের মতোই স্যাণ্ডো গেঞ্জির মতোই টাইট সেমিজ। যা তার বক্ষের আয়তনই শুধু নয় আকৃতিও প্রকাশ করে রাখে।
মোহনার বক্ষের আয়তন খারাপ নয়, চালতার চাইতেও খানিকটা বড় হবে, তবে কেমন যেনো খানিকটা চৌকু, এবং সুঠাম। সেমিজের তলায় গাঢ় খয়েরী রং এর বৃন্তটা সহ স্ফীত বৃন্ত প্রদেশও আবছা আবছা চোখে পরে। এমন বক্ষ যার বুকে, তার এমন সংক্ষিপ্ত পোষাক পরা, কতটা উচিৎ তা আমার জানা নেই। তবে, ছোট খালার একটি ছেলে সন্তানের শখ ছিলো বলেই, ছোটকাল থেকে মোহনাকে ছেলেদের পোষাকেই বড় করেছে। তাই ঘরে বাইরে মোহনার পোষাক গুলো যেমনি ছেলেদের মতো, চুলগুলোও ছেলেদের মতো খাট! তবে, চেহারা দেখে আগুনে ভরপুর একটা যৌন বেদনাময়ী মেয়ে ছাড়া অন্য কিছু মনে হয় না।
মোহনা আমাকে থাকার ঘরটা দেখিয়ে বললো, এটা আমারই ঘর। কয়েক রাতের জন্যেই নাকি থাকবেন, তাই ছেড়ে দিলাম।
আমি বললাম, মানে? তাহলে তুমি থাকবে কোথায়?
মোহনা বললো, কেনো, এখানেই!
তাৎক্ষনিকভাবে কি বলবো কিছুই বুঝতে পারলাম না। মোহনার ঘরটা খুব ছোট না হলেও, খাটটা সাংঘাতিক ছোট। সিংগল খাট বলা যাবেনা, তবে ডাবলও না। মেয়ে মানুষ দুজন কিংবা ছেলে মানুষ দুজন খুব ভালোভাবেই ঘুমানো যাবার কথা। অথবা, স্বামী স্ত্রীর জন্যে এমন একটি খাট, খুবই উপযোগী। কিন্তু, খালাতো ভাই হিসেবে কয়েকদিনের জন্যে হলেও, এই ঘরে এই খাটে ঘুমানো কতটা উপযোগী অনুমান করতে পারলাম না। আমি শুধু ঘরটার চারিদিক চোখ বুলাতে থাকলাম।
থাকার সমস্যা নিয়ে মাঝে মাঝে আমিও ভাবি। বড় বড় শহরগুলোতে পরিবার এর সদস্যদের নিয়ে, ছোট একটা বাসা নিয়ে থাকতে কতটা হিম সিম খায়! সেখানে বাড়তি মেহমান যে কতটা ঝামেলার, তা বোধ হয় আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ছোট খালার বাসাটা এত ছোট জানলে হয়তো, এমন করে সরাসরি চলে আসতাম না। আমার রীতীমতো লজ্জা লাগতে থাকলো।
খালুজানের সাথে দেখা হলো রাতের খাবার টেবিলে। সাধারন একটা প্রাইভেট ফার্মেরই কর্মকর্তা। কথা একটু বেশীই বলে! এবং কঠিন সত্য কথাগুলো আগে বলে। দু একটা কুশলাদী জিজ্ঞাসা করার পরই বললো, বড় একটা বাসা নিতে চাইছি, কিন্তু বেতন তো বাড়ে না। কয়েকদিন থাকলে আপত্তি নাই, তবে নিজের বাসা মনে করে, থেকে যাবার কথা ভাববানা। একটু খোঁজাখোঁজি করলে এক রুমের বাসা পেয়ে গেলেও পেয়ে যেতে পারো। আমার তো খোঁজাখোঁজির সময় নাই। নইলে আমিই খোঁজতাম।

তেমনি একটি পরিস্থিতির মাঝেই ছোট খালার বাসায় থাকার জায়গাটা হয়েছিলো। তবে, সমস্যাটা হতে থাকলো রাত বাড়ার সাথে সাথেই। রাত দশটা পর্য্যন্ত, নাম মাত্র বসার ঘরে টি, ভি, দেখার পাশাপাশি দৈনিক পত্রিকাটাতে চোখ বুলিয়েই সময় কাটালাম। ভেবেছিলাম, ছোট এই সোফাটাতেই গা এলিয়ে রাতটা কাটিয়ে দেবো। তাই, পা দুটি ভাজ করে জড়ো সড়ো হয়েই ছোট বেতের সোফাটাতে শুয়ে পরলাম। অথচ খানিকটা পর, স্বয়ং মোহনা এসে চুপি দিয়ে বললো, ভাইয়া, এখানে শুয়ে পরলেন যে! আমি দেরীতে ঘুমাই। আপনার ঘুম পেলে, বিছানায় গিয়ে ঘুমান!
আমি বোধ হয়, এই প্রথম মোহনার চোখে চোখে তাঁকালাম। যে মেয়েটিকে জ্বালাময়ী দেহ সম্ভারের একটি মেয়ে মনে হয়েছিলো, চোখ দুটি দেখে মনে হলো অধিকতর শান্ত! অস্বাভাবিক মায়াময়ী। আমি বললাম, এখানে সেখানে ঘুমানোর অভ্যাস আছে। তাই অসুবিধা হবে না।
মোহনা তার হাত দুটি বুকের উপর ভাজ করে রেখে, বক্ষ দুটিকে আরো প্রস্ফুটিত করে তুলে ধরে বললো, ওহ, আপন বোন নই বলে?
আমি অবাক হয়ে বললাম, একি বলছো? আমার নিজেরও কোন ভাই বোন নেই। তোমারও নেই। বড় খালার মেয়ে নিশাকে যেমনি আমার নিজ বোন বলে ভাবি, ঠিক তোমাকেও।
মোহনা বললো, তাহলে আমাকে এত লজ্জা করছেন কেনো? বাসায় আসার পর থেকে, যেভাবে লাজুক চেহারা করে রেখেছেন, তা দেখে তো মনে হয়, জীবনে কখনো মেয়েই দেখেন নি!
আমি খানিকটা অপ্রস্তুত হয়েই বললাম, না মানে!
মোহনা বললো, এক রাত হলে, আমিও কিছু বলতাম না। কিন্তু, আপনার বাসা খোঁজে পেতে কতদিন লাগে, তাও জানিনা। রাতের পর রাত এভাবে ঘুমাবেন নাকি?
আমি সরাসরিই বললাম, না মানে, তুমি একটা যুবতী মেয়ে! এভাবে একই বিছানায়!
মোহনা অবাক হয়ে বললো, যুবতী হয়েছি কি হয়েছে?
আমি হঠাৎই থতমত খেয়ে গেলাম। মোহনা আমাকে অবাক করে দিয়েই, তার স্ফীত বক্ষ দুটি নিজেই টিপে ধরে বললো, বক্ষ স্ফীত হলেই কি ভাই বোন দূরে দূরে থাকতে হবে নাকি?
আমি খানিকটা সহজ হয়ে বললাম, না মানে, একটা বয়স পেরিয়ে গেলে, ভাইবোন এক বিছানায় ঘুমানো!
মোহনা বললো, মনের ভেতর কলুসতা না থাকলে প্রাপ্ত বয়সের দুটি যুবক যুবতীও দিনের পর দিন ন্যাংটু হয়ে এক ঘরে থাকলেও কিছু হয় না। আফ্রিকায় এখনো কিছু কিছু অঞ্চলে আদিম পোষাকেই মানুষ বসবাস করছে। আসলে, সভ্য জগতের মানুষই শুধু বেশী ভাবে, ঠিক তেমনি বেশী অপরাধও করে!
মোহনার কথাগুলো সত্যিই যুক্তি যুক্ত! আমি আর কথা বাড়ালাম না। মোহনার সাথেই তার ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। মোহনা পড়ার টেবিলে গিয়েই বসলো। আমি ক্লান্তিতে মোহনার বিছানাটাতেই দেয়ালের দিক ঠেসে শুয়ে পরলাম।
রাত কত হবে কে জানে! ঘুমের মাঝে হঠাৎই অনুভব করলাম, আমার লিঙ্গটাতেই নরোম অথচ ভাড়ী কাঠের গুড়ির মতোই কিসের যেনো চাপ পরলো! চোখ খুলেই অনুমান করলাম, হাত পা ছড়িয়ে ঘুমানো, মোহনারই ডান পা টা ঠিক আমার লিঙ্গ বরাবরাই চেপে আছে। সেই সাথে আমার লিঙ্গটাও এক ধরনের ভিন্ন চাপ অনুভব করে করে শক্ত হতে থাকলো। আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম। একবার চোখ ঘুরিয়ে মোহনার চেহারার দিকেই তাঁকালাম। বেঘোরে ঘুমুচ্ছে মোহনা। আমি মোহনার পা টা খানিকটা ঠেলে ঠেলে সরাতে চাইলাম। মোহনা টের না পায় মতো, বেশ খানিকটা সরিয়ে নিয়ে, মোহনার পা টা আমার উরুর উপরই রেখেই ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
উরুর উপর এমন একটা নরোম পায়ের স্পর্শে, আমার আর ঘুম আসতে চাইলো না। ধীরে ধীরে মোহনার পুরু পা টাই সরাতে চাইলাম। অথচ, ঘুমের মাঝেই মোহনা এদিকে কাৎ হয়ে শুয়ে, বাম পা টা ভাজ করে আমার দেহের উপরই ছুড়লো। আর হাঁটুটা অবস্থান করলো ঠিক আমার লিঙ্গটার উপরই।
মোহনা কি ঘুমের মাঝেই এসব করছে, নাকি ঘুমের ভান করে ইচ্ছে করেই করছে, কিছুই অনুমান করতে পারলাম না। তবে, আমার কি করা উচিৎ, কিছুই বুঝতে পারলাম না। আপাততঃ, মোহনার হাঁটুর নীচে আমার লিঙ্গটা পেতে দিয়েই সময় গুনতে থাকলাম। সেই সাথে লিঙ্গটা উত্তেজনার চরম শিখরে পৌঁছুতে থাকলো। ঠিক তেমনি একটা মুহুর্তেই মোহনা হাঁটুটা সরিয়ে, অপরদিকে ঘুরে কাৎ হয়ে শুলো। আমার চোখে আর ঘুম এলো না। বাকীটা রাত, বিছানায় এপাশ ওপাশ করেই কাটালাম।

নুতন অফিস, নুতন কাজ। পরিবেশও ভিন্ন। ডেভেলপমেন্ট বিভাগের সবাইকে যেমনি গম্ভীর, চিন্তিত চেহারার মনে হয়, সেলস বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ঠিক তার বিপরীত! যেমনি হাসিখুশী, ঠিক তেমনি কারো কোন ভাবনা চিন্তা আছে বলে মনে হলো না।
আমি যখন শরৎগন্জে এলাম, তখন আমার অফিসের দুটো মেয়েই আমার দৃষ্টি কেঁড়ে নিলো। তাদের একজন হলো, শিউলী! শিউলী ফুলের মতোই স্নিগ্ধ সতেজ। ছন্দে ছন্দে হাঁটা ছন্দময় বক্ষ দোলন দেখলে, বুকটা হু হু করে উঠে। লম্বাটে চেহারা, ঠোট গুলো তাজা গোলাপ পাপড়ির মতোই গোলাপী। আমার ডেস্ক থেকে চার সারি পেরিয়ে কোনাকোনি একটা ডেস্কেই তার অবস্থান। কাজের অবসরে, কম্পিউটার থেকে চোখ সরিয়ে, খানিকটা ভাবনায় পরে কোনাকোনি হয়ে বসলেই শিউলীর মুখটা চোখে পরে। তখন মনটা উদাস হয়ে যায়। কাজে আর মন বসে না। তখন, অফিস কক্ষ থেকে বেড়িয়ে পরি, একটা সিগারেটে ফু দেবার জন্যেই।
অপর মেয়েটি হলো, শুভ্রা! যেমনি শুভ্র সুন্দর চেহারা, তেমনি ধারালো চেহারার এই মেয়েটি যেনো, হাসি দিয়েই সব মানুষের মন জয় করে নিতে পারে। এত সাদা আর এত সমান পরিপাটি দাঁত কারো হয় নাকি? আমার সামনা সামনি ছয়টি ডেস্ক পর, পেছন ফিরেই তার অবস্থান। সচরাচর তার চেহারাটা চোখে পরেনা। কালে ভদ্রে, চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে, এদিক সেদিক চলাফেরার সময়ই শুভ্রার চমৎকার চেহারাটা চোখে পরে। আমি যেনো শুভ্রার সেই চেয়ার ছেড়ে উঠার মুহুর্তটির জন্যেই পাগলের মতো অপেক্ষা করতে থাকি। শুধু মাত্র তার চমৎকার চেহারা, আর সেই চেহারায় চমৎকার দাঁতের হাসি দেখার জন্যেই।
শিউলীর ঠোট দুটোও সত্যিই চমৎকার! এমন ঠোটযুগল যখন নড়া চড়া করে, তখন তা দেখে মনটাই শুধু উদাস হয়ে উঠেনা, মনের ভেতর যৌন বেদনাও জাগ্রত হয়! শিউলীর চ্যুইং গাম চিবানোর অভ্যাস আছে। সারাক্ষণ মুখের ভেতর একটা চ্যুইং গাম থাকেই। সেই চ্যুইং গাম চিবুনীর তালে তালে তার ফর্সা চেহারায়, অসম্ভব গোলাপী সরু দুটি ঠোট যখন নড়তে থাকে, তা দেখে নুনুটাও যেনো বেপরোয়া হয়ে উঠে।
অফিসে শিউলীর কি কাজ আমার জানা নেই। সারাক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে, ডান হাতে মাউসটা নাড়া চাড়া করে, সেই ডান হাতেই কী বোর্ড টিপা টিপি করে। আর বাম হাতটা বরাবরই গালে অথবা থুতনীতে থাকে। মাঝে মাঝে সেই বাম হাতের সরু সুদৃশ্য আংগুলী গুলো দিয়ে, চ্যুইং গাম চিবুনো নড়তে থাকা ঠোট গুলো আঁকড়েও ধরে। তখন সত্যিই সেই ঠোটে চুমু দেবার আগ্রহ জমে উঠে। মাঝে মাঝে বাম হাতটা মুঠি করে থুতনীতে ঠেকিয়ে, ঠোট গুলো ঈষৎ উঁচু করে ধরে রেখেই কম্পিউটারে আপন মনে চোখ বুলিয়ে যায়। আমার মনে তখন সেই ঠোটে চুমু দেবার আকাংখাটা প্রবল হয়ে উঠে। আমার কেনো যেনো মনে হতে থাকলো, শিউলী এসব ইচ্ছে করেই করে থাকে। কারন, তার দিকে প্রায়ই উদাস হয়ে তাঁকিয়ে থাকি বলে, তার মনেও ধারনা হয়ে গেছে যে, সে আমার পছন্দেরই একটি মেয়ে।
শরৎগন্জের সেলস অফিসটা ধরতে গেলে, বিশাল একটা হল ঘরের মতো। ডানে বামে দু পাশে সারি সারি করে, অনেকগুলো লাইনে ডেস্কে সাজানো একটা অফিস। প্রায় দুশ জন কর্মীর অবস্থান। আমার ডেস্কটা হলো, বাম পাশের সারির তৃতীয় লাইনে। আমার বাম পাশে একজন, ডান পাশে তিনজন। সামনা সামনি তেমনি পাঁচজন। তেমনি দশ জনের পাঁচটি ডেস্ক লাইন পেরিয়ে ষষ্ঠ লাইনেই শুভ্রার ডেস্ক। আমার সামনা সামনি ডান কোনায় কামালের ডেস্ক। সেই কামালের কাছেই কাজের খাতিরে, দিনে বেশ কয়েকবারই শুভ্রা এসে থাকে। ঠিক তখনই শুভ্রাকে ভালো করে দেখার সুযোগ পাই।
শুভ্রা কথায় কথায় রিনি ঝিনি সুরেই হাসে। সেই হাসি কানে এলে কাজে মন বসার কথা না। আমার চোখও কম্পিউটার থেকে সরে গিয়ে, শুভ্রার সেই মিষ্টি হাসির ঝক ঝকে সাদা দাঁত গুলোর উপর গিয়েই পরে। শুভ্রাও কামালের সাথে কাজের আলাপের ফাঁকে কৌশল করেই আমার দিকে তাঁকায়। দুজনে চোখাচোখি হয়ে গেলেই কেনো যেনো দুজনেই চোখ সরিয়ে নিয়ে অন্যত্রই তাঁকানোর পায়তারা করি। কেনো যেনো মনে হতে থাকলো, শুভ্রাকে আমার খুবই পছন্দ, সে তা টের পেয়ে গেছে এই কয়দিনেই। আর তাই, কামালের কাছে কাজের ছোতা ধরে, শুভ্রারও ঘন ঘন আসাটা শুধু বাড়তেই থাকলো।

সেদিনও অফিস থেকে বেড়িয়ে নুতন একটা বাসা সন্ধানেই বেড়িয়ে পরলাম। খালি বাসাও কয়েকটা পাওয়া গেলো। অথচ, ব্যাচেলর হিসেবে, কেউই আমাকে একটি বাসা দিতে রাজী হলো না। ইচ্ছে করলে মেসের কিছু সন্ধানও করতে পারতাম। তবে, আমার কিছু বাতিক আছে। ছাত্রজীবনে মেসে থাকার অভ্যাস থাকলেও, কর্মজীবনে মেসে থাকার কোন আগ্রহই নেই। তার বড় কারন হলো প্রাইভেসী!
অনেকটা মন খারাপ করেই ছোট খালার বাসায় ফিরে এলাম, অনেক রাতে। মোহনা বোধ হয় বসার ঘরে বসেই টি, ভি, দেখছিলো। তাই সেই দরজাটা খোললো। মোহনার পরনের সংক্ষিপ্ত পোষাক দেখতে দেখতে অভ্যাস হয়ে গেছে। তাই লজ্জার ব্যাপারগুলো আর মনে রাখার চেষ্টা করিনা। আমি সরাসরিই মোহনার স্ফীত বক্ষের দিকে তাঁকালাম। গোলাপী রংয়ের নাইলনের সেমিজ। খানিকটা ঢোলা। আবছা আবছা বক্ষ দুটি চোখে পরে। সেই কারনেই বোধ হয় আরো বেশী সেক্সী লাগে।
নিম্নাংগে সাদা শর্টস। গোলাপী রং এর সাথে সাদা রং এর একটা বিশেষ ম্যাচিং আছে কিনা কে জানে? মোহনাকে অদ্ভুত রকমেই সেক্সী লাগছিলো। সারাদিনের ক্লান্ত দেহটাও চাংগা হয়ে উঠলো, মোহনাকে দেখার সাথে সাথে। মোহনা বললো, এত দেরী করলেন যে?
আমি বললাম, একটা বাসা খোঁজার জন্যেই এখানে সেখানে যেতে হলো। খালা খালুজান কি ঘুমিয়ে পরেছে?
মোহনা বললো, হুম, হাতমুখটা ধুয়ে আসেন। আমি খাবার রেডী করছি।
আমি হাতমুখটা ধুয়ে, খাবার ঘরে ঢুকেই দেখলাম, দুজনের খাবার সাজিয়েছে মোহনা। আমি অবাক হয়েই বললাম, কি ব্যাপার, তুমি খাওনি?
মোহনা বললো, আপনাকে ফেলে একা একা খাই কি করে?
আমি বললাম, কেনো? এতদিন খাওনি?
মোহনা বললো, এতদিন আর এখন কি এক হলো? আসলে মায়া!
মোহনা আমার প্লেটে তরকারী ঢালতে ঢালতে বললো, আপনার আর বাসা না খোঁজলেও চলবে। হঠাৎ চলে গেলে, আমার খুব খারাপই লাগবে।
আমি ভাত মাখতে মাখতেই বললাম, মায়া খুব খারাপ জিনিস। তোমার বয়স কাঁচা! এই বয়সে মায়া মমতাগুলো খুব কষ্ট দেয়!
মোহনা নিজের ভাতও মেখে নিয়ে, এক লোকমা মুখে পুরে দিয়ে, চিবুতে চিবুতেই বললো, আপনি কি বুড়ু হয়ে গেছেন?
আমি মুচকি মুচকি হাসলাম। তারপর বললাম, বুড়ু নই তো কি? আঠাশ বছর! ধরতে গেলে তোমার প্রায় দ্বিগুন!
মোহনা খেতে খেতেই বললো, জানেন? আমার এক বান্ধবী না পালিয়ে গেছে! যার সাথে পালিয়েছে, তার বয়স বত্রিশ। বিবাহিত! আগের বউয়ের একটা ছেলেও আছে!
আমি বললাম, সেকি? জেনে শুনে এমন কাজ করলো?
মোহনা বললো, আগে জানতো না তো! লোকটা প্রাইভেট পড়াতো। সেখান থেকেই প্রেম! তারপর আরও অনেক কিছু!
আমি চোখ কপালে তুলেই বললাম, আরো অনেক কিছু মানে?
মোহনা ফিশ ফিশ করেই বললো, পরে বলবো।
খাওয়া দাওয়া শেষ করেই, মোহনার ঘরে ঢুকলাম, মোহনার পেছনে পেছনেই। ঘরে ঢুকে মোহনা বিছানার উপর চিৎ হয়ে শুয়ে বললো, আমার ঐ বান্ধবীটার কথা বললাম না? খুবই ভালো মেয়ে! সব সময় ঘুমটা দিয়ে চলাফেরা করতো! অথচ, তলে তলে এত কিছু করতে পারতো, কল্পনা করার মতোও ছিলো না।
আমি আবারও বললাম, এত কিছু কি করতো?
মোহনা ভ্যাংচি কেটেই বললো, আপনি কি ন্যাকা নাকি? এত কিছুর অর্থ, বুঝেন না?
আমি বললাম, বাহরে, বুঝিয়ে না বললে, বুঝবো কি করে?
মোহনা উঠে বসে বললো, ছেলেতে মেয়েতে যা হয়!
আমিও ভনিতা করেই বললাম, ওহ, বুঝেছি। প্রেম! প্রেম করলেই বুঝি বিবাহিত একটা লোকের সাথে পালিয়ে যেতে হবে?
মোহনা বললো, শুধু প্রেম না! ঐ কাজও!
আমি চোখ কপালে তুলেই বললাম, ঐ কাজ মানে? চুমু?
মোহনা এবার রাগ করেই বললো, ধ্যাৎ, কিচ্ছু বুঝে না! এক বিছানায় শুয়েছে!
আমি বললাম, তাতে কি হয়েছে্ আমি আর তুমি এক বিছানায় থাকছি না? তাই বলে তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে হবে নাকি?
মোহনা বললো, আমরা কি এত কিছু করেছি নাকি?
এই বলে মোহনা উঠে দাঁড়ালো। তারপর বললো, আমি পড়তে বসবো। আপনার ঘুম পেলে ঘুমিয়ে পরেন।
ছাত্রজীবন হলে, এই সময়টাতে হয়তো আমাকেও পড়ার টেবিলে থাকতে হতো। কর্মজীবনে রাতের সময়টুকু কাটানোই বোধ হয় বড় এক সমস্যা। আমি পরনের পোষাকটা বদলে নিয়ে শোবার কথাই ভাবলাম। ঠিক তখনই পড়ার টেবিলেই ঘুরে বসে মোহনা বললো, আপনি কখনো প্রেম করেছেন?
আমি বললাম, হ্যা! কত্তবার!
মোহনা মুখ ভ্যাংচিয়ে বললো, কত্তবার! কত্তবার আবার প্রেম করে নাকি? প্রেম তো মানুষ একবারই করে!
আমি পোষাক বদলে, টি শার্ট আর ট্রাউজারটা পরে নিয়ে বিছানায় বসে বললাম, মানুষ বাঁচিবার জন্যে খায়, তবে কিছু কিছু মানুষ খাইবার জন্যে বাঁচিয়া থাকে।
মোহনা বললো, মানে?
আমি বললাম, মানে সহজ। সবাই বাঁচার জন্যেই তো খায়। তবে, কিছু কিছু ধনী মানুষ, মজার মজার সুস্বাদু খাবারগুলো খাবার জন্যেই তো বেঁচে থাকতে চাইছে!
মোহনা বললো, তা বুঝলাম, কিন্তু এর সাথে কত্তবার প্রেম করার মানে কি?
আমি বললাম, একই কথা হলো না! সবাই সুন্দর একটা জীবনের জন্যে প্রেম আশা করে। অথচ, সেরকম প্রেম আমার জীবনে কখনো আসেনি। তাই প্রেম করার জন্যেই আমি নুতন করে সুন্দর জীবন গড়ে তোলার চেষ্টা করি।
মোহনা বললো, বুঝলাম না। বুঝার দরকারও নাই। তা, আপনার নুনুটা ঠিক মতো আছে তো? নাকি ওটাও খাইবার জন্যে বেঁচে আছে! তাহলে খুব নিকটেই একটা পল্লী আছে! একবার ঘুরাইয়া আনেন!

মোহনার কথায় আমি খানিকটা ক্ষুন্নই হলাম। মোহনার সাথে আমার বয়সের একটা ব্যবধান আছে। তাছাড়া, ছোট খালার মেয়ে, এক প্রকার বোনের মতোই। বিপদে পরেই তাদের বাসায় আছি, একই ঘরে একই বিছানায়ই ঘুমুতে হচ্ছে। এছাড়া, তখন আমার মাথার ভেতর শুধু দুটো মেয়ের কথাই ঘুরপাক খাচ্ছিলো, যাদের একজন শিউলী আর অপরজন শুভ্রা! যে কোন একজনকে প্রেমিকা করে কাছে পেলে, জীবনে আর কিছুই চাইনা। আমি খানিকটা রাগ করেই বললাম, খুব পেকেছো না?
মোহনা বললো, মোটেও না! আপনাকে একটু বাজিয়ে দেখলাম। কারন, গতরাতে আপনার সাথে একই বিছানায় ঘুমুতে গিয়ে, সেই বান্ধবীটার কথাই শুধু মনে পরেছিলো। তাই সারা রাত ছটফট করেছি, আর আজে বাজে স্বপ্ন দেখেছি।
আমি বললাম, জানি?
মোহনা বললো, কি জানেন?
আমি বললাম, আমিও ঘুমুইনি। সারা রাত তোমার ছটফট ভাবটাই দেখেছি।
আমি খানিকটা থেমে বললাম, আমাদের বোধ হয় একই বিছানায় ঘুমোনো ঠিক হবে না। এক কাজ করো, আজ রাত থেকে আমি মেঝেতে ঘুমুবো।
মোহনা পড়ার টেবিল থেকে, বিছানার কাছাকাছি পর্যন্ত্য এগিয়ে এসে বললো, যদি আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি, তাহলে?
আমি খানিকটাক্ষন মোহনার চোখে চোখে তাঁকিয়ে রইলাম। তারপর বললাম, তোমাদের বাসায় আশ্রয়টা না হলে, ভেবে দেখতাম। এখন পুরুপুরিই অসম্ভব!
মোহনা চোখ কপালে তুলে বললো, কেনো? আমি খুব সেক্সী পোষাক পরি বলে, বাজে মেয়ে মনে হয়?
আমি বললাম, ছি ছি, এমন করে বলছো কেনো? যেসব মেয়েদের মনে প্যাচ থাকে, তারাই নিজেদের দেহটাকে ঢেকে ঢুকে রাখার পায়তারা করে। যারা খুব সহজ সরল, তারাই কোন কিছু গোপন রাখে না।
মোহনা মন খারাপ করেই বললো, তাহলে বলতে চাইছেন, আমি বোকা!
আমি অপ্রস্তুত হয়েই বললাম, বোকা বললো কে?
মোহন বললো, বোকাকেই ঘুরিয়ে ভদ্র ভাষায় সহজ সরল বলে। ঠিক আছে, আপনি কতটা চালাক, আমিও দেখে নেবো।
মোহনা যতই বুদ্ধীমতী আর যৌন বেদনাময়ী মেয়েই হউক না কেনো, কেনো যেনো তার প্রতি কোন রকম আগ্রহ আমার ছিলো না। তার বড় কারন হলো ভয়! খালা খালুর সরলতার সুযোগেই একই ঘরে একই বিছানায় থাকতে হচ্ছে। একটা কিছু কেলেঙ্কারী ঘটে গেলে, আত্মীয়তার বন্ধনটাই নষ্ট হবে চিরতরে। তাই আমি আর কথা না বাড়িয়ে বললাম, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে! তুমি পড়ালেখা শেষ করে নাও।
এই বলে আমি শুয়ে পরলাম।

অফিসে লাঞ্চটা খুব আনন্দঘন পরিবেশেই হয়। সহকারী ম্যানেজার সাইফুল সাহেব, কামাল সহ আমাদের টীমের এগারোজনের প্রায় আটজনই একই সাথে ক্যান্টিনে যাই। মাঝে মাঝে হয়তো বিজনেস ট্রিপে কেউ বাইরে গেলে, বাকীরা এক সংগেই পাশাপাশি সামনাসামনি টেবিলে বসেই গলপো গুজব আর হাসি আনন্দের মাঝেই লাঞ্চটা সারি। সংগত কারনেই সেলস অফিসের সবাই একটু বেশী কথাই বলে। আর বেশী কথা বলতে পারাটাই সেলসম্যানদের জন্যে গুরুত্বপূর্ন এবং প্রয়োজনীয় একটা ব্যাপার। নইলে কাষ্টোমারদের মন জয় করে, পন্য বিক্রয়ের কাজটিও সম্ভব না। তবে, প্রকৌশলী হিসেবে আমি ততটা কথায় পারদর্শী না। তাই, লাঞ্চের সময় চুপচাপ থেকে, সবার কথা শুনাটাই বোধ হয় আমার একটি কাজ হয়ে দাঁড়ায়।
সেদিন আমাদের টীমের অধিকাংশই বিজনেস ট্রিপে বাইরে ছিলো। লাঞ্চের সময় মাত্র তিন জনের একটা গ্রুপই ক্যান্টিনের একটা খালি টেবিলে গিয়ে বসেছিলাম। সব সময় যেখানে আট জন একটা বিশাল জায়গা দখল করে রাখি, সেদিন আমাদের আশে পাশের চেয়ারগুলো খালিই পরেছিলো। আর দূর থেকে তা দেখেই বোধ হয়, শুভ্রা ঠিক কামালের সামনা সামনি চেয়ারটাতে এসে বসলো। আমি কামালের পাশেই বসেছিলাম। তাই কোনাকোনি বসা শুভ্রার দিকে ভীরু ভীরু চোখেই বার কয়েক তাঁকিয়ে নিজ খাবারে মন দিলাম।
শুভ্রা কামালের সাথেই এটা সেটা কথা বার্তা চালিয়ে যাচ্ছিলো। এবং এক মুহুর্তে আমার কথাও জিজ্ঞাসা করলো, উনি কি নুতন?
আমি আঁড় চোখে একবার তাঁকালাম শুভ্রার দিকে। তারপর আবারও খাবারে মন দিলাম। কামালই উত্তর দিলো, না, নাগপুর অফিসে দীর্ঘদিন ছিলো। এখানে বদলী হয়ে এসেছে।
শুভ্রা চোখ কপালে তুলেই বললো, হেড অফিস? আমারও ঠিক তাই মনে হয়েছিলো। হেড অফিসের মানুষগুলো একটু অহংকারীই মনে হয়!
শুভ্রার কথা শুনে, আমি আর চুপচাপ থাকতে পারলাম না। বললাম, আমাকে কি খুব অহংকারী মনে হয়?
শুভ্রা রিনিঝিনি সুরেই হাসলো। তারপর বললো, হুম, সেই সাথে হাবাও মনে হয়!
শুভ্রার কথা শুনে সবাই অট্টহাসিতেই ফেটে পরলো। কেনো যেনো মনে হতে থাকলো, এক ধরনের উপহাসই করতে চাইছে সবাই মিলে। আমি বললাম, আপনি বুঝি খুব চালাক?
শুভ্রা খিল খিল হাসিতেই ভেঙে পরলো। তারপর বললো, ওমা মাইণ্ড করলেন মনে হয়?
তারপর, কামালকে লক্ষ্য করে বললো, উনি হাসি ঠাট্টা বুঝে না?
কামাল আমার দিকে খুব তীক্ষ্ম চোখেই তাঁকালো। তার চাহনি প্রকাশ করলো যে, বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে! ডেভেলপমেন্ট বিভাগের সংস্কৃতি, সেলস বিভাগে অচল। হাসি ঠাট্টাই হলো সেলস বিভাগের পরম ঐতিহ্য! অথচ, হঠাৎ করে হাসি ঠাট্টা করার মতো কোন কথাও খোঁজে পেলাম না। তাই আবারও নিজ খাবারে মন দিলাম। শুভ্রা নিজে থেকেই বললো, স্যরি, হাবা বলাতে। আসলে, জ্ঞানীদের সব সময় বোকা বলেই মনে হয়! আপনি তো তাদের দলেই!
আমি হাসলাম। বললাম, আমি জ্ঞানী নই। খুবই সাধারন মানুষ।
শুভ্রা আবারও খিল খিল করে, রিনি ঝিনি সুরে হাসতে থাকলো। হাসলে এই মেয়েটিকে এত সুন্দর লাগে কেনো? আমি খাবারের ফাঁকেই শুভ্রার চমৎকার হাসিটা উপভোগ করতে থাকলাম। শভ্রা হাসি থামিয়ে বললো, যাক বাবা, বাঁচা গেলো। আমি তো ভেবেছিলাম, নাগপুরের নাগরাজাই বুঝি এসেছে।
মানুষ বোধ হয় খুব সহজেই অভিযোজন করে, যে কোন পরিবেশেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এতদিনের নাগপুরের পরিবেশ আর বর্তমান শরৎগঞ্জের পরিবেশ পুরুপুরি ভিন্ন। আমি শরৎগঞ্জের পরিবেশের পাশাপাশি, সেলস অফিসের মানুষগুলোর চিন্তাভাবনার সাথেও নিজেকে খাপ খাইয়ে নেবার চেষ্টা করলাম। হঠাৎ কেনো যেনো নিজেও অট্টহাসিতে ফেটে পরলাম! তারপর হাসি থামিয়ে বললাম, নাগ রাজা! নাগ রাজা! হা হা হা…… নাগ কন্যা পেলে তো ভালোই হতো!

মায়া মমতাগুলো খুব সহজেই মানুষকে দুর্বল করে ফেলে। আমার প্রায়ই মনে হয়, পৃথিবীতে কিছু কিছু ঘটনা না ঘটলেও পারে। অথবা, মানুষের জীবনে সাময়িকভাবে কিছু কিছু মানুষের দেখা সাক্ষাৎ না হলেও হয়! তারপরও, মানুষের জীবনে নিজের ইচ্ছা না থাকাও স্বত্তেও অনেক ঘটনার যেমনি সূত্রপাত হয়, সাময়িক অনেক মায়ার বন্ধনও গড়ে উঠে।
শেষ পর্যন্ত একটা বাসা খোঁজে পেলাম শরৎগঞ্জ উপশহরেই। পুরনো বাড়ী, ভাড়াটা একটু বেশীই বলা যায়। তারপরও পছন্দ হলো বলেই নয়, ছোট খালার ছোট বাসাটা থেকে মুক্তি পাবার জন্যেই সিদ্ধান্তটা নিয়ে নিলাম। তবে, সমস্যা হলো বিদায় নেবার সময়! ছোট খালা কিংবা খালুজান যতটা সহজভাবে আমাকে বিদায় দিতে পারলো, মোহনা বোধ হয় এত সহজে বিদায় জানাতে পারলো না। বিদায়ের প্রাক্কালে মোহনাকে এত ডাকাডাকি করলাম, অথচ মোহনা নিজ ঘরে দরজা বন্ধ করেই বসে রইলো। অগত্যা, মোহনার সাথে শেষ সাক্ষাৎটুকু ছাড়াই বিদায় নিতে হলো।
নুতন বাসায় জীবন শুরু হলো শুন্য থেকেই। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ যা দরকার, তাতো কিনতেই হবে! যেমন, বিছানা, চাল চূলু! আমি সেই চাল চূলু কেনার জন্যেই শপিং সেন্টারে গিয়েছিলাম। বিশাল বেডিংটা কোলে নিয়ে একটা রিক্সায় উঠতে যেতেই মেয়েলী একটা কন্ঠ শুনতে পেলাম। আমি রিক্সার সীটের উপরই বেডিংটা ঠেকিয়ে ধরে পেছনে তাঁকালাম। অবাক হয়েই দেখলাম শিউলী। সে খানিকটা এগিয়ে এসে, খুব মিষ্টি করেই হেসে বললো, এত বড় বেডিং নিয়ে কোথায় চললেন?
আমি খানিকটা ভণিতা করেই বললাম, আপনি কি আমাকে চেনেন?
শিউলী খানিকটা রাগ করেই বললো, সিকদার ভাই, আপনি কি আমার সাথে ফান করছেন? আপনি আমাকে না চিনলেও, আমি আপনাকে ভালো করে চিনি। নাতাশা আর আমি একই সংগে জয়েন্ট করেছি। নাতাশা! হেড অফিসে মার্কেটিং বিভাগের নাতাশা! আপনার কাছে ট্রেইনী হিসেবে ছিলোনা?
আমি লাজুক চেহারা করেই বললাম, ও আচ্ছা! কি নাম আপনার?
শিউলী বললো, শিউলী। এত্ত বড় বেডিং কোলে নিয়ে, যেভাবে রিক্সায় উঠছেন, মনে তো হচ্ছে এটাই আপনার নুতন বউ!
আমি বললাম, নুতন সংসার! বেডিং লাগবে না!
শিউলী বললো, বিয়ে করেছেন নাকি? কই শুনিনি তো! আর শুনবোই বা কেমন করে! নাতাশা যেভাবে ছুটি নিয়ে নিলো!
শিউলী খানিকটা থেমে বললো, আমার গাড়ী আছে। আপত্তি না থাকলে আপনাকে পৌঁছে দিতে পারি। কোথায় যাবেন?
আমি বললাম, উপশহর, রোড নম্বর ছয়।
শিউলী অবাক হয়েই বললো, এতো দেখছি আমাদের পাশের গলি! অথচ, আমি জানিনা। আসুন আসুন! গাড়ীতে উঠুন!
আমি যেনো হঠাৎই বোকা বনে গেলাম। অনেকটা বোকার মতোই শিউলীর পেছনে পেছনে, রাস্তার ধারে পার্ক করা তার গাড়ীটার কাছেই এগিয়ে গেলাম। পেছনের সীটেই বেডিংটা ঠেলে ঢুকিয়ে, সামনে শিউলীর ড্রাইভিং সীটের পাশেই বসলাম। গাড়ী চালাতে চালাতেই শিউলী বললো, শেষ পর্যন্ত কাকে বিয়ে করলেন?
আমি বললাম, কিসের বিয়ে?
শিউলী বললো, ঐ যে বললেন? নুতন সংসার!
আমি বললাম, বিয়ে না করলে কি নুতন সংসার করা যায়না? নাগপুর থেকে বদলী হয়ে এলাম! নুতন করে আবার সংসার সাজাতে হবে না!
শিউলী বললো, তাই বলেন!
অনেকটা ক্ষণ কথাবার্তাহীন ভাবেই চললো। হঠাৎই নাতাশার কথা খুব জানতে ইচ্ছে হলো। একটা সময়ে নাতাশাও বদলী হয়ে শরৎগঞ্জে এসেছিলো। এবং আমার বর্তমান টীমেরই একজন কর্মী। অথচ, দীর্ঘদিন ধরেই ছুটিতে আছে। আমি বললাম, নাতাশার আসল ব্যাপারটা কি? এতটা দিন ছুটি!
শিউলী বললো, কারন তো আপনিই ভালো জানেন! সহজ সরল মেয়েটা একই সাথে এতগুলো কষ্ট সহ্য করার কি উপায় থাকে! আপনিও তো কিছু করলেন না।
যতদূর শুনেছিলাম, নাতাশা শরৎগঞ্জে আসার কিছুদিন পরই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলো। তার কারন আসলে আমার জানা ছিলো না। বরং নাতাশা বদলী হবার পরই, আমি সাংঘাতিক কষ্ট পেয়েছিলাম। এমন কি, নিজ কাজেও মন বসতো না। সারাক্ষন, অমনোযোগী হয়েই অফিসে সময় কাটাতাম। যার প্রতিফলই ছিলো, আমার এই কোম্পানীর রাজনৈতিক শাস্তি! ডিপার্টমেন্ট বদল সহ, স্থান এরও বদল। আমি অবাক হয়েই বললাম, কই, কিছুই তো জানিনা। এখন থাকে কোথায়?
শিউলী বললো, মায়ের সাথেই দেশের বাড়ীতে আছে। নাগপুরে থাকার খুব শখ ছিলো মেয়েটার!
শিউলীর কথা শুনে আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। আমার আর কথা বলতে ইচ্ছে হলো না। কেনোনা, আমারই বা কতটা ক্ষমতা! নিজের বদলীও তো আটকাতে পারিনি। বাকী পথটা কথাবার্তাহীন ভাবেই চালিয়ে গেলাম। আমার বাসার সামনে গাড়ীটা থামিয়ে শিউলী বললো, দুপুরের রান্না বান্নার তো আয়োজন নাই। বেডিংটা রেখে এসে আমাদের বাড়ীতেই চলেন। দেখি কাদের চাচা কি রান্না করছে!

ছোট খালার বাসাটার তুলনায়, শিউলীদের বাড়ীটা পুরুপুরি ভিন্ন। বিশাল রাজকীয় এক বাড়ী। বাড়ীর ভেতরে না ঢুকে, বাইরের পরিবেশটা দেখেই মন জুড়িয়ে যায়। ছাত্রজীবনে টিউশনি করার সুবাদে, কিংবা ধনী কিছু বন্ধু বান্ধবীদের সুবাদেই হয়তো এমন কিছু বাড়ীতে ঢুকার সুযোগ হয়েছিলো। আর বরাবরই এমন সব বাড়ীতে ঢুকতে খানিকটা ভয় ভয়ই করতো। শিউলীদের বাড়ীতে ঢুকতেও আমার খুব ভয় ভয় করতে থাকলো। ব্যাপারটা বোধ হয় শিউলীও টের পেলো। সে আমাকে সহজ করার জন্যেই বললো, গার্ডেনিং আমার পছন্দ! আমাদের বাগানটা খুব সুন্দর না! ছুটির দিনে, নিজেই পরিচর্য্যা করি।
আমি শিউলীদের বাড়ীর লনটার বাম পাশে চমৎকার বাগানটা মুগ্ধ হয়েই উপভোগ করে বললাম, হুম, খুবই চমৎকার!
বাড়ীর ভেতরে ঢুকেও দেখলাম, বিশাল সুসজ্জিত একটা বসার ঘর। অথচ, শিউলী আমাকে নিজের ঘরে নিয়ে যাবার জন্যেই সিঁড়িটার দিকে ইশারা করলো। আমি বোকার মতোই শিউলীকে অনুসরন করলাম। দুতলায় কোনার দিকটার ঘরে ঢুকেই বিছানায় ঝাপিয়ে পরে শিউলী নিজেই নিজেই বিড় বিড় করলো, টায়ার্ড!
তারপর আমাকে লক্ষ্য করে বললো, সিকদার ভাই, বসেন!
বিশাল একটা ঘর, ঠিক তেমনি বিশাল একটা খাট! অথচ, পুরু বাড়ীতে অন্য কোন মানুষের সারা শব্দ পেলাম না! আমি বললাম, আপনার মা এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেবেন না?
শিউলী মুচকি হাসলো। তারপর, উঠে বসে বললো, মায়ের সাথে কি করে পরিচয় করিয়ে দিই বলুন? মা তো এখন লণ্ডনে! টেলিফোন করবেন?
আমি বললাম, মানে?
শিউলী বললো, সবাই লণ্ডনে! আমিই শুধু দেশে থাকি। আর কাদের চাচাই বাড়ীটা দেখে শুনে রাখছে।
এই বলে জানালায় মুখ বাড়িয়ে, উঁচু গলাতেই ডাকতে থাকলো, কাদের চাচা, কাদের চাচা! কি রান্না হচ্ছে? আমার এক কলিগ এসেছে! দুজনের খাবার রেডী করবে!
তারপর শান্ত হয়ে বসে, শিউলী ছোট একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।
বাইরে থেকে দেখে, মানুষের অনেক কিছুই বুঝা যায় না, জানা যায়না। শিউলীকে দেখে, হঠাৎই মনে হলো, তার মনে কোথায় যেনো একটা চাপা কষ্টই বিরাজ করছে!

সেলস অফিসের সহকারী ম্যানেজার সাইফুল সাহেব, মহা লোচ্চা। রাতের শহরের অনেক গোপন আনাগুনা তার জানা। সেদিন কাস্টোমার রিপোর্টটা শেষ করতে করতে, রাত প্রায় আটটাই বেজে গেলো। সাইফুল সাহেবও আমার রিপোর্টটা শেষ হবার জন্যেই অপেক্ষা করছিলো। রিপোর্টটা জমা দিতেই সাইফুল সাহেব বললো, সিকদার সাহেব, চলেন, রাতের খাবারটা বাইরে কোথাও এক সাথেই খাই।
শরৎগঞ্জে এসে রাতের শহরে আনাগুনা করার কোন আগ্রহ আমার ছিলো না। রাতের খাবারটা সাধারন একটা রেষ্টুরেন্টে শেষ হতেই সাইফুল সাহেব বললো, পাইকবাজার যাবেন?
আমি বললাম, পাইকবাজার? কি আছে সেখানে?
সাইফুল সাহেব রহস্যময় হাসিই হাসলো। তারপর বললো, সিকদার সাহেব! বিয়ে করেন নি, তাই অনেক কষ্টই বুঝেন না। তবে, বিয়ে করার পর, ব্যাচেলর লাইফ যে কত কষ্টের, তা বিয়ে নাকরলে কখনোই বুঝবেন না।
সাইফুল সাহেবও দীর্ঘদিন আগে বদলী হয়ে এসেছে এখানে। নাগপুরে নুতন বাড়ীটা গড়ার পরই বদলীটা হয়েছিলো। তাই পরিবার এর সবাইকে নাগপুরে রেখেই ব্যাচেলর জীবন বেছে নিয়েছে। আমি বিয়ে না করলেও নারী নিসংগতা অনুভব করতে পারি। কেনোনা, বিয়ে না করেও একাধিক নারীর সংস্পর্শে আসার সুযোগ ঘটেছে জীবনে। আর পেয়ে হারানোর বেদনা যে কত কষ্টের, তা আমার মতো মানুষগুলোই বুঝি ভালো অনুভব করার কথা। আমি বললাম, যার কষ্ট সেই সহে!
সাইফুল সাহেব বললো, টানাটানির অভ্যাস আছে নাকি?
আমি বললাম, মানে?
সাইফুল সাহেব আমার কথা শুনলো কি শুনলো না, বুঝলাম না। সে একটা খালি রিক্সাকে যেতে দেখেই ডাকলো, ঐ খালি!
রিক্সাওয়ালা রিক্সা থামিয়ে বললো, কই যাইবেন স্যার?
সাইফুল সাহেব বললো, পাইকবাজার।*
রিক্সাওয়ালা বললো, না স্যার, যামুনা।
সাইফুল সাহেব রাগ করেই বললো, তাইলে যাবি কই?
রিক্সাওয়ালা আবারো মাথা নেড়ে বললো, না স্যার, যামুনা।
এই বলে সে প্যাডেল চেপে এগিয়ে যেতে চাইলো। অথচ, সাইফুল সাহেব রিক্সাওয়ালাকে ধমকেই বললো, যতদূর যাবি, নিয়া যা।
এই বলে সাইফুল সাহেব লাফিয়ে রিক্সার উপর বসে পরলো। তারপর, আমাকে ইশারা করলো রিক্সায় উঠতে।
পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ বোধ হয় সহজেই অন্যকে আবিষ্ট করে ফেলতে পারে। মোহনা, শুভ্রা কিংবা শিউলী যেমনি আমাকে আবিষ্ট করতে থাকলো, মাঝ বয়েসী সাইফুল সাহেবও আমাকে এক প্রকার আবিষ্টই করতে থাকলো। আমি কোন কিছু না ভেবেই রিক্সায় চড়ে বসলাম। সাইফুল সাহেব পকেট থেকে একটা সিগারেটের প্যাকেট বেড় করে, এক শলা আমার হাতে গুজে দিয়ে, আরেক শলা নিজের ঠোটেই পুরে নিলো। তারপর লাইটার জ্বালিয়ে সিগারেটে আগুন ধরিয়ে ঘন ধূয়া ছেড়ে বললো, জীবনটা হলো ধূয়ার মতো! দেখা যায়, অথচ ধরা যায় না!
আমিও সিগারেটে কষে একটা টান দিয়ে, কিছু একটা বলবো ভেবেছিলাম। অথচ, পরের মোড়টাতেই রিক্সাওয়ালা রিক্সা থামিয়ে বললো, আর যামুনা স্যার! ঐ খালি রিক্সা আছে! অন্য রিক্সা নেন!
সাইফুল সাহেবের সাথে পাইকবাজারে যেখানে গেলাম, সেটি সাধারন একটি বার। এমন বার নাগপুরেও যেমনি অনেক আছে, বড় বড় শহরগুলোতেও থাকার কথা। তবে, এটি খুব ভিন্ন বলেই মনে হলো। সাধারন কিছু বাড়ীর আশপাশের সরু গলিপথ গুলো পেরিয়ে কলাপসিবল গেটে সুরক্ষিত একটি বাড়ীর সামনে এসেই হাজির হলাম। গেটের ভেতরে রাইফেল হাতে একজন পাহাড়াদারও টুলের উপর বসে আছে। এই ধরনের পাহাড়াদার ব্যাংকের দরজায় ছাড়া অন্য কোথাও খুব কমই চোখে পরেছে। আমাদের দেখেই, দাঁড়িয়ে, হাত তুলে একটা সালাম দিয়ে, গেটটা খুলে দিলো। সাইফুল সাহেব আমাকে ইশারা করলো পেছনে পেছনে আসতে।
সিঁড়ি বেয়ে তিনতলার কাছাকাছি আসতেই বিদেশী উত্তাল মিউজিকের শব্দই শুধু কানে আসতে থাকলো। এমন উত্তাল মিউজিক শুনলে, নিজের অজান্তেই দেহে ঢেউ খেলে যায়, পাগলা নৃত্য করতে ইচ্ছে করে। যতই এক ধাপ ধাপ করে সিঁড়ি বেয়ে উঠছিলাম, ততই মিউজিকের শব্দটা তীব্র হতে থাকলো। তিনতলায় উঠার পর, যে দরজাটির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, তাতেই প্রথম দেখলাম, দরজার গায়ে সাইন বোর্ডে লেখা, ড্যান্স বার পিয়েলা।
ভারী দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই দেখলাম, লাল, নীল, নানান রংয়ের আলোর বন্যা। আর সেই সাথে উত্তাল সুরের তরঙ্গ! আরো ভেতরে চুপি দিতেই দেখলাম, গুচ্ছ গুচ্ছ গোলাকার টেবিলের চারিদিকে মদ্যপায়ী কাষটোমারদের মাতাল চেহারা। আর, তাদেরকেই মদ ঢেলে দিচ্ছে কিছু নারী, যাদের উর্ধাংগে কোন পোষাকই নেই।
টপলেস বার! বড় বড় শহরগুলোতে এমন দু একটি বার হয়তো আছে। কখনো যাওয়া হয়নি। সাইফুল সাহেবের কল্যানে, এমন একটি বারে ঢুকে, তৎক্ষনাত চিত্তটা প্রফুল্লিত হয়ে উঠলো। বাস্তব জীবনের দুঃখ বেদনা, প্রেম ভালোবাসার কথা সব কিছুই ভুলে গেলাম মুহুর্তেই। আর মনে মনে সাইফুল সাহেবকে একটা ধন্যবাদ জানালাম।

পরের অংশ

Leave a Comment