এ তো শুধু আমার সমস্যা না। এটা তো পুরো পরিবারের সমস্যা। এমন একটা সম্পর্ক, যেটা হয় না, কেউ মেনে নিতে পারে না।
– কী রে নিচে আসছিস না কেন? অ্যাঁ, এখনো শাড়ি পরিস নি?
চিন্তায় ছেদ পরল আমার। চোখ টা মুছে নিলাম আমি । তাকিয়ে দেখলাম ছোড়দি। অসম্ভব সুন্দর লাগছে দিদিকে আমার। এক টা লাল শাড়ি। এক গা গয়না। ঠিক লক্ষ্মী প্রতিমার মতন লাগছে। না না, মন্ডপে সাজানো মা দূর্গার মতন লাগছে দিদি কে। বাস হাতে একটা ত্রিশুল দিলেই ষোলকলা পূর্ন হয়।
bangla golpo
দিদি আমার সামনেই দাঁড়িয়ে। আমি বিছানায় বসে। কল্পনা করলাম দিদির হাতে ত্রিশুল, আর আমি পায়ের কাছে বসে। দিদি ত্রিশুল টা আমার বুকে বিঁধিয়ে দিচ্ছে একটু একটু করে। আর বলছে – তোর মতন আসুরী কে মারতেই আমার ধরায় আগমন।
চমকে উঠলাম। আমি কি দিদির মন পড়লাম? তবে এ কল্পনা এলো কি করে আমার মনে?
দিদি আবার বলল – কি রে চল, সময় নেই ওরা সীমানাপুরে চলে এসেছে তো!
– হুম যাচ্ছি
– কি ভাবছিলি? অর্জুনের কথা?
– মরন আমার। আর কি ভাবার বিষয় নেই নাকি আমার?
– হ্যাঁ, সে তো বটেই, সে আমি জানি, নে রেডি হ। bangla golpo
আমি দিদির দিকে তাকালাম। দিদির চোখে তাকিয়ে যে ঘৃনা দেখলাম, আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম উলটো দিকে। পারলাম না তাকিয়ে থাকতে। এতো তীব্র ঘৃনা? বুঝে গেলাম, দিদিও একি কথা ভাবছিল, যা আমি ভাবছিলাম তখন। আমাকে মেরে ফেলার কথা। অর্জুন তো বংশের প্রদীপ, সবার প্রাণ। ওর জানের দাম ই আলাদা। আমি তো তাকে শেষ করে ফেলব, যে অর্জুনের সামান্য ক্ষতির কথা ভাববেও। তাতে সে যেই হোক। কাজেই বাকি রইলাম আমি। আমার মরণে অর্জুন ছাড়া কারোর কিচ্ছু যায় আসবে না। তাই দিদি আমার মরন চাইছে। দিদি কে বললাম,
– আচ্ছা দিদি, আমার যদি এক্সিডেন্ট এ মৃত্যু হয়, তাহলেও কি অর্জুন শান্ত হবে না?
দিদি চমকে উঠল। বুঝে গেল, আমাদের দুজনের চিন্তা টা একি দিকে চলছে। মুহুর্তেই, দিদির চোখে ঘৃনার বদলে অপরিসীম ভালোবাসা আর ব্যাথা দেখলাম। হাসি পেল আমার। আহা রে, কি মারাত্মক দোলাচালেই না ভুগছে দিদি টা আমার। একদিকে আমার উপরে অপরিসীম ভালবাসা, তার উপরে দিদির জীবনে আমার অবদান, আর একদিকে রাক্ষুসী আমি। এতোগুলো পরিবার এর চিন্তা। রাক্ষুসী আমি টাই দিদিকে সব থেকে চিন্তায় ফেলেছে বলে আমার বিশ্বাস। আমাকে বলল….. bangla golpo
– কেন মরার কথা কেন?
– না বললাম, তুই কিছু করিস না আমাকে। মানে মারার চেষ্টা করিস না। আমি ভাবছি, এই রকম একটা প্লট বানিয়ে, এক্সিডেন্ট এর মতন করে মরে যাব।
দিদি আমার কাঁধে হাত রেখে কথা বলছিল। আমি শেষের কথা টা বলার সাথে সাথেই, কাঁধ টা খামচে ধরল। তাকিয়ে রইল আমার চোখের দিকে। চোখে একটা সমীহ মাখানো ভয়। মুহুর্তেই বদলে গেল সেটা, স্বাভাবিক হয়ে গেল। সেই আদ্র চোখ, আমার উপরে ভালোবাসা ফিরে এলো চোখে। ঠাণ্ডা গলায় বলল,
– আমি কি ভাবছিলাম, কি করে বুঝলি? বোঝার ভুল নয় তো তোর?
তখন চোখে কৌতুক উঁকি দিচ্ছিল দিদির। বুঝে গেলাম দিদির মনের কোনায় কথাটা এসেছিল, এতো গুলো পরিবার কে বাঁচাতে, আমাকে মেরে ফেলার কথা। হয়ত বুঝেছে, আমার পাষাণ প্রাণ। সহজে মরব না। তাই আমাদের সামনা সামনি কস্ট না দিয়ে অনেক ভিতর থেকে ভাবছে এই সমস্যা থেকে বেরোনর পথ। আমি দিদির কথার উত্তর দিলাম না। বললাম অন্য কথা… bangla golpo
– আমাকে মারলে তোর কি হবে? সুবর্ন টা একা হয়ে যাবে। ললিত দা শেষ হয়ে যাবে। তোর সারা জীবনের তপস্যা র ফল তুই যা পাচ্ছিস সব জলাঞ্জলি যাবে। আর সব থেকে বড় কথা, জেলের ভাত তুই খেতে পারবি না।
দিদি হেসে ফেলল আমার শেষ কথা টা শুনে। হাসতে হাসতেই আমার সুটকেস খুলে আমার জন্য শাড়ি বের করে দিল। আমার পাশে রেখে বলল,
– আমি ধরা পড়ব তোকে কে বলল।
আমি শাড়ি টা নিয়ে খুলে ফেললাম। নিজে যে শাড়ী টা পরে ছিলাম, সেটা খুলে, নতুন শাড়ি টা পড়তে পড়তে উত্তর দিলাম
– অর্জুন ঠিক ধরে ফেলবে। ওকে তো চিনিস না। তারপর কি তোকে ও ছেড়ে দেবে ভেবেছিস?
– হুম সেটা ঠিক কথা। তবে কি উপায় বলত? bangla golpo
– তোকে তো বললাম।
– এক্সিডেন্ট?
– হুম।
– আরো একটা ভালো উপায় আছে।
চমকে উঠলাম আমি। মন টা ফাঁকা হয়ে গেলো। মনে হলো উপায় টা ঠিক ঠাক হলে সেটা মেনে নিতেই হবে। কিন্তু তাতে আমার আর অর্জুনের সম্পর্কের মিলন হবে না এটা নিশ্চিত। আমি না চাইলেও, এটা মেনে নেওয়া আমার পক্ষে মারাত্মক কষ্টকর হবে। কিন্তু পিছিয়ে আসলে চলবে না। দিদি কে বললাম কি উপায়? দিদির হাতের চুড়ি,শাঁখা পলার রিন রিনের আওয়াজের মাঝেই দিদি আমার শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে করতেই বলল। bangla golpo
– তুই চলে যা অন্য কোথাও।
– আর অর্জুন?
– ওকে আমরা সামলে নেব?
– পারবি না রে দিদি। আমি জানি পারবি না
– তোকে সে সব ভাবতে হবে না।
– কিন্তু।
– কোন কিন্তু না। যদি না যাস ভাবব, তুই ছেলে টাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দিবি না। ওর উপরে পজেসিভ হওয়া বন্ধ কর। তুই কি করে জানলি, তুই চলে যাবার পরে আমরা ওর খেয়াল রাখতে পারব না?
– না মানে, পারলে তো ভালো, কিন্তু যদি না পারিস। bangla golpo
দিদি আমার চুল টা খুলে দিয়ে আঁচড়াতে লাগল। এখনো হালকা ভিজে আছে আমার চুল টা। দিদি আঁচড়াতে আঁচড়াতে রেগে গেল, বেশ জোরের সাথেই আমাকে বলল,
– না পারলে তখন ভাবব। এখন সে সব তোকে বলতে যাব কেন। মোদ্দা কথা, আমি আর তোর পজেসিভনেস টা মানব না। আমি মানতে পারছি না। আর তুই ভেবে দেখ, এই পজেসিভ নেস টা মাতৃ সুলভ নয়। সব ঘেঁটে দিয়েছিস তুই আমার। ব্যস আমি আর মেনে নেব না । মনে থাকবে?
চুল আঁচড়ানো হয়ে গেলে আমাকে টিপ পড়িয়ে দিল দিদি। ততক্ষনে নিচে বেশ হই হল্লা শুরু হয়েছে। আমার সাজের বাক্স থেকে লিপস্টিক বের করে আমাকে পড়াতে লাগল দিদি। আর বলতে লাগল,
– কিন্তু যদি ও মেনে নেয় পুরো ব্যাপার টা, তবে তোকেও মেনে নিতে হবে, আর জীবনে ফিরতে পারবি না এদিকে, মনে থাকবে? bangla golpo
হ্যাঁ এই প্রপোজাল টা মন্দ না। কিন্তু চোখ আমার জলে ভরে এলো। মনে হচ্ছিল, হাপুস নয়নে কাঁদি। কিন্তু অর্জুনের জন্য এই টুকু করতে পারব না আমি? খুব পারব। এর মধ্যে দিদি আমাকে ধমক দিল,
– আচ্ছা এই ভাবে কাঁদলে আমি কি ভাবে কাজল টা পড়াব?
– পরাস না কাজল আমাকে আর। এই ঠিক আছি।
– আচ্ছা এবারে চোখের জল মোছ, আর নীচে চল। এই ভাবে তোকে অর্জুন দেখলে আমার উপরেই না রেগে যায়।
ঠিক করে নিয়েছি আমি, মণ্ডপের প্রতিমার বিদায় আর আমার বিদায় একসাথেই নেব। বলিনি কাউকে কিছুই। দুপুরে সবাই নিচে খাচ্ছিল, আর আমি সুটকেস থেকে অর্জুনের জন্য কিনে আনা ড্রেস গুলো কে বের করে রাখছিলাম। একে একে খুলে রাখছিলাম, সেই সব গয়না গুলো, যে গুলো আমাকে অর্জুন দিয়েছিল। আজকের দিন টা আছে আর মাঝে। আজকে প্রান ভরে দেখব ওকে। প্রান ভরে বাঁচব। bangla golpo
আজকে ভাই এর পাকা দেখা হয়ে গেল। আমিও ছিলাম কিছু সময় ওখানে। ভাই এর শাশুড়ি তো আমাকে দেখে খুব পছন্দ করেছে। ওর ছেলের জন্য। কিন্তু যখন শুনলো আমি অর ছেলের থেকেও বছর তিনেকের বড় তখন পিছিয়ে গেল। যদিও আমার সামনে এই সব কথা হয় নি। ভাই এর হবু বউ কোন ভাবে আমাকে চেনে। হয়ত কোন দিন ক্লাস নিয়েছিলাম। ও দেখছিলাম ওর মা কে আটকাচ্ছিল যখন ওর মা আমার রুপের প্রশংসা করছিল। আমার ভয়ঙ্কর রাগ ধরছিল। মনে মনে ভাবছিলাম, রূপ ছাড়াও আরো অনেক কিছু আছে আমার মধ্যে, যা তোমার ছেলের মধ্যে নেই।
রাগে চলে এসেছিলাম সেখান থেকে। সেই থেকে উপরেই আছি। কেউ ডাকেও নি আমাকে আর। খেতেও ডাকে নি। আমি অর্জুনের জামা প্যান্ট গুলো ওর ঘরের বিছানায় রেখে দিয়ে নিচে এসে দেখি, খুব হই হল্লা চলছে। খেতে বসেছে অনেকেই। আমিও গেলাম পরিবেশন করতে। চুপচাপ পরিবেশন করছি। দিদিরা সবাই খেতে বসেছে। সাথে জামাইবাবু রা। আজকে খুব ভালো লাগছে। পাশাপাশি সবাই বসেছে। ভাই আর ভাই এর হবু বউ ও বসেছে।
আমি মা আর কাকি পরিবেশন করছি। অর্জুন নেই ধারে কাছে। ভাবলাম ওর খাওয়া হয়ে গেছে। সাধারনত খায় না ও আগে। কারন ওকে কেউ না বললে খেতে ও বসে না। কিন্তু ওর মা বসে গেছে দেখে ভাবলাম ও খেয়ে নিয়েছে আগেই। ওর মা ও সাধারনত ও না খেলে খায় না। bangla golpo
কিন্তু ওদের খাবার শেষের মুখে দেখলাম এলো কোথাও থেকে। ছাদে ছিল মনে হয়। কি জানি কি করছিল? এসে আমার সাথে পরিবেশন শুরু করল। ও আসলেই আমার চারিপাশ টা বদলে যায়। দিদির কথা বেমালুম ভুলে গেলাম আমি। ওর সাথে বক বক করতে করতে, সবাই কে খাইয়ে আমিও খেতে বসলাম। ছোড়দি আমাকে খেতে দিচ্ছিল। অর্জুন দেখলাম দূরে বসেছে একটু। ছোড়দি বলতেই চলে এল ও আমার কাছে। ছোড়দি পাশে বসতে বলতেই, পাশে বসে পড়ল এক মুখ হাসি নিয়ে। যেন চাইছিল আমার পাশে এসে বসতে। বাড়ির সব বর বউ যেমন একসাথে বসে খাচ্ছিল, আমারা ও সেই ভাবেই বসলাম।
এবারের পুজো টা যেন আমাকে ভরে ভরে দিচ্ছে সব কিছু। বাস আজকের রাত টা, কালকে আমি চলে যাব। আজকে যেন কিছু গড়বড় না হয়। ছোড়দি, যেন কল্পতরু হয়ে আমার ইচ্ছে পুরন করছে আজকে। সন্ধ্যে বেলায়, আমাকে আর অর্জুন কে ছেড়ে দিল অন্ধকারে, বাড়ির পিছনের বাগানে গল্প করতে। আমি অর্জুনের সাথে গল্প করছি, কিন্তু আমার মনে চলছে কালকের চলে যাওয়া। অর্জুন বুঝেছে কোন কারনে আমি অমনোযোগী। ও চেস্টা করছে আমাকে সব ভাবেই খুশী করার। আমাকে হাসানোর। bangla golpo
জানি না কতক্ষন কাটিয়ে ছিলাম আমি সময় ওর সাথে। তবে বেশির ভাগ টাই ওর বুকে ছিলাম আমি। ওকে চেপে ধরে। ও বুঝছিল না ব্যাপার টা। আজকে আমি ওর উপরে কেন এত দয়া করছি, সেটাই মনে হয় ওর বোধগম্য হচ্ছিল না।আগে কতবার বলেছে, একবার আমার বুকে এস, আর কোনদিন ও বলব না। কোনদিন ও যাই নি আমি। কোনদিন ও ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারিনি। কিন্তু গতকাল আর আজকে আর সে সব ভাবিনি আমি।
বার বার জড়িয়ে ধরছিলাম, প্রিয় মানুষ টা কে। জানি কাল থেকে আর পাব না। জীবনে দেখা করব না বলে কথা দিয়েছি ছোড়দি কে।বেশী আঁকড়েও ধরতে পারছি না। ওই এক আঁকারেই হয়ত সব ধরে ফেলল। অনেক না বলা কথা ও না শুনেই বুঝে যায়। অনেক না বলা ব্যাথা ও এমনি ই অনুভব করে নেয় আমার। এমনি এমনি কি প্রেমে পড়েছি ওর?
আজকে রাতে আমি ওকে আসতে মানা করেছিলাম।কারন আজকে রাতে একলা থাকলে জানিনা আমি কি করে বসতাম। ওকে বলেছিলাম, আজকে রাতে অনেকে বাড়িতে আছে। ওকে যে আজ সন্ধ্যে বেলায় সময় দিলাম, এর কারন ই হলো রাতে ও আসতে পারবে না। এমনি বললে শুনত না। কিন্তু অনুনয় করলে শোনে। অনেক না শোনা কথাও শুনে নেয়। মন পড়ে ফেলে যে আমি চাইছিনা। আর ওকে সেটা বলতেও পারছি না। bangla golpo
সারা রাত তো ঘুমাই নি। আমার মোবাইল এ থাকা সব সব ছবি গুলো দেখছিলাম। কোন দিন আমরা জোড়ায় ছবি নিই নি। অনেকে থাকলে নিয়েছি।বাকি ওর সব ছবি ওর একলা আছে, আমার মোবাইল এ। কে কোথায় দেখে ফেলবে, আরেক কেলেঙ্কারি হবে। কোন টা একেবারে নায়কের মতন পোজ এ। তো কোন টা মুখ গোমড়া করে। হয়ত কিছু চেয়েছিল আমি দি ই নি। সর্বক্ষন ই তো গায়ে গায়ে লেগে থাকে আমার কাছে থাকলে। তখন ই হয়ত বকে দিয়েছিলাম ওকে। তাই মুখ গোমড়া। হাসি পেয়ে গেলো আমার। একেবারে বাচ্চা। আবার অসম্ভব পরিনত।
সারা রাত ই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলাম ওর ছবি গুলো। নাহ এই ব্রাউন রঙ টা ওকে মানাচ্ছে না। আর এই রঙের ওকে কিছু পড়াবো না। কোবাল্ট ব্লু ওকে দারুন মানায়। টি শার্ট গুলো এই রঙের কিনে দেব এবার থেকে আমি। নিস্ফল ভাবনা। কিন্তু মন কে, কে আটকে রাখতে পারে? আর আটকে রাখলেই বা আমি শুনব কেন? আমার মন ওকে নিয়ে হারিয়ে যায় কোণ স্বপ্ন রাজ্যে। সেখানে আমার আর ওর ঘর। কেউ নেই আর। বাস ও, আর ওর বুকে আমি। bangla golpo
দশমীর সকালে ঘট বিসর্জনের আগে, দেখলাম আমার ট্রেনের টিকিট কনফার্ম এর মেসেজ এলো। কাঁসর টা পড়েছিল সামনেই, কেউ বাজাচ্ছিল না। সবার মন বিষাদে আছে। আজকে মা চলে যাবেন। বাচ্চা গুলো ও বুঝতে পারে এই দূর্গাপূজার গুরুত্ব। অন্যান্য দিন কে কাঁসর নেবে আর কে ঘন্টা নেবে, সেই নিয়ে মারামারি করে রিতিমতন। কিন্তু আজকে কেউ নেই। যে যার মায়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের মা কে আঁকড়ে ধরে। ওদের কাছে ওদের মা ই দূর্গা। আমি কাঁসর টা হাতে নিয়ে বাজাতে শুরু করলাম। কাই নানা কাই নানা।
অর্জুন সবার আগে ছিল। যে দল টা ঘট বিসর্জন করতে গেল সেখানে ভাই আর তার হবু বউ ও ছিল। অর্জুন সবার আগে। আমার দেওয়া একটা টি শার্ট পরে আছে। প্যান্ট টা মনে হয় পুরোন পড়েছে। চিনতে পারলাম না আমি। সামনে যেটা পায় সেটাই পরে নেয় ও। ওরা চলে যেতে আমি বসলাম মায়ের বেদীর সিঁড়ি তে। সব মেয়েরাই বসে। মা কাকি দিদিরা। পাড়ার সব মেয়ে বউ রা বসে। জামাইবাবু রা এদিক ওদিক ছড়িয়ে আছে। দিদি আমার উপরে রেগে আছে। কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। আমি যা করেছি সেটা অন্য কেউ থাকলেও করতাম। আর ও খচ্চর ছেলে সব সময়ে আমার পাশে এসে বসলে আমি কি করি? bangla golpo
শান্তি জল দিচ্ছিলেন, পুরোহিত দাদু। আমি শাড়ি পরে ছিলাম। শান্তি জল নেব বলে বসে পড়েছিলাম। আমি সব কটা বাচ্চা কে খুঁজে তাদের মায়ের পাশে বসিয়ে দিয়ে এলাম। অর্জুন আর ভাই ছিল দাঁড়িয়ে। ভাই কে মুচকি হেসে ওর বউ এর দিকে ইশারা করতেই সে ও লজ্জা পেয়ে, হবু বউ এর পাশে গিয়ে বসল। আর অর্জুন কে ওর মায়ের কাছে যেতে বলে আমি বসলাম সবার পিছনে। দাদু , শান্তির জল ছেটাতে শুরু করল সামনের দিকে।
আমি ততক্ষনে, শাড়ি টা পিঠে জড়িয়ে মাথা নিচু করে বসে আছি শান্তির জল নেব বলে। হঠাত করে , হুড়ুম করে পাশে এসে বসে পড়ল অর্জুন। আর আমার শাড়ি টা টেনে নিজের পায়ে ঢাকা নিল। বুক থেকে আঁচল টা খসে গেল আমার। আমি তাড়াতাড়ি, বুকের আঁচল টা তুলে কাঁধের কাছে হাত টা চেপে ধরে রইলাম। না হলে আবার টানবে আর বুক থেকে আঁচল টা খসে পড়বে আমার। আমি ওর পা দুটো কে ভাল করে ঢাকা দিলাম। আঁচল টা বুকের উপরে কাঁধের কাছে চেপে ধরে রইলাম মাথা টা নিচু করে। উপর থেকে শান্তির জল পড়তে লাগল আমাদের উপরে। bangla golpo
মাথা নিচু করেই বললাম,
– এতো দুস্টূ হয়েছিস কেন তুই? বললাম তোকে তোর মায়ের কাছে বসতে।
– বেশ করেছি তোমার কাছে বসেছি
– ব্যস। হয়ে গেল। কি কথার কি উত্তর। ওই ভাবে কেউ শাড়ি টা টান দেয়? বুক থেকে আঁচল টা খুলে গেলো না আমার?
– ও সরি সরি। আমার জিনিস অন্যে দেখে নিলো না?
– এক থাপ্পড় খাবি।
– কবে থেকে ওয়েট করছি। কবে দেবে বল। আজকে রাতে? গাল নিয়ে চলে আসব
– হয়ে গেছে শান্তির জল, এখন ভাগ পাশ থেকে। মনি দেখছে কিন্তু। bangla golpo
ও তো চলে গেল। আমি হয়ত ওকে এমনি বলার জন্যেই বলেছিলাম। মনি দেখছে। কিন্তু আমার ছোড়দির বাজের চোখ, ঠিক দেখেছে। আদ্যপান্ত দেখেছে।
তখন থেকেই রেগে আছে আমার উপরে ছোড়দি। সবাই যখন বাড়ি ফিরছিল আমি ছোড়দি কে ধরলাম।
– কি রে রেগে আছিস?
– তোর তাতে কি যায় আসে? তুই তো নিজের ইচ্ছে মতন ছেলেটাকে ঘোল খাওয়াবি।
আমি বুঝতে পারলাম না, ওই ঘটনায় আমি কি ঘোল খাওয়ালাম। আমি ওর পা দুটো কে ঢেকে দিয়েছিলাম। এই টা কি আমার অপরাধ। সাড়া দিলাম না। জানিনা আবার কি বোম্বার্ডমেন্ট হবে আমার উপরে। দিদি ই বলল
– কেন আঁচল টা খুলে দিলি ওর সামনে? এতে ঘোল টা তো ওই খাচ্ছে, তাই না? bangla golpo
আমি হেসে ফেললাম দিদির কথায়? বললাম
– আচ্ছা দিদি, এই সবার সামনে ওকে আমি বুকের আঁচল ফেলে প্রলুব্ধ করব? ভুলে যাচ্ছিস পরশু রাতে একসাথে ছিলাম আমরা। কালকে সারা সন্ধ্যে বেলাতেও একসাথে ছিলাম। হলে ওখানেই করতে পারতাম।
আশা করি এই টুকু বিশ্বাস তুই করিস আমাকে। আর আজকে , ও এসেই আমার আঁচল টা টেনে নিজের পায়ে ঢাকা নিল। আমি পিন লাগাই নি আজকে শাড়ি তে, তাড়াহুড়ো তে বেড়িয়ে এসেছিলাম বলে। তাই খুলে গেছে বুক থেকে আঁচল টা। আচ্ছা শোন আর বকিস না আমাকে। এই দ্যাখ আমার টিকিট কনফার্ম হয়ে গেছে।
দিদি তাকিয়ে রইল আমার দিকে।
– কোথায় চললি?
– সেটা থাক। কারোর জানার দরকার নেই। মোবাইল টাও থাকবে এখানে। নিয়ে যাব না আমি। যাতে আমার কেউ খোঁজ না পায় আর। bangla golpo
দিদি আবার তাকিয়ে রইল আমার দিকে। হয়ত এটা বুজছে, আমি সত্যি চাইছি, অর্জুন টা স্বাভাবিক জীবন যাপন করুক। কিন্তু আমি না গেলে সম্ভব হবে না সেটা। আমি আর দিদিকে দেখলাম ও না। এতো ভুল বোঝা নিয়ে জীবনে চলা যায় না। দ্রুত হেঁটে চলে এলাম আমি আমার ঘরে।
দুপুরে ঘরে এসে ভাবছিলাম। দিদি ভালো প্রস্তাব ই দিয়েছে। বড়দি আমাকে বেশ ভালবাসে এখন। এই সব জানাজানি হলে, আমাকে আগের থেকেও বেশি ঘেন্না করবে। তুলকালাম হবে। বড় জামাই বাবু, এখন বেশ কথা বলে আমার সাথে। হয়ত ওর ছেলেকে আমি খুব ভালবাসি সেই জন্য। মানে সেই পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে বাঁচানোর ঘটনা জানাজানির পর থেকেই পছন্দ করে। নতুন করে ভালোবাসতে চেস্টা করে। এই সব এক লহমায় নষ্ট হয়ে যাবে। ছোড়দি র বুদ্ধি চিরকাল ই দারুন। বাস আমি চলে যাবার পরে অর্জুন টা সামলে নিলেই সব কিছু ভালোয় ভালোয় মিটবে। এই চলে যাওয়াই ভাল। সেটাই সব থেকে ভাল।
সন্ধ্যে বেলা, বিসর্জন হবে প্রতিমার। দিদি হয়ত চাইছে, আমার সাথে একলা থাকতে, কথা বলতে। জানে চলে যাব আমি। তাই শেষ কিছু কথা দুই বোনের। কিন্তু আমি আলাউ করছি না। আমার আর কিছুই ভাল লাগছে না। সবাই বিসর্জনের তোড়জোড় করছে। অর্জুন তো সবার আগে। ও নাকি কাঁধ দেবে ঠাকুর তোলার সময়ে। দিক। আমি ঠায় তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে। সবাই মিলে ধরাধরি করে ঠাকুর তুলল একটা ট্রাক্টর এ। ভয় ছিল আমার যে ওর কাঁধে না লেগে যায়। সামনেই জয়েনিং ওর। হাড় ভাঙ্গা ট্রেনিং ও হবে। এখন কাঁধে বা হাতে ব্যাথা পাওয়া ঠিক কথা না। bangla golpo
দিদিরা, মা কাকিমা, পাড়ার সব সদবা, সিঁদুর খেলল চুড়ান্ত। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম একটু দূরে পাশে। দিদি আমার দিকে এগোলেই আমি, এটা সেটার নাম করে সরে যাচ্ছিলাম। আমি আমার পার্স টা সাথেই নিয়ে রেখেছিলাম। আমার মোবাইল টা আমি রেখে এসেছি বিছানায়। পুরোন মোবাইল টা নিয়ে নিয়েছি । টিকিট টা ওখানেই আছে। কিছু টাকা তুলে ছিলাম । সেটা নিয়েছি। কার্ড টা নিয়েছি। চলে গিয়ে কলেজে রেসিগ্নেশন টা মেইল করে দেব।
মন্ডপের ভিতরে সিঁদুর খেলা চলছে। অর্জুন মাঝে মাঝে আমাকে দেখছে আর হাসছে। বড়ই ভালোবাসায় মাখানো ছিল সেই দেখা। যেন ও ভাবছে, আমি ওর বউ আর ওর ই কল্যানের জন্য আমিও সিঁদুর খেলছি। ইশারা করছে আর ওদিকের সিঁদুর খেলা দেখছে বার বার। জিজ্ঞাসা টা এমন, যে আমিও খেলছি না কেন? কি করে বোকা টা কে বোঝাই বিয়ে না হলে সিঁদুর খেলতে নেই।
ঢাকের তালে নাচছে ও। সাথে ভাই, চাঁদের বর, আর সব কটা কচিকাঁচা। ইশ কি ভালো লাগছে। চোখে জল এলো কি আমার? এই সব ছেড়ে, অর্জুন কে ছেড়ে নিরুদ্দেশের যন্ত্রণা বুকে? হুম। যতই কুল থাকার চেস্টা করি, পারছি কই থাকতে? চশমা টা খুলে শাড়ির আঁচলে চোখ দুটো মুছব বলে মন্ডপের পিছনে এলাম। আসতে না আসতেই ভুতের মতন অর্জুন এসে হাজির। হাতে কি ছিল জানিনা। আমাকে যেন এসে চেপে ধরল। উফফ বাবাহ গায়ে কি জোর হয়েছে বদমাশ টার। bangla golpo
– এই কি করছিস ছাড়!!!!
ছেড়েও দিল। তারপরে হেসে বলল, দেখ একবার নিজেকে এবারে। মণ্ডপের পিছন টা অন্ধকার খুব, তাই আমি পার্স থেকে মোবাইল বের করে সেলফি ক্যামেরা র আলোতে যা দেখলাম, মনে হলো অজ্ঞান হয়ে যাব। দুই গালে সিঁদুর। আর তার থেকেও বড় কথা, আমার সিঁথি জুড়ে অর্জুনের পরিয়ে দেওয়া সিঁদুর। আমার হাত পা জাস্ট কাঁপতে লাগল। কাঁপা গলায় বললাম,
– অর্জুন!!!!!! একী কি করলি তুই?
– জানিনা। মনে হল এটা করা উচিৎ।
– এর মানে তুই জানিস না? কী ভয়ানক এর মানে? কি রে? তুই কি পাগল হয়ে গেলি?
ঝাঁকাতে লেগেছিলাম আমি অর্জুন কে। তীব্র রাগ আর অভিমানে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম আমি। আমি যেন ওকে শেষ করে ফেলব এবারে। নিশ্চই ও মজা করেছে এটা। আমি ওকে বললাম ওই ভাবেই
– তুই এটা মজা করেছিস তাই না? সত্যি করে বল, এ রকম মজা করতে নেই। এ যে মহাপাপ। এ তুই কি করলি? bangla golpo
অর্জুন থমকে গেল একটু। শান্ত হয়ে গেল আমার ঝাঁকানি তে। একেবারে শান্ত। আমার চিবুক টা ধরল। তুলে ধরল নিজের মুখের দিকে। আমি বাক্যহারা ওর কান্ডে। বলল
– জানি, এর কি মানে। তাই তো দিলাম। আর কোন ভাবেই মজা আমি করিনি। আমি জীবন নিয়ে মজা একদম পছন্দ করি না। থাক, এবারে সারা জীবন আমার হয়ে। আর আমাকে তোমার করে নিয়ে। বড্ড সুন্দরী হয়ে উড়ছিলে। সেটা বন্ধ করে দিলাম। জানিনা আমরা এক হতে পারব কিনা, কিন্তু এ জন্মে না পারি, এই সিঁদুর পরের জন্মে আমাদের এক করে দেবে না সেটা কে বলতে পারে?
আমি তখনো কাঁপছি। জীবনে, শুধু মেয়ে হয়ে বাঁচতে চাই নি আমি। শাঁখা সিঁদুর পরে স্বামী সোহাগী হয়ে বেঁচে থাকার থেকে মৃত্যু ঢের বেশী কামনার ছিল আমার। এই সব সিঁদুর, স্বামী কোন দিন ও মানিনি। মানতে চাইনি। কিন্তু … কিন্তু আজকে ভাবতে পারছি কই, যত্ত সব ফালতু কথা। কেন মুছে ফেলতে পারছি না সিঁদুর টা আমি। চেঁচিয়ে ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে হলো। কেন এই মোক্ষম সময়ে আমি দুর্বল হয়ে পড়ছি। কেন অর্জুনের সামনেই আমি সিঁদুর টা কে সিঁথি থেকে বিলুপ্ত করে দিতে পারছি না? কেন মনে হচ্ছে রাগের মাথায় সিঁদুর মুছে দিলে অর্জুনেরই ক্ষতি হবে? bangla golpo
অর্জুন, তখন ও আমার চিবুক তুলে ধরে আছে। ওই ভাবেই আমাকে বলল
– আজকে এখন কোন কথা নয়। আমি রাতে আসব তোমার ঘরে। অনেক কথা আছে। ভয় নেই, ফুলশয্যা র জন্য নয়। সে সবে আমার লোভ নেইইইইইইইইইইইইইইইই।
কথা গুলো বলতে বলতে চলে গেলো ও। আমার কাছে যেন কথা গুলো কানে বাজতে লাগল। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে আছি মন্ডপের পিছনে। থর থর করে কাঁপছি আমি। জানিনা মাথায় কেউ সিঁদুর পরালে, সব মেয়েদের ই এই হাল হয় কিনা? ওর কথা গুলো আমার কানে বাজছে। কিছু ভিতরে হয়ত গেল বা হয়ত গেল না। কিন্তু এখন কি করব আমি? বাইরে মুখ কি ভাবে দেখাব? এ তুই কি সর্বনেশে খেলায় মাতলি অর্জুন? কেন করলি এটা? তুই কি জানিস না, একটা মেয়ের কাছে এল মূল্য কি?
চীৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হলো। ইচ্ছে ছিল মা কে একবার দেখে আসব। আর হবে না। মন কে শক্ত করলাম। নাহ আর দেরী করা ঠিক হবে না। আরো দুর্বল হয়ে পড়ার আগে আমাকে পালাতেই হবে। ওদিকে ঠাকুর নিয়ে সবাই গ্রাম ঘুরতে বেরল। মিলিয়ে যেতে থাকল ধীরে ধীরে ঢাকের আওয়াজ আমাদের মন্ডপ থেকে দূরে। bangla golpo
আমি শাড়ি টা কোমরে গুঁজে মন্ডপের পিছন দিয়ে হাঁটা দিলাম, দ্রুত। নাহ ওরা ফিরে আসার আগেই আমাকে সীমানাপুরের কোন যান বাহন পেতেই হবে। আমাকে সবাই চেনে এ গ্রামের। মাথায় ঘোমটা টেনে নিলাম। অন্ধকার রাস্তা। পুকুরের ধার ধরে হাঁটছি। উদ্দ্যেশ্য আমাদের বাগান ধরে মেন রাস্তায় পৌঁছে যাওয়া। পুজোর সময়, টইটম্বুর পুকুর টা। দুরের আলো পুকুরের টলটলে জলে প্রতিফলিত হয়ে আমাকে যেন পথ দেখাচ্ছে। আমার কোন খেয়াল নেই। প্রায় দৌড়োচ্ছি আমি।
আমাদের বাগান পেরিয়ে যখন মেন রোড এ এলাম ত, ঠিক তখন ই একটা প্রায় ফাঁকা ট্রেকার এসে হাজির। উঠে বসে পড়লাম আমি। ট্রেকার তীব্র গতিতে এগিয়ে চলল।গ্রাম ছাড়িয়ে ট্রেকার ফাঁকা মাঠে এল। দুই দিকে ধান জমি। নিশ্ছিদ্র অন্ধকার দুই দিকে। আমাদের গ্রামের দিকে চেয়ে দেখলাম, ট্রাক্টর-এ চাপানো আমাদের ঠাকুর ও ধান জমির রাস্তা ভেঙ্গে এগিয়ে চলেছে পুকুরের দিকে। সামনে বেশ কিছু মানুষ নাচানাচি করছে। হয়তো ওখানে অর্জুন, না না আমার বর টা নাচছে আনন্দে। আর ঢাক বাজছে বিসর্জনের – ঠাকুর আসতে যতক্ষন, ঠাকুর যেতে ততক্ষন।